Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

দেশ সে আজাদি নয়, দেশ মেঁ আজাদি

জাহিদ রুদ্র

 

সাধারণ নির্বাচনের চতুর্থ দফায় ২৯ এপ্রিল বেগুসরাই সহ ভারতের অন‍্যান‍্য স্থানে শেষ হল। প্রথমত এখানে বেগুসরাই কেন আনলাম এ নিয়ে প্রশ্ন আসে। আর আসবে নাই বা কেন, টিভির পর্দায় আর যুবকদের মুখে মুখে তো এই নাম। কারণ হল এই সিট থেকে কানহাইয়া কুমার লড়ছেন।

এবারের নির্বাচনে আমার আকর্ষণ একমাত্র কানহাইয়া কুমারের দিকে। জিতবে কিনা না সেটা পরে আর আমার এটা নিয়ে বিশেষ কোনও মাথাব্যথা নেই। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে গিরিরাজ সিংহ হারবেন, বাস এইটুকু তো বলতেই পারি।  আমার যত উৎসাহ কানহাইয়াকে নিয়েই। আর হবে নাই বা কেন! দেশের ‘ইউথ আইকন’। বেগুসরাইয়ের কোন এক অজ পাড়াগাঁয়ে জন্মে ভারত কাঁপিয়ে এখন লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী এই ছেলেটি। তার দাদা মণিকান্ত খুব গোপনে অসমের এক কারখানার বাইরে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘ভাই ভারত-বিরোধী কিছু করতেই পারে না। ও চিরকাল মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, মানুষ ছাড়া দেশ কোথায়!’ তখন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠান ঘিরে জোরদার বিতর্ক চলছে গোটা দেশে। কানহাইয়ার বিরুদ্ধে ‘দেশদ্রোহী’র অভিযোগ এনেছেন বিজেপি সাংসদ মাহেশ গিরি।

জেএনইউ-র ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কানহাইয়া কিছুদিন জেলে ছিলেন। যার শেষ পরিণতি এরকম: বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনার নিজস্ব তদন্ত করে জানিয়েছে, সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মুখ-ঢাকা বহিরাগতরা দেশ-বিরোধী স্লোগান দিয়েছিল। আজ কানহাইয়া মুক্ত, যদিও বিজেপি-র তরফে বারবার তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা করা হচ্ছে। নির্বাচনের পর অবশ্য আর হবে না। জেএনইউ-র অনুষ্ঠানের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি এবং তাদের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ খুব পরিকল্পনা করেই গোলমাল পাকিয়েছিল। হিডেন অ্যাজেন্ডা একটাই, প্রাথমিক-মাধ্যমিক-স্নাতক স্তর পর্যন্ত বেসরকারি হাতে শিক্ষা চলে গেলেও উচ্চশিক্ষাটা এখনও বাগে আনা যায়নি, ওটা যেভাবেই হোক করতে হবে। সেটা হয়ে গেলেই কানহাইয়া-কাণ্ডও শেষ।

যেহেতু কানহাইয়া আর আজাদি এই শব্দ দুটি সমার্থক বিজেপির কল্যাণে, সেখানে বিজেপি-র একটা অভিনন্দন প্রাপ্য, যা ২০১৬ সালে দিয়েছেন শশী থারুর। তো কানহাইয়ার আজাদি কী? সেটা হল, ‘দেশ সে’ আজাদি নয়, ‘দেশ মেঁ’ আজাদি। আর তাই কানহাইয়া এই সেদিন ইন্টারভিউতে বললেন, ‘আমাদের দেশে এমন একটা সরকার চলছে যে সংবিধানের সমস্ত রক্ষাকবচ নষ্ট করতে চায়। আমি তার থেকে আজাদি চাই। কাশ্মিরে সেনাবাহিনীর শাসন চলছে, তার থেকে আজাদি চাই, সরকারকে প্রশ্ন করার আজাদি চাই। আমি এই দেশে যেখানেই অত্যাচার-নিপীড়ন-লাঞ্ছনা তার থেকে আজাদি চাই।’

কানহাইয়ার প্রচারের ভাষা অন্যরকম। প্রচারের এই ভাষাটাই ইদানীং বামপন্থীরা ভুলে গেছে। ত্রিপুরায় শুনেছি, ভোটের আগে বামপন্থীরা গরু নিয়ে কথাবার্তা বলছিল, পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী নেতা বিমান বসু সাতের দশকের মতো এখনও সাম্রাজ্যবাদ-ঔপনিবেশিকবাদ বলেই চলেছেন। প্রকাশ কারাট, এ রাজা, সীতারাম ইয়েচুরিরা এই মুহূর্তে যে ভাষায় কথা বলছেন, ওই ভাষা, সত্যি কথা বলতে কী, সাধারণের ভাষা নয়। আর তাই কানহাইয়া এক তাজা বাতাস।

আর তার সাথে যোগ হয়েছে গত পাঁচবছরের মেকি প্রতিশ্রুতিতে একেবারে তিক্ততা। ম্যাকিনসে-র (McKinsey) সমীক্ষা বলছে ভারতের প্রায় ৭০ কোটি মানুষ না খেয়ে শুতে যায়। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক তবুও এটা বুঝতে অসুবিধা নেই ভারতের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কতটুকু নিয়ন্ত্রণে! কাতার দিয়ে কৃষকের আত্মহত্যা, কৃষিতে বিপর্যয় আর শহরে ক্রমাগত বস্তিবৃদ্ধি তা সূচিত করে এবং এখন এটাই যেন স্বাভাবিক। শুধু ২০১৮ সালেই সাধারণ মানুষের অন্তত একশোটি আন্দোলন করেছে বামেরা এবং যার সাহসিকতা গোটা দেশকে স্তম্ভিত করেছিল। কারও ভুলে যাওয়ার কথা নয় মহারাষ্ট্রের কৃষকদের সেই লং মার্চের কথা।

বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতি ভারতের অর্ধেক মানুষের কোনও কাজে লাগেনি। খিদে ও বঞ্চনা সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। এজন্যই হয়তো যে কোনও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ মুহূর্তে বদলে যায় ভয়াবহ হিংস্রতায়। কৃষক, শ্রমিক, দলিত ও আদিবাসীদের কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখা হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই এদের উপেক্ষা করে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে তুষ্ট রাখার পন্থা নিয়েছে। কেননা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। যদিও ১৯৯১ সালে উদার অর্থনীতির পর এখন পর্যন্ত সরকারি নীতির প্রকৃত সুবিধা মধ্যবিত্তরা পায়নি, পেয়েছে ভারতের ১০ শতাংশ মানুষ। একে অর্থনীতির ভাষায় বলে অলিগ্যার্কি। যাদের হাতে রয়েছে ভারতের মোট সম্পদের ৭৫ শতাংশ। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য ওই ১০ শতাংশের কথাই ভাবে।

আমরা আজও ভুলিনি সেই ত্রিশ হাজার ফোসকা পড়া খালি পা, হাতে লাল পতাকা। যখন কৃষকরা জানতে পারলেন যে পরের দিন ছাত্রদের পরীক্ষা রয়েছে, তাঁরা সঙ্গে পোঁটলাপুঁটলি কাঁধে নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন, থামলেন গিয়ে ভোর রাতে মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানে। এই সংবেদনশীল আচরণ জিতে নিয়েছিল মুম্বাইয়ের হৃদয়, দেশের হৃদয়। আর কে না জানে, এরকম সংবেদনশীলতা একমাত্র বামপন্থীদের দ্বারাই সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে কেরলকে দেখতে পারেন। যখন নোটবন্দি, জিএসটির আবহে দেশে শুরু হয়েছিল মব লিঞ্চিং, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান-বিরোধী সেমিনার এবং প্রকাশ্য আলোচনায় অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ, তখন কিন্তু কেরলের লেফট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অন্যদিকে হেঁটেছে। সরকারি স্কুলের ছাত্রীদের সরকারের তরফে দেওয়া হয়েছে ফ্রি ন্যাপকিন, যাতে ঋতুমতী হওয়ার জন্য কোনও সামাজিক বিধিনিষেধে আত্মবিশ্বাস না হারায়। রূপান্তরকামীদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে গুরুত্বের সঙ্গে। কোচি মেট্রোয় টিকিট কালেক্টরদের নিযুক্ত করা হয়েছে রূপান্তরকামী সম্প্রদায় থেকে।

দেশের আর্থিক বিকাশের হার তলানিতে। এ নিয়ে আমাদের কোনও ভাবনা নেই!

আসুন, তথ্যে একটু চোখ বুলাই…

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসন-কালের বিগত ৫ বছরের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যেগুলো সমস্ত ভারতীয় নাগরিকের জানার মৌলিক অধিকার রয়েছে—

মোদিজি ৬০ মাস সময়কালের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
যার মধ্যে ৫৬৫ দিন, অর্থাৎ ১৮ মাস ২৫ দিন (কিছু কম ১৯ মাস) বিদেশে কাটিয়েছেন।
এটা পৃথিবীর যে কোনও দেশের, যে কোনও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে একটা রেকর্ড।
১০১ দিন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করে কাটিয়েছেন। অর্থাৎ ৩ মাস ১১ দিন কেবলমাত্র নিজের দলের হয়ে সময় কাটিয়েছেন।
১৫ জুন ২০১৪ থেকে, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত, সর্বমোট ৯২টা দেশ ভ্রমণ করেছেন। এটাও একটা রেকর্ড।
বিদেশ ভ্রমণের মোট খরচ ২০১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিটা দেশে ভ্রমণের জন্য, ২২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারে তিনি বায়ুসেনার বিমান ব্যবহার করেছেন। যদিও রাজনৈতিক কারণে সরকারি বিমান ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত নয়, তবু তিনি করেছেন।
বায়ুসেনার বিমান ভাড়া ঘণ্টায় ৩১০০০ টাকা মাত্র। (১৯৯১ থেকে এই রেট চলছে)
একবার ভাবুন, বেসরকারি চার্টার্ড প্লেন হলে কী পরিমাণ খরচ হত।
মোদিজির পূর্ববর্তী, মনমোহন সিং সর্বমোট ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এবং সেই ১০ বছরে, মোট ৬১৪ দিন বিদেশে ছিলেন, এবং ৭১ দিন নির্বাচনী প্রচার করেছিলেন।
অন্যদিকে মোদিজি ৫ বছরে ৫৬৫ দিন বিদেশে ছিলেন, এবং ১০১ দিন নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত থেকেছেন।
১৫মে ২০১৮ পর্যন্ত, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের বিজ্ঞাপন বাবদ ৪৩৪৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এটাও দেশের ইতিহাসে সর্বকালীন রেকর্ড।

২০১৪-২০১৫:

২০১৫-২০১৬:

২০১৬-২০১৭:

বিভিন্ন সরকারি চ্যানেলের পাশাপাশি “নমো টিভি” এবং কনটেন্ট টিভি নামক দুটো চ্যানেলের আগমন ঘটেছে। এটাও বিশ্বের ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা। কোনও প্রধানমন্ত্রী কেবলমাত্র নিজের প্রচারের জন্য, নিজের নামে একটা টিভি চ্যানেল খুলেছেন, আগে কখনও পৃথিবীতে এরকম ঘটনা ঘটেনি।

সরকারি চ্যানেল DD নিউজ, কিষান মেট্রো, DD ইন্ডিয়া, DD ন্যাশনাল, DD ভারতী, লোকসভা TV, রাজ্যসভা TV। এ ছাড়া দেশের প্রতিটা প্রান্তে, প্রায় প্রতিটা ভাষায়, DD চ্যানেল রয়েছে। যার দ্বারা সরকার অবিরত আত্মগরিমা প্রচার করে চলেছে। এই সমস্ত সরকারি চ্যানেলের বার্ষিক বাজেট ৪৪,০৯০০০০০০ কোটি, এ ছাড়া দূরদর্শন এবং অল ইন্ডিয়া রেডিও-র জন্য ২৮,২০,৫৬০০০০০ কোটি বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।

মোদি সরকার মোট ৬০ মাসে, ১৬১টা যোজনার ঘোষণা করেছে। সমস্ত যোজনার বরাদ্দকৃত বাজেটের চেয়ে বিজ্ঞাপন বাজেট অনেক বেশি।

কেবলমাত্র ৫০টা যোজনার অ্যাড বাবদ ৯৭,৯৩,২০০০০০০ টাকা খরচ করা হয়েছে।

এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১৮ কোটি ডিগ্রিধারী বেকার রয়েছেন। ১৭ লাখ বেকার PHD করার পরেও চাকরি পাচ্ছেন না।

এটা সরকারি হিসাব। কেবলমাত্র যাঁরা নাম নথিভুক্ত করেছেন, তাঁদের তালিকা।

ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, নির্বাচনের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, যে পরিমাণ টাকা খরচের হিসাব দেখায়, তার ৪৬% টাকা কোথা থেকে আসে, সেটা IT ডিপার্টমেন্টও জানে না। এর ৯০% টাকাই বিজেপি দলের অ্যাকাউন্টে আসে, এবং গোটা টাকাটাই কালো টাকা।

শাসক গোষ্ঠীর কাজই হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মনে সন্ত্রাসী হানা চালিয়ে যাওয়া। কাশ্মির, গোমাতা, গোমূত্র, এসব দিয়ে ব্রেইন ওয়াশ হচ্ছে। আর যারা এই গুণকীর্তনে শামিল হয় না তাদেরকেই ‘দেশদ্রোহী’ ‘পাকিস্তানি’ তকমা লাগিয়ে বাপান্ত ক‍রা হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে বামপন্থীরা যখন ডাক দিয়েছিলেন ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’, একটুও ভুল করেননি। একটুও দ্বিধা না করে বলি, যে স্বাধীনতা ভারতের মানুষ চেয়েছিল, সেই আজাদি আজও আপামর ভারতবাসীর আয়ত্তের বাইরে।

যতবার কাশ্মিরে গুলি চলে মরে সাধারণ নাগরিক, আর ওই পঙক্তিটা মনে পড়ে… ‘আমাকে কাশ্মীর বলে ছিঁড়ে ফেলে আমার ভারত’। দেশের সবাইকে তোতাপাখির মতো শেখানো হচ্ছে ‘কাশ্মির ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ’, কিন্তু পরের বাক্যে আর শেখানো হচ্ছে না যে কাশ্মিরকে এই মুহূর্তে যেভাবে কব্জায় রেখেছে প্রশাসন তা ঠিক নয়, কাশ্মিরিরা আমার ভাই-বোন, আমার মা, হ্যাঁ, মা।

এই লাইনটাকেই যদি একটু অন্যরকম করে ভাবি, যে কাশ্মিরের যত মানুষ আছে তাদের ইচ্ছেমতো শাসন করার, ধর্ষণ করার, অত্যাচার করার অধিকার আমার, মানে রাষ্ট্রের, আছে। কাশ্মির মানেই সেই জায়গা, যেখানে নির্বিঘ্নে অত্যাচার-ধর্ষণ করা যাবে। যেখানে নারী মাত্রেই ভোগ্য। তাহলে পঙক্তিটা একটু গূঢ় হয়ে ধরা দেয়। এরকমই, অন্তত আমার কাছে, আমাকে ইচ্ছামতো অত্যাচার-ধর্ষণ করা যাবে বলে যা খুশি করে আমার ভারত, যা আসলে শাসনযন্ত্র। শরীর আমার অথচ তাতে আমার নেই কোনও অধিকার। আমার শরীর যেন কাশ্মির, যত খুশি অত্যাচার করা যাবে। আমাকে শোয়াচ্ছ আগুনে, কখনও তপ্ত তাওয়ায়। বড্ড খিদে তোমার। চেটে চেটে, কেটে কেটে খেয়ে নিচ্ছ আমার শরীর, আমার আজাদি। গতকাল ‘হামিদ’ দেখার সময়ও বারবার ওই শ্লোগান মনে পড়ছিল ‘কাশ্মির মাঙে আজাদি’।

‘নেশন’ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধটা অন্ধ ভক্তরা পড়তে পারত। যাই হোক, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, শেহলা রশিদ, জিগনেশ মেহবানি, শাহ ফয়জল, উমর খালিদ, কানহাইয়া কুমাররা হলেন ভারতীয় রাজনীতির নতুন মুখ। যাঁরা প্রচারের ন্যারেটিভ বদলে দিতে এসেছেন। ছাতি ফুলিয়ে বিশ্রী ভঙ্গিতে ‘হামারা সেনা’, ‘ঘুস কর মারেঙ্গে’, ‘মন্দির ওঁহি বানায়েঙ্গে’ উচ্চারণ না করেও সুস্থ প্রচার যে করা যায়, এই নির্বাচনে কানহাইয়া কুমাররা তার উজ্জ্বল উদাহরণ। অপ্রাসঙ্গিকও একটা প্রসঙ্গ, তবু লিখি, অসমের অখিল গগৈ এই তালিকায় থাকতে পারতেন যদি তিনি শুধুই হিমন্ত বিশ্ব শর্মা-বিরোধী না-হয়ে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হয়ে উঠতেন।

ভক্তরা ভুলে যায় ইতিহাসকে। ভক্তদের ভুলিয়ে রাখা হয়— আইনের শেকল থাকলে শেকল ছেঁড়া পাখিও থাকে, উপনিবেশ থাকলে ভগত সিং থাকে, দলিত-নারী শোষণ থাকলে সাবিত্রীবাই ফুলেও থাকে; ‘আজাদি’ শ্লোগান যতদিন থাকবে কানহাইয়ার মতো আরও ছেলেমেয়েরা থাকবে, আর দেশজোড়া বিভেদের রাজনীতির ধারক-বাহক, গরীব মানুষের অধিকার ধ্বংসকারী ফ্যাসিস্ট বাহিনী থাকলে বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে থাকবে শ্রমিক-কৃষকের মেহনতি ঐক্য…