Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ধ্যান, মনঃসংযোগ ও বিজ্ঞান: কিছু কথা

ধ্যান, মনঃসংযোগ ও বিজ্ঞান: কিছু কথা -- অশোক মুখোপাধ্যায়

অশোক মুখোপাধ্যায়

 




লেখক সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সায়েন্স অ্যান্ড সোসাইটি [সেস্টাস], কলকাতা-র সাধারণ সম্পাদক, বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধকার

 

 

 

[এক]

ধ্যানমাহাত্ম্য নিয়ে গড় ভারতীয়দের মধ্যে ব্যাপক গর্ব। বিজ্ঞান প্রযুক্তির কোনও ক্ষেত্রে একটাও পাতে দেবার মতো অবদান রাখতে না পারলেও এই একটা জিনিস আমরা বিশ্ববাসীকে দিয়েছি, যা তাদের সঙ্কটকালে ভীষণ কাজে দেয়! আর, একজন বেপরোয়া দুর্বৃত্ত হিসাবে গুজরাতের দাঙ্গাবাজি সংস্কৃতির উৎস থেকে উঠে এলেও নরেন্দ্র দামোদর মোদি জানেন ভারতের এক বড় অংশের জনগণের এই মানসবৃক্ষটি ঠিক কী জাতের। ফলে ধ্যানের নামে যোগাভ্যাসের ডেমো দিয়ে প্রচার করে মানুষকে প্রায় বুঝিয়েই ফেলেছেন, করোনা সঙ্কটকালে মানসিক শান্তি বজায় রাখার জন্য ধ্যান করাটা জরুরি। এবং ভালো। কেন না, বিজ্ঞান, বৈজ্ঞানিক যুক্তি, তথ্য, ঋতভাষণ, ইত্যাদি এই বৃক্ষের সয় না, ছাল উঠে যায়, পাতা নেতিয়ে পড়ে। অবিজ্ঞান, কুসংস্কার, দুনিয়ার সমস্ত আজেবাজে ফেলে দেওয়া আবর্জনা এই বৃক্ষের খুব পছন্দ হয়, যদি তাতে দুটো অনুপানের একটা বা উভয়ই থাকে: প্রাচীন ভারত, আর মুসলিম বিদ্বেষ। এই ধরনের বৃক্ষের বীজ উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের কালে তার বিপ্রতীপ স্রোতে দাঁড়িয়ে বপন করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, নরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ চিন্তাশীলগণ। পরে এই বৃক্ষের লালন করে গেছেন উদার হিন্দু মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি, মহাসেকু সমাজতান্ত্রিক জওহরলাল নেহরু, ছুপা হিন্দু মহাসভা বল্লবভাই প্যাটেল, নেহরু কন্যা ইন্দিরা গান্ধি, এবং এবং…।

লকডাউনের দীর্ঘ দ্বীপবাসের ফলে আমাদের অনেকের মানসিক সঙ্কট কি হচ্ছে না? হ্যাঁ, হচ্ছে। মনের শান্তি কি বিঘ্নিত হয়নি? হ্যাঁ, হয়েছে। তাতে কি ধ্যান করলে কোনও উপকার হতে পারে না? ধ্যান, প্রাণায়াম, যোগাভ্যাস— প্রাচীন ভারতের মুনিঋষিদের এক একটা অনবদ্য আবিষ্কার। শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখার এক ভেষজবিহীন আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া। ধ্যান করলে তাতে মনঃসংযোগ বাড়ে। তাকে সামনে এনে মোদি কী ভুল করেছেন?

মোদি কেন করেছেন বলা মুশকিল। সেই ব্যাপারে দু চার কথা পরে বলা যাবে। তবে ধ্যানের দ্বারা মানসিক শান্তি বা সুস্থতা রক্ষা করা যায় না অন্তত আমার প্রতিপাদ্য এটাই।

আমি বলতে চাই, যদি আপনার সত্যিই মনঃসংযোগের সমস্যা থাকে, তবে আপনার মনের মতো কাজ যত্ন সহ করার চেষ্টা করুন। সে ছবি আঁকা, গান করা, মাটির কাজ, বই পড়া, প্রবন্ধ লেখা, রান্না, সাইকেল ধোওয়া, জানলা মোছা, বাগান করা, ফটো তোলা, বেড়াল কুকুরের যত্নআত্তি করা, ইত্যাদি যাই হোক। কাজকর্ম ফেলে রেখে এক জায়গায় চুপটি করে পদ্মাসনে বসে চোখ বুজে ধ্যান করলে মনঃসংযোগ বাড়ে না। মনঃসংযোগ শব্দটার মধ্যেই আছে মনকে কোনও কিছুর সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রশ্ন। মন দিয়ে কাজ করার প্রশ্ন। যাতে কাজটা ভালো হয়। যিনি দোকানে বসে সাইকেল সারাই করছেন, মন দিয়ে না করলে কাজটা ভাল হবে না। যিনি ঘরে থেকে রান্না করছেন, তাঁকেও ভালো রান্না করতে হলে মনোযোগ সহকারে করতে হবে। প্রবন্ধ লেখকের ক্ষেত্রেও হুবহু তাই।

 

[দুই]

ধ্যান, যোগাভ্যাস, ক্রিয়াবিযুক্ত মনঃসংযোগ আদিমধ্য যুগ থেকে চলে আসা একটা বহুশ্রুত বহুপ্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা। ব্যাকরণের দিক থেকেও, শারীর-মানসিক ক্রিয়ার দিক থেকেও। ব্যাকরণের কথা আগেই বলেছি। এবার শারীরতাত্ত্বিক দিক থেকেও দেখা যাক।

মন কী? মন মানে হল মানব মস্তিষ্কের এক বিশেষ ধরনের ক্রিয়া। যাকে আমরা অন্য ভাষায় চিন্তা করা বলি।

এই চিন্তনক্রিয়ার সামগ্রিক আধারই হল মন। তাই মন হল এক ধরনের ক্রিয়াত্মক সত্তা। ক্রিয়ার বাইরে তার অস্তিত্ব নেই। ক্রিয়ার বাইরে তাকে ধরা ছোঁওয়া যাবে না। যেমন গতি। গতিশীল বস্তুকে দেখা ছাড়া গতিকে— নিছকই গতিকে— কখনওই আপনি দেখতে বা বুঝতে পারবেন না। গতিশীলতার মধ্যেই গতির অধিষ্ঠান। ঠিক তেমনই ক্রিয়ার মধ্যেই মনের অবস্থান। তাই মনকে সর্বদাই কেন্দ্রীভূত করতে হয় ক্রিয়ার উপরে, যুক্ত করে রাখতে হয় ক্রিয়ার সঙ্গে। ধ্যানের তাত্ত্বিক অর্থ হল মনকে ক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। তার অর্থ হল, মনের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করা। মনের সাধ্য ও সাধনকে বিলুপ্ত করার দিকে এগোনো।

মন বা চিন্তন কীভাবে ক্রিয়া করে?

এখানে তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়ার সুযোগ নেই। দু চার কথায় সরলভাবে বিষয়টা এক ঝলক বোঝার চেষ্টা করা যাক। মস্তিষ্ক সহ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র হচ্ছে মনের যন্ত্রপাতি। বাইরের জগতের বস্তুর সংস্পর্শে এসে এই স্নায়ুতন্ত্রের বহিরিন্দ্রিয় থেকে বিভিন্ন উদ্দীপনা অন্তর্বাহী স্নায়ুর ভেতর দিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে তার সংবেদক ভাগের বিভিন্ন অংশকে উত্তেজিত করে। মস্তিষ্কের সঞ্চালক অংশ থেকে তখন উপযুক্ত নির্দেশ যায় প্রান্তিক পেশীগুলির কাছে সেই উদ্দীপনার উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপনের। এইভাবে উদ্দীপনায় সাড়া দেবার এক একটা পরাবর্ত ক্রিয়ার ক্ষমতা গড়ে ওঠে। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হলে তারও একটা ফিরতি-খবর স্নায়ুবাহিত হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। তখন সেখান থেকে প্রতিক্রিয়ার নির্দেশ আসা বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া শুধু মানুষ নয়, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র সম্পন্ন সমস্ত প্রাণীর ক্ষেত্রেই সত্য। যত উন্নততর প্রাণী, ততই তার উদ্দীপনা অনুযায়ী বিচিত্র প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপনের ক্ষমতা।

উচ্চতর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে একটা নতুন বৈচিত্র দেখা যায়। প্রত্যক্ষ উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়ার যে ক্ষমতা, সেটা মাঝেমাঝে পরোক্ষ কোনও উদ্দীপনার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ উদ্দীপনার সংবাদ পেলেও সক্রিয় হয়ে ওঠে। জিভে মাংসের স্বাদ পেলে কুকুর যেভাবে খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে, দূর থেকে মাংসের গন্ধ পেলেও সে তেমনই ব্যস্ততা দেখাতে থাকে। গন্ধটা এখানে মাংসের সঙ্কেত হিসাবে কাজ করে। মুখে পড়ে গেলে মাংস খাওয়ার প্রস্তুতির জন্য যে পরাবর্ত, তাকে পাভলভ বলেছিলেন সহজাত, স্বাভাবিক বা শর্তহীন পরাবর্ত। তার সঙ্গে গন্ধটা যুক্ত হয়ে যায়। আর দূর থেকে গন্ধে টের পেলে যখন সেই পরাবর্ত সক্রিয় হয়, তাকে বলেছিলেন অর্জিত বা শর্তাধীন পরাবর্ত। সমস্ত প্রাণীই কয়েকটি সহজাত পরাবর্ত নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তারপর পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন প্রক্রিয়ায় সে নানা রকম সঙ্কেতের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার নিরন্তর ঘটনার মাধ্যমে অনেক রকমের পরাবর্ত ক্রিয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে থাকে। এই সঙ্কেত গ্রহণের ক্ষমতাকে পাভলভ নাম দেন প্রথম সঙ্কেততন্ত্র।

মানুষ সব ব্যাপারেই একটু বেশি পাকা। সে তার মুখগহ্বরের গড়নকে কাজে লাগিয়ে অনেক রকম ধ্বনি উৎপাদন করতে শিখে ফেলল। দুতিনটে করে ধ্বনি মিলিয়ে এক একটা বস্তু বা ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে এমন এমন সব শব্দ তৈরি করতে লাগল, যেগুলির আওয়াজ শুনলেই অপরে বুঝতে পারে কিসের কথা বলা হচ্ছে। সেই সব শব্দ হয়ে উঠল সঙ্কেতের সঙ্কেত, বা পাভলভের পরিভাষায় দ্বিতীয় সঙ্কেত। মাংসের গন্ধ থেকে মাংস খুঁজে পেতে হলে কাছেপিঠে মাংস থাকা আবশ্যক ছিল। কিন্তু “মাংস” নামক শব্দ শুনে মাংস খোঁজার জন্য সেই আবশ্যকতা আর রইল না। শব্দটি উচ্চারণ করে খুঁজতে বেরিয়ে পড়লেই হল।

এই রকম অসংখ্য শব্দের সাহায্যেই মানুষ কথা বলতে এবং তার সাহায্যে বিমূর্ত ধারণা তৈরি করে স্মৃতির সিন্দুকে জমা করতে লাগল। অতঃপর সেই সব বিমূর্ত ধারণাকে অভ্যন্তরীণ স্বতঃউদ্দীপক হিসাবে ব্যবহার করে চিন্তা করতে শিখে ফেলল [এই বিষয়টা আরও ব্যাখ্যা করতে গেলে অনেক গিগাবাইটের দরকার হবে। পরে কখনও সেরকম জায়গা পেলে চেষ্টা করা যাবে; আপাতত এতেই কাজ চালিয়ে নেওয়া যাক]। স্নায়ুশারীর-তাত্ত্বিক জোসে ম্যানুয়েল রদ্রিগেজ দেলগাদো (১৯১৫-২০১১)-র মতে, Mind is intracerebral elaboration of extracerebral information!

আর সেই আদ্যিকালের মানুষ শিখল আরও একটা জিনিস। একা সে বড় অসহায়। সব সময় পাঁচজনে মিলে একসঙ্গে থাকাই তার পক্ষে নিরাপদ। আর, যত সে মিলেমিশে কাজ করে, তত তার অপরের সঙ্গে কথা বলার দরকার হয়। কাজ কথা আর চিন্তা যেন এক সূত্রে বাঁধা। ভাষা চিন্তার বাহন। চিন্তা আবার ভাষার সারথি। একজনকে ছেড়ে আর একজন থাকতেই পারে না।

মস্তিষ্ক হচ্ছে নিরলস নিরবচ্ছিন্ন কাজের যন্ত্র। কাজপাগল। কাজ করেই সে ভালো থাকে, ঠিক থাকে। তাকে মাঝে মাঝে বিশ্রাম দিতে হয়, শুতে হয়, ঘুমোতে হয়। একঘেয়েমি কাটাতে কাজের বৈচিত্র দিতে হয়। কিন্তু কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করলে তার বেজায় ক্ষতি হয়ে যায়। সুস্থ স্বাভাবিক মানব মস্তিষ্কে মোটামুটি এক হাজার কোটি স্নায়ুকোষ আছে, যার চার থেকে ছয় শতাংশের বেশি একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জীবদ্দশায় ব্যবহার হয় না। ফলে অতিরিক্ত ভাবনাচিন্তা করে মস্তিষ্কের ক্ষমতার সাধ্যের বেশি খরচ হয়ে যাওয়ার কোনও ভয় আপাতত নেই।

অন্য দিকে, মন থেকে চিন্তা দূর করতে গেলে মন বিগড়ে যায়। মনকে বহির্বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন করলেও দীর্ঘমেয়াদে অনেক রকম ক্ষতি হতে পারে। গতিশীল অবস্থার মধ্যেই যেমন গতির অস্তিত্ব ও পরিচয়, চিন্তার মধ্যেই তেমনই মন। চিন্তাশূন্য মন মানে হল মনের বারোটা বাজতে চলল।

 

[তিন]

তাহলে মানুষ ধ্যান করতে শিখল কবে? ধ্যান মানে হল চুপচাপ শান্ত হয়ে কথা এবং ভাষাকে বিদায় জানিয়ে বাহন ছেড়ে চিন্তা করতে বসা। মনকে মনহীন করে তোলা। এবার সেই কথা।

প্রথমেই বলে রাখি, একেবারে সুদূর প্রাচীনকালে আদিম মানুষের এই বিলাসিতার সুযোগই ছিল না। কেউ যদি পরীক্ষা করার ছলে একা একা চোখ মুদে ক্রিয়াহীন ধ্যানে বসত, তাকে বাঘে খেয়ে যেত, কিংবা হাতি এসে মাড়িয়ে দিয়ে চলে যেত। বিভিন্ন দেশে আজও যারা সেই আদিম অরণ্য জীবনে পড়ে আছে, তাদের মধ্যে ধ্যানাধ্যানির কারবার নেই। ধ্যানের ধারণা এল আরও পরে, নবপলীয় যুগান্তরের পরে অগ্রসর নিরাপদ জীবনে। নগর জীবন এবং সুরক্ষিত বসবাসের সুবিধা প্রাপ্তির পর কিছু পরশ্রমজীবী মানুষের এই সব বিলাসিতা করার সুযোগ এসেছিল। যখন ধর্মবিশ্বাসের জন্ম হল, ঈশ্বরের ধারণা এল, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার অ্যাজেন্ডা তৈরি হল, তখন থেকে একা একা প্রার্থনার একটা বিশেষ আকার হিসাবে ধ্যান নামক ক্রিয়ার উদ্ভাবন হল। মূলত ভারতবর্ষে।

বৈদিক বা ঔপনিষদিক সাহিত্যে ধ্যানের প্রকোপ খুব একটা দেখা যায় না। তপস্যা নামক একটা ধ্যান জাতীয় দীর্ঘমেয়াদি ক্রিয়ার কথা এদিকে ওদিকে শোনা যায় বটে, কিন্তু তার উদ্দেশ্য বিধেয় কিছুই স্পষ্ট নয়। বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্যেই প্রথম ধ্যানের নানা রকম সন্ধান পাওয়া যায় বটে, এমনকি ধ্যানী বুদ্ধর মূর্তিও দেখা যায় পরবর্তীকালে। কিন্তু সমস্যা হল, ইতিহাসে গৌতম বুদ্ধ এবং মহাবীর বর্ধমানের কোনও সুনির্দিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষ্য প্রমাণ আজ অবধি পাওয়া যায়নি। যেটুকু অনুমান করা সম্ভব, তা হল, উপনিষদ-সমকালে উত্তর মধ্য ভারতে বুদ্ধ ও মহাবীরের মতো কোনও এক বা একাধিক চরিত্রের উদ্ভব হয়েছিল, যিনি বা যাঁরা পশুবলি জাতীয় আদিম রক্তক্ষয়ী ম্যাজিক সংস্কৃতি থেকে তাঁদের প্রতিবেশীদের সরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।

যোগাসন ও প্রাণায়াম মূলত শরীরচর্চার কিছু স্বাস্থ্যবিধি। কিছু শর্তসাপেক্ষে ব্যায়াম হিসাবে যাদের খুবই উপকারী ভূমিকা রয়েছে। যোগ দর্শনের সঙ্গে, বা সাধারণভাবে ধর্মীয় আধ্যাত্মিক চিন্তাধারার সঙ্গে যোগাসনের কোনও সিধা সম্পর্ক নেই। তবে সেকালের স্বাভাবিক প্রবণতা হিসাবেই মানুষ যখন প্রার্থনায় বসত, অন্যান্য আসনের তুলনায় পদ্মাসনকেই একটা বিশিষ্ট এবং উপযুক্ত মুদ্রা হিসাবে ব্যবহার করত। আরও পরবর্তীকালে তান্ত্রিক সাধনায় এই মুদ্রায় প্রার্থনার পদ্ধতিটি স্থায়ী রূপ পেয়ে যায়। প্রধানত একটা ভুল ধারণা থেকে, মনকে ভগবান, ব্রহ্ম, আদ্যাশক্তি, কুলকুণ্ডলিনী, ইত্যাকার কিছুর উপর কেন্দ্রীভূত করার ধর্মীয় আধ্যাত্মিক ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে এই প্রথা এসে যায়।

বিভিন্ন পুরাণ সাহিত্যে ধ্যান ও তপস্যার বেশ বাড়াবাড়ি দেখা যায়। প্রধানত ব্রাহ্মণ মুনিঋষিরাই ধ্যানে বসত, কিন্তু কখনও কখনও রাজাদেরও কাউকে কাউকে ধ্যানে বসতে দেখা যেত। কিন্তু আবার এই পুরাণ সাহিত্য থেকেই সাক্ষ্য উঠে আসে যে পদ্মাসনে বসে ধ্যান করেও মনকে বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন করা যেত না। প্রায়শই এক একজন মুনি ঋষি সাধু কোনও দেবতার কাছে বিশেষ কিছু শক্তি প্রার্থনা করে ধ্যানে বসলেই তা বানচাল করতে দেবরাজ ইন্দ্র তার রাজসভার বাছাই করা নর্তকীদের, অর্থাৎ, অপ্সরাদের পাঠিয়ে দিত। আর একাধিক পুরাণ কাহিনি বলছে, সেই অপ্সরাদের পায়ের ঘুঙুরের টুংটাং শব্দ শুনলেই নাকি সেই সব জিতেন্দ্রিয় ঋষিদের ধ্যান ভেঙে যেত। ইন্দ্র অপ্সরা ইত্যাদি কল্পচরিত্র বাদ দিলেও একথা সত্য, পদ্মাসনে বেশিক্ষণ পেশীসমূহ সঙ্কুচিত বা প্রসারিত করে বসে থাকা যেত না বলেই ধ্যানও বেশিক্ষণ স্থায়ী বা কার্যকর হত না। এই দিক থেকে এই পৌরাণিক সাক্ষ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তা সত্ত্বেও ধ্যানের প্রকরণটা সমাজে এবং সমাজমানসে থেকেই যায়। এর পেছনে ধর্মীয় বিশ্বাসটাই বড় কারণ। কিন্তু পরে পুরোহিত সম্প্রদায় দেখেছিল, এ দিয়ে আপামর মানুষকে ঠকানো খুব সহজ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় কয়েকজন নামকরা সাধুর ভাবসমাধি। ধ্যান করে উঠে সমাধিভাব থেকে জেগে দুচারটে গুরুগম্ভীর জ্ঞানের কথা বললে— যা তারা এমনিতেই বলতে পারত— সাধারণ মানুষ মনে করত, বাপ রে, ধ্যানের কী শক্তি দেখেছ! বিশ্বাস এবং প্রতারণা— দুটোই সেই থেকে রমরমিয়ে চলছে। তাছাড়া সেকালে মানসিক নানা বিপর্যয়ের তো আর কোনও চিকিৎসা জানা ছিল না। তাই মানুষ এই সব হাতুড়ে পদ্ধতিতে সমাধান হাতড়ে বেড়াত। বলা ভালো, নিজেরা সাহস করে ধ্যানে না বসে ধ্যানস্থ সাধুবাবাদের কাছে সমাধান যাচত।

বৌদ্ধ ধর্মের কারণে ধ্যান ভারত থেকে পর্যটনে বেরিয়ে প্রথমে এশিয়ার পূর্ব ও মধ্য ভাগে, চিন জাপান ও ইন্দোচিনে, পরে ইওরোপেও পরিচিতি লাভ করে এবং প্রার্থনার একটা সুবিনয় রূপ হিসাবে স্বীকৃতিও পেয়ে যায়। সেটা যতটা ধ্যানের প্রায়োগিক মূল্যের কারণে, তার চাইতে অনেক বেশি পদ্মাসনের শারীরিক কসরতের চমৎকারিত্বে। এই তথাকথিত lotus position দুনিয়ার অনেকের কাছেই এক ধরনের সমীহ আদায় করে নেয়। পশ্চিমা লেখকদের গল্প উপন্যাসে যেখানেই এর উল্লেখ আছে, সেখানেই দেখা যায় এক গদগদ ভক্তিভাব। কেন না, পশ্চিমের ইহুদি খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মে ধ্যান থাকলেও এই পদ্মাসন বা তুল্য কোনও বৈঠকি ছিল না।

 

[চার]

ধর্মীয় সংস্কৃতিতে স্বীকৃতি ও সমীহ পেলেও, রেনেশাঁস উত্তর আধুনিক যুগের ঐহিক সংস্কৃতির যে দুটি প্রধান অবলম্বন— বিজ্ঞান ও সাহিত্য— তাতে ধ্যানের কোনও জায়গা হয়নি। শেক্‌সপিয়র বা মপাসাঁ কিংবা তলস্তয় ধ্যানে বসে কোনও চরিত্র বা প্লটের সন্ধান পেয়েছেন বলে শোনা যায়নি। রাফায়েল বা গগাঁ কোনও ছবির মালমশলা ধ্যানে বসে পেয়েছেন বলে শুনিনি। গ্যোঠে বা মার্লোকেও কেউ ধ্যানে বসতে দেখেনি। মানে, কারও মাথাতেই আসেনি যে কোনও প্রয়োজনে ধ্যানে তাঁদের কাউকে বসতে হতে পারে। সাহিত্যের উপজীব্যে মনঃসংযোগ করতে।

আর, বিজ্ঞানেরও শুরুর দিন থেকেই ধ্যান বৈজ্ঞানিক মননক্রিয়ায় পুরোপুরি নির্বাসিত। কোপারনিকাস, গ্যালিলেও, নিউটন ধার্মিক হলেও ধ্যানে বসেননি। ল্যাভোয়াশিয়, ডালটন বা ডারউইনেরও মাথায় ধ্যানে বসে মনোযোগ বৃদ্ধির কথা মাথাতেই আসেনি। তাতে তাঁদের কারও মনোযোগে কম পড়েছিল বলে শোনা যায় না। আমাদের দেশেও জগদীশ বসু (বেদান্তবাদী হওয়া সত্ত্বেও), প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, প্রশান্ত মহলানবীশ, চন্দ্রশেখর ভেকঙ্কটরামণ, প্রমুখরা কখনও মনঃসংযোগ বৃদ্ধি করতে ধ্যানে বসেননি। তাঁরা সারাজীবন নিজেদের কাজ যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে করে গিয়েছেন, কোনও রকম ধ্যান-ট্যান ছাড়াই।

এর অর্থ হল, আধুনিক বিশ্বে যাঁরা ইহলৌকিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের কাউকেই কোথাও কখনও যোগাভ্যাস ও ধ্যান করতে দেখা যায়নি। এমনকি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, জ্যোতিবারাও ফুলে, সাবিত্রীবাঈ, ফতেমা বিবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রেমচন্দ, রোকেয়া সাখাওয়াত, প্রমুখ কাউকেই ধ্যানে বসতে হয়নি সমাজ ও সাহিত্য নিয়ে কাজ করার জন্য। বিদ্যাসাগর অত যে দান-ধ্যান করেছেন বলে খ্যাতি, সেই তিনিও এক মিনিট ধ্যান করেছেন বলে কেউ অভিযোগ করেনি।

হয়ত এই কারণেই আমাদের স্কুলজীবনে, ১৯৬০-এর দশকে, এমনকি ধর্মে বিশ্বাসী শিক্ষকদের তরফেও ধ্যান নিয়ে প্রচার বা অভ্যাস চোখে পড়েনি। আমার যদ্দুর মনে পড়ছে, ১৯৮০-র দশক থেকে নানা জায়গায় ধ্যানকাণ্ডের কথা আমরা শুনতে শুরু করি।

প্রথমে শুনি, ইওরোপ আমেরিকায় নাকি অনেকেই এখন ধ্যানের মাহাত্ম্য বুঝতে শুরু করেছে এবং চারদিকে খুব ধ্যান অভ্যাস চলছে। তারপর কানে আসতে থাকে, বড় বড় গবেষণা কেন্দ্রে নাকি ধ্যানের মাস্তিষ্কিক স্নায়বিক ঘটনাবলি নিয়ে ব্যাপক কাজ হচ্ছে!

প্রথম কথাটায় নানা কারণে সন্দেহ দেখা দেয়। আরে, ধ্যানের মাহাত্ম্য নিয়ে নতুন করে ওদের জানার কী আছে? ওদের ধর্মীয়-আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যেও তো ধ্যান ছিলই— অনেক কাল আগে থেকেই। খুব বেশি হলে পদ্মাসনে বসে ধ্যান নিয়ে জ্ঞান দিতে পারে।

তারপর দ্বিতীয় ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাত করি। দেখি সে এক মজার জিনিস।

মস্তিষ্কের কাণ্ডকারখানা জানার জন্য একটা করে নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়, আর অমনই এক দল লোক সেই প্রযুক্তি দিয়ে মস্তিষ্কে ধ্যানের সময় কী কী সব দেখা গেছে, ব্যাখ্যা দিতে থাকেন। কেউ সিটি স্ক্যান দিয়ে ছবি দেখান, কেউ নিয়ে আসেন ফেরোম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং-ছবি, কাউকে দেখি পজিট্রন এমিসন টোমোগ্রাফি দিয়ে ছবি আঁকতে, ইত্যাদি। আসলে এই সব ছবিতে যে কেবল মাত্র গুরুমস্তিষ্কের বিভিন্ন সংবেদক অঞ্চলের নির্দিষ্ট নিউরোনগুলি উদ্দীপিত হচ্ছে বলে দেখা যায়, তাছাড়া আর কিছুই বোঝা যায় না— এটা আর কজন আম আদমি জানে! একই ছবি দেখিয়ে আপনি ধ্যান করছেন যেমন বলা যায়, আপনি কবিতার নকশিকাঁথা বুনছেন বলেও বলা যায়।

তাহলে ওনারা এরকম কথা বলছেন কেন? বড় বড় দাবি করছেনই বা কেন?

এইখানে এসে আবার আপনাকে সেই পুরাকালের ধ্যান প্রযুক্তি ব্যবহারের কেচ্ছাকাহিনি স্মরণ করতে অনুরোধ করব। একালেও ধ্যানে বসেন ও বসান তাঁরাই— যাঁরা জেনে বা না জেনে জাগতিক বাস্তব সমস্যার দিক থেকে আপনার নজর সরিয়ে রাখতে চান। নরেন্দ্র মোদিরও তেমন উদ্দেশ্য থাকা অসম্ভব নয়। দু চার পিস ঘটনার দিকে মুখ ফেরালেই এটা বুঝতে কোনও লিঙ্ক দরকার হয় না। মার্কিন মুলুকে আবার বেশ কিছু তথাকথিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের কাজ ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের সমন্বয় সাধন করে দেখানো। যেমন, আমেরিকার ধনকুবের জন টেম্পল্‌টন প্রতিষ্ঠিত ডিসকভারি ইন্সটিটিউট। এরা এক একজন বিজ্ঞানীকে প্রচুর টাকা (ওরফে ডলার) পুরস্কার দেয় এই ধরনের জালি আবিষ্কার করার জন্য। এর ফলে ধ্যানের সপক্ষে গণমন গড়ে তুলতে সুবিধা হয়। কাউকে ধ্যান করতে বললে তা আর পুরনো কুসংস্কার চর্চা বলে মনে হয় না।

আধুনিক জীবনে মানুষের নানা রকম মানসিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কর্পোরেট দুনিয়ায় আপনি যত বড় চাকুরেই হন না কেন, চাকরি চলে যাওয়ার ভয়, রাজা থেকে ভিখিরি হয়ে যাওয়ার নিশির ডাক আপনাকে ঘুমের মধ্যে তাড়া করে বেড়ায়। আপনার কাজের কোনও সময়সীমা নেই। অফিসে কাজ, বাড়িতে ফিরে এসে কাজ, গাড়িতে ল্যাপটপে কাজ—মালিক আপনার শুধু শ্রমশক্তি নয়, জীবনীশক্তিকেও কিনে নিয়েছে। আপনার সংসার থেকে, পরিবার থেকে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। সেখানে সামান্য ভুল বা ব্যর্থতা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। মধ্য আয়ের মানুষ, সাধারণ অবস্থায় স্বচ্ছল। কিন্তু একটা বড় অসুখ হলেই সর্বস্ব ধরে টান পড়ে। এই রকম অনেক রকম অজানিত অথচ আশঙ্কিত বিপদের ছায়া আপনার আমার পেছনে তাড়া করে আসছে।

এই অবস্থায় কেউ যায় জ্যোতিষীর কাছে, কাউকে দেখা যায় কোনও গুরুবাবা বা মা-র ডেরায় গিয়ে সপ্তাহান্তে বসতে। আবার অনেক সময় মালিকপক্ষ বলে, ধ্যান করো, মনের অবসাদ কাটাও। দিনে দশ মিনিট মনকে চিন্তাশূন্য করে রাখ। সব মেঘ কেটে যাবে। ইত্যাদি। সাইকিয়াট্রিস্ট, মনোবিদ— তিনিও বলবেন, হ্যাঁ, ধ্যান করুন না। ক্ষতি তো নেই। হয়ত উপকারই পাবেন! এই দেখুন ফুটবলে, ক্রিকেটে বড় বড় নামকরা কোচেরা লক্ষ ডলারি খেলোয়াড়দের ধ্যান করাচ্ছেন। আপনি আমি তো চুনোপুঁটি।

কত জন আর বোঝে— শচীন তেন্ডুলকর গ্লেন ম্যাকগ্রাথ রোনাল্ডো বা মেসির দশ বিশ মিনিটের ধ্যানে-অধ্যানে খেলার দক্ষতায় কিছু মাত্র দাগ পড়ে না! ওরা ভাবে, কোচ বললে ভালো ছেলের মতো না হয় মাঠে এক কোনে বসে ধ্যান করেই নাও। ধ্যানে বসে তুমি চিন্তাশূন্য, না গুগলি ঠেকানোর বা কর্নার কিকের প্ল্যান ভাঁজছ, অথবা সামনের বছর হাত বা পায়ের দাম কত ফেলবে বলে ভাবছ— কে আর দেখতে যাচ্ছে!

আসলে ধ্যানে বসে আপনার মন চিন্তাশূন্য না হলেও কিছু ভ্রান্ত চিন্তার শিকার হতে থাকে। সমাজের আরও পাঁচটা ভ্রান্ত ধারণা আপনাকে পাকড়ে ধরে। বিজ্ঞানীরা অত গুরুগম্ভীর গবেষণা করতে বসে, বড় বড় সমস্যার সামনে পড়েও কেন ধ্যানে বসেন না— আপনি ভাবতে ভুলে যাবেন। ধ্যানকে বিজ্ঞানের সস দিয়ে আস্বাদন করলেও আপনি শুধু বিবেকানন্দ বা অরবিন্দর কথাই ভাববেন। লিনাস পাউলিং, পিটার হিগ্‌স, স্টিফেন হকিং, চন্দ্রশেখর, হরগোবিন্দ খোরানা বা সুশীল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ধ্যান-বীতস্পৃহ বিজ্ঞানীরা আপনার ধ্যানে কখনওই দেখা দেবেন না! ফলে, ধ্যানের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ভাব সম্প্রসারণ দিতে দিতেই আপনি অবৈজ্ঞানিক ভাবনার অতলান্তিকে ডুব সাঁতার দিতে থাকবেন।

 

[পাঁচ]

তবে যারা দীর্ঘকাল ধরে মানসিক অবসাদ বা অন্য কোনও সমস্যার ভুক্তভোগী, তাঁদের উচিত প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ। ধ্যান যোগাভ্যাসের হেকিমি দিয়ে তা সারাই করার চেষ্টা করতে গেলে এক সময় সমস্যা আপনার এবং চিকিৎসকের হাতের বাইরে চলে যাবে। আপনি বিশ্বাস করেন বলে রাস্তা পাবেন না। যেমন, করোনা ভাইরাস ভারতে ঢোকার আগে যারা গোমূত্র দিয়ে নিরাময়ের হিন্দুত্ব ঢাক পেটাচ্ছিল, সেই প্রভাষকরা সকলেই এখন ঘুমোতে চলে গেছে।

ফলে এই দুটি সূত্র মাথায় রাখুন:

১। সুস্থ মানুষের জন্য ধ্যান আসলে মনন ক্রিয়ার পরিপন্থী; আর,
২। দীর্ঘ মানসিক অবসাদ বা টানাপোড়েনের জন্য ধ্যান নয়, চিকিৎসা প্রয়োজন।

বাকিটা আপনার হাতে।