Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ওয়ার্চাস্ব

সত্যব্রত ঘোষ

 

শব্দটি প্রথম শুনি ১৯৮৮ সালে। ধানবাদের কয়লা মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানানোর সময়ে। কয়লা মাফিয়াদের কিংপিন সুরজদেও সিং গ্রেপ্তার হওয়ার পর। সরকারি হাসপাতালের বেডে বহাল তবিয়তে বসে বিশালবপু মানুষটি ক্যামেরা অফ হবার পর আমাকে সে বলে, “ইয়ে ওয়ার্চাস্ব হ্যাঁয় বাবু। আপ বাংগালি লোক ইসে নহি সমঝেঙ্গে।”

সত্যিই তখন বুঝিনি। তবে শব্দটি কানে লেগে ছিল। বহু বছর বাদে ‘সেহের’ (২০০৫) নামে একটি হিন্দি ছবিতে শব্দটি দ্বিতীয়বার শুনি। সেখানে আইপিএস নায়কের মা দর্শকদেরও বুঝিয়ে দেন ওয়ার্চাস্ব-র অর্থ। একাধিপত্যের জন্য লড়াই। নিরন্তর হানাহানির পর বাহুবলীরা এভাবেই সাধারণ মানুষদের উপর একাধিপত্য কায়েম করে এসেছে। এবং একসময়ে আরও শক্তিশালী কেউ ছিনিয়ে নিয়েছে সেই স্বত্বাধিকার। ইতিহাস এবং পুলিস ডায়রিতে যা এলাকা দখলের ছল-বল-কৌশল হিসেবে নথিভুক্ত, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অভিধায় তাই ওয়ার্চাস্ব। ইদানিংকালে সৌজন্যজ্ঞান বর্জিত রাজনৈতিক নেতাদের শারীরিক ভাষায় এবং বক্তব্যে এই ওয়ার্চাস্ব-রই প্রবল প্রতাপ।

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এখনও দুটি পর্বে ভোটদান বাকি। যুযুধান পক্ষদের আচরণ আর হুঙ্কারে ক্রমশ বাড়ছে মধ্যযুগের জাগিরদারদের ঔদ্ধত্য। হাতে অস্ত্র থাকুক বা না থাকুক, মাঠে-ময়দানের ভাষণসভায় অথবা টেলিভিশন স্টুডিওতে বিরোধী পক্ষের প্রতি তাঁদের অসহিষ্ণুতা ক্রমশ ভীতিজনক হয়ে উঠছে। শুধুমাত্র কটাক্ষ নয়, বিরোধীদের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়ে তাঁরা দর্শক ও শ্রোতাদের কাছে জনকল্যাণের বার্তা কতটা পৌঁছাতে পারছেন, তা জানা নেই। কিন্তু এটুকু তাঁরা বোঝাতে সফল ক্ষমতায় এলে বিরোধী কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হবে। ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠার জন্য এমন মরিয়া হয়ে ওঠবার ফলে রাজনীতিতে প্রতিশোধপরায়ণতা বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে স্বজনপোষণের জেরে দেশ ও রাজ্যের প্রশাসনিক কার্যকলাপ ব্যাহত হবার সম্ভাবনাও।

গণতন্ত্র যতই মহিমান্বিত হোক না কেন, সংবিধানসম্মত রীতি মেনে ভোটের মাধ্যমে সাধারণ ভারতবাসীরা কিন্তু নিজেদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করে সংসদে পাঠাচ্ছেন না। বরং তাঁদের ভোটের জোরে ব্যক্তিবিশেষ শাসনক্ষমতা লাভ করে। দেশ অথবা দেশের সমস্যা, তার সমাধান বা তার উন্নয়ন নিয়ে ভারতবর্ষের ছাপোষা মানুষদের এখনও বিশেষ ভাবতে দেওয়া হয় না। তাঁদের বোঝানো হয়েছে, অমুক রাজনৈতিক নেতা বা নেতৃবর্গ নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এলে তাঁদের সব দুঃখের অবসান ঘটাবে। দৈনন্দিন লড়াইয়ে টিঁকে থাকতে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর ক্ষুধার্ত মানুষগুলি এই বোঝানোতে সন্তুষ্ট নয়। তাঁরা চান না রাজনৈতিক দলগুলির কর্মকর্তারা তাঁদের ভোটকে সংখ্যায় পরিণত করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিক।

তাঁদের মনে প্রশ্ন কম নয়। তাঁরা জানতে ইচ্ছুক, দেশের সুরক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা, উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি বজায় রাখবার জন্য এই রাজনৈতিক নেতারা কি অপরিহার্য? সংবিধানসম্মত উপায়ে নির্বাচিত হওয়ার সুবাদে শীর্ষ পদগুলি যে তাঁরা অলঙ্কৃত করেন তা অনেকেই জানে। কিন্তু তার জোরে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে কি তাঁদের মালিকানা বর্তায়? যদি তাই হয়, সেক্ষেত্রে তার সময়সীমা তো বড়জোর পাঁচ বছরের জন্যই নির্দিষ্ট। অথচ সংশ্লিষ্ট সেই সংস্থাগুলিতে নিযুক্ত লক্ষাধিক শিক্ষিত, যোগ্য, বুদ্ধিমান যে কর্মচারীরা বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট দায়িত্বগুলি প্রত্যহ পালন করেন, তাঁদের প্রভু হিসেবেই নিজেদের দেখতে অভ্যস্ত কেন এই নেতা ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা? সংবিধান এবং দেশের আইন ব্যবস্থার ফাঁকফোকরগুলির সুযোগ নিয়ে কর্মচারীদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়ে, নয়তো বিপথে চালিত করে কেন তাঁরা সরকারি সংস্থাগুলিকে প্রায় নিষ্ক্রিয় করতে আগ্রহী?

আমরা তো দেখেছি, গত কয়েক বছরে ভিএসএনএল, বিএসএনএল, এয়ার ইন্ডিয়া, দূরদর্শন ইত্যাদি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে অকর্মণ্য এবং অলাভদায়ক ঘোষণা করে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। যে রাজনৈতিক নেতাদের দাপট জনগণকে অহরহ সহ্য করতে হয়, তাঁদের সঙ্গে মুনাফালোভী ব্যবসাদারদের সম্পর্ক অতি গভীর। অনিয়মের মাত্রা অত্যধিক হলে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় বটে। তবে জনসাধারণের স্বার্থ অবহেলা করে বিবদমান রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়া হামেশাই ঘটে। সেই তদন্তের বিবরণ আর তাই জনসমক্ষে পৌঁছায় না। আবার বহুক্ষেত্রে ইদানিং লক্ষ করা যাচ্ছে যে প্রশাসনিক কার্যকলাপ বিষয়ে জরুরি সিদ্ধান্তগুলি নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। দেশহিতে বিচারকরাই যদি মধ্যস্থতায় বসেন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি নেওয়ার ক্ষেত্রে, তাহলে প্রশাসনের শীর্ষস্থানে বসা রাজনৈতিক নেতাদের কর্মপদ্ধতি এবং মানসিকতা নিয়ে সন্দিহান হওয়া কি অন্যায়?

পেশাদার এই রাজনীতিবিদরাই দেশের ভাগ্যবিধাতা— তথ্যযুগে ভোটদাতাদের বিভ্রান্ত করবার জন্য এমন ধারণা নানা মঞ্চে প্রচারিত হয়েই চলে। এতে অশান্তি বাড়ে বই কমে না। কারণ এই ক্ষমতালোভী মানুষগুলির প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বস্ততা নেই বললেই চলে। আশাহত মানুষগুলি ভোট দিতে যান বিশ্বাসভঙ্গের রাগ ও দুঃখ নিয়েই। ভোটের মাধ্যমে জনসাধারণ যে উচিৎ জবাব দিতে পারেন তা নেতারা জানেন। তাই তাঁরা মানুষকে টাকার জোরে অথবা পেশিশক্তি দিয়ে নিজেদের বশে আনতে একেবারেই দ্বিধান্বিত নন।

গত পাঁচ দফার নির্বাচনে অধিকাংশ ভোটদান কেন্দ্রে আধা-সামরিক বাহিনী এবং পুলিস মোতায়েন ছিল। কিন্তু সাধারন মানুষ কি নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছে? তাঁদের ভোটাধিকার যে সুরক্ষিত, তাও বলা কঠিন। সরাসরি অথবা প্রচ্ছন্ন ভয় দেখানোর পাশাপাশি এবারের নির্বাচনেও গুলি-বোমা-ছুরির ব্যবহার হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনে ইভিএম-এর যান্ত্রিক ত্রুটির সংবাদ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে পৌঁছাচ্ছে। মেশিনের নির্দিষ্ট বোতামটি টিপে ভোটটি গৃহীত হওয়ার শব্দটি শুনে নির্বাচনকেন্দ্র থেকে একজন সাধারণ ভোটদাতা যখন বার হন, তিনি কি নিশ্চিত যে, তাঁর ভোটটি পছন্দসই প্রার্থীর অনুকূলেই নথিভুক্ত হয়েছে?

নির্বাচন কমিশনে কিছু অভিযোগ পৌঁছায় ঠিক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বরাবরই প্রমাণ করতে সচেষ্ট যে তাঁদের বন্দোবস্ত ফুলপ্রুফ। সর্বোচ্চ আদালত সম্প্রতি রায়ও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন দ্বারা নির্ধারিত ৫% ভিভিপ্যাডের ব্যবহারই যথেষ্ট। সারা দেশ জুড়ে নির্বাচন প্রক্রিয়ার এই বিশাল কর্মযজ্ঞে ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলি নিয়ে সমালোচনা চলতেই থাকবে। তবে সেই সমালোচনার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল নির্বাচনের রাজনীতি নিয়ে ওঠা কিছু মৌলিক প্রশ্ন।

যেমন, ভারতীয় কৃষকদের সঙ্কট। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন ২০২২ সালে ভারতীয় কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ হবে। কিন্তু গত দুবছরে তাঁদের অর্থ-উপার্জন সংক্রান্ত কোনও সরকারি তথ্য প্রকাশিতই হয়নি। এবং ২০১৩ থেকে ২০১৬ অবধি পাওয়া সরকারি তথ্যে গ্রাম্য অর্থনীতির যে অবনমনের সংকেত আছে, তাতে একথা বলাই যায় অলৌকিক কিছু না ঘটলে আগামী চার বছরে কৃষকদের দুর্দশা মিটবে না।[1] এখন, বলা হচ্ছে দুই হেক্টরের কম জমির মালিক কৃষকদের মাসোহারা হিসেবে ছয় হাজার টাকা দেওয়া হবে। ভোটের পরে তা কাজে পরিণত করা কতটা কঠিন তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি ভালই জানে। এমন চটকদার ঘোষণা করে নেতারা যে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেন, তা কি শুধু নির্বাচনী তর্জার চাপানউতোর হয়েই থাকবে চিরকাল?

এই ধরনের মিথ্যা আশ্বাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কি আমাদের দেশের আইনি ব্যবস্থা সক্ষম? কিছুদিন আগে পাঞ্জাবে মানুষরা দাবি তুলেছিলেন যে রাজনৈতিক দলগুলির দ্বারা প্রকাশিত নির্বাচনী ইস্তাহারগুলিকে আইনি নথি হিসেবে গ্রাহ্য করা হোক। সেই দাবির সপক্ষে পরবর্তীকালে কোনও কণ্ঠস্বরই উচ্চকিত হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইস্তাহারগুলিতে ছাপা বিভিন্ন দাবীর অবাস্তবতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা তর্ক করেন বটে। তবে নির্বাচনের পরে তা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায় রাজনৈতিক দলগুলির কাছে। ভারতীয় গণতন্ত্রের মহান ঐতিহ্যের ধারা মেনে!

ভারতবর্ষে জল সঙ্কটের সামগ্রিক ছবিটাও প্রশ্ন তোলে। স্বাধীনতার ৭১ বছর পরেও এই দেশের প্রায় দুই লক্ষ মানুষ প্রতি বছর মারা যায় স্বচ্ছ জলের অভাবে।[2] এবং আগামী দিনে এই সঙ্কটের সমাধান কোন উপায়ে সম্ভব, সেই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলির কোনও স্পষ্ট দিকনির্দেশ নেই। জাতপাতের সমস্যায় দীর্ণ এই দেশে জল সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি নতুন শ্রেণিবিভাজন এখন লক্ষ্যণীয়। শহর ও গ্রামের বিভাজন। শহরাঞ্চলের ঘরগুলিতে দৈনন্দিন যে পরিমাণ জল সরবরাহ করা হয়ে থাকে, তার এক ভগ্নাংশ পরিমাণ জল সন্নিকটস্থ গ্রামগুলিতে পৌঁছায় না। বিশেষত, দেশের পশ্চিম দিকে অবস্থিত বিভিন্ন প্রদেশের গ্রামগুলিতে সেরকম দৃষ্টান্ত অতি সাধারণ। এই সব জায়গায় মেয়েরা প্রতিদিন পায়ে হেঁটে বহু দূর থেকে একাধিক পাত্রে জল সংগ্রহ করে আনে। বিদেশিদের চোখে এমন দৃশ্য ভারতীয়ত্বের নির্যাস ফুটিয়ে তুললেও ভারতবাসী হিসেবে তা আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সম্মুখীন করে। দেশের অন্য প্রাকৃতিক সম্পদগুলির মতো জলকেও কি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন করবার প্রক্রিয়া চলছে? নাহলে, দীর্ঘ সময় ধরে এই শুখা অঞ্চলগুলিতে শাসকের মুখ বারবার পাল্টে গেলেও স্থানীয় মানুষদের জন্য জল সরবরাহের সুরাহা হয় না কেন? যেমন, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে যে সঙ্কট এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে৷ এই পরিস্থিতিতে সেখানকার সরকার যেকোনও দিন এমন একটি ঘোষণা করতেই পারে যে প্রত্যেক দেশবাসীকে নিজের উদ্যোগে পানীয় এবং অন্যান্য কাজের জন্য ব্যবহার্য জলের ব্যবস্থা করতে হবে৷

তৃতীয় যে প্রশ্নটি এবারের নির্বাচন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে তা হল, ভারতীয় রাজনীতিতে মহিলাদের অবস্থান কোথায়? ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মহিলাদের ৬৫.৬৩% ভোট দিয়েছিলেন, যা ২০০৯-এর তুলনায় প্রায় ১০% বেশি। একই পরিসংখ্যানে দেখছি পুরুষদের ভোটদানের হার তুলনামূলকভাবে কমেছে (২০০৯ সালে ৬৭.১৭% থেকে কমে ২০১৪ সালে ৬০.২৪%)।[3] অথচ, গত নির্বাচনে মোট ভোটপ্রার্থীর (৮২৫১) মাত্র ৮.০৯% শতাংশ ছিলেন মহিলা (৬৬৮)।[4] এবারের নির্বাচনে এখনও পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজু জনতা দল ছাড়া অন্য কোনও রাজনৈতিক দলই প্রার্থী তালিকায় মহিলাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়নি। অর্থাৎ, নির্বাচনের প্রার্থী তালিকায় ৩৩.৩৩% মহিলা সংরক্ষণের মূল প্রস্তাবটি অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ধর্তব্যের মধ্যেও আনেনি। এবং যারা এনেছে সেই দলগুলির কর্মকর্তারা মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কতটা যত্নশীল তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ রয়েই যায়। যে সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতা থেকে এই তাচ্ছিল্য এবং ঔদ্ধত্যের উদ্ভব, তা শুধু ভোটে জিতে ক্ষমতা দখলেই উদগ্রীব। এই প্রবণতা কি ওয়ার্চাস্ব-র লক্ষণ নয়?

বিরোধী কণ্ঠস্বর ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে ভারতীয় গণতন্ত্রে। এর ফলে নির্বাচিত সদস্যরা হয়ে উঠছেন অদম্য। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁরা যে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলি কার্যায়িত করছেন সেগুলি শুধু ত্রুটিযুক্ত নয়, পক্ষপাতদুষ্টও বটে। বিরোধীশূন্য সংসদে অথবা বিধানসভায় বিল পাস করবার মধ্যে দিয়ে কি গণতন্ত্রের জয় সূচিত হয়? কে জানে। রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সেই সিদ্ধান্তগুলি সমালোচনা করবার মানুষ ভারতে এখন কজন? যে সাংবাদিকরা টেলিভিশনে চেঁচায় নির্দিষ্ট চ্যানেলগুলির বাণিজ্যিক লাভের দিকেই তাঁদের সর্বাধিক নজর।

গত কয়েক বছরে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলির কর্মপন্থা সম্পর্কে সাধারণ ভারতবাসীর অভিজ্ঞতা সুখের নয়। তাঁরা বুঝতে পারছেন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কোনও বিশেষ একটি দল পাঁচ বছরের স্থায়ী সরকার পেতে পারে বটে, তবে জনকল্যাণের ব্যাপারে সেই নির্বাচিত সরকারের জবাবদিহির বিশেষ দায় নেই। প্রশ্ন তুললে হয় দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে প্রশ্নকর্তাকে, নয়তো নেতারা প্রশ্নগুলি এড়িয়ে যাবেন, বা মিথ্যাচার করবেন। অসহিষ্ণু মানুষগুলির লক্ষ্য বিরোধী কণ্ঠস্বরকে অশিষ্ট আচরণে স্তব্ধ করা। স্বত্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় দমনই যখন মূলমন্ত্র, তখন প্রতিশ্রুতিরক্ষা আশার অতীত। এমন পরিস্থিতিতে এবারের লোকসভা নির্বাচনে জনাদেশ যদি খণ্ডিত হয়, তাহলে তা ওই ওয়ার্চাস্ব প্রথার প্রতিবাদ হিসেবে গ্রহণ করাই শ্রেয়।

 


[1] https://www.bbc.com/news/world-asia-india-46640789

[2] https://www.google.com/search?q=(https%3A%2F%2Fwww.independent.co.uk%2Fnews%2Fworld%2Fasia%2Findia-water-crisis-shortage-niti-aayog-report-drought-mismanagement-a8403286.html)&rlz=1C1CHBD_enIN837IN837&oq=(https%3A%2F%2Fwww.independent.co.uk%2Fnews%2Fworld%2Fasia%2Findia-water-crisis-shortage-niti-aayog-report-drought-mismanagement-a8403286.html)&aqs=chrome..69i57.1544j0j4&sourceid=chrome&ie=UTF-8

[3] https://economictimes.indiatimes.com/news/elections/lok-sabha/india/more-women-are-coming-out-to-vote-in-general-elections/articleshow/68534320.cms

[4] https://adrindia.org/media/adr-in-news/indian-politics-women-candidates-2014-lok-sabha-elections