Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

রামলীলা, মহম্মদ সাবির খান এবং এক মহাকাব্যিক লেগ্যাসি

রামলীলা, মহম্মদ সাবির খান এবং এক মহাকাব্যিক লেগ্যাসি

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

ধর্ম। আমরা। ওরা। ঘৃণা। পাল্টা ঘৃণা। ক্রমশ ছেয়ে যাওয়া আমাদের স্কুল কলেজ অফিস ক্যাম্পাস। প্রচার মিডিয়া এবং বড়দের হাতে ক্রমশ বিষিয়ে দেওয়া ছোটদের পৃথিবী। সেকুলারিজম বলে সত্যিই কিছু হয় না। ওসব ভাঁওতা। হিংসে করো, ঘেন্না করো তোমার মুসলিম পড়শিকে, বন্ধুকে, সহপাঠীকে। এটাই সত্যি। বাকি সব বাহ্য।

সাবির খানের গল্পটা এমন ছিল না। এখনও এমন না। কে সাবির? শুরু থেকে শুরু করি। লখনৌ। বক্সি কা তালেব। দূরের ইটাউঞ্জা শহরতলিতে রামলীলা হত। যেতে অন্তথ আটাশ কিলোমিটার। বাধ্যতা। বক্সি কা তালেবের হিন্দুরা শ্রমে বাধ্য হতেন। অধিকাংশ মানুষ আর যেতেন না। তাহলে? অবস্থাটা বদলাল কে? কীভাবে? কবে থেকে? সালটা উনিশশো বাহাত্তর। বক্সি কা তালেবের স্থানীয় অধিবাসীরা ঠিক করলেন তাঁরাই রামলীলা করবেন। কিন্তু সমস্যা হল বেশ কয়েকটি মুসলিম পরিবারের বাস। তাঁরা কতটা সাড়া দেবেন। অথচ প্রয়োজনমত ব্যবস্থাপনাও করতে হবে। আলো। অভিনয়। পরিচালনা। মঞ্চ তৈরি। লোক দরকার। মহম্মদ সাবির খান তখন তেরোয় পড়েছেন। এগিয়ে এলেন। ছোট্ট ছেলেটা পাড়া জমিয়ে রাখত। হিন্দু দাদারা বাধা দিলেন না। জটায়ু চরিত্র। দর্শক হেসে খুন। এবং, মুগ্ধ। তারপর থেকে সাবির থেকে গেছেন। রামলীলায়…

তিন দশক। তিন সন্তান। সলমন। আরবাজ। শের। প্রথম দুজনের গ্র্যাজুয়েশন। তবু, অভিনয় করছেন। রাম। লক্ষ্মণ। না, পরীক্ষার সময়টুকু ছাড়া সলমন আরবাজ নাটকের পার্ট ছেড়ে বেরোন না। চরিত্রে ঢুকে যান। ওদের মন্দির লাগে না। রাম তো মসীহা। দৈনন্দিন বোরডম, লড়াই, অবিচার— এসব পেরিয়ে রাম একটা দুঅক্ষরের ওয়েসিস। শির খানও আছেন। সাবিরের ছোট ছেলে। জনকের চরিত্রে। ভূমি থেকে উত্থিত হন নারী। হিন্দু। তথাকথিত। কণ্ঠ, মেকআপে, আলোয় মাইনরিটি….

তিন দশক ধরে সাবির কিন্তু বদলাননি। জনক, কুম্ভকর্ণ, বিভীষণ, সুগ্রীব, বালি, রাবণ, দশরথ— প্রায় সমস্ত চরিত্রই করেছেন। ছেলেদের উৎসাহ দিয়েছেন। বক্সি কা তালেবের হিন্দুদের উৎসাহ পেয়েছেন। ওঁরাও মুগ্ধ। দলের অন্যতম ম্যানেজার নগেন্দ্র সিং চৌহান এবং অন্যান্য তথাকথিত হিন্দু ব্যবস্থাপকেরাও বন্ধু সাবিরের। শ্রদ্ধা ছাড়া মানুষটাকে, তাঁদের পরিবারকে আর কিছু দেওয়ার নেই তাদের। সহ অভিনেতা হিন্দুরা বুঝতে পারেন না কীভাবে তথাকথিত অন্য এক এপিকের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে খান পরিবার।

রমজানের সময়। কোথাও টক্কড় নেই। লড়াই নেই। ইফতারের নমজের সময় হয়ে গেলে একটু বিরতি হয়। দর্শক অপেক্ষা করেন খুশি মনেই। তারপর আবার রামলীলা। মহাকাব্যিক গল্প। জীবনেরও…