ছয়টি কবিতা
আমার ছায়া
পাশের লোকের ছায়া গায়ে এসে পড়ে, আমি তার সঙ্গে কিছু রাস্তা হাঁটি। চলন্ত যানবাহনের ছায়া ছিটকে লাগে গায়ে, কিছুটা তাদের সঙ্গে যাই। এক-স্টপেজ থেকে অন্য স্টপেজ এ-ভাবেই… টপকে টপকে যাওয়া। রাস্তার পাশের ঘর-দুয়োর, সাঁকোর বাঁকের গাছ ছায়া ফেলে স্থিরিয়ে নেই কিছুকাল আমার মধ্যে। বহুবিভক্তির লোভ কবে থেকে ওদেরকেও তাড়ে। এক-পেট রোদ গিলে পাখিরা লাগে ঘাড়ে। দাঁড় ভাবে। আমাকে আমল দেয় না শুধু আমার ছায়া, যার স্থিতি-লয়-গায়ের গন্ধ পর্যন্ত আমার, তবুও…
আমার নিজের ছায়া আমার নিজের গায়ে কখনও পড়ে না।
মহাজ্ঞানী, আমি আর সেই পথের পাগল
সত্যি কথা বলার জন্য কোনও টুথপেস্ট ব্যবহার করার দরকার হয় না। মহাজ্ঞানী বললেন।
আমি বললাম, আমি ঘরে মুড়ি খাই আর বাইরে পোলাও-এর ঢেকুর তুলি। কোনটা সত্যি?— ঘরে মুড়ি খাওয়া, না বাইরে পোলাও-এর ঢেকুর তোলা।
মহাজ্ঞানী বললেন, আমরা জাদুবাস্তবতার দেশে বাস করি বলে এমনটা হয়। এমনটাই সত্যি।
পথের পাগলটা হেসে উঠল নিজের মনে, আর বিড়বিড় করে বলে চলল, ‘আমি তো স্তনমুগ্ধাশ্রমে থাকি। আমি জানি, স্তনমুগ্ধতাই সব।’
মিথ্যে, মিথ্যে বাদবাকি…..
আমি আর মুক্তিযুদ্ধ
আমি আর মুক্তিযুদ্ধ একে অপরের প্রতিবেশী
তবু, প্রতিবেশীর বেশি প্রতিবেশী বলে মনে হয় বন্দিদশা
ঘষা কাঁচের ওই পাড়ে তুমি আর এই পাড়ে আমি, মাঝখানে
নদীতে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা
বন্দিদশা। বন্দিদশা। বন্দিদশা…
বন্দিদশা চায়ের ভাঁড়। বাবার সেরিব্রাল। মা-বোনের দায়।
ভাই-এর কাজ চলে যাওয়া।
বন্দিদশা মালিকের লাঞ্চ-ডিনারের প্যাক। বই-এর র্যাক।
বন্দিদশা রাত্রিবেলা ফেরার পথ। জেরার মুখে ভেঙে পড়া প্রতিবাদ।
যেহেতু সরকার-ই মাদার ফাকার।
আমি ঘাড় উঁচু করে জেগে থাকি—
আমি ঘাড় নিচু করে স্বপ্ন দেখি মধ্যপন্থার।
আবু হাসান শাহরিয়ার যখন কথা বলেন—
মুক্তি… মুক্তি… মুক্তিযুদ্ধ…
আমি ক্রুদ্ধ আমি গাল পাড়ি
আমি বুদ্ধ আমি এক নব্য অবতার।
ঢেকুর
বাজার করে ফেরার পথে নিজেকে মুড়িয়ে থলেতে ভরেনি
বাড়ি কেটেকুটে রান্না করে আমাকে খাওয়ায়
আমিষে আমাকে খাই
নিরামিষেও আমাকে বেশ লাগে দিন প্রতিদিন
এভাবেই…
বাজার ও বাড়ি
মাঝখানে যে ভেলকি তা আমার ভগবান জানেন
উনিও আমার আমিষ নিরামিষের জন্য পাত পেতে
ঘরের কোণে বসে পড়েন
ওনাকে না দিয়ে তো আর কোনও কিছু মুখে তোলা যায় না
আমার ঢেকুর ওঠে শব্দ করে
কিন্তু মাইরি বলছি, ভগবানের ঢেকুরের আওয়াজ
কোনওদিন পাইনি কোনও ঘরে।
একটা একটা করে
একটা মিছিল রাস্তা থেকে উধাও
একটা কুকুর কুঁইকুঁই করে ডাকে
বোকার ইশারা চালাকেরা বুঝে নেয়
পছন্দসই কবরে
বোকাকে শুধালে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়
বোকা তো, বোকার হদ্দ
হাওয়া-বাতাসেরা কাগজকুচির দলে
আকাশ কিছুটা ভদ্র
বাজার থেকে বেশ্যাখানার পথে
মুগুরের ভাঙা মাথা সব পড়ে নাও
বোকার মত খোকার খুনি কারা? বলতে গেলে
একটা মিছিল রাস্তা থেকে উধাও
ভোলা
ডুব দেওয়া ভালো। তেল মেখে
রোজ ডুব দিও।
কিন্তু ডুবে যেও না কখনও।
কখনও না কিছুতেই। এমনকি সংসারেও না।
ভেসে থাকাটাই আসল জীবন।
ভেসে থাকো। তা বলে ভেসে যেও না কখনও।
কখনও না কিছুতেই। এমনকি
সামাজিক হাওয়া-বাতাসেও না।
উদ্ভাসিত হও। ভেসে থাকাটাই প্রকৃত জীবন।
নিজেকে ভারী করে তুলো না মন
মন রে আমার…