পাঁচটি কবিতা
শব
উপনদী-শাখানদী চুঁইয়ে, উপচে গেছে মা।
চড়ের ভিতর লুকানো পাণ্ডুরোগ,
আহ্লাদে আটখানা
জল খেয়ে ভেসে ওঠে শব
নৌকাডুবি
মধ্যযামে মুখ তুলে নিলে
কখনও ছোঁয়া হয় না ত্রিবেণী ঘাট
কোনও জলকেলি সাজানো নেই হস্তরেখার
খাতে।
পরিখাৎ কাশবনের ‘পারে শুয়ে থাকে
নিভৃত কুমিরের ডিম
সমস্ত দেওয়াল জুড়ে নৌকাডুবির ছবি
আর কিছু ভাবতে দেয় না, সংস্কার
অদেখা জানলার শিকে সম্ভাব্য দুটি হাত, লাল বিস্ফারিত চোখ
আটলান্টিস আরেকটু তলিয়ে যায়… আমাদের ভিতর
খিদা
দারিদ্র্যরেখার পাশে বসে আছো তুমি,
মিইয়ে আসা চোখের ভিতর শুয়ে থাকে বিদ্যুৎ
নিশ্চল লেভিয়াথানের মত।
বিশ্বাস কী মায়াবী অলংকার বলো!
আংটির মত আঙুলে থেমে থাকে
নারীই পারে,
ভালোবাসায় পিঠ রেখে, আবার বুকে ধরে নিতে।
বনবাসের ভিতর, কী সচেতন এসরাজ বাজাতে পারে,
সমস্ত দৌরাত্ম্য যেন বেঁধে ফেলবে বটের গায়ে
মানতের মত…সংসার।
এত এগোল মানুষ,
তবু খিদের থেকে দ্রুত হল কই?
এক-দুই-তিন… সাতজন্ম। টাবুলারাসা।
রিপুজন্ম তবু জাতিস্মর হয়ে আসে।
ভয় করে, খুব ভয় করে
এতো গ্রাস, এতো খিদে গেঁথে আছে নাভির কূয়ায়
কিশোরী পদ্মের মত
ভয় করে, যদি তোমাকেই বেচে খাই!
খোঁজ
এভাবে তিনবেলা শোক খাওয়া হলে,
মেঘে মেঘে মেখে দিলে বিষাদের গুঁড়ো
রাস্তায়, মাঠে, স্কুলে ও আপিসে
ঢুকে যায় গাছেদের শীতরঙ
এতদিন ধরে বিশুদ্ধ একাকী শোক
খুঁড়ে ফেরা রাখালদাস বাড়ুজ্জে জানেন-
একটা পুরোপুরি হাসিই, শতাব্দীর সবচেয়ে বড় খোঁজ
আশ্বিন সিরিজ
১.
অসংখ্য মেঘের ভিতর ছোট্ট ছোট্ট নীল
আশিনা হাওয়ায় কেঁপে ওঠে কাশবন,
ঈষৎ হরিৎ জংলি লেবুফুল
নদী ত্বকে ঘাই মারে চাঁদা মাছ, আর বাছুরের মত
ক্ষণে ক্ষণে খুঁটে খায় কেউটের পুরানো খোলস
এসব অলস দিনের কাছে, চোখ শুয়ে থাকে
সকল দৌরাত্ম্য জুড়ে বকেদের ভিড়, সরু সরু ঠ্যাং
যেন দূরে চলে যাওয়া ফরাসি নাবিক…
অসংখ্য মেঘের ভিতর গুটি গুটি নীলবাড়ি
আমি জানি, ওটুকুই আমাদের কথা,
আমাদের প্রেম, ওটুকুই….
২.
যদি ধরি, তুমিই দাঁড়িয়ে আছ সমস্ত আকাশ জুড়ে
সুতরাং, তেল দেওয়া চুলের মত মেঘ
তার মাঝে জ্বল জ্বল করছে
কাঁচের টিপ বা সিঁদুর গোলানো– সূর্যের একত্র ছবি
সুখের মত অল্প অল্প হাওয়া মেটে উঠোনে ধাক্কা
দিয়ে ফেলে দিচ্ছে কদম ও জারুল পাতার রঙ,
তুমি হাড়ির ঢাকনা তুলে বেড়ে আনছ, বাষ্পে
ঢেকে যাচ্ছে ওই মুখচ্ছবি
গতবার ডুবে যাওয়া প্রতিমার দীঘি থেকে
এবছর তুলে আনা হয় মাটি, মৌলিক মুখ