অমর মিত্র
মার্কো এবার যাবেন। পেছনে ফিরে যাবেন কিংবা সমুখে রওনা হবেন। ফিরে যাওয়ার কথা বলতে যেখান থেকে এসেছেন সেখানে যাওয়া বলে। তাহলে মার্কোকে ফিরতে হয় পুরাতন জায়গায়। সেই কলকাতা, পাটনা, দিল্লি, লাহোর, করাচি, কাবুল, বাহ্লিক দেশ, হিন্দুকুশ পর্বতমালা, আস্তানা… তাহলে তাঁর ভেনিসে যাওয়া হবে না। ১২৬০ সালের দিকে মার্কোর পিতা নিকোলো ও পিতৃব্য মাফ্ফেও কনস্টান্টিনোপলে থাকতেন। তখনও তাঁরা কেউ মার্কোকে দ্যাখেননি। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলে তাঁরা তাঁদের সমস্ত সম্পদ বিক্রি করে জহরত কেনেন এবং এশিয়ার দিকে রওনা দেন। এশিয়ায় তাতার সম্রাট কুবলাই খানের সঙ্গে দেখা হয় তাঁদের। ১২৬৯ সালে ভেনিসে ফিরে সন্তান মার্কোকে প্রথম দ্যাখেন তাঁরা। তখন মার্কো বছর পনেরো। ১২৭১ সালে মার্কো তাঁর বাবা ও কাকার সঙ্গে এশিয়ার পথে রওনা হন। ২৪ বছর বাদে ১২৯৫ সালে ভেনিসে ফেরেন। তাঁরা প্রায় ১৫০০০ মাইল পথ পরিক্রমা করেছিলেন।
কাজান শহরের ভূ-পর্যটক মার্কো পোলো ফিরবেন কিংবা রওনা হবেন, তা নিয়ে সংশয় তৈরির দরকার নেই। মার্কো এই শহর ছেড়ে যাবেন। চেরি ফুটে গেছে এই শহরে। মার্কো বলছিলেন, একবার চেরি ব্লজম ফেস্টিভ্যালের সময় তিনি নিউইয়র্কে ছিলেন। কবে কোন বছর তা মনে নেই। মার্কো ভুলে যাচ্ছেন সন তারিখ। আজ কত তারিখ জয়িত্রি? আজ কী বার জয়িত্রি? কতদিন আমি ভেনিসকে ভুলে আছি। আমি ভেনিসে এবার ফিরব।
জয়িত্রি বলল, মেয়রকে বলে যেতে হবে।
মার্কো বললেন, নিশ্চয় তা যাব, কী অপূর্ব বসন্ত এসেছে এবার।
জয়িত্রি বলল, বসন্ত এমনিই আসে, তবে এবার মার্কো পোলো আসায় তা অন্যরকম, আমি কোনওদিন ভাবিনি কোনও এক মার্কো পোলোর সঙ্গে আমার দেখা হবে।
মার্কো বললেন, আমিও কোনওদিন ভাবিনি জয়িত্রির সঙ্গে দেখা হবে।
জয়িত্রি চুপ করে থাকে।
মার্কো জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বন্ধু নিকোলাই কোথায়?
জয়িত্রি বলল, সে তার গ্রামের বাড়ি গেছে, তার বাবা ছিলেন অঙ্কের অধ্যাপক, সে অঙ্কের গবেষক, কোন এক ইকুয়েশন সল্ভ করতে বাবার কাছে গেছে।
মার্কো গত রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছেন। মার্কোর ভাষায় তা এমন।
অনেক ভোর, রাত চারটেয় দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে গেছে। শুয়ে আছি অন্ধকারে। আমার বন্ধু তারা প্রেমিক প্রেমিকা। এক কাফেতে। আমাদের সঙ্গে রয়েছে প্রয়াত এক জন। সে কে জানি না, আমি কিংবা আমি নই, কিন্তু সে যে মৃত তা জানি। স্বপ্ন এমনই হয়। স্বপ্নে জীবিতেরা মৃতের সঙ্গে কথা বলতেই পারে। প্রেমিক পুরুষটি বলল, মার্কো, ও আর আমার নেই। মেয়েটি কে? জয়িত্রি? পুরুষটি কে, নিকোলাই? মৃত ব্যক্তি কে, মার্কো? মার্কো তো নিজেকেই চেনেন। তবু তিনি জিজ্ঞেস করলেন প্রেমিককে, কেন, নেই কেন?
ওই যে বসে আছে পুরুষ, যে কিছুদিন আগে চলে গেছে, ওকে ভালোবেসেছে সে। জীবিতের কাছে মৃত ফিরে এল? না কি মৃতের কাছে জীবিত চলে গেল? মার্কো অনেক সময় চুপ করে শুয়ে ছিলেন। তারপর দক্ষিণ থেকে আজানের স্বর ভেসে আসতে লাগল। আজানের স্বর ক্রন্দনের মতো মনে হতে লাগল। আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা, তুমি রক্ষা করো। আসলে আজান তো সকলকে ডেকে তোলা অতি প্রত্যুষে। ফজরের নামাজে এসো।
এখন দুঃস্বপ্নে ঘুম ভাঙছে শেষ রাতে। রাত চারটে-সাড়ে চারটে। আর ঘুম আসে না। একটু বাদে আমি মোবাইল খুটখুট করতে লাগলাম। ফেসবুক খুলতে হিন্দোল ভট্টাচার্যের কবিতা:
আমি মরলে তুমি জানতে পারবে না
তুমি মরলে আমি জানতে পারব নাচুপিচুপি মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা হবে
এবং পৃথিবী হবে নিরাপদ, কারণ
আর কোনও মানুষের সঙ্গে তার সহবাস
হবে না কোথাও
তাই বোবা হয়ে থাকো—
জীবন নশ্বর
মানুষ নিহত হলে মৃত্যুও পরাজিত হয়।
***
মেঘলা দিন। এখন সকাল সাড়ে ছটা। রোদ ওঠেনি।
সকালবেলায় লন্ডন থেকে ভেসে আসা রুকসানা হোসেইনের কান্নায় দিন শুরু হল। তাঁর স্বামী আলম আকন্দ করোনায় মারা গেলেন। এক পুত্র এক কন্যা নিয়ে সুখের সংসার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। তিনি ফেসবুকে এই কথা লিখেছেন। খবরিয়া তাঁর কথাই লিখে রাখলেন।
আজকে সেই ১৪ দিন, আমি আবার লাইভে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু না, আমি পারলাম না। আমি হেরে গিয়েছি। যুদ্ধ করতে করতে আমি করোনা ভাইরাস; যাকে বলছে কোভিড-১৯ তার কাছে হেরে গেলাম। আমি সে সময় বিলিভ করতে পারছিলাম না যে আলমের করোনা পজিটিভ। অথচ সে তার শরীরে করোনা নিয়ে আমাকে সেভ করে গেল। আমরা সবাই এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো এবং সুস্থ আছি, শুধু আলম (আমার হাজবেন্ড) নেই আমাদের মাঝে। সে বুঝতে পেরেছিল তার সময় শেষ; করোনার মহামারী থেকে রক্ষা করতে শুধু ইদ্দাতের ৪ মাস ১০ দিন না, আগের ১৪ দিনসহ রক্ষা করে গেল আমাকে।
আলহামদুলিল্লাহ অবস্থার উন্নতি দেখে তাড়াতাড়ি রওনা হলাম। আমার বাচ্চারা আমাকে টেনে ধরে না মামণি তুমি বের হবে না, আমরা মাকে হারাতে চাই না, বাবা অসুস্থ, তুমিও অসুস্থ হলে আমরা কার কাছে যাবো। কিছুই হবে না আমাদের ইনশাল্লাহ, আল্লাহর উপর ভরসা রাখ বলে বেরিয়ে গেলাম।
প্রায় এক ঘন্টার মেট্রো জার্নি আমার বাসা থেকে হসপিটাল। কোয়ারেন্টিন ভেঙে ছুটে চললাম হসপিটালে। একটা পাথর, একটা তাসবিহ, মোবাইল আর কিছু টাকাসহ ছোট একটা ব্যাগ ডাক্তারের হাতে দিয়ে রিকুয়েস্ট করলাম একটা বার আমাকে দেখার সুযোগ করে দাও। না কোনভাবেই যেতে পারলাম না আলমের কাছে। কিন্তু সে ঠিকই অনুভব করেছিল, আমি তার অনেক কাছে এসেও তার সাথে দেখা করতে পারি নাই। তাই শুক্রবার বিকেল থেকে আজকে পর্যন্ত আর সাড়া দেয় নাই কারও ডাকে। আমার ব্যাগটা তার হাত পর্যন্ত পৌছানো হয়েছিল কিনা আমি তাও জানি না। মোবাইল ইউজ করবে, পাথর দিয়ে তায়াম্মুম করবে আমি সেই অপেক্ষায় ছিলাম।
কিন্তু সে আর চোখ খুলে পৃথিবীর আলো দেখেনি লাস্ট ডে পর্যন্ত। এর ভিতরে আমাকে দুইবার ভিডিও কলে দেখানো হয়েছিলো। অনেক ডেকেছিলাম ভিডিও কলে, তারপরও চোখ খোলেনি। চলে গেছেন জান্নাতে। এইভাবে করোনা পৃথিবীর বুকে করুণ ইতিহাস লিখে যাচ্ছে।
করোনা লন্ডনে কি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, তা এক সপ্তাহ আগেও আমি আন্দাজ করতে পারিনি। তাই ডাক্তারদের উপর অনেক রাগ হচ্ছিল আমার। আইসিইউ-এর ভিতরে কীভাবে করোনা প্রবেশ করতে পারে বা আমাকে কেন টেস্ট করা হচ্ছিল না ইত্যাদি নিয়ে। আসলে আমি ভুল ছিলাম। হসপিটাল ভর্তি এত মুমূর্ষু করোনার রোগী রেখে, আমাকে তারা কেন টেস্ট করবে? যেখানে আলহামদুলিল্লাহ আমার কোন সিমটম ছিল না। টেস্ট করেও যদি পজিটিভ আসত, তাহলেও করার কিছু ছিল না। সেল্ফ আইসোলেশন মানে অন্যের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা ছাড়া কিছুই করার নেই। যেটা এখন আমরা সারা বিশ্বের প্রায় সবাই করছি। অন্যের থেকে দূরে থাকা যায়, কিন্তু সন্তান মা এদের থেকে দূরে থাকা যায় না; যেমনটা আমি পারিনি।
আলম করোনার রোগী হওয়ায় আমি দেখেছি ডাক্তার নার্সদের সার্বক্ষণিক কঠিন প্রচেষ্টা। এখন বুঝতে পারছি কত রোগী হলে সরকার প্রাক্তন ১১ হাজার ডাক্তার, ২৪ হাজার ফাইনাল ইয়ারের মেডিকেল স্টুডেন্ট এবং আড়াই লক্ষাধিক সেচ্ছাসেবীদের করোনা রোগিদের পাশে দাঁড়াতে বলছে। আমি স্যালুট জানাই সকল ডাক্তার নার্স সেচ্ছাসেবীদের, যারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের জন্য।
হে আল্লাহ আপনিই সকল শক্তির মালিক। আপনিই পারেন আমাদের এই মহা বিপদ থেকে উদ্ধার করতে। আপনি আমাদের ক্ষমা করুন।
***
এত মৃত্যু এত বিমর্ষতা সব দিকে, আর কতদিন লিখতে পারব এই দিনলিপি। আমার কথা আপনার কথা, তাহাদের কথা। আজ সন্ধ্যায় কালবৈশাখী আসার কথা। বৃষ্টির কথা। মেঘের ডাক শুনলাম। গুড়গুড় করছে দূরের আকাশ। ঠান্ডা বাতাস আসছে জানালা দিয়ে। আজ নানা প্রতিবাদে বামফ্রন্টের নেতারা গ্রেপ্তার বরণ করেছেন। রেশনব্যবস্থা, সকলকে টেস্ট করতে হবে ইত্যাদি ছিল প্রতিবাদের বিষয়। ভয়ানক কাণ্ড হয়েছে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। লকডাউনের ভিতর সেখানে হাজার পঞ্চাশ বা তার বেশি মানুষের সমাবেশ হয়েছে এক হুজুর মৌলানার মৃত্যুর জানাজা অনুষ্ঠানে। সেই ছবি ফেসবুকে দুপুর থেকে ভাসছে। গিজগিজ করছে মানুষের মাথা। সিলেট ঢাকা হাইওয়ে অবধি চলে গেছে জমায়েতের মানুষ। প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন শুভবুদ্ধির মানুষ। কোভিড-১৯ ছড়ালে তার দায় হবে মানুষের! পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া নেই।
চিন তার মৃতের পরিসংখ্যানে পরিবর্তন করেছে গতকাল। যা ছিল আগে তার শতকরা ৫০ ভাগ বেড়েছে এবার। মৃত্যু শুধুই পরিসংখ্যান। নতুন করে কিছু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে চিনে। চিনের পাঠানো পিপিই কিটের মান ভালো নয়, তাই ফেরত যাচ্ছে, এমন খবর ঘুরছে। সত্য-মিথ্যা জানি না।
সন্ধ্যায় খবর পেয়েছি করোনায় মারা গেছেন চিলের লেখক, চিলের প্রখ্যাত কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও একনায়ক পিনোচেত-বিরোধী সংগ্রামের লড়াকু সৈনিক, লুইস সেপুলবেদা (৪ অক্টোবর ১৯৪৯ – ১৬ এপ্রিল ২০২০)।
পয়লা মার্চ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং দীর্ঘ দেড়মাস প্রাণঘাতী এই অদৃশ্য অণুজীবের সঙ্গে লড়াইশেষে আজ অবশেষে হার মানলেন। যে-প্রেমিক ও বিপ্লবী কবি একদা শ্লাঘাভরে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘I returned to undo the echo of your goodbye’, হায় তাঁকেই কিনা আজ এরকম সকরুণ চিরবিদায় নিতে হল তাঁর প্রিয় পৃথিবীর কাছ থেকে!
দাদার সঙ্গে আবার কথা হল। দীর্ঘ সময় ধরে। আসলে তিনি কবে আবার তাঁর প্রযোজনা নিয়ে ফিরবেন মঞ্চে, জানেন না। ইংল্যান্ডের সেক্সপীয়রের বাড়ি, অ্যাভন নদীর তীরে ছোট্ট শহর স্ট্যাটফোর্ডের কথা হচ্ছিল আগের দিন, আজ হল কানাডার কথা। টোরেন্টো থেকে অনেকটা দূরে একটি ছোট নদীর নাম ওদেশের মানুষ দিয়েছেন, অ্যাভন। আর নদীতীরের গঞ্জ শহরের নাম স্ট্যাটফোর্ড, সেক্সপীয়রের জন্মভূমি নির্মাণ করেছেন তাঁরা। সেই শহরে সাতটি থিয়েটার হল আছে। আছে থিয়েটার বিষয়ক মিউজিয়ম, এবং দোকানগুলিতে থিয়েটারের স্মৃতিজড়িত অনেক কিছু বিক্রি হয়। যেমন অভিনেতা চার্লস লটন একটি নাটকে যে ছুরিটি সঙ্গে নিয়েছিলেন, তা। পোশাক, পরচুল… ইত্যাদি। কত সময় ধরে সেই শহরের কথা হল। থিয়েটারের কথা। নিবিড় কথোপকথন। তিনি এখন লিখছেন। তা ছাড়া কিছু করার নেই আর।
রাতে ঘুমের আগে খবর পেলাম এইরকম।
বেলগাছিয়াতে স্থানীয় মন্দির ও মসজিদ কমিটির যৌথ উদ্যোগে একটি কমিউনিটি কিচেন তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে রান্না করা খাবার হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ওই এলাকার সমস্ত অসহায় মানুষদের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে। আমি বেলগাছিয়ার মানুষ। খুব ভালো লাগল এই খবর দেখে। একইভাবে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় মন্দিরের পুরোহিত ও মসজিদের ইমামদের যৌথ উদ্যোগে একটি কিচেন তৈরি করে প্রত্যেকদিন কয়েকশো মানুষের পেট ভরে খাবারের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। এইসব খবর সাহস জোগায়। ঘুমিয়ে পড়লাম।
উনিশ তারিখ ঘুম ভাঙল খুব ভোরে। রাত চারটে। রাতের ঘুম ভালো হয় না। উদ্বেগ থাকেই। নিউইয়র্কের বন্ধু কুলদার সঙ্গে কথা হয়নি বেশ কদিন। নিউইয়র্ক তো বিপন্ন নগরী। একের পর এক মৃত্যু। রোগ সংক্রামিত হয়েছে জামাইকা-কুইন্স সিটিতে বেশি। কুলদা সেখানেই থাকেন সপরিবারে। ওখানেই বাড়ি কিনেছেন। কুলদা দিন কুড়ি আগে জানিয়েছিলেন, তাঁর স্ত্রী মেরি তার হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ করেছে। ছুটি নিয়েছে। তারপর কুলদার সঙ্গে কথা হয়নি। আমি নিউইয়র্কে মেরি কুলদার আতিথেয়তায় ১০ দিন ছিলাম। আমাকে বলেছিলেন, দাদা এই বাড়ির একটি ঘর আপনার জন্য রাখা আছে। মেরি কুলদা বাংলাদেশের ফরিদপুর গোপালগঞ্জের মানুষ। বছর পনের নিউইয়র্কে আছেন। কুলদাকে হোয়াটস অ্যাপে ডাক দিলাম।
মেরির কাজ এক হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে। তাঁদের হাসপাতালের এক ৭৫ বছরের স্পেনীয়, এক ৮০ বছরের চিনার সঙ্গে আরও তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। মেরিও। ৭৫ বছরের স্পেনীয় মারা গেছেন, ৮০ বছরের চিনা সহ বাকি চারজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। করোনায় আক্রান্ত মেরিকে বাড়িতে আলাদা ঘরে রেখেই কুলদা নিজে শুশ্রূষা দিয়ে তাঁকে সুস্থ করে তুলেছেন। কী করেছেন কুলদা? মেরিকে আলাদা ঘরে রেখে নিজে মাস্ক পরে তাঁর সেবা করেছেন। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামলে কমিয়েছেন। কাশি কমানোর জন্য অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ, আর লেবু, আনারস, মধু। গা গরমজলে মুছিয়ে দেওয়া, মাথা ধুইয়ে দেওয়া যা ফ্লুতে করা হয়, তা করেছেন। প্রচুর জল খাইয়েছেন। আক্রান্তকে আলাদা ঘরে ফেলে না রেখে নিজে তার সেবা করে সুস্থ করে তুলেছেন। এইভাবেই সম্ভব। খুব সাহস জুগিয়েছেন মেরিকে। তাঁর দুই কন্যাও ঘরের বাইরে থেকে মাকে উদ্দীপ্ত করেছে। প্রবাসে দৈবের বশবর্তী না হয়ে মানুষ মানুষের সাহস দেখিয়েছে। ৮০ বছরের মানুষও ফিরে এসেছেন ভাইরাসকে পরাস্ত করে। মেরি আবার তাঁর ডিউটিতে হাসপাতালে যাচ্ছেন। এই কাহিনি আমেরিকার। নিউইয়র্কের। বুঝলাম সমস্তটাই মৃত্যু নয়। আরোগ্যও আছে। একটু সাহস দরকার। বিজ্ঞানকে বোঝা দরকার।
অরিন্দম বসুর সঙ্গে ফোনে কথা হল। ওর স্ত্রী সুদীপ্তার মা এবং দিদি থাকেন দমদম। অরিন্দম থাকে নাকতলার কাছে। সুদীপ্তা টাকা পৌঁছতে পারেনি তাঁদের কাছে। মায়ের বয়স ৮৮। দিদি ৬৫ হবেন। ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা তুলতে পারছেন না। খুব ভীড়। আবার ঐ অঞ্চলে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। রেড জোন হিসেবে ঘোষিত। ওঁদের দেখাশুনো করেন এক মুসলমান নারী। তিনি তাঁর বেতনের টাকা ফেরত দিয়ে আপৎকালীন অবস্থা সামাল দিচ্ছেন। ওষুধের দোকানে ফোন করেছিল অরিন্দম। দোকানদার বলেছেন, যত টাকা দরকার তাঁর কাছ থেকে নিয়ে যেতে। তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলে দেবে অরিন্দম। সেই সেবিকা মুসলমান নারী প্রাইভেট রোড থেকে ২৫ কেজি চাল মাথায় করে মতিঝিল আবাসনে নিয়ে এসেছেন যাতে কম বেরোতে হয়। শুনতে শুনতে মুগ্ধ হলাম। মানুষ কিন্তু মানুষেরই পাশে আছে। সামাজিক দূরত্ব রেখে মানসিক দূরত্ব কমিয়েছে মানুষ।
দুপুরে স্বপ্নময়ের সঙ্গে কথা হল। অনেক কথা। শ্রীলঙ্কার মানুষ ভারতীয় আয়ুর্বেদের দ্বারা এই মহামারি থেকে মুক্ত হচ্ছে। আমরা তো ছেলেবেলায় সর্দি কাশি হলে বাসকপাতার রস খেতাম। মধু, তুলসি, বাসকপাতা আর যষ্টিমধু দিয়ে একটি পাচন। স্বপ্নময় বলল, কুলদার কাহিনিতে সাহস পেয়েছে। তারপর তার পৌত্র নিয়ে অনেক কথা হল। দেড় বছর বয়স। নাতির কথা বলতে বলতে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ল স্বপ্নময়। জীবন কত আনন্দের সেই কথা বলতে লাগল। এই মহামারি, অতিমারির দিনে আনন্দময় জীবনের কথা ভাবতে পারলে ভিতরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
***
খবরিয়ার বিবরণ, কুড়ি তারিখের:
সকালে আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি খবর দেখলাম। সার্কভুক্ত দেশগুলিতে সংক্রমণ কম। এতদিনে যে হারে সংক্রমণ হবে বলে আশঙ্কা ছিল, তার চেয়ে অনেক কম হারে মানুষ সংক্রামিত হচ্ছে। মৃত্যুর হারও কম। সংবাদটি এই রকম…
জনসংখ্যা এবং জনঘনত্ব দুটোই বেশি। কিন্তু তা সত্ত্বেও গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় এখনও পর্যন্ত নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতি তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই মন্থর। এর কারণ জানতে প্রয়োজন গবেষণা। ‘সাউথ এশিয়া ইকনমিক ফোকাস’-এর তৈরি একটি সমীক্ষা রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাঙ্ক। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের মতো দেশগুলির করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত বিশদ পরিসংখ্যান তুলে ধরে এই পর্যবেক্ষণ রাখা হয়েছে রিপোর্টে।
আমেরিকা, ইউরোপ, এমনকি চিনেও এই সংক্রমণ ছড়িয়েছে দ্রুত। কিন্তু শুধু ভারত নয়, সার্কভুক্ত গোটা অঞ্চলেই এখনও পর্যন্ত ততটা দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়নি করোনাভাইরাসকে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, যদি এই প্রবণতা শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে বা আরও স্পষ্ট হয়, তা হলে গোটা বিষয়টি আরও গভীর গবেষণার দাবি রাখে।
রিপোর্টে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পশ্চিমি দেশগুলির তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণের গতি ‘মন্থর’ মনে হওয়ার অন্যতম কারণ অবশ্যই কম ভাইরাস-পরীক্ষা। তবে আগে থেকেই এই ভূখণ্ডের মানুষের কতটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তথা ইমিউনিটি রয়েছে, তা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি সার্ক-এর এই আটটি দেশে লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে যে সব কড়াকড়ি করা হয়েছে, সেই কারণেও ভাইরাস কম ছড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়েছে চার দিন আগে। সেটিতে দেওয়া খতিয়ান বলছে, বিশ্বের মোট আক্রান্তের মাত্র ১১ শতাংশ ৮টি সার্কভুক্ত দেশের। জনঘনত্ব এখানে অনেক বেশি। পৃথিবীর মাত্র ৩ শতাংশ ভূখণ্ড জুড়ে থাকা এই দেশগুলিতে থাকেন বিশ্বের ২১ শতাংশ মানুষ। তা সত্ত্বেও বিশ্বের মোট করোনা-মৃত্যুর ১ শতাংশেরও কম ঘটেছে এই ভূখণ্ডে।
এই খবর নিয়ে নানাজন নানা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। নন্দিনী সেনগুপ্ত জিওলজিস্ট, বিজ্ঞানের ছাত্রী, তিনি যা বললেন তা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে।
আমার ক্ষুদ্রবুদ্ধিতে এটা ওটা নানা টেক্সট পড়ে যেটা বুঝলাম যে এই ভাইরাস নাকি গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে খুব তাড়াতাড়ি মিউটেট করছে (বিবর্তিত হচ্ছে) নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। ফলে এর যা ক্ষতি করার ক্ষমতা, সেটা কমছে। এ ছাড়াও পরিসংখ্যান দিয়ে দেখা গেছে যেসব দেশে বিসিজি টীকাকরণ চালু আছে, সেখানে এর প্রকোপ একটু কম। অর্থাৎ যক্ষ্মার টীকার জন্য মানুষের শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি কিছুটা হলেও এর সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম। তবে যে টেক্সট বাজারে ঘুরছে অনেকগুলিই স্ট্যাটিস্টিকস নির্ভর, অর্থাৎ সেই অর্থে এক্সপেরিমেন্টাল বা খুব ডিটেলে সবকিছু জেনে বলা চরম বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত কিছু নয়। তাছাড়া আমাদের দেশে টেস্ট সেভাবে হচ্ছেও বা কোথায়, যে সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে? বাকিটা ঈশ্বর অর্থাৎ আমাদের ইম্যুনিটি ভরসা।
প্রায় এক মাস আগে, গত ২৭শে মার্চ বিশ্বেন্দু নন্দ যা লিখেছিলেন, সেই কথা মনে পড়ল। প্রায় একই কথা বলেছিলেন তিনি।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রন্তের সংখ্যা, করোনা পজেটিভের সংখ্যা ১,৫৪৩ জন। সোমবার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতে কোভিড-১৯ পজেটিভ ১৭,২৬৫ জন। এদের মধ্যে ২,৫৪৬ জন সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। দেশে করোনার মৃত্যু বেড়ে হয়েছে ৫৪৩। এ দিন থেকেই আবার, ভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপহীন অঞ্চলে লকডাউনে বেশ কিছু কাজের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে, দিল্লি, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যগুলি ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মেনে সেইসব রাজ্যে কোনও ছাড় মিলবে না। তেলেঙ্গানায় লকডাউনের মেয়াদ ৭ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে কে চন্দ্রশেখর রাও সরকার। ভারতে সংক্রমণ মোকাবিলায় কেরল পথ দেখিয়েছে। ফলে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় সেখানে দোকানপাট, রেস্তরাঁ, সেলুন, ক্ষুদ্র-কুটির ও মাঝারি সব শিল্প খোলার তোড়জোড় শুরু হতেই নড়েচড়ে বসল কেন্দ্র। লকডাউন চলাকালীন নিয়ম ভেঙে এসব খোলা যাবে না বলে জানানো হল কেরল সরকারকে।
এদিকে, আক্রান্তের সংস্পর্শ যোগে বাংলার আরও চার জন চিকিৎসকের দেহে মিলল কোভিড-১৯ পজিটিভ। পূর্ববর্তী কোভিড পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসার কারণেই এমনটা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে সূত্রে। কোভিড পজিটিভ রোগীর সঙ্গে সংস্পর্শ বিভ্রাটে ১৩ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল। তাঁদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। গতকাল, যাদের মধ্যে প্রথমে ৩ জন ডাক্তার ও ২ জন রোগী করোনা আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এরপর, সোমবার আরও চারজন চিকিৎসক কোভিডে আক্রান্ত বলে সূত্রের খবর। অর্থাৎ মেডিক্যাল কলেজে মোট ৭ জন ডাক্তার এই মুহূর্তে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বিশ্ব করোনা মহামারির বলি ১.৬ লক্ষ মানুষ। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২.৪ মিলিয়ান। নিউইয়র্কে করোনা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে গত ২৪ ঘণ্টায় আমেরিকায়, ১৯৯৭ জন করোনা পজেটিভের মৃত্যু হয়েছে। মোট সংখ্য বেড়ে দাঁড়াল ৪০,৫৯১।
সন্ধে থেকে মেঘের গর্জন। রাতে বৃষ্টি নামল। বজ্রপাত হতে লাগল মুহুর্মুহু। সেই বজ্রপাত, সেই বৃষ্টি নিয়েই ঘুমিয়েছি। ভোরে যখন ঘুম ভাঙল সেই বৃষ্টিপাত। মেঘের ডাক। সকাল হতে বাজারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। গেলাম। নিয়েও এলাম। সকলে সতর্ক হয়েছে দেখলাম। দূরত্ব রক্ষা করছে সকলে। আবার উদাসীনও কম জন নন। মুড়ির দাম বেড়ে গেছে। সব জিনিসই তাই। দেশি রুই আছে বাজারে। চিকেন আছে। যে ছেলেটি চিকেন কেটে সাফ করে দেয়, সে দ্রুত কাজ করে। এই করতে গিয়ে তার হাত কেটে গিয়েছিল কদিন আগে। ব্যান্ডেজ করে, তার উপরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ জড়িয়ে কাজ করছে। এটিএস নিয়েছে। বাজারে তার একটি বড় পাখির খাঁচা আছে। নানা রকম রঙিন বিদেশি পাখি আছে, মূলত লাভ বার্ড। সেই পাখির খাঁচায় সে দানাপানি দেয়। আজও দিচ্ছিল। দেওয়া শেষ হলে সে মুর্গি কাটতে আরম্ভ করল।
***
একুশ তারিখ নিউইয়র্কের খবর দিলেন লুতফুন্নাহার লতা।
তিনি পোচ দিয়ে স্বামীকে খাইয়ে দেন। ছেলের দরজায়, মেয়ের দরজায় খাবার রেখে টোকা দেন। এভাবে করতে করতে দিন সাতেক পরে তিনি দুর্গতিনাশিনী দুর্গার মত সুস্থ হয়ে ওঠেন। পরদিন সাহস করে স্নানও করেছিলেন একটু। মাঝরাতে জ্বরের কাঁপুনিতে বুঝে নিলেন নিউমোনিয়া তাকে জাপটে ধরেছে। অমোঘ নিয়তিকে সাথে নিয়ে তাকে চলে যেতে হল হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে। রেস্পিরেটরি প্রবলেম শুরু হলে হাই ফ্রিকোয়েন্সী অক্সিজেন দিয়ে তাকে রাখা হল আই সি ইউ তে৷ অক্সিজেন এভাবে যখন হেল্প করল না। তখন তাকে নেয়া হল ভেন্টিলেটরে।
আজ ২৫ দিন। ২৫ দিন পরে তাকে বের করে আনা হয়েছে মেশিন থেকে। তার শরীর সাড়া দিয়েছে। তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে দিয়েছে মন্ত্র। খবর পাঠিয়েছে সে বাঁচবার বাঁচাবার। এই গল্প জয়ের গল্প। এই গল্প নিখুঁত নিখাদ জীবনের গল্প। আজ বড় আনন্দের দিন। আর ভয় নেই সে এবার বাঁচবে। আর ক’টা দিন পরে বিজয়িনীর বেশে বেরিয়ে আসবে হাসপাতাল থেকে ঘরে যেখানে তার সংসার সন্তান স্বামী অপেক্ষমান কেবল তারই জন্যে।
***
পৃথিবীর কথা শুনতে শুনতে মেয়র বললেন, তুমি পুরো গ্রীষ্ম থেকে যাও।
মার্কো বললেন, আমার ভেনিস?
এই শহরকে তুমি ভেনিস ভেবেই তো ভোলগা পার হয়ে এসেছিলে।
মার্কো বললেন, নগরাধিপতি, আমি দুঃস্বপ্নের হাত থেকে বাঁচতেই এই শহর ছেড়ে চলে যেতে চাই। মেয়র সেই দুঃস্বপ্নের কথা শুনতে শুনতে বললেন, তুমি যখন চলে যাওয়ার কথা ভেবেছ, তখনই ঐ দুঃস্বপ্ন ধেয়ে এসেছে। আমার ভয় করছে মার্কো পোলো, তুমি এই সঙ্কটকালে চলে গেলে, উদ্বেগে শেষ রাতে ঘুম ভেঙে যাবে আমার, স্বপ্নে আমিও নিজেকে মৃত দেখব।
একই কথা বলেছিল জয়িত্রি। এবং নিকোলাইও।