বেদনাবীথি
১
ঘুমের মধ্যে মৃতদেহ টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছে একটা বেড়াল। এটা স্বপ্ন হতে পারত। আমি আমার এই বেড়ালটা খুঁজে পাচ্ছি না সকাল থেকে। এই মাঝরাতে স্পষ্ট দেখছি। তোমার থেকেও অতিযত্নে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তুমি বিশ্বাস করবে না। কারণ মৃতরেখা অবধি তোমার পা পৌঁছায়নি। আর আমার কান মলভাঙার আওয়াজকে কখনও পারেনি অস্বীকার করতে।
২
তোমার নদীতে কি কচুরিপানা ভাসে? এই যে এত এত ভেসে থাকা, তবুও লুকোতে পারি না! বন্ধুর ছিপে উঠি। শত্রুর ছিপে উঠি। তুমিও এলিয়ে দাও বৃদ্ধ শরীর…
এই মায়াজন্ম চাই না। একটা সবুজ কচুরিপানার দেশ দাও। মাছের দেশে শুধু পিচ্ছিলতায় না, ডুব দিয়ে থাকি…
৩
সূর্য ডুবে গেলে হাতঘড়িটা পরে নিই। আমি চাই সন্ধ্যা আসুক, দ্রুত। কেটে যাওয়া আলো, ঘড়ি কাঁটার অন্ধকার গায়ে বুলিয়ে দিই। সময় চলে রাত্রির গায়ে। রাতে প্রিয় জোনাকির কান্না ভালো লাগে। আমার হাত ঘড়ি এসব জেনেও অভিমান করে না। টিটকিরি মারে না। শুধু টিক্টিক করে।
৪
এই কাটা ছাগলের মাংস খেও না। কিছুক্ষণ আগেই ছটফট করছিল। মাছ খাও। ডিম খাও। মায়া থাকা ভালো। এই জন্মে আমরা আর কিই বা পারি? একটা ভাঙা রান্নাঘরকে চকচকে করে তুলতে ছাড়া? তুমি একদিন গৃহস্থ হবে আমি ভাবতেই পারি। কিন্তু আমার ভাবনার ভিতর দিয়ে যে রক্ত গড়িয়ে যায়, সেখানে বসে একা একা কান্না করো কেন?
৫
চিৎকারে পাহাড়টা ফেটে পড়ার আগে, তুমি কি সতর্ক ছিলে? এখনও কেন তোমার হাত কাঁপছে? তুমি টলছ কেন? তোমার বাড়িটা কেন রাস্তা হয়ে উঠছে? আমি কেন সেই পথেই যাচ্ছি?
যতবার নিজের টুটি চেপে ধরি, প্রশ্নগুলো সাদা স্লেটভর্তি বর্ণপরিচয় হয়ে ওঠে। আমি গুলিয়ে ফেলি। চিনতে না পেরে, আরও আরও জোরে চিৎকার করি।
৬
থু থু করতে করতে তুমি বানিয়ে ফেললে নদী। আমি ডুবছি, কি ভাসছি; সেটা বড়ো কথা নয়। আমাকে পেরোতে হবে। এত মাছ! লাল লাল কানকো! মায়া লেগে গেছে। গত গ্রীষ্মেও জল শুকোয়নি। ভয় পাই না। সন্দেহ নেই, এই নদী আমাকে আরও শীতলতা দেবে। হে, বরফাচ্ছাদিত নদী; গলা খুশখুশের সময়ে তোমার কি পাড় ভাঙে? নাহ্, পাড়ে শুকোতে দেওয়া টুকটুকে লাল শাড়ি, একটা নৌকাকে বারবার ইশারা করে: ফিরে যাও, যাও?