প্রতিভা সরকার
নিঃসন্দেহে গণতন্ত্র হচ্ছে জঘন্যতম শাসনব্যবস্থা, তবে কিনা সময় সময় অন্য যে যে ধরনের শাসনব্যবস্থাগুলো চালু করার চেষ্টা হয়েছে, তাদের সঙ্গে তুলনায় কিছুই না।
—চার্চিল
নোংরা রাজনীতি, দারিদ্র্য, অসাম্য, দুর্নীতি তো ভারতে চিরকালই ছিল, এখন তা বহুগুণ বাড়ার পর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধর্মীয় বজ্জাতি পক্ষপাত এবং অনাচার। মানুষে মানুষে বিভাজন। বহুগুণ বেড়েছে নারী নির্যাতন। উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনজঙ্গল। পরিবেশ নিয়ে ন্যূনতম চিন্তা নেই। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের এই হাল দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যাথার্থ্য নিয়েই। বিচারবুদ্ধি, চিত্তশুদ্ধি, মানসিক উত্তরণ, সহনশীলতা— যে গুণগুলির ওপর গণতন্ত্র জোর দেয় সেগুলো সাধারণ নশ্বর মানুষের পক্ষে আদৌ অর্জন করা সম্ভব কিনা তাই নিয়েও সন্দেহ জোরদার হচ্ছে।
একা রামে রক্ষা নাই, সুগ্রীব দোসর। এই দেশকে ঘিরে রয়েছে যে সমস্ত প্রতিবেশী দেশ, তাদের অবস্থাও এই নিরিখে ভালো নয়। ফলে কোনও দেশের শাসনব্যবস্থা হিসেবে গণতন্ত্রের ওপরেই বিরাট প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়ে দেবার চেষ্টা হচ্ছে সর্বত্র। আমাদের দেশেও সর্বশক্তিমান শ্রীমৎ অমিত শাহ এই সেদিন বহুদলীয় গণতন্ত্রের ব্যর্থতা প্রমাণে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। তার মতে গত সত্তর বছরে এই সিস্টেমের অকার্যকারিতা ভালোমতোই প্রমাণ হয়ে গেছে এবং ভারতবাসী এখন এই বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে প্রচণ্ড হতাশ। তিনি বলেন, ২০১৪র আগে এ দেশে কোনও কাজ হয়নি, পরে কিছুটা হয়েছে। এখন একজাতি একপ্রাণ একভাষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মোদিমন্ত্রে দীক্ষিত হতে পারলে যদি কিছু হয়।
এইরকম ঘুরিয়ে একদলীয় শাসনের সাফাই গাওয়া কি জরুরি কিছু? নিজেরা যখন ক্ষমতার বাইরে তখন বছরের পর বছর এই ব্যবস্থার মাধ্যমেই মরিয়া চেষ্টা করে ক্ষমতা দখল করলাম, আবার ক্ষমতা দখল করার পর সিস্টেমটাকেই হাপিস করে দিয়ে চিরকাল রয়ে যাবার পথ পাকা করতে থাকলাম, এই মনোবৃত্তি আর যাই হোক গণতান্ত্রিক কখনওই নয়। গণতন্ত্রের মৃত্যু কামনা করে একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে স্বাগত জানানো হচ্ছে এই পৃথিবীতে, যেখানে যে যে দেশে একদলীয় শাসন, সেখানেও অবস্থা আশাব্যঞ্জক কিছু নয়।
তবে কি এই সাফাই আধিপত্যবাদেরই কণ্ঠস্বর?
সময় তা প্রমাণ অথবা অপ্রমাণ করবে। তবে আজকাল গণতন্ত্রকে কাঠগড়ায় তোলা খুব চালু ফ্যাশন। দোষও গণতন্ত্রের, দোহাইও গণতন্ত্রের। দোষের ব্যাপারে তো সে সছিদ্র চালুনি, দোহাইতেও একনম্বর। যেমন দেশের অর্থনীতির বেহাল অবস্থায় সাধারণ মানুষের ভার লাঘবের কোনও কার্যকরী চেষ্টার বদলে কর্পোরেটের কর মকুব হয়। বৃহত্তম গণতন্ত্রে এতগুলি মুখকে খাওয়ানো পরানোর দোহাই দিয়েই হয়। কর মকুব করলে উৎসাহিত হয়ে কর্পোরেট ইনভেস্টমেন্ট বাড়াবে, তাতে লোকের কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে, এই ভাঁওতায় হয়। কিন্তু অর্থনীতির সঙ্গে আমার মতো দূরতম সংযোগ যার সেও বুঝবে চাহিদা না থাকলে, মুনাফার হাতছানি না দেখলে, কর্পোরেট কখনও মকুব করের টাকা ব্যবসাতে লগ্নি করবে না। ওটি তার ব্যক্তিগত মুনাফার ভাঁড়ার স্ফীত করবে মাত্র।
সরকার কতটা ছাড় দিল কর্পোরেটকে? সেই সমপরিমাণ টাকায় এদেশের সমস্ত কৃষি ঋণ মকুব করে দেওয়া যেত এত বিপুল সেই অঙ্ক! একদিকে মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী, অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ কৃষক। সংখ্যার জোরকে, নৈতিকতার জোরকে অন্যায়ভাবে, সুচতুরতার সঙ্গে দাবিয়ে দেওয়া এই গণতন্ত্রে ‘গণ’দের উন্নয়নের দোহাইতে নিয়মগিরির জল জঙ্গল লুট হয়ে যায়, ছত্তিসগড়ে আদিবাসীদের ওপর নেমে আসে অত্যাচার ও লাঞ্ছনা। আর দাতব্য করতে আসিনি বলে ভয়াল দাঁতে ধরতিমাঈকে ক্রমাগত ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলতে থাকে রাজনৈতিক প্রভুদের পোষা কামাওবাদী কর্পোরেটরা।
দোষটা গণতন্ত্রের, না গণতন্ত্রের মুখোশধারীদের!
এই যে গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে চূড়ান্ত অসাম্য সৃষ্টি করা হল তার ফলাফল হল এইরকম— সমীক্ষা বলছে, এখন সেরা পঁচিশ জনের হাতে দেশের মোট সম্পদের ১০% জমা হয়েছে। প্রথম ১% দারুণ ধনীদের হাতে সম্পদের ৫৩%, আর একবারে শেষ স্তরে পড়ে থাকা ৬০% মানুষের জন্য জাতীয় সম্পদের ৪% বরাদ্দ। (সমীক্ষা: ক্রেডিট সুইস)
সামাজিক বৈষম্য এই দেশে হাজার হাজার বছরের পুরনো। এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে, তবে সবচেয়ে বড় কারণ নিশ্চয়ই জাত-পাতের বিভাজন। উপনিবেশবাদ তাকে বাড়িয়েছিল বৈ কমায়নি। সামাজিক এবং আইনি ক্ষমতা কাগজেকলমে আবদ্ধ থেকে গিয়েছিল, গোটা আইনি ব্যবস্থা ছিল গরীবের এবং বর্ণশৃঙ্খলের সবচেয়ে নিচুতলার কাছে অনধিগম্য। দলিতদের অবস্থা ছিল সবচেয়ে খারাপ, কুয়ো থেকে তারা জল নিতে পারত না, ব্রিটিশ আমলে কোনও দলিতের দিল্লির আশেপাশে কোনও জমির মালিক হবার অনুমতি ছিল না।
বিংশ শতাব্দীতে দুটো বিশাল গণ আন্দোলন শুরু হয়— উপনিবেশবিরোধী জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম এবং পেরিয়ার ফুলে আম্বেদকরদের সামাজিক মুক্তির সংগ্রাম। প্রভাত পট্টনায়ক খুব সঠিকভাবে বলেছেন যে তৃণমূল স্তরে এই দুই আন্দোলন এক অভূতপূর্ব ঐক্যচেতনার জন্ম দেয় এবং এই প্রথম জোরদার গণ আন্দোলনের সূচনা হয়। এর গভীর প্রভাব পড়ে রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে। ১৯৩১ সালে শহীদ-এ-আজম ভগত সিংয়ের ফাঁসির কিছুদিন পরেই কংগ্রেসের করাচি অধিবেশনে কংগ্রসের মধ্যেকার বামপন্থী প্রভাবিত অংশের উদ্যোগে একটি ফ্রিডম চার্টার গ্রহণ করা হয়। এই চার্টারের বিষয়বস্তু ছিল স্বাধীন ভারত কোন পথে চলবে।
এই সনদের প্রথম কথা হল আইনের চোখে সবাই সমান। দ্বিতীয়ত এক ব্যক্তি এবং এক ভোটের ভিত্তিতে সরকার নির্বাচিত হবে। তৃতীয়ত প্রত্যেক ভারতীয় এক ন্যূনতম জীবনযাত্রা মানের অধিকারী হবে।
আরও অনেক প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ধারণা, যেমন অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, মৃত্যুদণ্ড রদ ইত্যাদি সেই চার্টারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আধুনিক ভারতের সংবিধানের ভিত্তি ছিল এই ধারণাগুলি। বোঝাই যাচ্ছে সংবিধানকে মান্যতা দেওয়া আধুনিক ভারত আর সংবিধানপূর্ব ঔপনিবেশিক লিগ্যাসিময় ভারত— এই দুটি এক দেশ নয়। দুইয়ের মাঝে আছে দৃষ্টিভঙ্গির বিশাল ফারাক। স্বাধীন ভারত তার অতীতের ধারাবাহিকতায় আগ্রহী ছিল না, বরং বিচ্ছেদই তার কাম্য। জাতপাত-ধর্ম-অস্পৃশ্যতা-গোঁড়ামিমুক্ত সমাজে নাগরিকরা ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হবে, সমান অধিকার পাবে এই ছিল সংবিধানকারদের স্বপ্ন।
সে স্বপ্ন সাকার করবার দায়িত্ব কি আমাদের সবার নয়? অথচ যুক্তিবোধের বিপরীতে হেঁটে, বিচারবুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে সংখ্যালঘুরাই এ দেশের যাবতীয় দুর্দশার মূল এইরকম মনোভাব এখন ছড়িয়ে দিচ্ছে কারা? কেন মনে পড়ে যাচ্ছে ১৯৩০-এর জার্মানির কথা যেখানে লোকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে মাত্র ০.৭ শতাংশ ইহুদি ৭ কোটি জার্মানের যাবতীয় দুর্দশার মূল কারণ? নারীপুরুষ নির্বিশেষে ইহুদিরা কীভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছে সেইসব ছবি অন্তর্জালে আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার পাশেই ভেসে উঠছে রক্তাক্ত পহেলু খান, জুনেইদ, তাব্রেজের আর্ত মুখ। এইভাবে গণতন্ত্রের যে অন্যতম মূল ভাবনা সংখ্যালঘুরক্ষা, তার চূড়ান্ত বিপরীতে হাঁটছে কারা?
সিস্টেমকে দোষ দেবার জন্য সেই সিস্টেমের দেখানো পথের সম্পূর্ণ উল্টো বাগে হেঁটে তাকেই দোষী প্রতিপন্ন করব, এটি কিন্তু খুব বিপজ্জনক প্রবণতা।
জাতীয়তাবাদ এখন একটি খুড়োর কলে পর্যবসিত। কিন্তু এর জন্ম সপ্তদশ শতাব্দীর ইউরোপে, সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষিতে। আগে ঈশ্বরপুত্র রাজাই ছিলেন আরাধ্য। রেনেসাঁ এবং এনলাইটেনমেন্ট একটি বিকল্প ধারণার চাহিদা সৃষ্টি করে এবং জাতিরাষ্ট্রের জন্ম হয়। এই ‘নেশনে’র এবং ন্যাশনালিজমের ধারণার সঙ্গে আমাদের জাতীয়তাবাদের অনেক তফাত রয়েছে। ইউরোপীয় নেশন ছিল সাম্রাজ্যবাদী, অন্যের দেশে আগ্রাসন তার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। ফলে এটি ছিল বর্জনমূলক বা exclusive, যে সারাক্ষণ এক ‘অপরে’র (other) সন্ধানে ব্যস্ত থাকে। কখনও সেই অপর ক্যাথলিক, কখনও প্রটেস্ট্যান্ট, আর ইহুদিরা তো সর্বত্রই অপর।
কিন্তু করাচি কংগ্রেসের প্রস্তাব অনুসারে আমাদের সংবিধান যে জাতীয়তাবাদ উপহার দিল তার ভিত্তিই ছিল উপনিবেশবাদ বিরোধী সংগ্রাম। ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে যেহেতু এক প্রবল শক্তিশালী বিদেশি শক্তির সঙ্গে লড়তে হয়েছিল, সেহেতু তাকে যত বেশি সম্ভব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হয়েছিল। জাতপাত, ধর্মবর্ণ, লিঙ্গ, অর্থনৈতিক অবস্থা, কোনওকিছুরই বাছবিচার না করে এক বিপুল জনগোষ্ঠীর মনে জাতীয়তাবাদের সঞ্চার করতে গিয়ে তাকে হতে হয়েছে চূড়ান্ত অন্তর্ভুক্তিমূলক বা all inclusive. তাই ভারতীয় গণতন্ত্রের কাছে সব নাগরিকই সমান। প্রত্যেকের কিছু মৌলিক অধিকার ভোগ করার স্বাধীনতা রয়েছে। কোনও কারণেই কারও প্রতি কোনও বৈষম্যমূলক আচরণ আইনত দণ্ডনীয়।
কিন্তু বর্তমানে জাতীয়তাবাদের নতুন যে ধারণাটিকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা হচ্ছে সেটি ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদের অনুকরণে জাতির ভেতরে লুকিয়ে থাকা ‘অপরে’র বা আভ্যন্তরীণ শত্রুর সন্ধানে ব্যস্ত। এরাই যাবতীয় দুর্দশার জন্য দায়ী, এদের শায়েস্তা করা গেলে দেশে আর কোনও সমস্যাই থাকবে না। কখনও এই অপর মুসলমান, কখনও দলিত, কখনও নারী বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং অবশ্যই সর্বত্র বামপন্থী চিন্তাধারায় বিশ্বাস রাখেন এইরকম মানুষজন। জেল, নির্যাতন, লিঞ্চিং, বুলেট, নাগরিকত্ব হরণ, সমস্ত কিছুই এই ‘অপরে’র জন্য প্রস্তুত। এই নয়া জাতীয়তাবাদ যুদ্ধের উন্মাদনা তৈরি করে নিজের স্বার্থে এবং নাগরিকদের বলে জাতির জন্য ত্যাগস্বীকারে তৈরি থাকতে। কিন্তু নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্র এবং জাতি কী করবে সে ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ। তাই এক বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডের নাগরিকদের দিনের পর দিন যোগাযোগহীনভাবে সামরিক বাহিনীর দয়ার ওপর ফেলে রাখা যায়। চল্লিশ হাজার খুন হলেও রাষ্ট্রের রক্ততৃষ্ণা মেটে না।
স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গেই ভোটাধিকার একটি দুরন্ত অর্জন। এক মানুষ এক ভোট যেন একটি দীর্ঘ বিপ্লবের পরিণতি। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ইংল্যান্ড এই অধিকার পেয়েছিল ১৯৩০ সালে, ফ্রান্স ১৯৪৫ সালে। করাচি কংগ্রেসে এই চিন্তা বিপুল সমর্থন না পেলে, ভারতরাষ্ট্রনায়করা তাদের চিন্তাচেতনায় আদ্যোপান্ত গণতান্ত্রিক না হলে এত ঝটিতি এত বড় অর্জন অসম্ভব ছিল।
কিন্তু ভারতে এই গণতান্ত্রিকতার চর্চার বৃদ্ধি বার বার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ইনক্লুসিভ জাতীয়তাবাদের অন্তর্গত একটি অসহায়তার জন্য। ইনক্লুসিভ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবার তাগিদে ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে সবসময়ই আপস বা কম্প্রোমাইজ করার পথে হাঁটতে হয়েছে। বড় জমিদারকেও তার যেমন চাই, গরীব কৃষকও তার সংগ্রামের সাথী। বিড়লা বা টাটার সমর্থনও জরুরি আবার তাৎমাটোলির অচ্ছুতকেও পেছনে ফেলে রাখলে চলবে না। বিকট সাম্রাজ্যবাদীর সঙ্গে লড়াইতে সবার অংশগ্রহণ জরুরি।
এই করতে গিয়ে জাতিভেদ প্রথা, বর্ণবাদী অত্যাচার, বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার মোকাবিলা আমাদের তৎকালীন রাষ্ট্রনয়কেরা তেমনভাবে করে উঠতে পারেননি। নিজেরাও অনেক সময় সঙ্কীর্ণতার ওপরে ওঠার মতো শক্তি সঞ্চয় করে উঠতে পারেননি। কখনও একে সন্তুষ্ট করতে হয়েছে, কখনও ওকে। সংস্কারের কাজ তাই অনেক ক্ষেত্রেই প্রসাধনমূলক থেকে গেছে। তার শেকড় গভীরে নামেনি। গণতান্ত্রিকতা তাদের চেতনায় যেমন ভাবে ছিল, কর্মকাণ্ডে ততটা ছিল না। অথচ সংবিধানকে চেতনায় রেখে এই গণতান্ত্রিকতার চর্চাই পারত এ দেশকে আদর্শ দেশে পরিণত করতে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এবং পরবর্তীতে যা সম্পূর্ণ করে ফেলা যায়নি নানা বাধ্যবাধকতার কারণে, এখন ইচ্ছে করে, বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে সেই চর্চাকে আরও পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই উল্টোপুরাণের প্রণেতারা ভালোই জানেন গণতন্ত্র ছাড়া বহুস্বর বা প্লুরালিটির মৃত্যু কেবল সময়ের অপেক্ষা। জনসেবার শপথভ্রষ্ট মুষ্টিমেয় কর্পোরেটের সঙ্গে লেনাদেনার সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা এই শাসকদের কাছে সংবিধানও মূল্যহীন।
একদল, একস্বর, একভাষায় উৎসাহী এই গণতন্ত্রের মৃত্যুকামীদের চিনে নেওয়া তাই খুব জরুরি।