চার নম্বর নিউজডেস্ক
সিন্দ্রি। পুরুলিয়ার বড়বাজার ব্লক। কোথায়? জানেন কেউ? আছে, আছে এমন কোথাও আছে যেখানে স্বপ্ন বোনা হয়। সোনা দিয়ে। সোনা। স্বর্ণাভ। হ্যাঁ, স্বর্ণাভ। আই টি সেক্টরের কর্মী। নিরাপদ সুখী ভবিষ্যৎ। তবু, এ ছেলে অন্যরকম। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সময় পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে যোগাযোগ। একসময় টিসিএসে যোগ। আলাপ নির্মল শবরের সঙ্গে। কে নির্মল শবর? মহাশ্বেতার নিরলস কাজের অন্যতম ফসল। শবরদের প্রথম স্নাতক। নির্মল, স্বর্ণাভ এবং কৌদীন্য বসু। স্বর্ণাভর বন্ধু। সহযোদ্ধা। খেরিয়া শবরদের শিক্ষার হার তলানিতে। সরকারি স্কুলগুলিতে নামমাত্র ভর্তি। ড্রপআউট। নির্মলের মাথায় আবাসিক স্কুল তৈরি পরিকল্পনা ছিল। স্বর্ণাভরা লুফে নিল। জমি দেখা। স্কুল তৈরি। কিন্তু খরচ? আনুমানিক কুড়ি লাখ। যদি হাজার জন দুহাজার করে দেয়, কিংবা দুহাজার জন হাজার করে? স্বর্ণাভরা ভাবতে ভাবতে ছকে ফেলল গল্পটা। ফেসবুক পেজ তৈরি। হ্যাঁ, ফেসবুক। শুধুই আমিত্ব, প্রচার, ডিপি বদলের ফেসবুক না। স্বপ্নের কারখানা তৈরি কাঁচামাল ফেসবুক। পেজে প্রচার করে অভিনব ক্রাউডফান্ডিং এক। ২০১৭ সালে শবর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট তৈরি। স্বপ্ন সত্যি হল। স্কুল হল। আশি শতাংশ খরচ এই পেজে ক্রাউডফান্ডিং থেকেই। কিছু বয়স্ক মানুষও ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের বাড়ি গিয়ে অনুদান নিলেন স্বর্ণাভরা। আধুনিকতার বাইরে থাকলেও মানবিকতায় এখনও রূপোলী রেখার কাছে ঋণী আমরা – স্বর্ণাভ, নির্মল, কৌদীন্যরা জানেন। বাকিটা? শবর পরিবারগুলিকে বোঝানো। পঁচিশটি শবর ছেলেমেয়েকে দিয়ে শুরু। ক্লাস ওয়ান থেকে ওদের পড়াশুনো। পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন অ্যাকাডেমিক ইয়ার। শিক্ষক হিসেবে নির্মল আছেন, কলকাতা থেকেও একজন এসেছেন। আবাসিক স্কুল। খাবার? হ্যাঁ, স্বপ্নের কারখানা এই দিকটাও ধরল। থাকা, খাওয়া, পড়াশুনো। ফুটবল কোচিং ক্যাম্প। স্কুলে নিজেদের রোল নম্বর লেখা ভারতীয় জাতীয় দলের নীল জার্সির মতো দেখতে পোশাকে ওদের প্র্যাকটিস। ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়ে এইসব আলোর গল্প। একদিন বড় হবে ওরা। মাধ্যমিক দেবে। স্বর্ণাভরা জানে, তখনই প্রকৃত এক দিগন্তের দেখা মিলবে। এখন তো শুধুই রাস্তা তৈরি। লড়াই। স্বপ্নের কারখানা আরও অন্যান্য আলোর ফসল ফলাচ্ছে। পুরুলিয়ায় জলের কষ্ট। ডিপ বোরিং ওয়েল তৈরি। স্কুলের চৌহদ্দিতে টম্যাটো, শশা চাষ করে ছাত্র শিক্ষকদের খাওয়ানো। আত্মনির্ভরতা। ড্রাগ, অ্যালকোহলে, বিস্মৃতিতে তলিয়ে যাওয়া শবরদের হস্তশিল্পে প্রশিক্ষণ দেওয়া। যা কিছু সঞ্চয়, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা। কত কিছু …
সব মিলিয়ে ব্রিটিশ আইনে ক্রিমিনাল ট্রাইব শবরদের আরও, আরও বেশি আলোয় আনার চেষ্টা। মহাশ্বেতার দেখানো পথ। পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত, প্রতিকূল আবহাওয়া, ভূপ্রকৃতির এক জেলার ২০০টি শবর গ্রামের প্রায় ১৪০০০ শবরকে এক আলোর ছাতার তলায় আনার চেষ্টায় স্বপ্নের কারখানা। ছোট ছোট হাসিমুখ, আলোর কারিগরদের নির্মাণ। নিরাপত্তার, আমিত্বের, জনপ্রিয়তার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে। এই স্বপ্নের শেষ বলে কিছু নেই …