Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ভীতিসঞ্চারের জাতীয় প্রকল্প সমাপন

রবীশ কুমার

 

পোষ্য মিডিয়া হাউসগুলি ছাড়া আর কেউই সুরক্ষিত নয় আজ ভারতে। কর্তৃপক্ষের কোলে ঝাঁপ দিয়ে উঠে লেপটে বসো। আর নারদমুনির মতো বীণায় তান দিয়ে টিভির পর্দায় ‘নারায়ণ নারায়ণ’ জপ করো। দেখবে আর কেউ ধমকাচ্ছে না।

২০১৭ সালের ৯ই জুন ক্যারাভান পত্রিকার সাংবাদিক বাসিত মালিক একটি প্রতিবেদন লিখতে দিল্লির সোনিয়া বিহারে যান। সেখানে তখন এক টুকরো জমি নিয়ে স্থানীয় হিন্দু ও মুসলমান মহল্লাবাসীদের মধ্যে অশান্তি চরমে উঠেছে। যে মুহূর্তে অধিবাসীরা টের পায় এলাকায় নবাগত সাংবাদিকটি মুসলমান, তাঁর উপর জন-আক্রোশ আছড়ে পড়ে। আহত মালিককে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে বলা হয় বিনা নথিপত্রে এই পাকিস্তানি বেআইনি অনুপ্রবেশকারীটি তাদের হাতে ধরা পড়েছে।

২৪শে জুন নতুন দিল্লির প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সেই ঘটনার প্রতিবাদ সভায় সাংবাদিক রবীশ কুমার হিন্দিতে যে বক্তব্যটি রেখেছিলেন, ইংরেজিতে তা অনুলেখন করেছিলেন চিত্রা পদ্মনাভন। সেটি প্রকাশিত হয়েছিল দি ওয়ার পত্রিকায় এই লিঙ্কে। ঘটনাটি দু বছর আগের হলেও তার প্রাসঙ্গিকতা বেড়েছে বই কমেনি। ফলে আমাদের ১লা নভেম্বর মেল ট্রেনের রিজার্ভড বগি সংবাদ ক্ষমতা বিসংবাদ-এ আমরা সেই অনুলেখনটির বাংলা ভাষান্তর প্রকাশ করছি। বাংলায় তর্জমা করেছেন সত্যব্রত ঘোষ। রবীশের বক্তব্যের ইউটিউব ভিডিওটি লেখার শেষে দেওয়া হল।

লোকসভার স্পিকার তখন সুমিত্রা মহাজন। তিনি সাংবাদিকদের অপ্রিয় সত্য না লিখে ‘নারদ’ হওয়ার পরামর্শ দেন। “যদি একান্তই লিখতে হয়, তাহলে আগে বিষয়টি প্রসঙ্গে সরকারের বক্তব্য জানুন এবং তারপরে সুন্দর ভাষায় যা লেখবার লিখবেন।” এমন মন্তব্য কাগজে লেখা হয়েছে দেখেছি। তবে সাংবাদিকদের উনি সেদিন ঠিক কী বলেছিলেন তা জানতে উৎসুক আমি।

ভারতীয় পুরাণে নারদমুনি ছিলেন শ্রীবিষ্ণুর পরম ভক্ত। সারাক্ষণই তিনি জপ করতেন, “নারায়ণ, নারায়ণ”। নেতা-নেত্রীরা যদি নারদ রূপেই আমাদের দেখতে চান, তাহলে অন্তত ইন্দ্রসভায় প্রবেশের সুযোগ দিয়ে সেখানে আলো করে বসে থাকা সেই দেবসম মুখগুলি দর্শনের কৃপা করুন। আমরা দেখতে চাই, তাঁদের মধ্যে এমন কে আছে যার মধ্যে দেবতা হওয়ার গুণ বর্তমান, যার রূপে ও গুণে মুগ্ধ হয়ে আমরা নারদ সেজে অপ্রিয় সত্য চেপে রাখব। তার চেয়েও বড় কথাটা এই যে, ম্যাডাম স্পিকারই না হয় ঠিক করে দেবেন কোনটা অপ্রিয় সত্য, কোনটা নয়।

কর্নাটক বিধানসভার স্পিকার যা করেছিলেন[1] তার পর বলা যেতে পারে সাংবাদিকদের উপর চোখরাঙানির যে প্রকল্পটি সরকারের কাছে জমা পড়েছে, তা কার্যকরী করতে সবাই কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছে। যত দিন যাবে, মানুষ সেই সক্রিয়তার পরিচয় বেশি বেশি পাবে।

এই ধরনের ঘটনা যত বাড়বে, আক্রমণের নিশানায় যে মানুষরা রয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বার করাটা আমাদের মতো সাংবাদিকদের পক্ষে ততই কঠিন হয়ে উঠবে। এই মানুষগুলি কেন আক্রান্ত হচ্ছে তা বুঝতেও সমস্যা হবে। এখন তো আকছার ঘটছে এমন আক্রমণ। গলি থেকে রাজপথ— সবখানেই অপেক্ষা করে আছে একটা ভিড়। সেই ভিড় আপনাকে চেনে। যদি টের পায় আপনি একজন সাংবাদিক হিসেবে নিজের দায় মেটাচ্ছেন, প্রথমে আপনাকে সন্দেহ করবে। তারপর একদিন মেরে অজ্ঞান করে রাস্তায় শুইয়ে রাখবে।

বাসিত মালিকের ঘটনাটিতে আমরা একজন আইনজীবীকে দেখেছিলাম। যেখানে ভিড়, সেখানেই দেখা যায় এই চরিত্রটিকে। ভিড়ের মধ্যে তিনি ঠিক কী করছিলেন তা আপনারাই ভেবে নিন। এটুকু বলতে পারি, তিনিই এই ভিড়ের ‘আইনি বল’। দিল্লির পাতিয়ালা হাউস আদালত চত্বরে একদল আইনজীবীকে আক্রমণকারীর ভূমিকায় আমরা দেখেছি।

ভীতিসঞ্চারের এই জাতীয় প্রকল্পটি এখন সম্পূর্ণ। রাস্তা নেই, চাকরিও নেই— কিন্তু সবার মনে ভয় তো আছে। প্রত্যেক মানুষের দিন এখন কাটে এখন ভয় নিয়ে। নানাভাবে তা আমরা সবাই অনুভব করছি। ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে বাইরে পা দিতে না দিতেই বিভিন্ন ধরনের সতর্কবার্তা কানে আসে— সাবধান, এদিকটা দেখো, তারপরে ওদিকটা…

শুধুমাত্র সেই মিডিয়া জগৎই নিশ্চিন্তে বেঁচে আছে যে ধামা ধরতে জানে। কর্তৃপক্ষের কোলে ঝাঁপিয়ে লেপটে থাকলেই হল। কেউ আর চোখ রাঙাবে না। তানপুরায় সুর বেঁধে ভক্তি সঙ্গীতে ডুবে যাও নারদমুনির মতো। আর টেলিভিশনের পর্দায় বেজে চলুক গান— ‘নারায়ণ নারায়ণ’।

মনে করে দেখুন তো রাজস্থানে আসাদ আশরাফ আর অনুপম পাণ্ডেকে কী যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল। বজরং দলের অস্ত্রশিবিরগুলি নিয়ে প্রতিবেদন লেখবার অপরাধে পুলিশ কর্মচারীটি তাঁদের আটকে রেখে বুক ফুলিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলেছিল, “উপরমহল আমাকে সাসপেন্ড করে দেয় দিক, আমি তোদের জুতোবই।” এমন স্পর্ধা তখনই হয়, যখন তার মতো অনুগত কর্মচারী জানে ভীতিসঞ্চারের জাতীয় প্রকল্পটি যারা সামলাচ্ছে, সেই রাজনৈতিক নেতাদের পায়ে তার নিজের প্রভুও লুটিয়ে আছে।

 

***

নিউজ চ্যানেলগুলি এখন যে রমরমিয়ে চলছে তাতে সেই দিন বিশেষ দূরে নেই যখন প্রজাতন্ত্র কী সেটাই ভুলে যাব। নিউজ চ্যানেলগুলিতে ভারতের যে ছবি ভেসে ওঠে, অদূর ভবিষ্যতে শুধুমাত্র তা দেখেই ভারতদর্শন হবে আমাদের।

ভারতকে ক্রমশ একটি ভিড়তন্ত্রে (mobocracy)-তে রূপান্তরিত হতে দেখছি আমি। এই ভিড়তন্ত্রে যারা সামিল, তাঁরা আমার আপনার আপনজন। রক্তের সম্পর্ক আছে এমন মানুষরাও ভিড়ে মিশে আমাদের লাঠি দিয়ে পেটান, অশ্রাব্য ভাষায় অপমান করেন।

আমার এক বন্ধু ট্রেনেতে নিজের মা-কে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। বন্ধুর মা গোঁড়া মুসলমান, বোরখা পরিহিতা তিনি। নিমেষে একটা ভিড় তৈরি হল কামরাতে। ট্রেনযাত্রার পুরো সময়টা ধরে মা আর ছেলেকে লক্ষ করে সেই ভিড় একটার পর একটা মন্তব্য করে চলে। লাগাতার ঘণ্টা দুয়েক তা শুনতে শুনতে আমার বন্ধু ও তাঁর মায়ের সাহস উবে যায়। একটা ছোট সমীক্ষা করে দেখুন না— আপনার সহযাত্রী হিসেবে যদি কোনও মুসলমান পরিবারকে পান, তাহলে জিজ্ঞাসা করবেন ওনারা কী ধরনের খাবার নিয়ে ট্রেনে ওঠেন। সবারই ভয়, যদি কেউ তাঁদের সঙ্গে আনা খাবার খুলে পরীক্ষা করে, তাহলে তো অনর্থ ঘটবে। সেই কারণে সুস্বাদু কোনও কিছুই সঙ্গে আনা যাবে না— এমনকি নির্দোষ ডিমের ঝোলও নয়।

ভয় পাওয়ানোর এই যে সফল প্রকল্প সেখানে কিন্তু আমরা সাংবাদিকরা অতি ক্ষুদ্র, ভীতু কিছু একক মাত্র। এখন নিউজরুমেও এই প্রকল্প কার্যকর।

কী উপায়ে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে তা আমার জানা নেই। হয়তো আমরা একটা হেল্পলাইন চালু করতে পারি সেই সাংবাদিকদের জন্য যাদের মারা হচ্ছে, মারের চোটে যারা প্রাণ হারাচ্ছেন। নিউজরুমগুলিতে এখন তাই নিরুপদ্রব নারদ হওয়ার লক্ষণগুলি বাসা বেঁধেছে। সত্যি বললে, নারদমুনিই এখন সাংবাদিকতার একমাত্র প্রতিভূ। তার চেয়েও বড় কথা, চুপিসাড়ে কখন যে তিনি এভাবে আমাদের মাঝে আসীন হলেন, তা আমরা কেউই জানি না।

আমার যে কমরেডরা বিকল্প সাংবাদিকতা করছেন, তাঁদের অনেকেই এখন নিশানায়। গুটিকয় সাংবাদিক মিলে যাঁরা ওয়েবসাইট চালাচ্ছেন তাঁরা। এই ওয়েবসাইটগুলিতে এক বা দুই লাখ, বড়জোর পাঁচ লাখ হিট হয়। মুলস্রোতের সংবাদমাধ্যমগুলির কণ্ঠস্বর যখন অবরুদ্ধ, তখন এই ওয়েবসাইটগুলিতেই ঘটনার প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলি একজন আরেকজনকে শেয়ার করলেন, এভাবেই তা অন্য কোথাও কারও কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এই সাংবাদিকদেরও আচ্ছাসে পেটানো হবে, ভিড় এদেরকেও আক্রমণ করবে। রাজনৈতিক ছক কষেই গুছিয়ে ঠ্যাঙানো হবে— নিশ্চিন্ত থাকুন।

যে স্থানীয় রাজনৈতিক দালালেরা হোয়াটসঅ্যাপ-এ মেসেজ পেয়ে ঠ্যাঙাড়ের জোগাড় করে, তারা এখন এই ব্যবসাটির ক্ষতি করছে। কারণ দশজন লাঠিয়াল জোগাড় করে মারতে হলে অন্তত কিছুটা সময় লাগবে। তার চেয়ে তৎক্ষণাৎ হোয়াটসঅ্যাপ-এ মেসেজ দশজনের মধ্যে ছড়িয়ে একটা ভিড় জড়ো করে নিলেই নিখুঁতভাবে পেটানো পর্বটি সমাধা হয়ে যায়। অর্থাৎ, ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট বানাতেও আমরা এখন অপারগ।

নিজের অভিজ্ঞতা হয়েছে বলেই এসব কথা বলতে পারছি। নোটবন্দি জারি হওয়ার পর থেকে কোথাও গিয়ে ফিল্ড রিপোর্টিং করাটা অত্যন্ত কঠিন হয়ে গেছে। আপনি কি দেহরক্ষী নিয়ে যেতে পারবেন? স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের মতো দেহরক্ষী দল যাঁদের সুরক্ষায় দেওয়া হয়, যাঁরা আদৌ কোথাও যান না। সরকার তাঁদেরই সুরক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ করবে যারা কেউ কখনও কোথাও যাবেন না। এমন পরিস্থিতিতে কোথাও গিয়ে সীমিত সময়ের মধ্যে যত বেশি সংখ্যক মানুষের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব তা বলে আবার নিরাপদে ফিরে আসা কি সম্ভব? আপনি এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে গিয়ে পড়লেন, যেখানে ভিড় অপেক্ষা করছে কখন আপনি আসবেন। এখন এই ভয়ের সঙ্গে আপনি কেমনভাবে যুঝবেন, তা সম্পূর্ণ আপনার নিজের ব্যাপার।

ভয়ের এই জাতীয়করণ আগে কখনও ঘটেনি। যে দেশে প্রায় প্রতিটি মানুষ ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে ভালোবাসে, তেমন একজনকে যদি বলা হত, “তোমার ফোন ট্যাপ হচ্ছে।” দেখবেন সে তৎক্ষণাৎ ফোন কেটে দিয়েছে। এখন সে আপনাকে পালটা ভয় দেখাতে পারে, “তোমার ফোনও যে ট্যাপ হচ্ছে না, তা কি তুমি নিশ্চিত জানো?” এই সাহসটাকে ব্যবহার করে নিজের মধ্যে যা চেপে বসে আছে, তা উজার করে দিন সারা দেশের কানে। যাদের উদ্দেশ্যে আপনার বক্তব্য, যাদের সঙ্গে আপনি আলোচনা করতে চান। আপনার লক্ষ্যসিদ্ধির জন্য যাদের আপনি বেছে নেবেন, তারাই আপনার শ্রোতা।

এমন পরিস্থিতিকে শুধু বিপজ্জনক বলাটা যথেষ্ট নয়। অনেকে হিটলারের আমলকে মনে করিয়ে দেন, যদিও তুলনাটিতে আমার আপত্তি আছে। আমি এখানে কোনও হিটলারকে খুঁজে পাইনি। তবে এটা বলতে পারি যে, গোয়েবেলস্ কিন্তু আমার আপনার পেশায় সসম্মানে হাজির। তাঁকে এখনও দেখা যাচ্ছে না বটে, কিন্তু তিনি আছেন সক্রিয় রূপেই।

পুরনো প্রচারকে নির্দিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেলে নতুন করে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে গোয়েবেলস্-এর কারসাজিতেই। গত তিন বছর ধরে আমি এই নিয়ে নাকাল হতে হতে বারবার বলছি, টেলিভিশন দেখা বন্ধ করুন।

মানুষকে বলা দরকার, “যা দেখছ, আবর্জনা ছাড়া তা আর কিছুই নয়। আপনাকে মুসলমানদের মারবার জন্য তৈরি করা হচ্ছে না। সময় এলে একদিন আপনি যে কোনও মানুষকেই মারতে পারবেন।” ঝাড়খণ্ডে যখন দাবানলের মতো ছেলেধরা সংক্রান্ত গুজব ছড়িয়ে পড়ে, তখন নঈম আর হালিমদের সঙ্গে উত্তম আর গঙ্গেশও প্রাণ হারায়। গ্রেটার নয়ডায় ভূপ সিং আর জবর সিং গরু নিয়ে আসছিল। রাস্তায় তাদের আটকে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তারা এই বলে আকুতি জানায় ভিড়ের মাঝে, “ছেড়ে দাও, আমরা মুসলমান নই।”

প্রত্যেকটি মানুষকে সম্ভাব্য হত্যাকারী বানাও— ভীতিসঞ্চারের প্রকল্পটির এটাও এক অংশ। ভিড়কে সামলানো সহজ। কারণ, ভিড় কারও বশ নয়। উল্টোদিক থেকে দেখলে, সরকার কিন্তু ভিড়ের বশ। সরকারের মতো তারও হুকুম চলে এবং মানুষ তাকে সমর্থন যোগায়।

আমরা শুধু এই কারণে লড়ছি না যে আমাদের আলোচনার রাস্তাই বন্ধ করা হয়েছে, যা গণতন্ত্রের স্বার্থে জরুরি। আমাদের সমস্যা হল, এমন একটা সময় আমরা তাড়াতাড়ি দেখতে পাব, যখন নিজের এলাকার মধ্যেও নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করতে পারব না। ওদের প্রস্তুতি জবরদস্ত। আপনার মনে হতে পারে যাকে আপনি সম্ভাব্য আক্রমণকারী হিসেবে চেনেন, তার থেকেই আপনার বেশি বিপদ। বাসিত মালিক কি ওদের কারও চেনা ছিল? ‘মালিক’ পদবিটি নিয়ে যতক্ষণ বিভ্রান্তি, ততটুকু সময়েই পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু যে মুহূর্তে উর্দু কথা ওদের কানে গেল, ওরা ধরে নিল, এ তো পাকিস্তানিদের ভাষা।

আমরা এখন এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি, যে কোথাও উর্দু অক্ষর লেখা দেখলেই তা মুছে বা টেনে নামিয়ে ভেঙে চুরমার করি এই যুক্তিতে যে উর্দু ‘পাকিস্তানি’ ভাষা।

আক্রমণ হলে সাহায্যের জন্য কেউ যে এগিয়ে আসেন না, তা চিন্তার বিষয়। আমাদের অনেকেই এমন ঘটনায় সাড়া দিতে চাইবেন না। তাঁদের মধ্যে সাংবাদিকরাও আছেন। তাঁরা যেমন নির্বিকার হয়ে থাকেন, তা দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক, নিশ্চুপ থেকে এনারাও আক্রমণকারীদের মদত দিচ্ছেন। আমি নিজেও এমন সাংবাদিকদের দেখেছি যারা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অস্বস্তি বা অস্থিরতা কোনওটাতেই ভোগেন না। যখন নিজের সহকর্মীকে আক্রান্ত দেখেও আপনি নির্বিকার থাকেন, তাহলে সেটাই বিপদ সঙ্কেত। কারণ, আপনাদের মধ্যে সহযোগিতার ভাবনাটাই তো হারিয়ে গেছে।

এখন যা সময়, তা দেখে মনে ঘটনাভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক ক্যালেন্ডার প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। আমরা এযাবৎ প্রতিবাদ সভার মধ্যেই আটকে আছি। শীঘ্রই আমরা ঘটনাক্রমে একে অপরের শোকসভায় হাজির হব।


[1] দুই কন্নড় সাংবাদিককে কর্নাটক বিধানসভার তৎকালীন স্পিকার কে বি কোলিয়াড এক বছর কারাবাসের শাস্তি দেন। কারণ ওই সাংবাদিকেরা ছাপা অক্ষরে দুই বিধায়কের নিন্দা করেছিলেন রবি বেলাগেরে নামে জনপ্রিয় কন্নড় সংবাদপত্রে।