পীযূষ সরকারের কবিতা
১.
আমার মতো অনাথের জন্য আকাশ একটা বড় আশ্রম, নদী একটা নিরাময়, পাখি একটা ডানাওয়ালা ত্যাগ..
আমি একা থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি
একার ভেতর অপেরা সং বাজাই
একা নাচে…
এখন আর ফেরার সময় নেই
আমি পোষাক খুলে পরে নিয়েছি উদাসীন…
দাহ সেরে, গদাধরের জলে ধুয়ে এসেছি হাত
এখন সঙ্গম নয় বরং ঈথার নিয়ে কথা বলো
অংক নয়, লালন কষা যাক…
কেউ একদিনে পাল্টায় না
পলি জমতে জমতে যেমন পাললিক, মানুষ মুছতে…. মুছতে….. শয়তান…
আমিও বিকল্প নই
অন্ধকারে ডুবে ছিলাম, আছি;
জরায়ুর মতো অন্ধকার..
আমি জানি
পরজন্ম মানে পরের জন্ম নয়
বিশুদ্ধ ব্যাথা উঠলে …এক্ষুণি, এখানেই জন্মান্তর হবে
এবং, ‘মা’ মানে বিস্তার, পঞ্চভূত..
২.
যন্ত্রণা থেকে বেড়িয়ে আসার একমাত্র পথ যন্ত্রণাই
সেজন্য নির্জলা একা হতে হয়, হাঁটতে হয় খালি পায়ে
হাঁটতে হাঁটতে আবিষ্কার করতে হয় পথ কেমন বুক চিরে বেড়িয়ে গেছে মানুষের
পথ কেমন কান্না, পথ কেমন ভাঙন
তুমি চুটকি মেরে উড়িয়ে দিতে পারো সব
মুখের উপর ‘না’ বলে দিতে পারো..
আমি তবুও মুখোশ পরবো না, সং সাজবো না অচৈত্রে
এই মুখ আমার পিতৃপুরুষের, এই শরীর বহুজন্মের খামারবাড়ি
যদি একটি ধানের যোগ্যও আমি না হই
যদি একটি পাখিও উড়ে না আসে এই অভাগার দিকে
তবু সারিন্দা বাজিয়ে এই কৃষিগান, এই কাতি পূজা, এই হুদুমনাচ চালিয়ে যাবো আমি
যন্ত্রণা থেকে মুক্তির একমাত্র মদ যন্ত্রণাই
আমি তার পান নয়, পাত্র হতে চাই
৩.
গভীর রাতে নিজেকে সেই ভাগচাষি মনে হয় অকাল বর্ষায় যার শীষসুদ্ধ ধানক্ষেত ডুবে গেছে;
যার মা ব্যামার, বাবা ব্যামার..
সামান্য পুঁটি মাছের লোভে যে বিশ্বব্যাপী এক ফাঁদে পড়ে গেছে ..
যার পেশির তাবিজ কুনুই বেয়ে নীচে..
গত দুবছরে যার একবারও সঙ্গম হয়নি
না প্রেম, না আলিঙ্গন
বৌ ভাবছে কাপুরুষ, চুল্লুখোর…
তখন ভাস্কর চক্রবর্তী ওল্টাই, নবারুণ ঘাঁটি, সুজিত অধিকারী পাঠ করি.. একটার পর একটা সিগারেট, বুকের বোতাম খুলে হালকা হই…
রাত আসলে নিসর্গ এক সারিন্দা
গহীন দুঃখে যে একা একাই বাজে-
“হায় হায় রে কুঙ্কুরার সুতা হলু লোহার গুনা রে..”
সুরের চোখ নেই, অশ্রুকণা আছে..
৪.
অনেক হারের পর, তিরস্কার ও অপমানের পরও
হোহো করে হেসে উঠছি, ইটের টুকরো তুলে ছুঁড়ে দিচ্ছি শান্ত আকাশে
আমি পরোয়া করি না, যেন
যে কোনও সুন্দরের ঠোঁটে চুমু খেতে পারি। তিনবাত্তি মোড়ে
ট্রাফিক অচল করে দেখাতে পারি খেলা-
শরীরভর্তি সাপ, শরীরভর্তি বিন বাঁশি
অথচ আমার কোনও জাদু নেই, মন্ত্র নেই, তুকতাক নেই
সবই ভালোবাসার জোর, যা তুমি বিশ্বাস করো না
পছন্দ করো না আমি উলঙ্গ বলে….
৫.
আমার ভেতর যে শয়তান, তাকে আমার প্রেমিকা দেখেছে। আমার প্রেমিকার ভেতর যে সাপ আমি তাকে পুষি। আমার বাবার ভেতর যে ফাটল, মা রোজ তাতে মাটি লেপে দেয়। আমার মায়ের ভেতর যে রান্নাঘর, তাতে একটা উপবাস লেজ নাড়ে, লাফায়। সম্পর্কের বেশি কাছে যেতে নেই, সম্পর্কের বেশি দূরে যেতে নেই…
প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব কবর!
৬.
সম্পর্ক এমন একটা বিছানা
যেখানে সবাই একা একা শোয়
ঘুমের ভান করে, কথা বলে বিড়বিড়
দিনের আলোয় এইসব চোখে পড়ার কথা নয়
দিনের আলোয় বেঁচে থাকা চক্ চক্ করে
বহুজন্ম সহবাসের পর বোঝা যায়
কেউ নেই, কিচ্ছু নেই
জীবন নিঃসন্তান….
৭.
আমার ভেতর হুবহু আমারই মতো একজন আছেন
তিনিও গরিব মানুষ, বন্ধনের কিস্তি দিতে দিতে ফতুর
বুকে সন্তানের মুখ নিয়ে কাজে যান, সন্তানের মুখ নিয়ে ফেরেন
মাঝে মাঝে ঈশ্বরকে ডেকে বলেন-
নিয়ে যাও..
মানুষটির সাথে আমার দেখাও হয়েছে
সংসারের ভেতর
সংসার ত্যাগের ভেতর
আমাদের দুজনের ঠোঁটেই তিল
দুজনেরই অপমৃত্যুর সাথে প্রেম…
৮.
সব কবিতা, সব গান, সব প্রেমের পর হাড় হিম থমথমে যে জীবন
তার কাছে আজ ফাঁস করে দিই-
আমি অর্ধেক গাছ, অর্ধেক কুঠার
বেঁচে থাকার ইচ্ছে যেমন ফুরিয়ে যাচ্ছে দিন দিন
মৃত্যুভয়ও বাড়ছে
শূন্যতার মৌমাছি চাক বানাচ্ছে বুকে
আমি সেই শূন্যতার মধু খাচ্ছি
মোম দিয়ে বানাচ্ছি তোমার মুখ, হে প্রাক্তন
আজ বুঝি, প্রেমের চেয়ে প্রত্যাখ্যান কত হিতকর
মিলনের চেয়ে বিরহ কত ক্লাসিক
কেন যে কোমড়ে তাবিজ বেঁধেছিলাম সেদিন
চোখ বন্ধ করে খেয়েছিলাম মাটিপড়া, মন্ত্রপূত মদ
সামান্য ভালোবাসার লোভে ঢুকে পড়েছিলাম ভয়ঙ্কর কাপালিকের ডেরায়, বিষণ্ণ শবসাধানায়
কেন যে ছাইয়ের মতো তোমাকেই শরীরে মেখেছি
আমি খুব ভালো নেই কিন্তু বেঁচে আছি আজকাল
নায়েব আলী টেপুর মতো লো ভলিউম-এ বেজে যাচ্ছে জীবন
৯.
দিদির বোন ছিল না বলে ছোটোবেলায় আমাকে ওর ওড়না দিয়ে শাড়ি পরিয়ে দিত, কপালে টিপফোটা, নখে নেইলপলিশ ..
মেয়ে হিসেবে দিদির থেকেও সুন্দরী ছিলাম আমি!
আমরা কুতকুত খেলতাম, বৌবালতি খেলতাম,দুজন দুজনের উকুন বেছে দিতাম, মিচাং ব্যাঙের বিয়েতে বৈরাতী সেজে নাচতাম খুউব –
“বরণ বরিতে চাইলোন চায়/ নাকের নোলোক আঈ মোর ঢুল খেলায়/ ও কি ওহরে/
বরণ বরিতে আঈ মোর আরোও বা কী কী নাগে রে”
এরপর দিদি বড় হল। বাধ্য হল। বিয়ে হল। মা হল।
আমার দুগ্ধ দানের স্তন নেই, জরায়ু নেই,সক্ষম ভ্রূণ নেই, মায়াময় যোনিপথ নেই..
কিন্তু তীব্র এক প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে অবাধ্য সেই নারী-বীজ ঘুমের মতো জেগে রইল ভেতরে..
সিগারেট আর জল, জল আর সিগারেট করে কোনওদিন ভোর চারটে অব্দিও আলো জ্বলে আমার, চোখ লাল। শুধু মনে হয় আমি পুরুষ নই, আমি পুরুষ নই। আর অসহ্য সেই যন্ত্রণা। সমস্ত ব্যর্থ কবিতার খাতা, ভুল অক্ষর, চালাকির বই, মিথ্যে স্মারকলিপি দুমড়েমুচড়ে স্যান্ডোগেঞ্জির নিচে ঢুকিয়ে গর্ভবতী হয়ে কাঁদি। মেঝের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে ফিস্ ফিস্ করি – “পুশ পীযূষ, পুশ “
কোনও ফল হয় না। নিরাময় দিগন্তের মতো সরে সরে যায় আর আমি দিকশূন্য হয়ে হাঁফাতে থাকি শুধু ..
কোনও এক অদৃশ্য ইশারায় আমি মা হতে গিয়ে বাবা হয়ে যাই,…. বাড়িতে স্বামীর অভিনয় করি, স্কুলে মাস্টারমশাই…
কেউ টের পায় না আমার বাঁ হাত কেন বেশি দোলে । কেনই বা দোতারার ডাং-এর তাল আমার হাঁটাচলায় …
চোখের তারায় গব্যঘৃতের চাইলোন বাতি। মহাকালও না..
মহাকাল নারী না পুরুষ মনোজদা?
১০.
এই দুনিয়া ‘শ্রীনিকেতন’, কেনাকাটার আনন্দ নিকেতন .. ঝলমল করছে লক্ষ্য ও বস্তু, ঝলমল করছে কিফায়ত । এখানে
জীবন বড় সস্তা, ফ্রিতে, বিলিয়ে দিলে পারতো ..
যদিও আমি কিছু চিনি না… কিনি না… শুধু পাক খেয়ে ঘুরি, দেখি –
তুমি একটা সিড়ি দিয়ে উঠে এসে অন্য সিড়ি দিয়ে নেমে যাও ..
আমার খুব পাপ করতে ইচ্ছে করে তমিশ্রম, শুকরমুখম, মহারৌরব, কালসূত্র, শাল্মলী …
পাপের শাস্তিগুলো টানে…
সর্বোপরি জলন্ত থামের সাথে আলিঙ্গন!
ছোটোবেলায় আমার অনেক বড় হওয়ার লক্ষণ ছিল কিন্তু বড় হয়ে আমি খুব ছোটলোক হয়ে গেছি….
ভিখিরিকে খুচরো দেই না, গাছের গোড়ায় জল দিই না, অগ্নিতে আহুতি দেই না …
আমার ভেতর বসে আমি নিজেই করাত চালিয়েছি দিনরাত ..
কেটে ফেলেছি শৈশবের আম, কৈশরের মাদার, যৌবনের কৃষ্ণচূড়া….
আমি বড় বৃক্ষহীন, সন্দীপন …. ভয়ংকর অনাথ..
এই অনস্তিত্ব থেকে নতুন করে কিছু শুরু করা যায়?
গান? প্রেম? ধ্যান? রাজনীতি?
কোনটা মানাবে ঠিক?
আত্মহত্যার আগে আমার শেষ ইচ্ছে কী হওয়া উচিত?
পীযূষ সরকার : প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন এক তরুণ কবির সন্ধানে
উত্তম দত্ত
বাংলার উত্তরাঞ্চলের প্রত্যন্ত মফসসলের এক তরুণ নিরন্তর আত্মখননের সংবেদনা নিয়ে লিখে চলেছে আশ্চর্য সব অন্তর্মুখী কবিতা:
(১)
টানা আটমাস খুব সন্তর্পণে খুন হলাম আমি। মরদেহে সামান্য মাটি বা আগুন দিল না কেউ। দিন তিনেক অশৌচ না, দুবেলা হবিস না! আমার অতৃপ্ত আত্মা এখন ফনীর মতো উড়ে বেড়ায়। নিজের ঘর নিজে ভাঙে, নিজের গাছ উপড়ে ফেলে নিজের ভবিতব্যে। পরিবারের চোখে জল। ঈশ্বরের কপালে ভাঁজ। মৃত্যুর পর এই জীবদ্দশা, এই অস্থিরতা অলক্ষুণে বৈকি!
ময়নাতদন্ত শেষ। হতোদ্যম পুলিশ কুকুর।
কী শাস্তি? কী বিধান? এ ক্ষতির দায় নেবে কে বা?
খুনিও কাছের লোক..
নিষ্পাপ। প্রণয়ী। রহস্য বিধবা..
(২)
আমি কোনোদিনই মানুষ ছিলাম না
সুন্দরের যোগ্য ছিলাম না
হৃদয়ে এখনও গুহাজীবনের শ্যাওলা
শরীরে বহুগমন…
তুমি তবুও হাত ধরলে
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালে কোচবিহার, লাটাগুড়ি, ডুয়ার্স..
আঙুল ভাঁজ করে তৈরি করলে মোহময়ী লাভ সিম্বল!
আমাকে রতি শেখালে, সুখ শেখালে, গোপনে ঈশ্বর শেখালে
শূন্য বিষয়ে সারারাত তর্ক করলাম আমরা
মেধা ঠুকে আগুন জ্বালালাম
আবেগ ঢেলে চা বানালাম
যুক্তিজাত চুরুট…তারপর, ভোরের দিকে ঘুম পেল খুব
ঘুমিয়ে পড়লাম
ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হল
মরার পরও কত্তো কথা ….মনে পড়ে, প্রাণবেহুলা?
এই ছেলেটিকে দেখুন। আমি সাহিত্যে উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমে বিশ্বাস করি না। আমার বিশ্বাস জগন্নাথ মন্ডল, গৌরাঙ্গ মন্ডল, শাশ্বতী সান্যাল, সুভান দাসের মতো এই তরুণ কবি পীযূষ সরকারও একদিন দিকশূন্য-বঙ্গদেশের মনস্বী ও মরমী পাঠকের নিবিড় ভালোবাসা ও অপরিমেয় শ্লাঘার সামগ্রী হয়ে উঠবে।
অনেকেই চেনেন পীযূষকে। ভালোবাসেন তাঁর লেখা। আমিই তাকে চিনেছি একটু বিলম্বে। তাকে পড়েছি আর মুগ্ধ বিস্ময়ে খুঁজে বেরিয়েছি তার প্রকাশিত অপ্রকাশিত সমস্ত কবিতার সম্ভার।
‘সুতরাং, শিস দিলাম’, ভাঙা মানুষের রিংটোন, ‘আমাছামা চান’ — এইসব বই রয়েছে তার হাতে। অথচ আমিই জানতাম না। পড়ে মনে হল, এ আমার ঘরের কাছে লোকচক্ষুর অগোচরে বেড়ে ওঠা শিশির-সিক্ত দূর্বাদল। চোখের এত নিকটে ছিল বলেই হয়ত চোখে পড়েনি এতকাল।
ঈষৎ লাজুক চেহারার ছেলেটিকে সামনে থেকে দেখেছি দু একবার। মনে হয়েছে মুখ দেখানোর চাইতে মুখ লুকোনোতেই সে বেশি স্বচ্ছন্দ। অ-বিজ্ঞাপিত মুখ তার শ্যামল দিঘির মতো সুন্দর।
কী আশ্চর্য সুন্দর তার কাব্যভাষা ও বোধের ভুবন। এক অননুকরণীয় লিখন-শৈলী তার। রাজবংশী ভাষার ভিতরেই তাঁর আজন্ম বসবাস। তাই মাঝে মাঝেই এই উপভাষার পাখিরা এসে ডানা মেলে তার কবিতার আকাশ-নীলিমায়। এভাবেই বাংলা কবিতার শিরোভূষণ ভরে ওঠে নতুন পাখির পালকে।
কবিতায় আত্মবীক্ষণ ও আত্মব্যবচ্ছেদের ভাষা যে কত গহন ও মর্মচ্ছেদী হতে পারে তা আমরা দেখেছি শামসের আনোয়ার, তুষার রায়, ফাল্গুনী রায়, অরুণেশ ঘোষের মতো কবিদের সৃজনকর্মে। পীযূষ সেই রক্তিম তামস-প্রবাহের এক উজ্জ্বল উত্তরাধিকারী।
পড়ুন তাঁর কয়েকটি কবিতার নির্বাচিত নির্যাস—-
(১)
তুমি চুটকি মেরে উড়িয়ে দিতে পারো সব
মুখের উপর ‘না’ বলে দিতে পারো..
আমি তবুও মুখোশ পরবো না, সং সাজবো না অচৈত্রে
এই মুখ আমার পিতৃপুরুষের, এই শরীর বহুজন্মের খামারবাড়ি
যদি একটি ধানের যোগ্যও আমি না হই
যদি একটি পাখিও উড়ে না আসে এই অভাগার দিকে
তবু সারিন্দা বাজিয়ে এই কৃষিগান, এই কাতি পূজা, এই হুদুমনাচ চালিয়ে যাবো আমিযন্ত্রণা থেকে মুক্তির একমাত্র মদ যন্ত্রণাই
আমি তার পান নয়, পাত্র হতে চাই
(২)
আমার ভেতর যে শয়তান, তাকে আমার প্রেমিকা দেখেছে। আমার প্রেমিকার ভেতর যে সাপ আমি তাকে পুষি। আমার বাবার ভেতর যে ফাটল, মা রোজ তাতে মাটি লেপে দেয়। আমার মায়ের ভেতর যে রান্নাঘর, তাতে একটা উপবাস লেজ নাড়ে, লাফায়। সম্পর্কের বেশি কাছে যেতে নেই, সম্পর্কের বেশি দূরে যেতে নেই…
(৩)
গভীর রাতে নিজেকে সেই ভাগচাষি মনে হয়, অকাল বর্ষায় যার শীষসুদ্ধ ধানক্ষেত ডুবে গেছে;
যার মা ব্যামার, বাবা ব্যামার..
সামান্য পুঁটি মাছের লোভে যে বিশ্বব্যাপী এক ফাঁদে পড়ে গেছে ..
যার পেশির তাবিজ কুনুই বেয়ে নীচে..
গত দুবছরে যার একবারও সঙ্গম হয়নি
না প্রেম, না আলিঙ্গন
বৌ ভাবছে কাপুরুষ, চুল্লুখোর……রাত আসলে নিসর্গ এক সারিন্দা
গহীন দুঃখে যে একা একাই বাজে-
“হায় হায় রে কুঙ্কুরার সুতা হলু লোহার গুনা রে..”সুরের চোখ নেই, অশ্রুকণা আছে..
(৪)
সম্পর্ক এমন একটা বিছানা
যেখানে সবাই একা একা শোয়
ঘুমের ভান করে, কথা বলে বিড় বিড়দিনের আলোয় এইসব চোখে পড়ার কথা নয়
দিনের আলোয় বেঁচে থাকা চক্ চক্ করেবহুজন্ম সহবাসের পর বোঝা যায়
কেউ নেই, কিচ্ছু নেইজীবন নিঃসন্তান….
যেসব লেখা খুব অনায়াসে বুকের পাঁজর ভেদ করে মর্মে পৌঁছে যায়, যে লেখা পড়ে মনে হয়: এ তো আমারই লেখার কথা ছিল, যে লেখার মর্ম অনুসন্ধান করার জন্য চোরাবালিতে ডুবে গিয়ে অলীক আত্মহত্যা করতে হয় না, সে লেখাই চিরকালের শ্রেষ্ঠ লেখা। ভিন্নমত থাকতেই পারে। কিন্তু আমি, একজন সামান্য পাঠক হিসেবে, পীযূষের এইসব কবিতাকে সেই চিরকালীন ভালোবাসার তালিকাতেই সঞ্চয় করে রাখলাম।