নভেম্বরের কবিতাগুচ্ছ
(১)
দুনিয়া হারিয়ে ফেলছি ক্রমশ!
এখন আর পাপের কথাও মনে পড়ে না সেভাবে
যে জন্ম, যাওয়ার— ফিরে গেছে।
আজকাল সামান্য দেশলাই পেলেই খুশি হই খুব
হাতপাখা খুঁজি সন্ধের বাজারে
–আনন্দের গল্প লেখা হয় না
কারণ, ঘুম পায় না আর!
(২)
এই রাত বারোটা আট মিনিটে
পাশের বাড়িতে যে স্নান করছে
তার সঙ্গে দেখা করতে হলে, সাদা শাড়ি পরতে হবে
কালো টেম্পল পাড় ও হলুদ ফুল
এই নভেম্বরের মাঝরাতে,
যে স্নান করে, আমি নিশ্চিত সে কখনও প্রেমিকাকে ছেড়ে
যায়নি।
সে তাকে জল খাইয়েছে, মেরেছে
ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেছে মুহূর্তে মুহূর্তে
আজ এই রাতে, আমি তাকে একবার দেখে
ঘুমাব।
একবার তার আঙুল থেকে কুয়াশা তুলে নিয়ে
হিমের মধ্যে বেরিয়ে যাব
বরাবরের মতো ডাকবে না কেউ
এখন আমার অসৎ শরীরে কোনও ভালোবাসার দাগ, খুঁজে
পাওয়া যায় না
খুঁজে পাওয়া যায় না, আলো ও আশাজনিত
কোনও অসুখ
ওই যে স্নানে বসেছে মাঝরাতে
সে আসলে এক অজানা ম্যাজিক
সে আসলে এক বাঁশিওয়ালা
যার জন্য আমি আয়ুকে অপমান করি আজও।
(৩)
নভেম্বরের হাওয়ায় আত্মহত্যার ইশারা
নভেম্বরের বাতাসে বিষ।
নভেম্বরের বাতাসে ফিসফিস করে পাপের গল্পরা—
এসবে তুড়ি দি। চারটে-পাঁচটা সিগারেট, লাইটার আর
হতাশ জীবন ভরে থাকে ব্যাকপ্যাকে।
কাঁধে নিতে কষ্ট হয় না আর!
এখন গালাগাল শুনে হাসি পায়
তুমি ভালোবাসা না শিখেই গাড়ি ব্যাক করো
চাঁদের পাড়ায় তারা খেলতে যাও
তোমার ধানরঙের শরীর রোদ্দুরে ভরা
দূর থেকে দেখে দেখে আশ মেটে না আমার!
ফসলের প্রসঙ্গে তুমি বরাবরই হিরো
আর আমাকে বাসবদত্তার রোলও কেউ দেয়নি কখনও।
(৪)
সেতার শিখব ভাবলেই
মনে পড়ে যায় সব!
আমাদের সেই নভেম্বর-প্রবণ দিন—
এখনও পুজোর পর, ফিরে আসে!
জন্মের ওপার থেকে
রেলগাড়ি থেকে
স্টিমারের হুইশিলের থেকে
ফিরে আসে!
(৫)
তারপর কথা হল— দেখা হবে।
শিশির জমা গঙ্গার ধারে, ঘুম পাবে খুব
অভিমান নামের একটা সোয়েটার কিনে দেব তোমায়
এই শীতে কলকাতায় প্রতিটি রাজপথ, সাক্ষী
থাকবে আমাদের তুমুল সান্নিধ্যের।
এসব নভেম্বরের কথা—
যে মাসে আজ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেনি, জানো তো?