Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

সলমা জরির কাজ রিম্বিক পাহাড়ে

সলমা জরির কাজ রিম্বিক পাহাড়ে । সাম্যব্রত জোয়ারদার

সাম্যব্রত জোয়ারদার

 

সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়াও শুরু হবে আমাদের রোলকল
খাদ থেকে উঠে আসে মা মরা মেয়ের কাটাদাগ তলপেটে
বাজারের ইস্কুল কাঠবাড়ি মালিক প্রধান এসে নমস্কার জানায়
জমিজিরেতের তিনিই ভাগীদার, ললিত ললিত নাম ধরে
ডাকে কেউ— তার মানে ললিত গিয়েছে পাতা কুড়োনোর কাজে
ইস্কুলে আসেনি, সকালের দিকে দেখলাম ফুটবল মাঠে
বন্ধুদের সঙ্গে ছিল তারপর পিঠে ভারী বোঝা
নিয়ে চলে গেল জঙ্গলের দিকে— ক্লাস শুরুর আগে
আজ দেবে বিশেষ ভাষণ কী এক অদ্ভুত পাঠোদ্ধার হবে
তার আগে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়াও আমাদের রোল কল

 

রোদ্দুর উঠেছিল, ইস্কুলের মাঠে এসে খানিক গা ঘামিয়েছে— তারজালির ফাঁক গলে নেমে গেছে বাজারের দিকে রাতে যদিও ঠান্ডা লাগেনি তেমন স্বপ্নের ভিতর ভেঙে গেছে চশমার কাচ। ওই যে বাঁ-দিকে ওইসব সিকিম পাহাড় দরজা খুললেই দেখা যায় সামদ্রুপসে হিল পদ্মসম্ভব গুরু বসে আছেন। আর ওই দূরে টেবিলের মতন যে ঢাল ওইখানে শৈশবের ইস্কুল পাতাঝরা উড়িয়ে যেখানে রোদ্দুর এসেছিল একদিন বেলা বাড়তেই কোলাহলে ভরেছিল ফুলের বাগান… ঘণ্টা বাজিয়েছিল কারা

 

রংটংয়ে সিমবা এক কুকুরের নাম
সেতু যায় ঘুরে আসে কাঠের স্লিপার
নিচু খাদ পার হয় ট্রা-লালা রংটং
না থাক সেসব রাস্তা— ঢালু, স্তব্ধ ফোন
কথা কাটাকাটি— জানি না কেমন আছে
গা জোয়ারি করে কিনা নাকি বাঁধ দেওয়া
সিমবার চেইন যেন চৌকাঠের কাছে
সেতু যায় ঘুরে আসে কাঠের স্লিপার
রংটংয়ে হাওয়া দেয় লোহার দোলনা
শব্দ করে তারপর ফের চুপচাপ
শুকনো ফলের গায়ে মৃদু চাপ দিলে
তার গন্ধ পাওয়া যায় পাথুরে দেওয়ালে

 

বলেছে সেতুর প্রয়োজন না হলে অনেকটা ঘুরপথ।
রাম্মাম বয়ে যায় খরস্রোতা— শহুরে মানুষ
গান বাজিয়ে হল্লা করে, কুয়াশার ভিতর
ভেসে ওঠে অদ্ভুত সে বাড়ি— বেশি রাতে আলো জ্বলে
থমথমে জলবিদ্য়ুৎ প্রকল্প রাম্মাম নিচু খরস্রোতা
শব্দ করে, বলেছে বিরাদরির শাদিবাড়ি সেতুর প্রয়োজন।

 

চাঁদ সরে গেছে নিকটের থেকে— পাহাড়ের গায়ে
সলমা জরির কাজ, ওইখানে হাতি যায় ঘোড়া চলে যায়
বল্লম সিপাহী চলে আগে আগে তার সঙ্গীসাথী
চাঁদ সরে গেছে— ঝিকিমিকি নিকটে নক্ষত্র একা
পাহাড়ের নিভন্ত উনুন শেষরাতে পাশে বসে
বলে কাকে বুঝি ভুলে গেছ ঝোরা শব্দ করে— বহে যায়

 

রাত্রি সফরের গাড়ি দম ছাড়ে যেন ফুঁসে ওঠে
একবার— তারপর সব চুপচাপ— সরু জল
বইবার ধ্বনি অথবা সে সফরের জিপগাড়ি
একা একা এঞ্জিনের নীচে বসে হাত-মুখ ধোয়

পেটের চুহারা দৌড়ে উপরের চালে উঠে পড়ে
প্রজ্ঞার মায়ের ঘরে বেশি রাতে এটা সেটা নাড়ে

 

ডাউনলোডের রাত পোকামাকড়ের গ্রাম— হেই
জেগে আছ, আজও নাম লেখ ঘষা জানলার কাচে
কে যে কাঁদে থেকে থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে শব্দ ওঠে
পিছনের রিমবিক পাহাড়ে রাত্রি তার কুঁয়া খোঁড়ে
দুর্মূল্যের বাজারে সে পেয়েছে কম্বল শীতরাতে
গুটিয়ে রেখেছে হাত, পা কিছুতে গরম হচ্ছে না
কী হবে হুজ্জুতি করে এতবার ব্যাকস্পেস দিয়ে
একাকী ব্লগার ভাবে কেটে যাবে কার্তিকের রাত
হেই ডাউনলোডের ঘুম পোকামাকড়ের গ্রাম
কথা বলো টেক্সট করো স্কুলমাঠে জোনাকি উঠেছে

 

গায়ে পড়ে দেখতে চায় কোন পথ পেরিয়ে এসেছি
জলরেখা চলে— তার বয়ে চলা বাড়ি বাড়ি খোঁজ নেয়
অসুখ বিসুখ সেরে গেছে কিনা, পথ্য লিখে দেয়
জলরেখা চলে তার লেখার গতিতে দাগ পড়ে—
কয়েকটা পাথর বহুদিন ধরে স্তূপ করে রাখা
পাথরের পাশে বসে তার কথা শুনি, একবার
সে ঘুমিয়ে পড়তে চেয়ে এইখানে এসেছিল শীতে
স্কুলবাড়ি মঠের সাধুরা তারজাল দিয়ে তাকে
আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখে দিয়েছে অদ্ভুত গুল্মগাছ
লতাপাতা জড়িয়েছে কাঁধের দুপাশে— হাওয়া লেগে
রিনিঠিনি ঘণ্টা বাজে দেখি পথ পেরিয়ে এসেছি
পাথরের, শুধু সে ঘুমিয়ে কিনা জানা নেই আর

 

সে হয়ত ভাল আছে দুপুরের পর একবার
রোদ চলে গেল তাই মনে হয় ভালো থাকবারই
কথা রাস্তাঘাট নিচু ঢাল তবে আর ভাঙাচোরা
নয় যে কোনও সময় মোটামুটি পৌঁছে যাওয়া যায়

সে হয়ত দুপুরের পর একা হিসেব নিকেশে
ব্যস্ততায় দেখেইনি রোদ্দুর এসে চৌকাঠে বসেছিল
একা একা তারপর ফিরে চলে গেছে ডাউনহিল
ওদিকে টাওয়ার নেই বারবার ফোন কেটে যায়

 

১০

করতল থেকে অন্তরীপ নীচে নেমে আঁকড়েছি
নোঙরের জং— নক্ষত্রের গাঢ় মালভূমি আলো মাখা টিনশেড
দেশবন্ধু পাড়ার সে দূরালাপ জানি মূর্চ্ছনায়
ভেঙে গেছে, যেরকম বামফ্রন্টের আহ্বান— ছেঁড়া
পোস্টারের টিপচাপা দুল যেতে হবে বিভাগীয়
বাস্তুকারের অফিসে— এসেছে নতুন স্টাইলের
ব্রা ও ব্লাউজ পোড়া দাগ সেরে যাবে যদি লিখি এইসব
যদি লিখি তা হলে লিখিব ভগ্নস্তূপ গ্রামগুলোর
হাঁফওঠা নিশ্বাস যাঁরা এঁকেছে বাতাস পত্রবাহকের ভুলে
পাতার সমীরে শহুরে নাটক নয় পুতুলনাচের মজনুর দিল
ভেঙেচুরে গেছে— একা সে টেবিলে বসে কী যে লেখে
জল দিয়ে দাগ টানে পল্লীপথের ডৌল মুখশ্রীকে