খণ্ডচিত্রে মধ্যভারতের গোণ্ড আদিবাসীদের রাজকাহিনী — চার

অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী

 

রাজকাহিনী — তিন-এর পর

 

৮.৫) দেওগড়ের রাজবংশ -– সৎপুঢ়া পাহারের প্রাণবিন্দু ছিন্দওয়াড়াতে ১০ পুরুষ ধরে রাজত্ব করেছিল এই আদিবাসী রাজবংশ। ১৫৮০ সালে জাটবা খণ্ডাৎ তৎকালীন দেওগড়ের ‘বাওলি’ রণসুর, ধনসুরদের রণে ধরাশায়ী করে এই রাজবংশের পত্তন করেন। ১৭৫১ সালে মারাঠা ভোঁসলে রাজাদের হিন্দুসাম্রাজ্যে বিলীন হয়ে যাওয়ার আগের পৌনে দু’শো বছর ছিন্দওয়াড়া অঞ্চলে আদিবাসী সার্বভৌম রাজা ছিলেন এই দেওগড়-রাজবংশের গোণ্ড ইসলাম ধর্মাবলম্বী রাজারা। মিথিকাল আদিবাসী বীর জাটবা খণ্ডাৎ সম্বন্ধে অনেক লোককথা প্রচলিত। সীমগাছের নীচে জন্ম তাঁর। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি থেকে শিশু জাটবাকে আড়াল করে রেখেছিল ফণা ছড়িয়ে এক নাগরাজ-– গোখরো সাপ। এই হুডখোলা গোখরো সাপের বাচ্চা রাজাকে প্রোটেক্ট করার মিথ, তা উপমহাদেশে লোকে লোকে বিদ্যমান। উত্তরবঙ্গ, বারেন্দ্রভূমের আরেক মিথিকাল প্রাগ-মধ্যযুগীয় শাসক নীলধ্বজ সম্বন্ধেও এই কাহিনী রয়েছে, যার আভাস গোসানীমঙ্গল কাব্য সহ দক্ষিণ ব্রহ্মপুত্র থেকে বারেন্দ্রভূম অবধি প্রসারিত নাগোপাসনা ‘গোসানি-দেবী’র ভক্তিজ কাল্ট যেই সকল স্থানে রয়েছে, সেই সকল স্থানেই পাওয়া যায়। বোধ হয়, প্রকৃতি রাজাকে প্রোটেক্ট করছে, রাজতন্ত্রের প্রতি এই প্রাকৃত সিলমোহরের কাহিনী, রাজতন্ত্র প্রসারের সাথে সাথেই বিস্তীর্ণ গণলোকে প্রসার পেয়েছিল। খাণ্ডাধারী বা খাঁড়া/তলোয়ার-ধারী ‘খাণ্ডা-মুখিয়া’ বীরার্থ সাধনায় তাই মিথিকাল বীর হয়ে গিয়েছে গোণ্ড আদিবাসীদের গণচেতনায়। রাজা হওয়াতে জাটবা তাঁর নতুন রাজত্বের ‘নাগপুর’ অঞ্চলে একটা কেল্লা বানান, যার ধ্বংসাবশেষকে গোণ্ড-কেল্লা বলা হয়।

এই বংশের এক প্রধান রাজা বখত সুলতান। জন্মনামে মহিপাল, আরংজেবের সৈন্যবাহিনীতে যোগ দিয়ে ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। খণ্ডাতের পর থেকেই সেই বংশের সকল রাজা ‘শাহ’ পদবী ব্যবহার করতেন। ১৬৯১ সালে আরংজেবের জাগিরদার হয়ে অঞ্চলের উপর আধিপত্য কায়েম করে দিল্লী ও উত্তরভারত থেকে শিল্পী ও কৃষকদের নিয়ে আসেন, ছিন্দওয়াড়া থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে কেল্লানির্মাণ ছাড়াও নানান নির্মাণকাজ অরম্ভ করেন। ইতিমধ্যে ডেকান কংকোয়েস্টের ঠেলায় আরংজেব জেরবার হতে থাকলে তাঁকে সময় বুঝে, ১৬৯৭ সাল লাগাদ, কর দেওয়া বন্ধ করে দেন বুলন্দ শাহ। বিদ্রোহ ঠাউর করে বিদ্রোহ দমনের অভিপ্রায়ে প্রথম যে জেনারেলকে পাঠাবেন ভাবলেন, তাঁকে ট্রান্সফার ইত্যাদির বিপুল ব্যুরোক্রেটিক ঝঞ্ঝাট পেরিয়ে পাঠানোই গেল না। দ্বিতীয় যাকে পাঠানো হল তিনিও অত বন-জঙ্গল-পাহাড় ঠেঙিয়ে ‘ইন্টিরিয়র’-এ যাওয়ার উৎসাহ দেখালেন না; তাই সেই বিদ্রোহ দমনী ব্যাটেলিয়নের কী হল, কোনও যুদ্ধ হল কি হল না, সে বিষয়ে লিখিত অথবা লোকস্মৃত কোনও বয়ান নেই।

মোগল সাম্রাজ্য বিশেষ চাপ দিতে পারছে না দেখে বুলন্দ শাহ সেই ‘ইন্টেরিয়র’-এর সঙ্গে কিছু তৎকালীন আদিবাসী গ্রাম জুড়ে জুড়ে স্থাপিত করলেন ‘নাগপুর’ শহর। ১৭০২ সালে দেওগড়ের গোণ্ড সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় নতুন শহর নাগপুর। শহরের নামকরণ নিয়েও হিন্দুত্ববাদী কো-অপশানের ছায়া লেগেছে। মোতরাবণ কাঙালি ১৯৮৩ সালে তাঁর প্রামাণ্য গ্রন্থ ‘গোণ্ডোঁ কি মুলনিওয়াস স্থলপরিচয়’-তে লিখছেন যে নাগপুর শহরের নাম এসেছে গোণ্ডিভাষার সহজ শব্দবন্ধনী ‘গোণ্ডিনাং পুর’ থেকে, যার আর্থ গোণ্ডিদের পুর (‘-নাং’-প্রত্যয়ের অর্থ ‘-দের’)। আবার গত তিনশো বছর ধরে হিন্দুবাদীরা বলে আসছে যে দেওগড় রাজবংশের সেই যে নাগরাজ যিনি ফণা তুলে বীর জাটবা খণ্ডাৎকে শৈশবে রক্ষা করেছিলেন, সেই ‘নাগ’এর নামেই, তাই উনবিংশ শতাব্দীতে সে’যুগের ঘোরহিন্দু মারাঠা সিভিল সোসাইটির প্রথম খবরের কাগজ হল ‘ফণীন্দ্রমণি’, আর একটা ধারণা ছিল যে নাগপুরেরও আগে নাম ছিল ‘ফণীন্দ্রপুর’। আবার গত শতাব্দীর মধ্যভাগে নাগপুরকেই নব্য-বৌদ্ধদের প্রধান ঘাঁটি চয়ন করার প্রসঙ্গে ডঃ আম্বেদকার বলছেন-– ‘নাগ’ সম্প্রদায়ের মানুষদের বাস যেই স্থানে, সেই স্থানেরই নাম লোকে রেখেছিল নাগপুর। কলকাতা-র মতোই, তিনশো কিছু বছর ধরে ক্রমঃ-নগরায়িত একটা জনপদের নাম ঘিরেও এমনই নানান জল্পনা।

বুলন্দ শাহর পর চাঁদ সুলতান নাগপুর শহর থেকেই রাজ্যপাট চালাতে থাকেন, নতুন সেই শহরকে ঢালাও করে সাজান। কিন্তু ১৭৩৫ ইঙ্গাব্দে চাঁদের মৃত্যুর পর সিংহাসনের শরিকি বিতণ্ডার ফায়দা নিয়ে ছলে বলে কৌশলে দুই দশকের প্রয়াসে সে রাজপাট আত্মসাৎ করে নিলেন ভোঁসলে রাজারা। তার দুই-তিন দশকের মধ্যেই নাগপুরকে ঘাঁটি বানিয়ে ইংরেজরা প্রস্তুতি নিতে থাকে অ্যাংলো-মারাঠা যুদ্ধের। চার দশক ধরে চলা এই যুদ্ধে অজস্র এবং মূলতঃ স্থানীয় আদিবাসী ফৌজি অ্যাংলো আর মারাঠা দুই সাইডের হয়েই কোল্যাটারাল ড্যামেজিয়া বলির লিস্টিতে নাম চড়িয়ে কুচিকাটা হল। কিন্তু ইতিহাসের কোনও বাঁক দিয়েই আর গোণ্ডিনাং-পুরে গোণ্ডিরা ক্ষমতাসীন থাকল না কোনওভাবেই।

৮.৬) খেরলাগড় অঞ্চলে, বর্তমান দক্ষিণ মধ্যপ্রদেশের ‘বেতুল’ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ছিল আরেক প্রাচীন গোণ্ড সাম্রাজ্য। গোণ্ড আদিবাসীদের ‘উইকে’ তথা ‘কুমরে’ টোটেমধারী নৃপতিগণ এইখানে ৭৫ ইঙ্গাব্দ থেকে ১৬৫০ ইঙ্গাব্দ অবধি শাসক করেছিলেন বত্রিশ পুরুষ ধরে। ১৬৫০ সালে বিলীন হয়ে যাওয়া এই প্রাচীন রাজবংশের সম্পূর্ণ তালিকা আজও পাওয়া যায়নি। খ্রিস্টজন্মের একশত বছরকালের মধ্যেই এই রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন যজ্ঞসেন উইকে। বিশ বছর রাজত্বকালের পর সিংহাসনে চড়েন তাঁর পুত্র খৈরলাল কুমরা। সেই সময় থেকে পরের বারোশো-তেরোশো বছরের নিরবিচ্ছিন্ন আদিবাসী শাসনের হদিশ, যজ্ঞসেন থেকে ভগতরাজ অবধি ত্রিশজন রাজারও হদিশ মেলে। তারপর, চতুর্দশ শতাব্দীর রাজা জৈতপার্কের পর তিনশো বছরের রাজাদের হদিশ মেলে না। ততদিনে গোণ্ডদের অপর তিন সাম্রাজ্য ‘মণ্ডলা’, ‘চান্দা’ আর ‘দেওগড়’ও পোক্ত হয়ে উঠেছে, মোগল-নিজাম কুতুব ভোঁসলে হোলকর সিন্ধিয়া রাজাদের উপদ্রবও বেড়ে গিয়েছে উপর্যুপরি। ১৪১৮ সালে হোসাং শাহ ঘোরি খেরলার আদিবাসী রাজাদের পরাভূত করে, তারপর খেরলায় বহমানি সুলতানদেরও আক্রমণ হয় ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, মোগল সাম্রাজ্য পত্তনের আগ-আগ দিয়ে। পিছু হঠতে হঠতেও খেরলা-বেতুল অঞ্চলের এই গোণ্ড রাজবংশ যে টিঁকে ছিল ১৬৫০ সাল অবধি, তার হদিশ পাওয়া যায় একটা যুদ্ধের ঘটনা থেকে।

‘চান্দা’ সাম্রাজ্যের সাথে এই ‘খেরলাগড়’ সাম্রাজ্যের রাজাদের যুদ্ধ হয় ১৬৫০ ইঙ্গাব্দে। দুই গোণ্ড সাম্রাজ্যের এই লড়াইয়ে চান্দার রাজা বীরশাহ-র হাতে নিহত হন ষোল’শ বছর ধরে চলা খেরলাগড় রাজত্বের শেষ রাজা দ্রুগপাল। এই যুদ্ধের কাহিনীতে উপনীত হব প্রাচীন-মধ্যযুগের চতুর্থ গোণ্ড সাম্রাজ্য ‘চান্দা’র বিষয়ে লিখে।

৮.৭) চন্দার রাজবংশ — বস্তারের নারায়ণপুর আর কাঙ্কের জেলা ছাড়িয়ে পশ্চিমে মহারাষ্ট্রের জেলা গড়চিরৌলিতে ঢল ধরে আরও পশ্চিমে বিদর্ভ অঞ্চলের চন্দায় এসে বনপাহাড়িতে মিলিয়ে গ্যালো অবুজমাঢ় পাহাড়। পুবদেশের সীমানায় যেমন মালকানগিরি-কোরাপুট-কালাহাণ্ডি-রায়গড়ার আকালদীর্ণ আদিবাসী অঞ্চল ধরে রেখেছে দণ্ডকবনকে, তেমনই পশ্চিমদেশ থেকে ধরেছে অপর আকালদ্রংষ্ট অঞ্চল বিদর্ভ। এইখানেই ৮৭০ ইঙ্গাব্দে প্রতিষ্ঠা পেয়ে থেকে ১৭৫১ ইঙ্গাব্দে ভোঁসলে-সাম্রাজ্যের ভিতর মিলিয়ে যায় আরেক গোণ্ড সাম্রাজ্য। এই গোণ্ড চন্দ্রবংশের প্রথম রাজা ভীম বল্লাল সিং (৮৭০-৮৯৫ ইঙ্গাব্দ) রাজধানী রেখেছিলেন ‘সিরপুর’-এ, কিন্তু তাঁর পুত্র খুরজা বল্লাল সিং রাজধানী নিয়ে যান ইরাই-যরপৎ নদীর সঙ্গমস্থল ‘চান্দা’-তে এবং স্থাপনা করেন বিরাট চন্দাগড় কেল্লা। চন্দাগড়ের রাজবংশের রাজধানীই ‘চান্দা’-ই কালেদিনে চন্দ্রপুর শহর হয়ে উঠেছে। উনিশ পুরুষ ধরে রাজত্ব করেছে আদিবাসী রাজারা। ‘শেরশাহ’ বল্লাল শাহ (১২০৭-১২৪২) এবং তস্য পুত্র খাণ্ডক্য বল্লাল শাহ (১২৪২-১২৮২ ইঙ্গাব্দ)-র সময়ে থেকে রাজধানী হিসেবে নাগরিক সাজে সেজে উঠেছে চন্দ্রপুর। প্রথমজন সম্বন্ধে নানান মিথকথা সুপ্রসিদ্ধ। ঐতিহাসিক বেহরাম মেহতা লিখছেন, সদ্যপ্রতিষ্ঠিত মামলুক শাহ কুতুবুদ্দিন আইবক বন্দী করে দিল্লী নিয়ে গেছেন বল্লালকে। এমন সময় ওড়িশার দুই রাজপুত রাজা দিল্লী সালতানেতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন। তাঁদের মধ্যে একজন, মোহন সিং, তাঁর মেয়ের বিয়ে দিতে অস্বীকার করেন সুলতানের সাথে। আসন্ন যুদ্ধে কুতুবুদ্দিনের সহায় হতে রাজি হয় কারামুক্ত বল্লাল। তাঁর আদেশে বিভিন্ন চিফটেন আদিবাসী ফৌজ মোবিলাইস করে পরাভূত করলেন মোহন সিং-এর যৌথবাহিনীকে। ততদিনে কারাগার থেকে সুরেলা গান গেয়ে গেয়ে রাজকুমারীরও মন জয় করে ফেলেছেন তিনি। মোহনকে হারানোর পুরস্কার হিসেবে কুতুব বল্লালকে ‘শের শাহ’ উপাধি দিল। অধিকতর কী চাই জিজ্ঞেস করতে বল্লাল বলল, তাঁর গোণ্ড পূর্বপুরুষেরা মধ্যভারতের খিমদেল-মণ্ডলার বিস্তীর্ণ যে এলাকায়, পুবে বাংলা থেলে পশ্চিমে বুন্দেলখণ্ড, দক্ষিণে রাজামুন্দ্রী অবধি যে বিরাট অঞ্চলের স্বাধীন সার্বভৌম স্বশাসক হিসেবে মান্যতা পেয়ে এসেছেন বহু প্রাচীন কাল থেকে, সেই অঞ্চলের শাসনভারই তাঁর কাম্য। যথার্থই মারাঠা আগ্রাসনের আগে অবধি যথেষ্ট সার্বভৌমত্বের সাথেই শাসন করেছিল এই চান্দার গোঁড় আদিবাসীদের রাজপাট।

আবার এই শের-শাহ বল্লাল-শাহর পুত্র খাণ্ডক্য বল্লাল শাহ সম্বন্ধেও নানান কিংবদন্তী প্রসারিত। সর্বাঙ্গে আঁচিল হয়ে যাওয়ার পর রাণীর স্বপ্নাদেশ অনুসারে অকালেশ্বর অঞ্চলের ঝরণাস্রোতে স্নান করে, সেইখানে মন্দির স্থাপনা করে নিরাময় পান খাণ্ডক্য তথা তলোয়ারধারী এই রাজা। আবার তার রাজ্যপাটের একটা অঞ্চলে অনেক জায়গা জুড়ে একটা খরগোশ তার শিকারী কুকুরকে তাড়া করে বেড়ালেও, অবশেষে কুকুরটাই ঘুরে গিয়ে ঘ্যাঁক করে কামড়ে দেয় খরগোশটাকে, আর কালদর্শী রাজমহিষীর উপদেশে সেইখানেই রাজা পত্তন করেন চন্দ্রপুর শহর।

দণ্ডকারণ্য সহ সমগ্র গোণ্ডওয়ানার আদিবাসীরা কালি-কঙ্কালিন দেবীশক্তির ভক্ত হন। এই চন্দাগড়েই রয়েছে এঁদের পরমতীর্থ এই কালি-কঙ্কালিনের মহাকালী মন্দির। এই বংশের সতেরো নম্বর রাজা বীর শাহ (১৬৪৭-১৬৭২) কন্যাদান করেন খেরলা সাম্রাজ্যের শেষ রাজা দ্রুগপালকে। কিন্তু শ্বশুরালয়ে লাঞ্ছিতা হয়ে সে কন্যা ফিরে আসে। ক্রুদ্ধ বীর শাহ আক্রমণ করেন জামাই দ্রুগপালকে পরাভূত করে তাঁর কাটামুণ্ডু হাজির করলেন তাঁর পরমপূজ্য মহাকালীর সামনে। এভাবেই চান্দা সাম্রাজ্যের আক্রমণে শেষ হয়ে গিয়েছিল খেরলাগড়ের উইকে-কুমরা টোটেমধারী রাজাদের প্রাচীন রাজবংশ। যদিও যে কটা সোর্স দেখলাম, একটাতেও পুরুষ কথক শ্বশুরবাড়িতে লাঞ্ছিতা সেই গোণ্ড রাজকন্যার নামটা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। অবশ্য চান্দার রাজবংশের শাসনে এই ‘খেরলা’ অঞ্চল বেশিদিন থাকেনি; তাই ১৭০৩ সালেই ইউরোপীয় অনুসন্ধানীরা টের পেয়ে যাচ্ছেন, খেরলাগড়ে সেই দেওগড়-নাগপুর গোণ্ড খণ্ডাৎ রাজবংশের ধুরন্ধর আরংজেবদ্রোহী রাজা বখত বুলন্দ শাহর উপস্থিতি।

গড়মণ্ডলা, দেওগড়, খেরলাগড় আর চান্দা-– গোণ্ডওয়ানার এই চার গোণ্ডবংশকেই প্রাধান্য দিলেন ইতিহাসকার ফারিশতা, যখন, ডেকান নিজামতে বসে, ১৫৯৩ সাল নাগাদ তিনি লিখে ফেললেন উপমহাদেশের মধ্যমদেশীয় মালভূমি অঞ্চল ডেকান প্লেটোর প্রথম প্রামাণ্য, লিপিবদ্ধ ইতিহাস তারিখ-ই-ফিরিশতা। তবে, গড় মাণ্ডলার উইকে-বংশের সমসাময়িক পাঁচমাঢ়হি, কবর্ধার উইকে রাজবংশের মতোই বা হরিয়াগড়ের অপর উইকে-বংশের মতোই উল্লেখযোগ্যতার দাবী রাখে চান্দা অঞ্চলেরই ভিমবল্লভের রাজবংশের সমসাময়িক আরও দুটো আর মাহুরগড় অঞ্চলের আরও একটা গোণ্ড রাজবংশ।

 

এরপর …রাজকাহিনী — পাঁচ

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4593 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...