রায়া দেবনাথ
খবর-১
তারিখ ৬ মে, ২০১৯
স্থান: দেরাদুন
বিয়েবাড়িতে নেমন্তন্ন রক্ষা করতে গিয়ে ছিলেন দেরাদুনের জিতেন্দ্র দাস। দলিত যুবক। নিজের জাত 'ভুলে' সবার সঙ্গেই চেয়ারে খেতে বসেছিলেন তিনি। এই বিশাল 'অপরাধে'-র কারণে খেপে ওঠে উপস্থিত উচ্চবর্ণীয়রা। প্রথমে তার খাবার প্লেট লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়। তারপর পিটিয়ে খুন করা হয় ছুতোর মিস্ত্রি জিতেন্দ্রকে।
খবর-২
তারিখ ৮ মে, ২০১৯
স্থান: তামিলনাড়ু
বছর তিন আগে উচ্চবর্ণের কয়েকব্যক্তির দ্বারা আক্রান্ত এক ব্যক্তির পাশে এসে দাঁড়ান তিরুবন্তপুরমের এক যুবক। একে নিজে দলিত, তার উপর কথা বলছেন দলিতদের হয়ে! সমাজের উচ্চবর্ণের সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতে যাওয়ারও স্পর্ধা দেখিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেয়নি উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিরা। এতদিন সুযোগ হয়নি। ডামাডোলে। বছর তিনেক পর আগের অভিযোগ অনেকটাই থিতু। তাই বিলম্ব করেনি তারা। দলিত হয়ে উচ্চবর্ণের বিরোধিতার 'শাস্তি' স্বরূপ তিন উচ্চবর্ণীয় বীরপুঙ্গব রাস্তায় মেরে সেই প্রতিবাদী যুবকের গায়ে মূত্রত্যাগ করেছে। জোর করে মুখের মধ্যে গুঁজে দিয়েছে মানুষের মল।
খবর-৩
তারিখ, ১০ মে, ২০১৯
স্থান: গুজরাট
ঘোড়ায় চেপে বিয়ে করতে গিয়ে ছিলেন দলিত যুবক মেহুল পারমার। দলিত হয়ে ঘোড়ায় চাপা? এত্ত দুঃসাহস! খেপে ওঠে মেহুলের গ্রামের উচ্চবর্ণীয় সমাজপতিরা। খোদ গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান ঘোষণা করেন, দলিতদের ঘোড়ায় চড়ার কোনও অধিকার নেই। তাই ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে গিয়ে "অপরাধ" করেছেন মেহুল। দিতে হবে খেসারত। গ্রামপঞ্চায়েতের সভা থেকে মেহুল ও তাঁর গোটা সম্প্রদায়কে বয়কটের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চলতি মাসের, মাত্র চারদিনের অন্তরে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তিনটি ঘটনা। তিনটিতেই মোটামুটি স্পষ্ট ঠিক কীভাবে এই মুহূর্তে, এই ২০১৯ সালেও আমাদের দেশে দলিত, নিম্নবর্ণীয় মানুষদের বেঁচে থাকতে হয়। স্পষ্ট বৈষম্য এবং সরাসরি দমনের ফ্রিকোয়েন্সি ঠিক কতটা প্রবল। শুধু এই তিনটে খবরই নয়, চারদিনেই আমরা আরও কিছু খবর পেয়েছি। যেমন, গ্রামের শ্মশানে এক দলিত ব্যক্তির মৃতদেহটুকু পোড়ানোর অনুমতি মেলেনি; যেমন, স্বামীর সামনেই গণধর্ষণের শিকার এক দলিত মহিলা; এই রকম কত কী… মনে রাখতে হবে সেই খবরগুলোই সাধারণত মূলধারার সংবাদমাধ্যমে ঠাঁই পায় যেগুলোর অফিসিয়াল অভিযোগ জমা পড়ে। আসল চিত্রটা আদতে আরও অনেক বেশি ভয়ানক। শুধুমাত্র একসঙ্গে খেতে বসার জন্য যাঁদের পিটিয়ে মেরে ফেলা যায়, তাঁরা যে যথার্থ অর্থে এ’দেশে অবদলিত, অপ্রেসড তা বুঝতে খুব একটা মাথা ঘামাতে হয় কি? তা যেকোনও ক্ষেত্রেই সংখ্যাগরিষ্ঠ অপ্রেসডরা, অপ্রেসনের বাধা টপকে খুব সহজে যে প্রশাসনের দরজা অবধি যেতে পারেন না, বরং প্রতি পদে আর্থসামাজিক এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে প্রসাশনিক বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের, এটা আমাদের দেশে কোনও লুকনো খবর নয়। আবার প্রশাসনের কাছে গেলেই যে অপ্রেসডদের সব অভিযোগ ‘খবর’ হয়, এমন ভাববার কোনও বাস্তবতা এই মুহূর্তে আমাদের দেশে, একেবারেই নেই। অপ্রেসডদের উপর অপ্রেসনের প্রাবল্য, মাত্রা, ধরন, তার প্রতিবাদ ইত্যাদি প্রভৃতি অনেককিছুর তুল্যমূল্য বিচারের উপর তার খবর হয়ে ওঠার ‘যোগ্যতা’ নির্ভর করে।
এত অতিকথনের একটাই উদ্দেশ্য। এইটুকু বোঝানোর চেষ্টা যে এত প্রতিকূলতার পরেও চারদিনে এমন চরম অমানবিক নৃশংস ঘটনা যখন বড় বড় করে প্রায় সব সংবাদমাধ্যমে ঠাঁই পায়, তখন বোঝা যায়, আজও আমাদের দেশে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রতিনিয়ত প্রতি মুহূর্তে কী প্রবল আতঙ্ক অত্যাচারের পরিবেশে শ্বাস নিতে হয়। যার মাত্র কয়েক শতাংশ আমাদের গোচরে আসে। ওই সমুদ্রের বুকে হিমশৈলের মত। যার অল্প খানিকটা চোখে পড়ে মাত্র, বাকিটা ভয়ানক বিপদ হয়ে সমুদ্রের বুকেই ঘাপটি মেরে বসে থাকে।
আমরা খবরগুলো পড়ি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এড়িয়ে যাই। মাঝেমধ্যে সময় টময় পেলে পড়ে দেখি। এবং নিম্নবর্ণীয়দের সংরক্ষণের প্রশ্ন এলেই নিজেদের ‘অবহেলিত’ দাবি টাবি করে, ‘মেধা’ নামক একটি বিষয়কে অদ্ভুত প্যারামিটার দিয়ে বেঁধেটেধে কোমর কষিয়ে সংরক্ষণ বিরোধিতায় জোর গলা ফাটাই। কিন্তু রোজকার জীবনে কেমন আছেন এ দেশের দলিতরা, আমাদের সহনাগরিকরা— কোনওভাবেই তা জানার চেষ্টা করি না। ভুলে যাই সংরক্ষণ কিন্তু রয়েছে শুধুমাত্র সরকারি ক্ষেত্রেই। এর বাইরে বিপুল যে বেসরকারি পরিধি সেখানে কোথায় সংরক্ষণ?
ভারতের ন্যশনাল কমিশন অব সিডিউল কাস্ট অনুযায়ী দলিত বলতে তপশিলি জাতি ভুক্ত মানুষজনকে বোঝায়। দলিত শব্দটির আভিধানিক অর্থের কারণে সরকারি কোনও ক্ষেত্রে দলিত শব্দটির ব্যবহারও “অসাংবিধানিক”।
যেহেতু আমাদের দেশে শুধু তফশিলি জাতি নয়, প্রতি মুহূর্তে অপ্রেসনের শিকার হন তফশিলি উপজাতিভুক্ত (সিডিউল ট্রাইব) মানুষেরাও, এবং সংরক্ষণের প্রশ্নে উচ্চবর্ণীয়দের হাজারো অপমানসূচকের মন্তব্যের শিকার হন তাঁরাও, তাই এই লেখায় আলোচনা হবে তাঁদের নিয়েও। আলোচনা হবে সংরক্ষণের আওতাভুক্ত অনান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষজনকে নিয়েও।
সত্যিই কেমন আছেন এ দেশের তফশিলি জাতি এবং উপজাতির মানুষজন?
ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৬.৬% মানুষ তফশিলিজাতি ভুক্ত। তফশিলি উপজাতিভুক্ত মানুষ ৮.৬%.। আমাদের দেশে এসসি, এসটি, ওবিসি মিলিয়ে মোট জনসংখ্যার ৬৯.১৬% (২০১১ সালের সেনসাস অনুযায়ী)। খুব সহজ হিসাব করে দেখুন আমরা যাঁরা উচ্চবর্ণের, আমরা যাঁরা রিজার্ভ ক্যাটেগরির অংশভুক্ত তারা শতাংশের হিসাবে এ দেশের কতটা। ভারতের দরিদ্রতম মানুষ হলেন গ্রামীণ এসটি-রা। এসটিদের আবার ৯১.৪% মানুষই গ্রামে থাকেন। এরপরেই দরিদ্রতম গ্রামীণ এসসিরা। তফশিলি জাতিভুক্ত মানুষেদের মধ্যে ৭৯.৮% গ্রামেই থাকেন।
ব্রিটিশ সরকার পরবর্তী স্বাধীন ভারতের সংবিধান নির্মাতাদের অন্যতম ডঃ বাবা সাহেব আম্বেদকর সংরক্ষণের আওতাভুক্ত করেছিলেন ঐতিহাসিকভাবে ভয়াবহ বৈষম্যের শিকার সামাজিকভাবে অস্পৃশ্য জাতি ও উপজাতিদের। ১৯৮৯ সালে সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের চিহ্নিতকরণ প্রকল্পে গঠিত মন্ডল কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে শুরু হয় ওবিসি সংরক্ষণ।
সংবিধান প্রণয়নের ৬৯ বছর পর, সংরক্ষণ থাকা সত্ত্বেও আর্থিকভাবে যে সংরক্ষণভুক্ত জনসাধারণের কোনও আর্থিক উন্নতিসাধন যে এখনও হয়নি তা উপরের পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। তাঁরা এতটাই দরিদ্র এতটাই প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে বাধ্য হন যে, তাঁরা জানেন না অবধি সংরক্ষণের আওতাভুক্ত হলে কী কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়। আইন বা নিয়ম যাই থাকুক না কেন, এই মানুষদের সচেতনতা, অবস্থার উন্নতিকল্পে কোনও সরকারই সার্বিকভাবে যথেষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করেনি। যে যে আইন আছে তার প্রয়োগেও যথেষ্ট গাফিলতি না থাকলে পরিসংখ্যানটা এতটা করুণ হতে পারত না। এই দেশের বিরাট সংখ্যক নির্দিষ্ট জাতি এবং উপজাতিভুক্ত মানুষদের যুগযুগ ধরে আর্থিক অবস্থা এতটা খারাপ হওয়ার অন্যতম, বলা ভালো প্রধান কারণ কিন্তু শত শত বছর ধরে চলে আসা সামাজিক বৈষম্যই। খুব ছোট একটা উদাহরণ দিই। সামাজিকভাবে ‘নিকৃষ্ট’, চরম অসুরক্ষিত, প্রচুর শ্রম কিন্তু কম পারিশ্রমিকের কাজগুলো কিন্তু এখন যাঁরা সংরক্ষণের আওতাভুক্ত তাঁদের করতে বাধ্য করা হয়েছে। যেমন ধরুন ম্যানুয়াল স্ক্যাভেনজারস, সাফাইকর্মী, ইত্যাদি। এবং স্বাধীনতার এত বছর পরেও কিন্তু এই পেশাগুলোয় নিযুক্ত মানুষজনের সিংহভাগ তফশিলি জাতি, উপজাতিভুক্ত মানুষই। তারপরেই আছেন অনান্য অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ। বহুক্ষেত্রেই বংশপরম্পরায় পেটের দায়ে তাঁরা এই কাজই করে যাচ্ছেন। খাতায় কলমে নিয়ম যাই থাক না কেন সরকারি উদ্যোগে এই পেশায় নিযুক্ত মানুষদের সুরক্ষার জন্য ন্যূনতম ব্যবস্থা বাস্তবে গ্রহণ করা আগেও হয়নি, এখনও হয় না। ফলস্বরূপ এ দেশে খালি হাতে আমাদের যাবতীয় বর্জ্য সাফাই করতে গিয়ে চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে করতে প্রতি পাঁচদিনে একজন ম্যানুয়াল স্কাভেনজার মারা যান। এইটা একটা উদাহরণ মাত্র। শিক্ষার হারের খতিয়ান যদি দেখা যায় তবে দেখা যাবে সে’দিকেও ভয়াবহভাবে পিছিয়ে আছেন সংরক্ষণের আওতাভুক্ত মানুষ। না, ‘মেধা’ নামক বস্তুটির সঙ্গে এই পিছিয়ে পড়ার সম্পর্ক নেই। যে ভয়াবহ আর্থসামাজিক পরিবেশে তাঁদের বাঁচতে হয়ে, জন্মের পরে আমাকেও সেখানে ঠেলে দিলে, সংরক্ষণের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এখন যে লেখাটা লিখছি সেইটে লেখার সামর্থ্যটুকুও জুগিয়ে উঠতে পারতাম কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
১৯৮৯ সালের এসসি এসটি (প্রিভেনশন অব অ্যাট্রোসিটিস) অ্যাক্ট অনুযায়ী একদম শুরুর তিনটি ঘটনাই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তা সত্ত্বেও কী করে এমন দম্ভের সঙ্গে প্রকাশ্যে এই ধরনের ঘটনা দিনের পর দিন ঘটেই যাচ্ছে? উত্তর সেই একটাই। আইন আছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ এবং এই ধরনের অসুস্থ বৈষম্যমূলক মানসিকতা অভ্যাস পরিবর্তনে, সচেতনতা গড়ে তুলতে সরকারি স্তরে প্রয়োজনীয় যথাযথ উদ্যোগের প্রভূত অভাব এখনও রয়ে গেছে।
ফলস্বরূপ, আমাদের সমাজে বহাল তবিয়তে এখনও বিপুলভাবে বেঁচে আছে অস্পৃশ্যতা, বর্ণগত বৈষম্য, বৈষম্যভিত্তিক অত্যাচার।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি রিপোর্ট স্পষ্ট জানাচ্ছে আইন থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে তার প্রয়োগ যথাযথ হয় না।
১৯৬৮ সালের তামিলনাড়ুতে কিলভেন্নামানি ম্যাসাকার, ১৯৮৫ কারামচেডু ম্যাসাকার, নয় এর দশকে বিহার জুড়ে সংরক্ষিত শ্রেণির মানুষের উপর রণবীর সেনার অত্যাচার, ১৯৯১ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের সুন্দুরের ঘটনা, ১৯৯৬-এ মেলাভালাভু হত্যালীলা, পাঞ্জাবে রামাবতী দেবীর উপর নৃশংস অত্যাচার, ২০০০ সালে কাম্বালাপল্লীর ঘটনা, ২০০৩-এ কেরলের মুথানগাতে জমি দখলের বিরুদ্ধে জড়ো হওয়া দলিতদের উপর পুলিশের গুলি চালানো, ২০০৬ সালে মহারাষ্ট্রে মাহারদের খুন, ২০১২-তে ধর্মাপুরী ভায়োলেন্স, ২০১৩-তে মারাক্কাম ভায়োলেন্স, ভীমাকোরেগাঁওয়ের ঘটনা… এই তালিকা আদতে অনন্ত। ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সালে শুধু রাজস্থানে দলিতদের উপর বছরে অন্তত ৫০২৪টি করে অত্যাচারের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ৪৬টি খুন এবং ১৩৮টি ধর্ষণের ঘটনা।
এছাড়া ইস্কুলে দলিত পড়ুয়াদের জন্য ভিন্ন বাথরুম, মিডডে মিল দিতে অস্বীকার, ছুঁয়ে ফেললে অত্যাচার, জুতো পড়লে মার সবই চলেই যাচ্ছে।
এবং সংরক্ষিত শ্রেণির মহিলাদের অবস্থা সম্ভবত সবথেকে খারাপ। একে দরিদ্র তায় মহিলা তার উপর অন্ত্যজ শ্রেণি। একই সঙ্গে প্রবল পিতৃতন্ত্র আর বর্ণবৈষম্যের জেরে তাদের অবস্থার শোচনীয়তা আমাদের কল্পনার অতীত।
এই প্রসঙ্গে কথা উঠলেই অবশ্যম্ভাবীভাবে উঠে আসে রোহিত ভেমুলার কথা। একটি কেন্দ্র-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কীভাবে প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন রোহিত মৃত্যুর আগেই নিজের লেখা চিঠিতে জানিয়ে গিয়েছিলেন সেটাই। গোটা দেশজুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। রোহিতের মৃত্যু আত্মহত্যা নাকি প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা তা নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। একটি আদতে সব্বার জানা কিন্তু জোর করে অস্বীকার করা, চেপে রাখা বিষয়কে নিজের প্রাণের বিনিময়ে প্রকাশ্য আলোচনার প্রাঙ্গনে এনেছিলেন রোহিত। শুধু বিনিময়ে অকালে ঝড়ে গিয়েছিল তাঁর তাজা প্রাণ।
সংরক্ষণের প্রয়োগ, নিয়ম, পরিবর্তন, পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক ছিল, আছে, এবং থাকবেও এবং যতক্ষণ অবধি সুষ্ঠুভাবে সেই আলোচনা চলবে তাতে আখেরে লাভ হবে এই দেশেরই। কিন্তু সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে না, অন্তত এই মুহূর্তে যে নির্দিষ্টসংখ্যাক মানুষের সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে, তা অত্যন্ত স্পষ্ট।
কিছুদিন আগে তূলনামূলক নিম্নবর্ণের পুরুষকে বিয়ের জন্য স্ত্রীর বাড়ির লোকজন নিজেদেরই গর্ভবতী কন্যাকে স্বামী সহ পুড়িয়ে দিয়েছে।
বর্ণবাদী বৈষম্য কতটা প্রবল, ফি রোববার কাগজের পাত্র-পাত্রী চাই বিভাগই তার নিয়মিত প্রমাণ।
দূর হোক এই ভয়াবহ বৈষম্য। মানুষের সঙ্গে মানুষের অকারণ লজ্জাজনক বিভেদ। ধ্বংস হোক, বিভেদ বৈষম্য সৃষ্টিকারী সব ভাবনা, মানসিকতা। একসঙ্গে জোরদার হোক আওয়াজ। দাবি উঠুক যেটুকু আইন আছে তার যথাযথ প্রয়োগের। দাবি উঠুক রাষ্ট্রের দায়িত্বে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির। সংরক্ষণ বিরোধিতা না, দাবিটা হোক ইস্কুল কলেজ কর্মক্ষেত্রে আরও আরও বেশি আসন সংখ্যা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির। যাতে যুগ যুগ ধরে বঞ্চনার শিকারদের এগিয়ে আসার পথ অবরুদ্ধ না হয়, আবার কোনওভাবেই ন্যায্য প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় কেউই।