Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ট্রাম্পের ঘোষণা শুধু বিশ্ববাসী নয়, মার্কিন জনতার জন্যেও বিপজ্জনক

সুশোভন ধর

 



লেখক রাজনৈতিক কর্মী, রাজনৈতিক ভাষ্যকার

 

 

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৪ এপ্রিল ঘোষণা করেন যে করোনা মহামরীর প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লুএইচও বা হু) ভূমিকায় তিনি সন্তুষ্ট নন। এ বিষয়ে তাঁর প্রশাসন শীঘ্রই একটি তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করবে যার ফলাফল বেরোতে সময় লাগবে দুই থেকে তিন মাস। ততদিন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দেয় অনুদান বন্ধ রাখবে। তাঁর মতে করোনা ভাইরাস মহামারি গোটা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অব্যবস্থাই মূলত দায়ী এবং এই সংস্থাটি প্রাথমিক স্তরে এই মহামারি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিলে সবচেয়ে বেশি অর্থ মার্কিন সরকার দিয়ে থাকে।

তার আগের সপ্তাহে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে চিনের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন এবং বলেন যে চিনে যাওয়া আসার ব্যাপারে তাঁর প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে হু অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ করেছে।

আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মতে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত একটি ভুল দিকে অত্যন্ত বিপজ্জনক পদক্ষেপ এবং তারা রাষ্ট্রপতিকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছে। তারা আরও বলেন যে এই ধরনের অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াই করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজন বিজ্ঞান এবং তথ্যের উপর নির্ভর করে এই সমস্যার সমাধান করা, অনুদান বন্ধ করা নয়, বিশেষ করে গোটা পৃথিবী যখন এক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হাবুডুবু খাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশনীতির প্রধান জোসেফ বোরেল ইতিমধ্যে জানিয়েছেন যে ট্রাম্পকে সমর্থন করার কোনও কারণ তাঁরা দেখছেন না। এছাড়াও বিল গেটস, যার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিলে মোটা অর্থ দেয়, তিনিও ট্রাম্পের ঘোষণাকে বিপজ্জনক বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এর পরিণাম ভয়ানক হতে পারে কারণ এই করোনা ভাইরাস অতিমারির মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বিরাট ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এবং বিশ্বের নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশগুলি এই সংস্থার সহায়তা ছাড়া কোনওভাবেই এই বিপদের মোকাবিলা করতে পারবে না। অনেকেই বলছেন যে এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের নিজের প্রশাসনের ব্যর্থতা ঢাকার এক অপচেষ্টা। আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত দেশগুলিকে ছাপিয়ে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই অবস্থা সামলাতে শুধুমাত্র ল্যাজেগোবরে হচ্ছে না, সেদেশের অনিশ্চিত পরিণতির আশঙ্কায় ভোগা মার্কিন নাগরিকদের দৃষ্টি ঘোরাতে একের পর এক দোষারোপ, কুৎসা এবং আবোলতাবোল ঘোষণা ও বিবৃতির খেলায় মেতেছে।

ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রস আধানম গেব্রেইয়েসুস বিশ্বনেতাদের কাছে এই অতিমারির রাজনীতিকরণ না করার আবেদন জানিয়েছেন। সেই পথে চললে, তাঁর মতে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুমিছিল অব্যাহত থাকবে যার অবসান কবে হবে কেউ বলতে পারবে না। যদিও তাঁর আশা যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সংস্থার দীর্ঘদিনের মিত্র অতএব ট্রাম্প প্রশাসন নিচিতভাবেই তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। ট্রাম্প প্রশাসন যদি অর্থসাহায্য একান্তই বন্ধ তাহলে তারা দেখবেন অন্য কোথা থেকে এই ঘাটতি পূরণ করা যায়।

ট্রাম্প অবশ্য নির্দিষ্ট করে বলেননি যে মোট কত পরিমাণ অর্থ তিনি আটকে রাখবেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮-১৯ সালের দ্বিবার্ষিক ৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান প্রায় ৯০০ মিলিয়ন বা ১৬ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে এই সংস্থাকে সবচেয়ে বেশি অর্থসাহায্য করে থাকে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এমনিতেই অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন বিলম্ব করতে পারে কিন্তু টাকা না দেওয়ার সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ট্রাম্পের নেই, একমাত্র মার্কিন কংগ্রেসের আছে। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভের (আমাদের দেশের লোকসভার মতো) স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে এই নিয়ে বিরোধিতা শুরু হয়েছে। অতএব মনে হয় না ট্রাম্প নিজের দেশে সহজে পার পেয়ে যাবেন। তবে ওদেশে যেহেতু রাষ্ট্রপতিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা সেহেতু তাঁর নিজের ইচ্ছা চাপানোর কিছু কিছু সুবিধা অবশ্যই আছে।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে বিশেষ অসুবিধায় পড়বে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক ও আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হলে এই সংস্থার কাজকর্ম বিশেষভাবে ব্যহত হবে। ট্রাম্পের ঘোষণার ঠিক আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রথম সলিডারিটি বিমান বিভিন্ন ওষুধপত্রের সবরাহ নিয়ে ইথিওপিয়া অভিমুখে রওনা দেয় করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আফ্রিকার দেশগুলিকে সহায়তা করতে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থার পক্ষেই ক্ষতিকারক নয় তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেও বিপজ্জনক। আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি যে এই ভাইরাস স্থান-কাল-পাত্র মানে না এবং তা অন্যান্য সংক্রামিত এলাকা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে আবার নতুন দফায় সংক্রামণ শুরু করতে বেশি করে সময় নেবে না।

ট্রাম্প তার ১৪ তারিখের প্রেস কনফারেন্সে আরও অভিযোগ করেন যে চিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে মাত্র ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বহুগুণ বেশি অর্থ দিলেও এই সংস্থা চিনের কথা শুনে চলছে। এই সংস্থা প্রাথমিক অবস্থায় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা না করে তৎক্ষণাৎ আপৎকালীন অবস্থা (Public Health Emergency of International Concern – PHEIC) ঘোষণা করলে মূল্যবান সময় নষ্ট হত না। ২০১৯-এর ডিসেম্বর মাসে এ সংক্রান্ত খবর বাজারে প্রথম আসার পরে তারা ঠিকঠাক পরীক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯-এ চিন জানায় যে এক ধরনের অজানা নিমুনিয়ায় কোনও কোনও জনগোষ্ঠী সংক্রামিত হচ্ছে এবং প্রাথমিক তদন্ত চালিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সোশ্যাল মিডিয়ায় ৪ জানুয়ারি এ খবর প্রকাশ করে। স্বাস্থ্য নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন তাদের অনেকের মতে যেকোনও রোগের প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক অবস্থায় সেই রোগের ব্যাপ্তি এবং ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছু বোঝা মুশকিল। বিশেষজ্ঞদের মতে সংক্রামক রোগের ব্যাপকতার সঙ্গে সঙ্গেই এই রোগ সম্বন্ধে আমাদের ধারণা ও অবস্থান জোরালো হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রথম ইমারজেন্সি কমিটি মিটিং হয় ২৩ জানুয়ারি। তার এক সপ্তাহ পরেই তারা আপৎকালীন অবস্থা বা PHEIC জারি করে। সেই সময়ে চিনের বাইরে মাত্র ১০০ জনের সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছিল এবং কোনও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

ট্রাম্প নিজে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চিনকে জড়িয়ে নানা কথা বলেছেন বা এখনও বলে যাচ্ছেন। তাঁর নিজের অপদার্থতা ঢাকতে তিনি যে এসব কুকথা বলে বেড়াবেন এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি নিজে কেন ২৪ জানুয়ারি চিনের প্রশংসা করে টুইট করেছিলেন তার কোনও ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারছেন না। সেই টুইটে তিনি লেখেন “করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে চিন আন্তরিক চেষ্টা চালাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রচেষ্টা এবং স্বচ্ছতার প্রশংসা করে। তাদের প্রচেষ্টা কাজে লাগবে। বিশেষত আমেরিকান জনগণের হয়ে আমি রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংকে ধন্যবাদ জানাতে চাই!” সম্ভবত সেই সময় দাঁড়িয়ে তিনি আন্দাজ করে উঠতে পারেননি এই ভাইরাসের আগুনে তাঁর নিজের কপাল পুড়তে পারে। এই বছরে যে আবার আগামী চার বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি পদ বজায় রাখার পরীক্ষায় বসতে হবে তাকে। সত্যি, নির্বাচন বড় বালাই। ক্ষমতার গদি আঁকড়ে ধরে থাকতে তার এই পদক্ষেপের জন্য আরও কয়েক লাখ মানুষ মারা গেলেও বিরাট অসুবিধা নেই। আপাতত একটা বলির পাঁঠা তো পাওয়া গেছে।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় চিনের ভূমিকা নিয়ে বাজারে বহু কথাবার্তা ভাসছে। একদিকে দেখা যাচ্ছে প্রবল চিন-আতঙ্ক বা সিনোফোবিয়া আবার অন্যদিকে বহু বামপন্থী চিনের ভূমিকা দেখিয়ে সমাজতন্ত্রের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। চিন আদৌ কোনওদিন সমাজতান্ত্রিক ছিল কিনা বা ১৯৪৯ সালের বিপ্লবের পরে চিন কতটা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে হেঁটেছিল তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ এই লেখার পরিসরে বিশেষ নেই। সে কথা না হয় অন্য একদিন আলোচনা করা যাবে। কিন্তু চিন সম্বন্ধে হাজার যৌক্তিক ও ন্যায্য সমালোচনা থাকলেও ট্রাম্প সেগুলিকে ঢাল করে কোনওমতে পার পেতে পারেন না। তাঁর অভিযোগ জানুয়ারির মাঝামাঝি চিন বিশ্বকে জানায়নি যে এই ভাইরাস মানুষের থেকে অন্য মানুষে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এবং তার ফলে তা একটি অতিমারিতে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে চিনের এই দাবিগুলি বা জনসমক্ষে চিন সরকার যা প্রকাশ করেছে তা ঠিকমত নিরীক্ষা না করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেগুলি চোখ-কান বুজে বিশ্বাস করেছে। এর উত্তরে বলা যায় যে ট্রাম্পের অনুদান বন্ধের ফলেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল বিভাগের যে কর্মীরা এই ভাইরাস মোকাবিলায় চিনে কাজ করছেন তার দুই-তৃতীয়াংশের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলত এই রোগ চারপাশে আরও ছড়ালে তার দায় কে নেবে? দ্বিতীয়ত জানুরারির মাঝামাঝি চিন যদি ৬ দিন দেরি করেছে বলে আমরা মেনেও নিই ট্রাম্প নিজে বিপদ বুঝতে পেরে ৭০ দিন দেরি করলেন কেন? এই বাড়তি ৬৪ দিনের হিসাব কে দেবে? ট্রাম্প নিজে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করতে ১২ মার্চ অবধি লাগিয়ে দিলেন অথচ যাকে তিনি বলির পাঁঠা করতে চাইছেন সেই সংস্থা ৩০ জানুয়ারি বিপদের সঙ্কেত সরকারিভাবে জানিয়ে দেওয়ার পরেও তিনি বাড়তি ৪২ দিন সময় নিলেন কী ভেবে? আসলে ট্রাম্প প্রশাসনকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে সেই নভেম্বরে নতুন এই ভাইরাসটির বিষয়ে সতর্ক করা হয়। দেশের একাধিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডিসেম্বর থেকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার তাগিদ দেন। কিন্তু ট্রাম্পের কানে তখন জল যায়নি! এখন বিপদ বুঝে তিনি ওভারট্রাম্প করতে চাইছেন।

তাঁর দোষারোপের নিশানায় ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চিনের সঙ্গে উঠে এসেছে বারাক ওবামা ও ডেমোক্র্যাটদের নাম, এছাড়া বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নর ও প্রশাসন, মিডিয়া, ফেডারেল ইন্সপেক্টর, ইত্যাদি। তিনি এ ধরনের আষাঢ়ে গপ্পো ফাঁদতে দ্বিধা করেননি যে নার্সরা মাস্ক চুরি করার ফলে মহামারি ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে তার রাগের আরও কারণ আছে। তেদ্রস আধানম গেব্রেইয়েসুস এই সংস্থার প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পরে সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থার কথা বলে তাঁর গাত্রদাহ ঘটান। এছাড়াও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে এই সংস্থার ভূমিকাও মার্কিন প্রশাসন কখনওই ভালভাবে নেয়নি। গত তিন দশকে পৃথিবী এক গভীর দক্ষিণপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক আক্রমণের চাপে আছে। এতদিন তাকে বলা হত নয়া-উদারনীতি, কিন্তু ট্রাম্প, মোদি, জনসন বা বোলসোনারোদের হাতে তা ছাপিয়ে আরও বিপজ্জনক অবস্থায় পৌছে গেছে। ফলে এই ধরনের আরও অনেক ঘটনা আমরা দেখব।

এঁদের মধ্যে আরেক মিল আছে। পুঁজিপতিদের জন্য যেকোনও নির্মম ও নিষ্ঠুর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পিছপা হন না এঁরা এবং সর্বোপরি মিথ্যা কথা ও প্রচারের আড়ালে সমাজের এক বড় অংশের মানুষকে মোহগ্রস্ত করে রাখেন। ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুযায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প গত তিন বছরে যা যা বলেছেন তার মধ্যে ১৬,২৪১টি কথা মিথ্যাচার, অবাস্তবতা ও বিভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ। ট্রাম্পের মেয়াদের তিন বছর শেষে ফ্যাক্ট চেকার ডেটাবেসকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদপত্রটি এই কথা জানিয়েছে। তার এই সহজাত অভ্যাস করোনা ভাইরাসের সময়েও থেমে নেই। ১৮ এপ্রিল এক সাংবাদিক সম্মেলনে একাধিক মিথ্যা বলতে শোনা গেছে তাকে। ট্রাম্পের বলা মিথ্যা নিয়ে ‘ফ্যাক্ট চেকস’ সংবাদ প্রকাশ করেছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। সেখানে বলা হয়েছে, আমেরিকার করোনা টেস্ট নিয়ে ট্রাম্প যেমন ভুয়া তথ্য দিয়েছেন, তেমনি একাধিক অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা করেছেন। করোনা বিষয়ক ব্রিফিংয়ে এসে তিনি উত্তর কোরিয়া, ইরান প্রসঙ্গ টেনেছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে বলছেন যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়ন তার বিশ্বব্যাপী ভূমিকা পালনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই সংস্থার সামগ্রিক ব্যয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বড় হাসপাতালের বাজেটের তুলনায় কম। এইভাবে চলতে থাকলে এই সংস্থাটি অচিরেই একটি ঠুঁটো জগন্নাথ পরিণত হবে। এবং আগামী দিনে কোনও বড় মহামারি— যার সম্ভাবনা প্রবল— হাজির হলে আন্তর্জাতিকভাবে মোকাবিলা করার কোনও উপায় আমাদের থাকবে না।