তিনটি কবিতা

রাজীব সিংহ

 

সকাল

আমি কি ধরতে চাইছি তোমাকে
ধরতে চাইছি তোমার হাত, ঐ নগ্ন নির্জন শাদা!
অনেক প্রলোভন এড়িয়ে ঘষ্‌টে ঘষ্‌টে নিজেকে ঠেলেছি।
একটানা প্রলাপ বকতে থাকা ফুটপাথের ভবঘুরেকে
তাচ্ছিল্যে দশ টাকা দিতে চেয়েছি
নিজেকে যোগ্যতামান দেওয়ার জন্য
তোমার পরিবারের কুশল জেনেছি
রাতজাগা হাসপাতালের করিডোরে কামনা করেছি প্রেম
ঘন কুয়াশায় ভিজে যাচ্ছে মুখ
কপাল থেকে টপটপ ঝরে পড়ছে শিশির
প্রসূতিসদনে তখন হৈ চৈ আনন্দসংবাদ
আত্মজ ভূমিষ্ঠ হবার ছন্দে মাতোয়ারা ভোরের সকাল…

আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি
পিচরাস্তায় পড়ে থাকা একটি অহঙ্কারী দশ টাকার নোট,
ফুটপাথের ভবঘুরে তার দিকে ফিরেও দেখছে না।

 

খোলসজন্ম

জানালা দিয়ে ঢুকে পড়া এক চিলতে রোদের মতোই
লেপটে আছি তোমার শরীরে। পুরুষস্পর্শ আর
বিচলিত করে না শরীর। শরীরের ওঠা-নামা
নামা-ওঠায় ঠিকঠিক দিকনির্দেশ অনুভব করি না আর।
শিথিল স্নায়ুরা জেগে ওঠে, জেগে ওঠে মধ্যযাম–
নিকোটিনের গন্ধমাখা ঠোঁট শুষে নেয় সমস্ত উত্তাপ।
বাসে-ট্রামে শরীর সামলে এই এসে পড়েছি তোমার সামনে
রাস্তায় অসংখ্য মানুষ কাক আর চড়ুইয়ের ভিড়
বাড়ির ছাদে ছাদে ডিশ অ্যান্টেনা
ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রত্নশরীর
আমার ইশারা এরা বোঝে না
বোঝে না কীভাবে পাল্টে যায় নারী ও পুরুষ সম্পর্ক

শরীরের অমোঘ আকর্ষণ ভুলে নদীতীরে দাঁড়িয়ে
এইমাত্র আমি আমার খোলস খুলে দিলাম–
টিভিতে বিতর্ক আর সংবাদপত্রে আধুনিকমনস্কতা —
প্রকৃতি ও পুরুষ। পুরুষ ও প্রকৃতি।
ব্যতিক্রমের নূতন পাঠক্রম লিখবো চলো, এসো…

 

রোবট

রিমোট কন্ট্রোলের খেলনা রোবট
বুক থেকে ছুঁড়ে দেয় প্লাস্টিকের গুলি,
খাটে বসে বসে দেখি :
ইচ্ছেমতো রিমোট ঘুরিয়ে কীভাবে বাচ্চাছেলেটা
তাকে সামনে হাঁটায়, পেছনে হাঁটায়
আবার বোতাম টিপে তাকে নাচিয়ে বেড়ায়–
ধাতব রোবট তার ডান হাতের বন্দুক উঁচিয়ে বলে,
অ্যাটাক্! অ্যাটাক্!

শেভ্‌ করতে গিয়ে ছড়ে যায় গাল।
একবিন্দু রক্ত ঝরে পড়ে বেসিনের সাদায়–
টাইয়ের নট বাঁধতে বাঁধতে
মনে মনে ঠিক করি ডেইলিরুটিন
জীবন আটকে আছে চ্যাপলিনের সিনেমার ধাতব চাকায়…
বুক থেকে প্লাস্টিকের গুলি ছুঁড়ে দিতে ইচ্ছে হয়,
অ্যাটাক্! অ্যাটাক্!

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4650 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...