প্রসঙ্গ : ভগিনী নিবেদিতা

পবিত্রকুমার গুপ্ত

লেখক পরিচিতি – ইকনমিক্সে স্নাতক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর অধ্যাপক গুপ্ত নৃতত্ত্ববিদ্যায় পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করে অধ্যাপনা করেন কোলকাতার রামমোহন কলেজে। মাত্র তিরিশ বছর বয়সে দেশের সর্বকনিষ্ঠ প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগ দেন তুফানগঞ্জ কলেজে, পরবর্তীকালে বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয়ের উপাচার্যের আসন অলংকৃত করেন। দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কলেজ সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন, একাধিক বই রচনা করেছেন তিনি। বর্তমানে অবসর জীবনে লেখালেখিতেই নিমগ্ন থাকেন এই প্রবীণ অধ্যাপক। 

“কলস্বাধীনতার পূজারিনী, আইরিশ বালা নিবেদিতা,
ভারতসেবার উপলক্ষ্যে মানবসেবায় তোমার গীতা।
যৌবনের হিয়ায় তুমি পুষেছিলে আবেগ ভীষণ
ঘর, জাতি, দেশ ভোলালো তোমায় মুহূর্তেরই মনোমিলন
চামড়ায় বাঁধা মানবপ্রেমে চামড়া ছাড়াও তাঁর বিকাশ,
হৃদয় দেখে না রঙের প্রভেদ, আত্মা ছিঁড়ে ভাষার পাশ
শক্তিধর ঢুঁড়ে কর্মক্ষেত্র দুনিয়ার সব আকাশ তলে
প্রাণের চাষ চায় প্রানের ব্যাপারী ধরার সকল জলে স্থলে।
দুর্বলতা আর দারিদ্র সেথা বিরাজ করে ধরার উপর,
সেথায় ভাবুক বীরের ধর্ম, সহজে গড়ে নিজের ঘর।
মুক্ত করেছ আত্মা তোমার ভালবাসার ক্ষমতায়
নিজের মুক্তি ছড়ালে তুমি যুবক-ভারতের আবহাওয়ায়।
ভারতের বাইরে শিখুক মরতে ভারত-সন্তান দলে দলে’’

কবিতাটি ভগিনী নিবেদিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ। কোনও পরিচিত কবি কবিতাটি রচনা করেননি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন, সমাজশাস্ত্রী, অর্থশাস্ত্রী, ঐতিহাসিক, জাতীয় শিল্প আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের শিষ্য শ্রুতকীর্তি অধ্যাপক বিনয়কুমার সরকার নিউইয়র্ক শহরে বসে একদা মনের তাগিদে কবিতাটি রচনা করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথের ‘লোকমাতা’, অরবিন্দের ’অগ্নিশিখা’ নিবেদিতার এক উজ্জ্বল ছবি সে কবিতায় ফুটে উঠেছে তাতে কোনও সন্দেহ আছে কি? কবিতাটি ঠাঁই পেয়েছে অধ্যাপক হরিদাস মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘ বিনয় সরকারের বৈঠকে- প্রথম ভাগ ( ২০০৩, পৃষ্ঠা: ৪৭) গ্রন্থে।

সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় নিত্যস্মরণীয় দার্শনিক, মাতৃসাধকদের সতীর্থ স্বামী বিবেকানন্দই যে নবভারতের স্রষ্টা সে নিয়ে কি কোনও সন্দেহ/মতপার্থক্য আছে?
কোনও ঐতিহাসিক অস্বীকার করতে পারবেন কি- ভারতের যথার্থ নবজীবনের স্পন্দন অনুভূত ১৮৯৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর মার্কিন মুলুকে মিশিগান হ্রদের তীরে? নবজীবনের জন্মদাতা এক তরুণ বাঙালী। বয়স মাত্র তিরিশ। বিনা নিমন্ত্রণে হাজির শিকাগো ধর্ম মহাসভায়।

ছোট্ট তিন মিনিটের ভাষণ। উপস্থিত প্রতিনিধিদের ‘ভগিনী ও ভ্রাতা’ রূপে সম্বোধন। বিশ্বের সর্বপ্রাচীন সভ্যতার পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন- বিভিন্ন পর্বত থেকে উৎসারিত নদনদী পরিণামে সমুদ্রে মিশে যায়। সেখানে সকলেই এক। কারও কোনও স্বাতন্ত্র‍্য থাকে না। থাকে না কোনও নিজস্ব অস্তিত্ব। সকল ধর্মেরই যাত্রা অনন্তের অভিসারে। সেখানে সব ধর্মই এক। কোনও প্রভেদ থাকে না। গির্জা থেকে যে ঘণ্টাধ্বনি শোনা গেল, তা যেন হয় যাবতীয় কলহ, বিরোধ ও দ্বন্দ্বের শেষ ঘণ্টা হয়। পরস্পরের প্রতি ভালবাসা, সহানুভূতি ও সহযোগিতাই নতুন পৃথিবী গড়ার একমাত্র পথ। সে পথই হোক- মানবজাতির যাত্রাপথ। একটি ছোট্ট ভাষণের মধ্য দিয়ে নবভারতের জন্ম হল। পাশ্চাত্যের মানুষ ভারতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠল।দীর্ঘদিনের কুসংস্কার ও অধীনতায় জর্জরিত ভারতবাসীর মধ্যে নিহিত আত্মবিশ্বাস জেগে উঠল। এককথায় তরুণ ভারতের নির্মাণ শুরু হল। নির্মাতা তরুণ সন্ন্যাসী রামকৃষ্ণ-সন্তান স্বামী বিবেকানন্দ।

অধ্যাপক সরকার একেই ‘বৃহত্তর ভারত’ বা ‘রামকৃষ্ণ সাম্রাজ্য’ নাম অভিহিত করেন। এ এক অভিনব সাম্রাজ্য। একে ভাব্সাম্রাজ্য বা ‘Ideological Empire’ বলা যেতে পারে। এ সাম্রাজ্যের প্রধান সেনাপতি স্বামী বিবেকানন্দ।

লন্ডনে স্বামীজির ভাষণ শুনে আইরিশ দুহিতা মিস মার্গারেট নোবল মুগ্ধ বিস্মিত ও বিমোহিতা হয়ে উপলব্ধি করলেন- স্বামীজী ভোগবাদে জীর্ণ দীর্ণ পাশ্চাত্য সভ্যতার নেতিবাচক দিকগুলির থেকে মানবজাতির মুক্তি চান। সাম্রাজ্যবাদ মুক্ত স্বাধীন ভারত গড়তে চান। দারিদ্র-অশিক্ষা-মুক্ত নতুন ভারত জেগে উঠবে। বিশ্ববাসীকে মুক্তির নতুন বার্তা দেবেন।
মার্গারেট ভারতে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। এ বাসনা সাময়িক আবেগ নয়। অন্তর থেকে উৎসারিত গভীর বিশ্বাসপ্রসূত দৃঢ় সিদ্ধান্ত। মার্গারেটকে স্বামীজী বারবার নিষেধ করলেন। ভারতে নাগরিক প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করতে হবে তাঁকে। কুসংস্কার, রক্ষণশীলতার পাহাড় ডিঙ্গাতে হবে। মার্গারেট নাছোড়বান্দা। মহামানবের মিলনতীর্থ, মানবসভ্যতার আদি ভূমি সাম্রাজ্যবাদী শাসনে জর্জরিত, নিস্পেষিত। নিস্পেষিত ভারতবাসীর সেবায় তিনি নিজেকে উৎসর্গ করবেনই। মানবেন না কোনও বাধা|।

ডন সোসাইটিতে অধ্যাপক সরকার আইরিশ মিস মার্গারেট-এর ভাষণ শুনলেন। বক্তৃতার বিষয় জাতীয়তা।

আইরিশ মার্গারেট-এর বক্তৃতায় বিনয়কুমার মুগ্ধ। তাঁর মনে হল- বিদেশিনী হলেও তিনি ষোলআনা ভারত ও ভারতবাসীর স্বার্থের প্রতিনিধি। মার্গারেট পদানত ভারতবাসীদের মুক্তিযুদ্ধের শরিক হতে চান।সাদা চামড়ার মার্গারেট-এর কাছে তিনি স্বাধীনতার অকপট বাণী শুনতে পেলেন।

বিনয় সরকার মনে করলেন, ‘…ওনার বুকনিগুলো বেশ জোরালো ও ঝাঁঝালো।..মনে হয়েছিল তাঁকে ভগ্নী বলা যেতে পারে। অধিকন্তু তাঁকে দেখে মেমসাহেব মনে হয়নি। কেন না তাঁর চেহারা বা চোখে কোনও বজ্জাতির ছাপ ছিল না। মনে হয়েছিল মেয়েটা একটা হৃদয়ওয়ালা সত্যিকারের মানুষ। ঘটনাচক্রে রংটা সাদা।’’( তদেব-পৃ ১৯৬)

ভারতে পদার্পণের সাথে সাথে মার্গারেট কাজে লেগে পড়লেন। সারদা মা’র আশীর্বাদের ফল্গুধারায় তিনি স্নাত হলেন। মা’র ‘আদরের খুকি’তে পরিণত হলেন। ভারতের সার্বিক মুক্তি উত্থানে তিনি নিজেকে নিবেদন করলেন। জাতীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্থাপত্য, চিত্রকলা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা – সর্ববিষয়ে তিনি ভারতবাসীর জাগরণে শুধু অংশগ্রহণই করলেন না, নিজেকে সম্পূর্ণ উৎসর্গও করলেন। গুরুর সান্নিধ্য, প্রেরণা ও উৎসাহ পেয়েছিলেন চার বছরেরও কম সময়।

বাগবাজার বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের মধ্য দিয়ে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে, বিশেষ করে নারী শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি প্রদীপটি প্রজ্বলিত করলেন। তিনি তাঁর গুরুর বাণীই অন্তরে স্থাপন করেছিলেন। নারীশিক্ষা ছাড়া ভারতবাসীর জাগরণ ঘটবে না।

আধুনিক যুগোপযোগী শিক্ষা হলেই চলবে না। মানবসভ্যতার কৃষ্টি সংস্কৃতির চিরন্তন ও শাশ্বত ধারণাকে আধুনিকতার রসে সিঞ্চিত করতে হবে। তাই ভারতীয় সভ্যতা ও কৃষ্টির উত্তরাধিকার রক্ষার কথা ভুলতে পারেননি।

জাতীয় শিক্ষাকে সতীশ মুখুজ্যে যে আন্দোলনে পরিণত করতে পেরেছিলেন, তার পশ্চাতে ভগিনী নিবেদিতার সস্নেহ ও সক্রিয় ভূমিকা কোনওদিন অস্বীকার করা যাবে না। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, রবীন্দ্রনাথ, ব্রজেন শীল, রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনারায়ন ঘোষ প্রমুখ শ্রুতকীর্তি মহাভাগগণ সেদিন ভগিনী নিবেদিতার সস্নেহ সান্নিধ্য লাভ করে ধন্য পুণ্য হয়েছেন। সর্বোপরি, অরবিন্দের জাতীয় শিক্ষা ভাবনা এবং নতুন ভারত ও নতুন দুনিয়া নির্মাণে ভগিনী নিবেদিতার নীরব সেবা ও সহযোগিতা আধুনিক ভারতের এক অবিস্মরনীয় ঘটনা।
কলকাতায় পদার্পণের সাথে সাথে দেখা দিল মহামারী-প্লেগ। প্লেগ প্রতিরোধে তরুণ সন্ন্যাসী কলকাতার রাজপথে সেবায় মগ্ন। পাশে সেবিকা এক বিদেশী। মিস মার্গারেট। আমাদের ভগিনী নিবেদিতা।
আর্তের সেবায় তরুণ দল। এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। ভগিনীর আহ্বানে দলে দলে ছাত্র যুবা সেবকে পরিণত। একদিকে সেবা অন্যদিকে মাতৃ উদ্ধারের সংকল্প। গুরু ও স্বপ্নের একই সম্পর্ক একই সাধনা-মাতৃ উদ্ধার-দেশ উদ্ধার। সেদিন নিবেদিতার সেবাদলে কলকাতার সেন্ট্রাল (অধ্যাপক ক্ষুদিরাম বসু স্থাপিত) কলেজের ছাত্র জ্যোতিন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ ও ভগিনীর স্নেহ সান্নিধ্যে ধন্য জ্যোতিন্দ্রনাথই আমাদের ‘বাঘা যতীন’। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম সন্মুখ সমরে জ্যোতিন্দ্রনাথ ও তাঁর চার সহকর্মী বুড়িবালামের তীরে চ্মীখন্ডের রক্তে ভেজা মাটিকে রক্ততীর্থে পরিণত করেছেন।

অরবিন্দ ও অনুশীলন সমিতিতে তাঁর অনুগামীদের বিপ্লব প্রেরণার মূল উৎসভূমি নিবেদিতা। স্বামীজীর মহামন্ত্র –‘’ভুলিও না তুমি জন্ম হইতে মায়ের জন্য বলিপ্রদত্ত’। মন্ত্রটিকে যে দামাল ছেলেরা কর্মে পরিণত করার সংকল্প করে, তাদের অন্তরালে স্থায়ী আসনে বিরাজ করছেন ‘অগ্নিশিখা’- তপস্বিনী লোকমাতা নিবেদিতা।

আত্মবিস্মৃত জাতির স্মরণ করা দরকার যে মহারাষ্ট্রের নাসিকে প্লেগ কমিশনের অত্যাচারে জর্জরিত, নিস্পেষিত জনগণের বন্ধু ও ত্রানকর্তা রূপে সেদিন এগিয়ে এসেছিলেন চাপেকার ভাতৃগণ। অত্যাচারী শাসকদের হত্যা করে তারা সেদিন দেশমাতৃকার মলিন মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন। ভগিনী নিবেদিতা চাপেকার জননীকে প্রণাম করতে নাসিক ছুটে গেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন-পুত্রহারা জননীর বিষন্নবদন প্রত্যক্ষ করবেন। চাপেকার জননীর স্বর্গীয় জ্যোতি উদ্ভাসিত মুখ দেখে নিবেদিত চাপেকার জননীকে প্রণাম করলেন। অনুভব করলেন- চাপেকার জননীর ন্যায় স্বর্গীয় সুষমামণ্ডিত জননী যে দেশে বিরাজ করে, সে দেশ বেশিদিন পরাধীন থাকবে না, থাকতে পারে না।

ঐতিহাসিক দিক থেকে মেনে নিতে হবে যে চাপেকার ভাইদের হাত ধরে যে যাত্রা আমাদের শুরু, তা পরিণতি লাভ করেছে মন্দারের মাটিতে রক্তস্রোত ও বলিদানের মধ্যে দিয়ে। মৃত্যুঞ্জয়ী বীরের দল সকলেই স্বামী বিবেকানন্দের সন্তান। আর অবশ্যই অগ্নিশিখা ভগিনী নিবেদিতার আশীর্বাদধন্য।

রবীন্দ্রনাথ, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, বিনয়কুমার সরকার, যদুনাথ, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, নন্দলাল বসু, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রভৃতি ভারতমনীষীরা ভগিনী নিবেদিতার স্নেহ সান্নিধ্য লাভ করে ধন্য হয়েছেন।

বসুবিজ্ঞান মন্দিরের পর্ব শুরু হয়েছে। বিজ্ঞান মন্দিরের প্রাঙ্গণে পা দিলেই কি নিবেদিতাকে অনুভব করা যাবে না? বেঙ্গালুরুর Institute of Science-এর প্রঙ্গনে পদার্পণ করলেই অনুভব করা যাবে সে আধুনিক ভারতের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের প্রথম জ্ঞানমন্দিরটি নির্মাণের অন্তরালে এক গেরুয়া পরিহিত এক তরুণ বাঙালি মার্কিন মুলুক যাত্রার সময় জাহাজের পাটাতনে দাঁড়িয়েছেন। উদ্যোগী পুরুষ জামসেদজি টাটাকে বলছেন-‘এক দেশ থেকে মাল কিনে অন্য দেশে মাল বেচে দস্তুরি মিলবে। দেশের কী হবে? দেশকে গড়তে গেলে দরকার ভারী ও বৃহৎ শিল্প, চাই লৌহ ও ইস্পাত শিল্প। চাই গবেষণা, নিরন্তর অনুসন্ধান।

তরুণ সন্ন্যাসীর বার্তা যেন ভারতজননীর নির্দেশ। জামসেদজি নির্দেশ মাথা পেতে নিলেন। গড়ে উঠল আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সারস্বত মন্দির।
তরুণ সন্ন্যাসীর শিষ্যাও কি একই কাজ করেননি? বসু বিজ্ঞান মন্দিরের গায়ের কারুকার্য, দীপশিখা হস্তে রমণী, প্রবেশ দ্বারা প্রত্যক্ষ করে কি আমরা আজও সেখানে ‘শিখাময়ী’, ‘ভারত উপাসিকা’, ‘মহাশ্বেতা’, ‘উমা হৈমবতী’-কে প্রত্যক্ষ করব না?ভারত জাগরণের প্রেরণাদাত্রীকে ভুলে যাব?সাম্রাজ্যবাদী শাসক সাত দশক আগে দেশ ছেড়ে চলে গেছে। আমরা স্বাধীন হয়েছি। আমরা শাসক বনেছি। আমাদের চতুর্দিকে আজ তবে এত আঁধার কেন? আধুনিকতার নামে আমরা উশৃঙখল হয়েছি। আমাদের মনুষ্যত্ব প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে, রাহাজানি হচ্ছে চিরন্তন মূল্যবোধ। ভোগবাদ ও আত্মসর্বস্বতা প্রতিদিন আমাদের মানবিক সম্পদকে কেড়ে নিচ্ছে।
নতুন আঁধার ঘিরে ফেলছে গোটা জাতিকে। আমাদের নতুন পথের সন্ধান করতে হবে। আমাদের এই দুঃসময়ে সিংহের গর্জন চাই। চাই গর্জন পুরুষ সিংহের। চাই নতুন ভাব আদানপ্রদানের। নিবেদিতা ও তাঁর গুরুর পথ ধরে শুরু হোক নতুন যাত্রা। জাতি নির্মাণের সেই যাত্রা শুরুই হবে নিবেদিতার প্রতি যথার্থ প্রণাম নিবেদন।
—————————————————

লেখক পরিচিতি – ইকনমিক্সে স্নাতক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর অধ্যাপক গুপ্ত নৃতত্ত্ববিদ্যায় পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করে অধ্যাপনা করেন কোলকাতার রামমোহন কলেজে। মাত্র তিরিশ বছর বয়সে দেশের সর্বকনিষ্ঠ প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগ দেন তুফানগঞ্জ কলেজে, পরবর্তীকালে বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয়ের উপাচার্যের আসন অলংকৃত করেন। দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কলেজ সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন, একাধিক বই রচনা করেছেন তিনি। বর্তমানে অবসর জীবনে লেখালেখিতেই নিমগ্ন থাকেন এই প্রবীণ অধ্যাপক।

Be the first to comment

আপনার মতামত...