Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ধর্ষণকাল

শতাব্দী দাশ

 

মুশকিল হল, ধর্ষণ নিয়ে আজ যা লিখছি, কাল তা ‘ডেটেড’ হয়ে যাচ্ছে। পুরনো হয়ে যাচ্ছে। এত মুহুর্মুহু ধর্ষণ বা ধর্ষণ-সংক্রান্ত আপডেট আসছে যে খেই হারিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি বা লিঙ্গরাজনীতি নিয়ে গতকাল পর্যন্তও মাথা ঘামাতেন না যাঁরা, তাঁরাও বলছেন— ‘এত ঘটনার ঘনঘটা মাথা আর নিতে পারছে না।’

২০১৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তথাকথিত ‘নির্ভয়া’র ধর্ষণকাণ্ডের সাত বছর পূর্ণ হবে। তা নিয়ে হয়ত প্রতিবছরের মতো এবছরও রুটিনমাফিক লেখালেখি চলত ওয়েবে বা কাগজে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলি চোখে আঙুল তুলে দেখাল, নির্ভয়াকাণ্ডের বীভৎসতাই ভারতের রোজনামচা। জ্যোতি সিং ছিল ২৩ বছরের ফিজিও ইন্টার্ন, যে পুরুষবন্ধুর সাথে সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষিত হয় চলন্ত বাসে, যার ধর্ষকদের মধ্যে একজন ছিল নাবালক, যার ইন্টেস্টাইন ভ্যাজাইনার পথে রড পেঁচিয়ে ঢুকিয়ে শরীরের বাইরে বের করে আনা হয়েছিল।

আর তার ঠিক সাতবছরের মাথায় আরও অনেক ধর্ষণ পেরিয়ে, আসিফা পেরিয়ে, বিলকিস বানো পেরিয়ে, উন্নাও পেরিয়ে, ঘটল হায়দ্রাবাদের ধর্ষণের ঘটনা৷ হায়দ্রাবাদের ঘটনা প্রমাণ করে, বর্তমান ভারতে হিন্দু-মুসলিম মিলে হাতে হাত ধরে একটি কাজই সম্পন্ন করতে পারে। ২৬ বছরের একটি মেয়ের গণধর্ষণ। তারপর তাকে পুড়িয়ে দেওয়া। এ আদিম বিকারই সাম্প্রদায়িক সমন্বয় ঘটায়, এমনকি বিজেপির ভারতেও। পরে জানা গেল, সেই মৃতদেহর অনতিদূরে আরেকটি পোড়া মৃতদেহ পাওয়া গেছে৷ খোঁজ চলছে, সেই লাশও কোনও ধর্ষিতা মেয়ের কিনা, অপরাধীরা একই কিনা। তারপর একে একে উঠে এল রাঁচির মেয়েটির কথা, কালীঘাটের মেয়েগুলির কথা, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই। কেউ কেউ প্রশ্ন করলেন, গণধর্ষণের মরশুম শুরু হল নাকি?

তাঁদের জানাই, গণধর্ষণের মরশুম বছরভর চলে, স্ট্যাটিস্টিক্স বলছে। কিন্তু যেহেতু একটি নির্মম গণধর্ষণের খবর ভেসে উঠেছে, তাই এখন কিছুদিন সংবাদপত্রগুলো গণধর্ষণের খবর বেশি কভার করতে লাগল।

তেলেঙ্গানার নির্মম গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডটির পর যখন সেই নির্মমতার গ্রাফিক বিবরণ দিচ্ছিলেন স্তম্ভিত মানুষ, তখন ভয় করেছিল৷ ভায়োলেন্সের বর্ণনা যে শারীরিক-মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে, সে অস্থিরতা কিন্তু বর্ণন-বিমুখতার কারণ নয়৷  আসলে মনে পড়ে যাচ্ছিল, জ্যোতির মৃত্যুর পর যোনিতে রড ঢুকিয়ে দেওয়ার ঘটনা আরও বেশ কিছু ঘটেছিল৷ তাই সন্দেহ জাগছিল, এবার পুড়িয়ে মারাটাই ট্রেন্ড হয়ে যাবে না তো?

ভয়টা যে অমূলক নয়, তা তেলেঙ্গানার ঘটনার পরবর্তী কয়েকদিনেই বোঝা গেল৷ দ্রুত গতিতে ঘটতে লাগল আরও নানা ঘটনা। ওই ঘটনার পরেই উত্তরপ্রদেশে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে দেয় তারই প্রতিবেশী। আবার বিহারের বক্সারে এক মহিলাকে গণধর্ষণ করে গুলি করা হয়। তারপর আবারও জ্বালিয়ে দেওয়া হয় দেহ। বক্সারের ইটাডি এলাকার ওই ঘটনায় নিহত মহিলার পরিচয় এখনও জানা যায়নি, জমা পড়েনি কোনও নিখোঁজ ডায়রি। অপরাধীরাও ধরা পড়েনি।

পুনরাবৃত্তি এরপর ঘটল বাড়ির কাছে। মালদহে কোতোয়ালি থানার ধানতলা গ্রাম থেকে উদ্ধার হল তরুণীর নগ্ন পোড়া দেহ। এঁকেও গণধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে বলে অনুমান। আবারও তরুণীর পরিচয় জানা যায়নি, অপরাধীদেরও ধরা বাকি৷ তরুণীর ঊর্ধ্বাঙ্গ পুড়ে গিয়েছে। যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।

একই দিনে উত্তরপ্রদেশের উন্নাও-এ যে ঘটনাটি ঘটল, তা আরওই চমকপ্রদ। গত মার্চে পাঁচ জন মিলে ধর্ষণ করেছিল বছর তেইশের এক তরুণীকে। ধর্ষিতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে। বাকি দু’জন ফেরার। রায়বরেলি আদালতে সেই ধর্ষণ মামলার শুনানি চলছিল। গত সপ্তাহে জামিনে ছাড়া পায় অভিযুক্তরা। বৃহস্পতিবার সকালে সেই ধর্ষণের মামলায় শুনানির জন্য তরুণী যখন আদালতে যাচ্ছিলেন, তখন জামিনপ্রাপ্ত তিনজন এবং আরও দুজন তাঁর রাস্তা আটকে দাঁড়ায়। তাঁকে মারধোর করা হয়, ছুরিও মারা হয়। শেষে তাঁর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। জ্বলন্ত অবস্থাতেই এক কিলোমিটারেরও বেশি পথ চিৎকার করতে করতে ছোটেন নির্যাতিতা। ওই অবস্থাতেই জনৈক পথচারীর মোবাইল চেয়ে, তা থেকে ১১২ ডায়াল করে ফোন করেন পুলিশকে। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পৌঁছে উদ্ধার করে তাঁকে।

তাঁকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় প্রথমে কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে, পরে লখনউতে। তারপর তাঁকে বিমানে করে আনা হয় দিল্লির সফদরগঞ্জে। সেখানেই শেষ হয়ে যায় তাঁর লড়াই। মৃত্যুর আগে তিনি অভিযুক্তদের নাম বলে গেছিলেন। তারা ধরা পড়ে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ৩০৭, ৩২৬, ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।

অর্থাৎ মেয়েটিকে প্রথমে ধর্ষণ করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। হয়ত সাম্প্রতিক ঘটনাবলি দেখে হয়ত অপরাধীদের মনে হয়, প্রাণে মেরে দেওয়াই উচিত ছিল। ওদিকে অভিযোগকারিনীর অবর্তমানে হয়ত ধর্ষণের কেসটিও উঠে যাবে। কিংবা মেয়েটি রুখে দাঁড়িয়েছিল, কেস করেছিল, তিনজনকে গ্রেপ্তার করিয়েছিল— সে কারণেই হয়ত এই প্রতিহিংসা।

উন্নাও জেলা ইতোমধ্যেই কুখ্যাত বিজেপি নেতা  কুলদীপ সিং শেঙ্গারের বদান্যতায়। তিনি আরেকটি ধর্ষণকাণ্ড ঘটিয়েই ক্ষান্ত হননি, ধর্ষিতার বাবাকে পুলিস লক-আপে ঢুকিয়ে মার খাইয়েছিলেন, ধর্ষিতার বাবা মারাও গেছিলেন৷ সেই মেয়েটিকেও মে মাসে চাপা দিয়ে মারার চেষ্টা করে নেমপ্লেটহীন একটি লরি। সাম্প্রতিক ঘটনাটি প্রমাণ করল, উত্তর প্রদেশ তথা উন্নাও জেলায় ধর্ষিতা মামলা করলে তাকে মেরে ফেলার বীভৎস চেষ্টা আকছার ঘটে।

ধর্ষণ, ধর্ষণ সংস্কৃতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা তো চলবেই৷ যাঁরা ধর্ষকের ফাঁসি চাইবেন, তাঁরাই হয়ত রাত পোহালে রেপ রেটরিক ব্যবহার করবেন, এমনকী হয়ত ধর্ষকের উপর রাগ উগরে দিতেও ব্যবহার করবেন এমন খিস্তি, যা আসলে নারীবিদ্বেষী। আলোচনা চলবে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা দেওয়ার অক্ষমতা নিয়েও৷

আমাদের সমাজে ধর্ষিতার ভিক্টিমহুড ধর্ষণেই শেষ হয় না৷ বেঁচে থাকলেও সামাজিক কুৎসাও তাঁর যন্ত্রণাকে বহুগুণ করে তোলে, তাঁকে বারংবার অতীতের নারকীয় ঘটনায় ফিরে যেতে বাধ্য করে। আবার তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টাও চলতে থাকে। একটি আকস্মিক ধর্ষণ যদিও বা ঘটে যায়, তার পরে কেন এভাবে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে তাঁকে? ধর্ষিতার নিরাপত্তা ও সুস্থ পুনর্বাসনটুকুও কি সরকারের দায়িত্ব নয়?

সাত বছর আগে নির্ভয়ার মৃত্যুর পর ইন্ডিয়া গেট, রাইসিনা হিল, কলকাতা, বেঙ্গালুরু এমনকি নেপাল, বাংলাদেশ পর্যন্ত রাগে ফেটে পড়েছিল। ভারতীয় পর্যটন শিল্প রাতারাতি ধ্বসে গেছিল। নিউ ইয়র্ক টাইমস দিল্লিকে ‘ভারতের রেপ ক্যাপিটাল’ চিহ্নিত করেছিল। কাঁদানে গ্যাস আর জল মিসাইল ছুড়েছিল বটে পুলিশ, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছিলেন, সঙ্গত কারণেই এই বিক্ষোভ। ধর্ষণের কেসের ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্টের মাধ্যমে চটজলদি নিষ্পত্তির আশ্বাস এসেছিল। ভার্মা কমিটি গঠিত হয়েছিল যৌন হেনস্থা ও ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনে উপযুক্ত পরিবর্তন ও সংযোজনের জন্য। সেই কমিটি যখন সিভিল সোসাইটি, উইমেন্স অর্গানাইজেশন ইত্যাদির থেকে অভিমত চেয়েছিল, তখন সাজেশন জমা পড়েছিল প্রায় ৮০০০ মতো।

কেন এই জনরোষ? কেন ৮০০০ রকমের প্রস্তাব নারীনির্যাতন রুখতে? কারণ সরকার আর মধ্যবিত্ত জনসাধারণের মধ্যে লিখিত বা অলিখিত সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট বিশ্রীভাবে ভেঙে পড়েছিল। আসলে ভেঙে পড়াটা নতুন নয়। নির্ভয়ার মৃত্যু সেই ভেঙে পড়াটাকে দৃশ্যমান করেছিল। সরকারের দায়িত্ব জনসাধারণের নিরাপত্তা। কনস্টিট্যুশন নারী-পুরুষ সবাইকেই পথে ঘাটে সমান নিরাপত্তা দিচ্ছে, কিন্তু শুধু মৌখিকভাবে। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে নয় কেন? এই প্রশ্নই সেদিন পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙেছিল।

২০০০ সালে প্রকাশিত ‘Women, Gender and the State’ বইতে সন্ধ্যা আর্য বলেন, আশির দশকের আইনি পরিবর্তনসমূহ ভারতীয় নারীর সামাজিক অবস্থান বদলাতে আদৌ সাহায্য করেনি। বরং আইন স্বয়ং নারীকে সহনাগরিক, সমনাগরিকের মর্যাদা না দিয়ে তাকে ‘পারিবারিক মর্যাদা’, ‘মেয়ে-মা-বোন’, ‘পরনির্ভরশীল’ ইত্যাদি পিতৃতান্ত্রিক রেটরিকে বন্দি করেছে। প্রকারান্তরে, আইন-ই ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ‘খারাপ মেয়ে/ভালো মেয়ে’ বাইনারি তৈরি করেছে, ধরে নিয়েছে— ’সুরক্ষা’ দরকার শুধু পিতৃতান্ত্রিক পরিভাষা অনুযায়ী ‘ভালো মেয়েদের’। তদুপরি ছিল এবং আছে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা, দুর্নীতি, নির্যাতিতর অজ্ঞতা— যা এমনকি প্রচলিত অসম্পূর্ণ আইনকেও বহুলাংশে ভোঁতা করে রেখেছিল।

নির্ভয়া কাণ্ডের জেরে ২০১৩ সালের ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট একটা বড় প্রাপ্তি, যা ভার্মা কমিটির সুপারিশকে বহুলাংশে মেনেছিল। ফেব্রুয়ারিতে অর্ডিন্যান্স পাশ, অতঃপর রাষ্ট্রপতি, লোকসভা ও রাজ্যসভার সম্মতিক্রমে নতুন আইন। এই আইন নিখুঁত নয়, তবে উন্নততর। এখানে বলা আছে, শুধু ‘vagina, anus, mouth’-এ penis এর insertion-ই ধর্ষণ নয়, তা হতে পারে আরও নানাভাবে। এখানে sexual harassment-এর সীমা বাড়ানো হয়েছে বাচিক যৌন হয়রানি, অশালীন ছবি তোলা বা জোর করে পর্ন দেখানো পর্যন্তও। এখানে স্পষ্টতই বলা হয়েছে, passion নয়, power অর্থাৎ ক্ষমতা প্রদর্শনই ধর্ষণের কারণ। এখানে চূড়ান্ত গুরুত্ব পেয়েছে consent বা সম্মতির ধারণা। Consent-কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে: ‘unequivocal agreement to engage in a particular sexual act’. তারপরেও যে ২০১৭ সালে মহম্মদ ফারুকি সংক্রান্ত একটি পশ্চাৎপদ রায় বেরোতে পারে ভারতীয় আদালত থেকে, তা দুর্ভাগ্যের।

অবশ্য কার্যক্ষেত্রে, আজও, ২০১৩ সালের নতুন আইন অনুসারে পুলিশের বিরুদ্ধে ধর্ষণের কেস নথিভুক্ত করার ব্যাপারে গড়িমসি দেখালে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে— এই ঘোষণা সত্ত্বেও, অনেক কেস নথিভুক্ত হয় না। এমনকী বহু-আলোচিত হায়দ্রাবাদের ক্ষেত্রেও পুলিসের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অভিযোগ আছে গড়িমসির, এক থানা থেকে আরেক থানায় নিখোঁজ মেয়ের আত্মীয় স্বজনদের ঘুরিয়ে মারার।

ফাস্ট ট্র‍্যাক কোর্ট হয়েছে বটে। সেই ‘ফাস্ট ট্র‍্যাক’ কোর্টেই অগাস্ট, ২০১৬ পর্যন্ত পেন্ডিং কেস ছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার। এবং হ্যাঁ, নারীনির্যাতনের নথিভুক্ত কেস কমেনি, বেড়েছে। ঘটনা বেড়েছে, না পুলিশে রিপোর্টিং-এর হার— তা অবশ্য গবেষণাযোগ্য।

এক হাজার কোটির নির্ভয়া ফান্ড গঠিত হয়েছিল, যা থেকে প্রতি ভিক্টিম তিন লক্ষ টাকা পাবেন। আজও সেই প্রাপ্য আদায় করতে বহু বছর কেটে যায় বা তা অনাদায়ী থাকে।

ভার্মা কমিটি ম্যারাইটাল রেপকে ধর্ষণের অন্তর্ভুক্ত করেছিল। কিন্তু বৈবাহিক ধর্ষণের অস্তিত্ব আজও মানা হয়নি। ভার্মা কমিটি বলেছিল, নির্বাচনে যেকোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ থাকলে সে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য বিবেচিত হোক। তাও হল কই? বরং উন্নাও কাণ্ডে দেখা গেল, রাজনৈতিক মদতপুষ্ট ব্যক্তিরা ধর্ষণের ব্যাপারে অকুতোভয়৷

চারবছর পরে নির্ভয়ার ধর্ষকদের ফাঁসি হয়েছিল বটে, জনসাধারণ ভেবেছিল বটে, ন্যায় নেমে এল কলিকালের পৃথিবীতে। কিন্তু তা যৌন নির্যাতন বিরোধী লড়াই-এ তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য ধাপ নয় বলেই মনে হয়। ঠিক যেমনভাবে হায়দ্রাবাদের তরুণীটির ধর্ষকদের এনকাউন্টারে খতম করে দেওয়াও ধর্ষণ প্রতিরোধে কোনও উল্লেখযোগ্য ধাপ নয়৷ এ সব হল বড়জোর ‘symptomatic treatment’। অসুখের উৎস সন্ধানে আমাদের বড় অনীহা। কারণ উৎস সন্ধান করতে গেলে তো সেই মর্মমূলেই পৌঁছব, যা সংখ্যাগরিষ্ঠের সাধের অসাম্যভূমি, যাকে নারীবাদীরা পিতৃতন্ত্র বলে ডাকি।

শুধু ফাঁসি ও ক্রিনিমাল ল-ই আমাদের মাথাব্যথার কারণ না হোক। ভাবতে হবে সিভিল ল নিয়েও— ভাবতে হবে সিভিল ল কীভাবে নারীর ক্ষমতায়নে সাহায্য করতে পারে— যাতে নারীর শিক্ষার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, কাজের অধিকার ইত্যাদি নিশ্চিত হয়। তবেই না সে পূর্ণ শক্তিতে ক্রিমিনাল ল-কে কাজে লাগিয়ে নিজের বিরুদ্ধে ঘটতে থাকা হিংসাকে প্রতিহত করতে পারবে!

আর দরকার লিঙ্গসাম্যের শিক্ষা। যেখানেই ‘শি ওয়াজ আস্কিং ফর ইট’ লজিক দেখা যাবে, অবশ্যই প্রতিবাদ করতে হবে৷ পুরুষ-নারী নির্বিশেষে সকলেই পিতৃতান্ত্রিক অন্ধকার পেয়েছে পুরুষানুক্রমে৷ সে অন্ধকার থেকে তাদের বের করতে হলে ধৈর্যশীল হতে হবে৷ গভীরতর শোধনের এই পথ লিঙ্গসাম্যের শিক্ষা ছাড়া অসম্ভব৷

ধর্ষণ নামক অপরাধটিকে আরও নানাভাবে কাটাছেঁড়া করব আমরা। সাপ্তাহিক লোকাল ট্রেনের একটি নিবন্ধের পরিসরে সেটি করা সম্ভব নয়। তাই এ নিয়ে একটি স্পেশাল ট্রেন বা বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। সেখানে নানা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা লিখবেন। আপাতত এই লেখাকে তার মুখবন্ধ হিসেবেই নেওয়া যেতে পারে।

অলমিতি।