জুনেইদ খান কোনও সন্ত্রাসবাদী ছিল না। পনেরো বছরের বাচ্ছা ছেলেটির বাবা জালালউদ্দীন খান বা তার অন্যান্য ভাইয়েরা– এদের কেউই কোনও কালেই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সাথে যুক্ত, কোনও দাঙ্গা লাগিয়ে গণহত্যায় অভিযুক্ত– এমন কোনও অভিযোগ পুলিশের খাতায় নেই। প্রধানমন্ত্রীর নামে বরং দাঙ্গা সংক্রান্ত অনেক অভিযোগ আছে। বিনা প্রমাণে আতঙ্কবাদী সাজিয়ে হত্যায় মদত দেওয়ার অভিযোগ আছে। স্বাভাবিকভাবেই এ দেশে কোনও রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধেই কোনও কিছু প্রমাণিত হয় না। ওনার বিরুদ্ধেও হয়নি। ঘটনাচক্রে তিনি আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এবং একই রকম ঘটনাচক্রে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই আরম্ভ হয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আস্ফালন। যেখানে সেখানে মানুষকে দেশদ্রোহী দেগে দেওয়া, গরুর মাংস খাওয়ার অছিলায় পিটিয়ে মারা। আশ্চর্য কুশলতার সাথে গোটা দেশকে দুটি ধর্মীয় মেরুতে ভাগ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশ নিয়ে ক্ষমতায় এলে ধরে নেওয়া উচিৎ যে সংবিধানকে মেনে নিয়েই সরকার চলবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের কোনও উদ্দেশ্যই তার বা তার দলের নেই। একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। যে প্রধানমন্ত্রী পর্তুগালের দাবানল থেকে উজবেকিস্তানের রাস্তার বেহাল অবস্থা– সব নিয়েই ট্যুইট করে থাকেন তিনি আজ পর্যন্ত গোরুর নামে মানুষ খুন নিয়ে কোনও বক্তব্য রেখেছেন বলে জানা নেই। একবার বাধ্য হয়ে কিছু একটা বলেছিলেন যখন গুজরাটে দলিতেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ নিয়ে তিনি আশ্চর্য রকম চুপচাপ।
এই রবিবার, জালালউদ্দীন খান গ্রামের অন্যান্যদের সাথে রেডিওর সামনে বসেছিলেন, “মন কি বাত” শুনবেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর। সদ্য পুত্রহারা বৃদ্ধ হয়তো একটু সান্ত্বনা আশা করেছিলেন, ভেবেছিলেন প্রধানমন্ত্রী কোনও কড়া বার্তা দেবেন ধর্মের নামে যারা মানুষ খুন করছে তাদের প্রতি। আশা করেছিলেন এমন কিছু যা তাঁকে এবং তাঁর জীবিত পুত্রদের একটু আশ্বাস দেবে নিজের দেশে নিরাপদে বেঁচে থাকার।
বৃদ্ধ পিতা হতাশ হয়েছেন। তিনি জানবেন কী করে রেডিওতে “মন কি বাত”-এর গভীরে আছে এক “মন কি অন্দর কি বাত”। সেই অন্দর কি বাত আজ দেশ জুড়ে প্রকাশ্যে আস্ফালন করে বেড়াচ্ছে। তিনি জানবেন কী করে যে দেশের প্রধানমন্ত্রী আজ এক মুষ্টিমেয় ধর্মীয় উগ্রবাদীদের প্রধানমন্ত্রী মাত্র, দেশের সংবিধান থেকে শুরু করে মানুষের প্রতি সহমর্মিতা– সব আজ তুচ্ছ।
জালালউদ্দীনেরা এখন কী করবেন?