হিন্দোল ভট্টাচার্য

তৃতীয় বিশ্বের সনেটগুচ্ছ

 


দেখেছি ভাঙন ধরে, ভেঙে যায় দেহ
ক’মহলা বাড়ি তার? বাসিন্দা ক’জন?
সবাই অতিথিপ্রায়, সহবাসী স্নেহ
ঝরে পড়ে যায়, একা থাকেন লালন
খাঁচার ভিতরে, তবু দরজা তার খোলা-
বেড়াতে যাওয়ার জন্য ডাক দেয় বাস
ধুলো, ধোঁয়া হিংসা, প্রেম,- যেন হরবোলার
মুখে মুখে ঘোরে টাকা, গোপন সন্ত্রাস

যেও না, ভিতরে থাক। হে মন, আদিম
আসলে পোশাক সব সভ্যতার মুখ;
তেমন সমস্ত রাস্তা, মুখোশ, ভূমিকা;
সাজানো মঞ্চের আলো, নির্বাচিত সুখ
কোথায় বেড়াতে যাবে? না হ’য়ে শিকার
ভাঙ, আরও জুড়তে জুড়তে, জ্বলো হে, পিদিম!



একটি বন্ধুর গলা শুনি আমি, দূরে
হয়ত শৈশব থেকে, দূরভাষে তাকে
চেনা মনে হয়, তবু, পর্দা ঘিরে থাকে;
ছবি তো ভাসে না, শুধু ছেঁড়া পাতা জুড়ে
কিছু কিছু দৃশ্য ভাবি, কে আঁকে তোমায়?
আমি তো ভুলেছি, তবে, রাখা আছে সব?
ছোটবেলাকার বন্ধু, আমার শৈশব-
পাশাপাশি গল্প কিছু, কান্না ভেসে যায়।

তবু চেনা লাগে, যেন দৃশ্যের ভিতর
আমিও ছিলাম দৃশ্য, অন্য কোনও জন…
সাইকেল চালানো সন্ধে, ক্যানভাস তখন
হয়ত সবুজ আরও, আমার অপর!
বন্ধুকে দেখি না চোখে, গলা ভেসে আসে।
সকলই রয়েছে বুঝি, সকলের পাশে।



পুরোনো কবিতাগুলি সত্যি হয়ে যায়
জীবনের, সব কিছু আগে ঘটমান
যা কিছু ঘটেনি তার কাছে অসহায়;
হত্যার যে কোনও সূত্র, তদন্ত, প্রমাণ।
সমস্ত কবিতা তবে নিখুঁত জ্যোতিষ?
সময় জীবনস্মৃতি লিখে রেখে যান।
লুকোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট, খুনীর হদিশ…
গোয়েন্দাকাহিনি যেন, রোমাঞ্চিত লাগে।

ঈশ্বর তোমার চোখে জেগে অহর্নিশ।
জীবন, আকাশপ্রিয়, একা একা জাগে।
কবিতা লেখার কথা তবে কি নিয়তি?
যা কিছু ঘটার, সব ঘটে গেছে আগে?
কার্যকারণের ফাঁকে অকারণ যতি-
চিহ্নই আসল, নেই লাভ কিংবা ক্ষতি!



একটি আলমারী আছে আমাদের ঘরে;
পূর্বপুরুষের রাখা গোপন কুঠুরী
আমিও বিশ্বাস করি, লিখিও অক্ষরে-

একদিন ঈশ্বর এসে চাবি খুলে দেবে-
বলি, জানলা খুলে দেব, ডাকাতি বা চুরি
কিছুই হবে না, আর হলেও কী নেবে?

টাকা, পয়সা, শস্যক্ষেত? মৃত্যুভয়, প্রেম?
আমি তো সংশয়প্রিয়, জানি না বিশ্বাস
আজ্ঞাচক্রে টের পাওয়া যায় যোগক্ষেম…

অথচ কালেরও নেই নশ্বরতা থেকে
ফুটিফাটা জমি তবু করে যায় চাষ
আলমারী খোলে না কেউ, মিনিট সেকেন্ড

কেটে যায়, একপলাশ, দুইপলাশ হাওয়া;
ঈশ্বর বোঝেন তিনি আসা ও যাওয়ার!



আকাশ শূন্যতা বলছে, শূন্য, পূর্ণতার…
শূন্যতা অভাব হলে, কী বা পড়ে থাকে?
পূর্ণতা? শূন্যতা শুধু শূন্য হয়ে গেলে
তাহলে কে থাকে? শূন্য? আশ্চর্য অবাক;

অবাক সমস্ত বিশ্ব, সময়ের ফাঁক
দ্বার খোলো, বলে কে যে, অন্ধকার ফেলে
কে পায় প্রশ্নের প্রশ্ন, উত্তরের ফাঁকে
আলোর ভিতরে থাকে স্তব্ধ অন্ধকার

শূন্যতাও জন্ম নেয় সময়ের সাথে
জন্মের ভিতরে মৃত্যু, বহু জন্ম পর
বহু মৃত্যু বোঝা যায়, হে পার্থসারথী
সব শুষে নেয় তার অন্ধকার গতি
হাঁ-মুখ, প্রবল খিদে, একাকী নাছোড়
জন্ম তুমি, মৃত্যু নাও, অনন্ত এ রাতে…




About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4593 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...