Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ওরা ছাড়া কারা?

কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়

 




লেখক গল্পকার এবং ব্লগার।

 

 

 

আপনি প্রশ্ন রেখেছেন। রাজনীতি করবে তো পড়বে কখন? বাপমা পড়তে পাঠিয়েছে, পড়, তা না বিপ্লব করে বেড়াচ্ছে।

আমি আপনার কথা শুনে অবাক হচ্ছি। ওরা যদি বিপ্লব না ধরে, ওরা যদি রাস্তায় না নামে, ওরা যদি না চেঁচায়, তবে কে চেঁচাবে? আমি? আপনি? যারা নিজেদের ভালো দেখতে দেখতে অন্ধ হয়ে গেছি? যারা নিজেদের পিঠ বাঁচাতে বাঁচাতে শামুক হয়ে গেছি? ওদের স্লোগান দেওয়া গলার ফুলে ওঠা শিরের দিকে তাকান, আকাশের বুকে রোগা কবজি ফুঁড়ে বেরোতে চাওয়া ধমনীর দিকে দেখুন। ওর মধ্য দিয়ে রক্ত, গরম রক্ত দৌড়চ্ছে। ওদের মাথা ফেটেছিল বলে ক্যাম্পাস রক্তে ভেসেছে, আমার আপনার মাথা ফাটালে গ্যাদগেদে চর্বি ছাড়া কিছু ঝরত না।

আপনি স্মাইলি দিয়েছেন। যারা ইস্যুনির্বিশেষে মিছিল করে বেড়ায় তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি-দুটি বিশেষ স্ট্রিমের পড়ুয়াই কেন হয়? বাকি সব স্ট্রিমের ছাত্রদের (বিশেষ করে আপনি যে স্ট্রিমের ছাত্র ছিলেন) তো কোথায় রাস্তায় নেমে হুজ্জুতি করতে দেখা যায় না। এতে কি এটাই প্রমাণ হয় না যে কিছু কিছু স্ট্রিমের পড়ুয়াদের হাতে নষ্ট করার মতো অঢেল সময় থাকে? তাদের পড়ানোর পেছনে বাপমা বা রাষ্ট্রের পয়সা খরচ মানে ভস্মে ঘি ঢালা?

আমি জানি না, আপনি কোন স্ট্রিমের ছাত্র ছিলেন। যে স্ট্রিমেরই হোন না কেন এটুকু ধরে নেওয়া যায় আপনি মন দিয়ে পড়েছিলেন। পড়ার সময় নষ্ট করে বনের মোষ তাড়াননি। জানি না পড়া শেষ করে আপনি কোন জীবিকা বেছে নিয়েছেন। এটুকু জানি সে জীবিকা দিয়ে আপনার মাস গেলে পেট ভরে যায়। আপনার প্রিয়জনেরও। হ্যাঁ হ্যাঁ, রেস্টোর‍্যান্টে খাওয়া, আইনক্সে সিনেমা দেখা, আর ফরেন ট্রিপও ভুলিনি। ভুলব কেমন করে, প্রমাণ হিসেবে ছবি দেখলাম তো। চোখ টাটালাম। পড়ার সময় নষ্ট না করে আপনি এইটুকু হাসিল করেছেন, মেনে নিচ্ছি। কিন্তু অপরাধ না নেন তো বলি, আমার ধারণা, ওর থেকে বেশি কিছুও হয়নি। আপনি এও নিশ্চয় জানেন, আপনার থেকে ঢের কম পড়াশোনা করে আপনার থেকে ঢের বেশি আনন্দের প্রমাণ আরও অনেকেই রাখছে, যা দেখে আপনার চোখ টাটাচ্ছে। কাজেই চোখ টাটাটাটি দিয়ে মাপলে, বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনার বিদ্যার্জনও একরকম ভস্মে ঘি ঢালাই।

আপনি বলছেন, এ সব করে কিস্যু হবে না। যেমন যা ছিল সব তেমনি থাকবে। যা হবার তাই হবে।

আমি বলছি… ওয়েল… কিছুই বলছি না। এই ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে একমতই হচ্ছি জানেন। না হতে চেয়েও হচ্ছি। ওদের এই গলা চিরে চিৎকার, মার খাওয়া, বেহিসেবির মতো রক্ত বওয়ানো সব হয়তো বিফলেই যাবে। কেন বলুন তো? কারণ আমার আর আপনার মতো বুড়োরা। যারা জগদ্দলের মতো দেশটার বুকে চেপে বসে আছি। যাদের টাকা আছে, প্রতিষ্ঠা আছে, গা বাঁচানোর মতো স্বার্থপরতা ভরপুর আছে, পালানোর মতো ভয় টইটম্বুর আছে। আর আছে চোখ বুজে, “যাই হয়ে যাক, আমার কিছু হবে না” প্রাণপণ জপে যাওয়ার অপরিসীম মূর্খতা।

আমার আপনাকে শুধু একটা কথাই বলার আছে। প্রার্থনা করুন, ওরা যেন আমাদের সমস্ত অসহযোগিতা অমান্য করে, আমাদের যাবতীয় উপেক্ষা অগ্রাহ্য করে, এই গোল্লায় চলে যেতে বসা দেশটাকে আবার দেশপদবাচ্য করে তুলতে পারে। ওরা যেন আরও জোরে চিৎকার করে, আরও উঁচুতে মুঠি ছোড়ে, সিলেবাস আর ফিউচার আর সিকিউরিটির মুখে ছাই দিয়ে বার বার রাস্তায় নামে।

না হলে আমার আপনার বাঁচার আশা নেই।