গন্ধ-কাঁথা

অধীর বিশ্বাস

 

কাঁথা নিয়ে বসে আছি। কুঠিবাড়ির টিলায়। বেলা বাড়ছে কিন্তু রোদ ওঠেনি তেমন করে। তারই মতন আভা উঁকি দিচ্ছে। হয়তো একটু পরেই–।

টাক মাথা টাকটুক, বর্ষাকালে হা’গে সুখ! আকাশ ভেজা থাকলে সত্যি তো, রোদের তাপ বেরোবে কী করে? আর কাঁথা শুকনো না-করে বাড়ি ঢুকতে নিজেরই লজ্জা। কাউকে বলাও যাবে না। সে বার ক্লাশ ফোর।

সকাল সকাল দাঁড়ায় আছিস ক্যান? যদি কেউ জানতে চায়, কুঠিবাড়িতে কী কত্তি আইছিস রে?

সত্যিই তো! তেমন করে বলার থাকবে না। বলতে পারব কী, রাত্তিরবেলা বিছনায় পিচ্ছাপ করিছি, সেই ভুশড়িকাঁথা শুকোতে–! বউদি কইছে, ক্যাঁথা না-শুকোয় ঘরে ঢুকবি নে!

কেউ বলল? নাকি মনে মনে ভাবছিলাম, মনে নেই। মা মরে গেছে তার আগের বছর। আমি নাকি খুব ছোট থেকেই বউদিদের কাছে ঘুমোতাম। বউদি বড়দাকে বলছিল, কও, এত বড় ধাড়ি ছওয়ালের পিচ্ছাপ!

বড়দাই বুদ্ধি দিল, যা। কুঠিবাড়ি আগে রোদ আসে, গাছের ডালে খানিক মেলে দিবি, শুকোই যাবে।

ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে ফেল করার পর বাবা বিয়ে দিয়ে দিয়েছে বড়দাকে। তার পর দুই ভাই। তার পর আমি।

একটাই মোটে ছাতা। বাবা নিয়ে গেছে। এ-গ্রাম ও-গ্রাম ঘুরবে। ঘুরে ঘুরে কাজ করে। বর্ষাকাল খুব কষ্ট। আলিস্যিতে লোকে চুলদাড়ি কাটতে চায় না।

বাড়ি থেকে কুঠিবাড়ি বেশি দূর না। যদিও বিষ্টি কমেছে, গাছপালা নদীঘাট আকাশের রং– সব যেন সবুজ। পুরো সবুজ না-হলেও আমাদের গ্রাম যেন তখন ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। স্যাঁতসেঁতে ভেজা গ্রাম হয়েই বাস করবে দুমাস। তাই পথঘাটে প্যাচপেচে কাদাজল। এ সব পার করে কুঠিবাড়ির দিকে যেতেই বড়দা এগিয়ে এল। বকল না। কাঁধ থেকে কাঁথাটা নামিয়ে নিল। নিয়ে বলল, চল, আমিই দিয়ে আসি।– কবে যে পিচ্ছাপ করা যাবে তোর! বড় হচ্ছিস না? তোর এই গন্ধ-কাঁথা শুকোবে, কখন শুকোবে?

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4593 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

আপনার মতামত...