যেসব গ্রামীণ ছবি পিকাসো দেখেনি

শাশ্বতী সান্যাল

 

১.

 

অদূরে সাহেব বাঁধ, কোনো এক মুর্মুদের গ্রামে
তোমার হলুদ জামা অবিকল ফুটে আছে আজও
কিছুটা পুরোনো, আবছা, বৃষ্টিজলে ভেজা
আখের খেতের মধ্যে কিশোরীর লাল ঋতুদাগ

গাড়ি থেমেছিলো রোদে বেলা পড়ে এলো

দুআড়াই ঘন্টার এই ক্যানভাস থেকে
মুছে যাবে আলো আর গ্রামীন গির্জাটি
পশ্চিমের বন থেকে অকস্মাৎ শিসের আওয়াজে
পথ খুঁজে ফিরে আসবে পোষা বুনো কুকুরের ঝাঁক,
কানেস্তারাবাদকেরানদীর বিকেলে

শজারু শিকার শেষে ছোট ছোট দল আর
জেগে থাকা শান্ত চোরকাঁটা

পিচরাস্তাটির মোড়ে ডিসেম্বর ফুরিয়ে এসেছে।

 

২.

 

ব্যথাটি ব্যথার মতো জলরঙ স্বচ্ছতোয়া নয়
ঈষৎ মেধাবী মোটা পুরুষ আঙুল ছাড়া ছোঁয়া যায়না তাকে
নরম প্যাস্টেলে ঘসে ঘসে এই নদীদেশ আঁকা

অশ্বখুরাকৃতি অদ্ভুত বাঁকের কাছে তার
নারীটি দাঁড়িয়ে, যেন জলমগ্ন হোগলার বন
মায়াবী চিত্রল আসে তেষ্টা নিয়ে পূর্ণিমার রাতে

ব্যথাটি ব্যথার মতো ঘন সাদা; দুধে ভেসে যায়

কাঠুরিয়া দম্পতির কুঁড়েঘরে শিৎকারের রাতে
প্রথাসিদ্ধ সবুজ বড় বেশি শূন্য মনে হয়
স্রোত নেই কতদিন, রণনশব্দটি শুধু
নিরানন্দ, একা

এসব গ্রামীণ ছবি, মহামান্য, ব্যথাহত ব্রাশে

শরীরে জঙ্গল আঁকে, গাছে গাছে উদ্ভিন্ন অর্কিড।

 

৩.

 

বন্ধুর মৃত্যুর পর সব ছবি নীল হয়ে যায়
বাতাস বারুদগন্ধী, মদ আর বিলোল ইশারা
প্রখর আলোর কাছে যাওয়া যায়না এসব সময়

আপনি তো জানেন প্রিয় পাবলো এই ব্যর্থতার দিনে
প্রদীপ নিভিয়ে দিতে হয়

সোনালি পুরুষ নয়, ঘনকৃষ্ণ বাস্তুসাপ নয়
আমাদের স্বপ্নে আসে বাইকবাহিনী, কুনোব্যাঙ,
শুঁড়িখানা ভেজে ক্লান্ত রক্তবমি, কান্নার আওয়াজে

শ্মশানের মধ্যে যদি কোনোদিনও ঘুম ভেঙে যায়
(অস্ফুট গোঙানি যেন,  হাহাকার, কান পেতে শুনি)

হরিধ্বনি ভেসে আসছে কবিদের পাড়ায় পাড়ায়

এসব গ্রামীণ ছবি কীকরে বোঝাবে আপনাকে
বন্ধুর মৃত্যুর পর নির্বাচিত কবিতায় নিজেরই রক্ত লেগে থাকে।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4596 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

  1. আমি আমার ব্যক্তিগত ছবি পেলাম শাশ্বতী…ধন্যবাদ।

Leave a Reply to অনির্বাণ ভট্টাচার্য Cancel reply