Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

বিদ্যালয় শিক্ষা প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০

শ্রুতিনাথ প্রহরাজ

 


লেখক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, প্রাবন্ধিক

 

 

 

 

স্বাধীন ভারতে প্রথম জাতীয় শিক্ষানীতি সংসদে পাস হয় ১৯৬৮ সালে। তৎকালীন ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর  দৌলত সিং কোঠারির নেতৃত্বে গঠিত কোঠারি কমিশনের ১৯৬৬ সালে পেশ করা সুপারিশ মেনে এই শিক্ষানীতি গৃহীত হয়। এদেশে শিক্ষাব্যবস্থা, তার কাঠামো, ও অভিমুখ নিয়ে পরিকল্পিত উপায়ে সেই প্রথম ভাবনার শুরু। ওই শিক্ষানীতিতে উৎকর্ষ, সমদর্শিতা ও সম্প্রসারণ (এক্সিলেন্স, ইকুইটি ও এক্সপানশন)— শিক্ষার এই তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়। বলা হয়, শিক্ষাখাতে জিডিপির ন্যূনতম ৬ শতাংশ ও কেন্দ্রীয় বাজেটের ১০ শতাংশ বরাদ্দ করা প্রয়োজন। তবে বলা বা ভাবনা যাই থাক না কেন, তাকে কার্যকর করার জন্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকার দরকার ছিল তার অভাব ঘটে যাওয়ার কারণে, অদ্যাবধি তা বাস্তবায়িত হয়নি।

১৯৮৬ সালে যখন দ্বিতীয় শিক্ষানীতি পেশ হয় তখন এদেশে বিশ্বব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের নির্দেশ মেনে ‘কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস’ কর্মসূচি শুরু হয়ে গেছে। বস্তুত যা ছিল নব্য উদার অর্থনীতির প্রস্তুতিকাল। অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, শিক্ষায় আধুনিকীকরণের নামে বাজার অভিমুখীকরণের বিষয়টি স্বতন্ত্রভাবে গুরুত্ব পায়। সরকারের ভূমিকা ক্রমে সঙ্কুচিত হতে থাকে। এর ফলে, শিক্ষার অধিকার সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে  চিহ্নিত হলেও, আজও এদেশে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ নিরক্ষর। সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকা হিসেবে শিক্ষা চিহ্নিত না হওয়ায় এই বিপদ বেড়েছে। ১৯৯১-উত্তরকালে নব্য উদার অর্থনীতি চালু হওয়ার পর শিক্ষায় সরকারি উদ্যোগ কমিয়ে লাগামছাড়া বেসরকারি বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। ভারতবর্ষে এখন শিক্ষাক্ষেত্র, দেশি ও বিদেশি কর্পোরেট পুঁজির নিরাপদ বিনিয়োগ ও মুনাফা লুটের মৃগয়াক্ষেত্র। মূলত সেই প্রেক্ষাপটেই তৈরি হয়েছে এবারের এই জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০।

কোভিড অতিমারির সঙ্কট যখন সারা দেশে চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে, সংক্রমণ এড়াতে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যখন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে, ঠিক সেই সময় জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আমজনতা যখন ব্যস্ত করোনা-বিপর্যয় মোকাবিলায়, নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকার তখন তাদের বকেয়া সব অ্যাজেন্ডা কার্যকর করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশ বেচার কর্মসূচি চলছে দ্বিগুণ গতিতে। একইসঙ্গে এদেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাধ্যবাধকতাকে একপ্রকার অস্বীকার করে, চাপিয়ে দেওয়া হল জাতীয় শিক্ষানীতি। বারংবার দাবি করা সত্ত্বেও সংসদে এ নিয়ে কোনও বিতর্ক হল না। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত জানানোর সুযোগ পেলেন না।

১৯৭৬ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষাকে সংবিধানের যুগ্ম তালিকাভুক্ত করা হয়। অথচ নীতি প্রণয়ন ও গ্রহণের ক্ষমতা একচেটিয়া কুক্ষিগত করবার লক্ষ্যে, শিক্ষানীতি তৈরি ও চূড়ান্ত করবার সময় রাজ্য সরকারগুলির মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হল না। সরকারিভাবে শিক্ষানীতি ঘোষণার সময় বলা হল, সারা দেশে গত এক বছর ধরে এই নীতি নিয়ে আড়াই লক্ষ পঞ্চায়েত, ছয় হাজার ব্লক সহ বহু শিক্ষাবিদের সঙ্গে নাকি মতবিনিময় হয়েছে। আসল সত্য কী? আদৌ কি এদেশে শিক্ষার স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন আলোচ্য শিক্ষানীতি নিয়ে তাদের মতামত দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন? উত্তর একটাই, না। বিরোধী রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠনগুলি, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের সংগঠন নিজেদের উদ্যোগে যে পরামর্শ কেন্দ্রীয় সরকারকে দিয়েছিল, তা কি আদৌ সরকার বিবেচনায় এনেছিল? আবারও উত্তর একটাই, না।

হ্যাঁ আলোচনা হয়েছে একথা ঠিক। তবে তা সঙ্ঘ পরিবারের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মধ্যে, তার বাইরে নয়। শিক্ষানীতি প্রণয়নের সময় সঙ্ঘ পরিবারের লোকজন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী, কমিশনের চেয়ারম্যান ডক্টর কে কস্তুরিরঙ্গনকে নিয়ে আরএসএস নেতৃত্ব ও বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির সরকারের সঙ্গে খসড়া নীতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন একথা সত্য। তাই শিক্ষানীতি ঘোষণা হওয়ার পর আরএসএস নেতৃত্ব খোলাখুলি তাদের সন্তুষ্ট হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। অথচ শিক্ষকদের সর্বভারতীয় সংগঠন এসটিএফআই দাবি করেছে যে, এ নিয়ে তাদের লিখিতভাবে পেশ করা পরামর্শকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। একই বক্তব্য ছাত্র সংগঠনগুলিরও।

যে সরকার নিজেদের দায় এড়িয়ে, শিক্ষানীতিতে সরকারি এবং বেসরকারি বিদ্যালয়কে সমগোত্রভুক্ত করবার কথা ঘোষণা করে, তাদের আসল লক্ষ্য যে শিক্ষাক্ষেত্রে বেপরোয়া বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণের পথ প্রশস্ত করা, তা বুঝতে অসুবিধে হয় না‌। এই শিক্ষানীতির ছত্রে ছত্রে এদেশে শিক্ষায় বেসরকারি বিনিয়োগকে স্বাগত জানানোর কথা খোলাখুলি বলা হয়েছে। চালু নিয়ন্ত্রণবিধি নস্যাৎ করে, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শিক্ষার বাজারে ঢালাও মুনাফা লুঠ করবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

হিন্দুত্বের দর্শন প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারের এই সক্রিয়তাবৃদ্ধি, আগামী দিনে যে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে আরও বড় বিপদ ডেকে আনবে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সঙ্ঘ পরিবারের সক্রিয় হস্তক্ষেপের কারণে জাতীয় শিক্ষানীতির কোথাও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটির উল্লেখ নেই‌। যারা কোভিড অতিমারির এই বিপর্যয়ের সময়ে প্রায় চল্লিশ হাজার ভারতীয় জনগণের অসহায় মৃত্যুকে উপেক্ষা করে, ঢাকঢোল পিটিয়ে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে রাম জন্মভূমি পূজনের আয়োজন করতে পারে, তাদের হাতে আগামী দিনের শিশু-কিশোরদের লেখাপড়ার দায়িত্ব তুলে দিলে তা আদৌ কতটা নিরাপদ হবে সে বিষয়টি এই মুহূর্তে ভাবা অত্যন্ত জরুরি।

আলোচ্য জাতীয় শিক্ষানীতিতে বেশ কিছু ভালো কথা বলা হয়েছে। যেমন এক জায়গায় বলা হয়েছে আগামীদিনে শিক্ষাখাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে মিলিতভাবে মোট জাতীয় আয় বা জিডিপির ৬ শতাংশ খরচ করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষাখাতে ব্যয়বরাদ্দের প্রশ্নে ঠিক কী ভূমিকা পালন করে এসেছে এযাবৎকাল, তার কোনও উল্লেখ এখানে নেই। ২০১০ সালে যখন শিক্ষার অধিকার আইন চালু হয়, হিসেব করে দেখা গিয়েছিল, সাকুল্যে ১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দ করতে পারলে ঐ আইনে যে যে বিষয়গুলি করবার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা  কার্যকর হতে পারে। বাস্তবে দেখা গেল, ইউপিএ-২ সরকারের শিক্ষাখাতে বরাদ্দ তার চেয়ে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা কম। ফলে আইনে বিস্তর ভালো ভালো কথা বলা থাকলেও, বাস্তবে তার সিকিভাগও কার্যকর হল না। এই সুযোগ কাজে লাগাল দেশি ও বিদেশি কর্পোরেট পুঁজির মালিকরা শিক্ষায় তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়ে।

২০১৪ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদি সরকার সেই একই পথের পথিক। শিক্ষাখাতে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ গত ছয় বছরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ২০১৪ সালে যা ছিল মোট জাতীয় আয়ের ১.০৬ শতাংশ তা বর্তমান বছরে ০.৫ শতাংশেরও কম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশিক্ষা অভিযানে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের অংশ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের অংশ ৭৮ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৬ শতাংশে। রাজ্যগুলির অবস্থাও তথৈবচ। গত শতকের ছয়ের দশকে কোঠারি কমিশন শিক্ষাখাতে জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ করবার পরামর্শ দিলেও আজ অব্দি এদেশে তা কার্যকর হয়নি। তাই আবার নতুন করে জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের যে প্রতিশ্রুতি এখানে দেওয়া হয়েছে, তার কোনও বাস্তবিক ভিত্তি নেই যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার তার ভাগ উল্লেখ করেনি। নিজেরাই স্বীকার করেছে, এখনও পর্যন্ত শিক্ষাখাতে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির মিলিয়ে মোট খরচ জিডিপির ৪.৪৩ শতাংশের বেশি নয়, অথচ কেন্দ্রীয় বাজেটের শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির কোনও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব এই শিক্ষানীতিতে উল্লেখ করা নেই।

সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলির যথাযথ মানোন্নয়ন কেন ঘটছে না তার কোনও বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ এই শিক্ষানীতিতে নেই, যা থাকা দরকার ছিল। অতীতের যথাযথ মূল্যায়নই ভবিষ্যতের পথনির্দেশ করে। কেন শুধুমাত্র ছাত্রসংখ্যা কম এই অজুহাতে গত পাঁচ-ছ বছরে লক্ষাধিক প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তার কোনও ব্যাখ্যা এখানে নেই। পঠনপাঠনের পরিবেশ ঠিক কত শতাংশ বিদ্যালয়ে যথাযথভাবে আছে? শিক্ষক নিয়োগের চিত্র কী এবং ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত কত ও তা যথাযথ কিনা— এই প্রশ্নগুলি সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

সরকারি ব্যয়ে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে, বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত স্কুলগুলিতে যোগ্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে, যা শিক্ষানীতিতে বলা নেই। বলা হয়েছে শিক্ষকদের অতঃপর যত্রতত্র যখনতখন বদলি করা হবে না। বিষয়টি কার্যকর করতে হলে রাজ্যগুলিকে তৎপর হতে হবে, অথচ এই নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির মতামতকে আদৌ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে গ্রামীণ গরীব পরিবারগুলির সন্তানদের, আদিবাসী ও তফসিলি পরিবারের সন্তানদের এবং অন্যান্য আর্থিক দিক থেকে অসহায় পরিবারগুলির সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রশ্নে রাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে তা বলা নেই। সংরক্ষণের বিষয়ে কোনও কথা বলা নেই, অথচ শিক্ষানীতি ঘোষণা হওয়ার আগেই সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার রব তৈরি করা হচ্ছে সর্বত্র সুকৌশলে পরিকল্পিত উপায়ে। এর ফলে আগামী দিনে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়বে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ক্রমবর্ধমান শিক্ষার ব্যয় সামলানো সম্ভব না হওয়ার কারণে এইসব পরিবারের সন্তানরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে। সামগ্রিকভাবে শিক্ষার গুণমান হ্রাস পাবে।

জাতীয় শিক্ষানীতির কোথাও জাতীয় সাক্ষরতা মিশনের সীমাবদ্ধতাগুলি উল্লেখ করা হয়নি। বলা হয়নি এদেশে এখনও প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কাও সাক্ষরতার হারে আমাদের তুলনায় এগিয়ে। শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের নাম আবার পাল্টে আগের মত শিক্ষামন্ত্রক করা হবে। এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই একথা ঠিক, তবে এই সিদ্ধান্ত কতটা প্রাসঙ্গিক বা এর আদৌ কী প্রয়োজন ছিল তা ব্যাখ্যা করা হয়নি। পরে অবশ্য সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেল, সঙ্ঘ পরিবারের নির্দেশে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রাজনৈতিক দল হিসেবে বিজেপি বরাবরই হিন্দুত্ব ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী দর্শনের প্রচারে আগ্রহী। তাই কেন্দ্রে বা রাজ্যে যখন যেখানে ক্ষমতায় এসেছে, বিজেপির কর্মসূচির অন্যতম একটি বিষয় হয়ে উঠেছে, হিন্দুত্বের দর্শন মেনে পাঠ্যসূচির খোলনলচে বদলে দেওয়া। এনসিইআরটি ও তার অধীন ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক (এনসিএফ)-কে সেইভাবে পাঠ্যসূচি গেরুয়াকরণের কাজে তারা ব্যবহার করেছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন প্রথম এনডিএ সরকারের আমলে, বিদ্যালয় পাঠ্যসূচিতে ধর্মীয় শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি ঠেকানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থে মামলা হয়েছিল। সংবিধানের ২৮ নম্বর  আর্টিকেলে পরিষ্কার উল্লেখ আছে যে, সরকারি বা সরকারি অর্থে পরিচালিত কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধর্মীয় শিক্ষাকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে না। অথচ সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি বলেন, শিশুমনে মূল্যবোধের শিক্ষা গড়ে তোলার জন্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রয়োজন, তাই একে বন্ধ করার দরকার নেই। মামলার এই রায়ে সঙ্ঘ পরিবার নতুন করে অক্সিজেন পায়। শিক্ষায় গেরুয়াকরণের কর্মসূচির গতি বাড়তে থাকে।

নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর শিক্ষাগুরু আরএসএস নেতা দিননাথ বাটরাকে দায়িত্ব দিয়ে বিদ্যালয়শিক্ষার পাঠ্যসূচির ব্যাপক রদবদল ঘটিয়েছিলেন। এমনকি পাঠ্যপুস্তক রচনা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এদেরকেই। এখনও গুজরাটে বিদ্যালয়গুলিতে সেই সব বই পড়ানো হয়। হিন্দুধর্মের মহত্ব প্রতিষ্ঠায় অন্য ধর্মকে ছোট করে দেখা বা ঘৃণা করা, ইতিহাসের বিকৃতি, প্রকৃত ঘটনার সঙ্গে কল্পনাকে মিলিয়ে দেওয়া, পুরাণ বা মহাকাব্যকে প্রকৃত ঘটনা হিসেবে তুলে ধরা, পুরাণের কল্পকাহিনিকে বিজ্ঞানের কাহিনি হিসেবে পরিবেশন করা, বিদ্যালয় স্তরে বৈদিক গণিতের অন্তর্ভুক্তি— এসবই হল ওই পরিবর্তিত পাঠ্যসূচির বিভিন্ন অংশ। এরকম আরও কত বিপজ্জনক বিষয় স্কুল-পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার সীমা-পরিসীমা নেই, যা এদেশের বহুত্ববাদী সংস্কৃতিকে বিপন্ন করছে, করবেও আগামী দিনে। এইসব বই পড়িয়ে শিশুমনকে বিষিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে। অবিজ্ঞান ও কুসংস্কারের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে বর্তমানের এইসব শিশু-কিশোরের দল।

নতুন শিক্ষানীতিতে এই ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ককে দিয়ে সারা দেশের জন্য  বিদ্যালয়শিক্ষায় অভিন্ন পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক নির্মাণের কথা বলা হয়েছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক সঙ্কেত। অন্তত গত দুই দশকের অভিজ্ঞতা তাই বলে। ২০১৫ সালে রাজস্থানে বিজেপি সরকার এই পাঠ্যসূচি তৈরি করার জন্য যে ১৬০ জন মানুষকে দায়িত্ব দিয়েছিল, পরে জানা যায় যে, তারা প্রায় সকলেই সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয় পাঠ্যসূচির ঢেলে পরিবর্তন ঘটানো হয়, যা পরবর্তীকালে অন্যান্য বিজেপিশাসিত রাজ্য সরকারগুলি নিজের নিজের রাজ্যে প্রয়োগ করে। প্রধান লক্ষ্য ছিল আরএসএস পরিচালিত বিদ্যাভারতী স্কুলের পাঠ্যসূচির মডেলে এই পাঠ্যসূচির বদল ঘটানো এবং সেইমতো পাঠ্যপুস্তক রচনা করা।

নতুন নীতিতে আঞ্চলিক বিষয়গুলিকে বিবেচনায় রেখে জাতীয় স্তরে পাঠ্যপুস্তক তৈরি করার কথা বলা হয়েছে যা আদৌ বিজ্ঞানসম্মত নয়। উন্নত দেশগুলিতে জাতীয় স্তরে পাঠ্যসূচি তৈরি হলেও, পাঠ্যপুস্তক নির্মাণের বিষয়টি বিকেন্দ্রীকৃত ভাবনায় কার্যকর হয় অর্থাৎ রাজ্যগুলিকে স্বতন্ত্র দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া হয়। এক জায়গায় বলা হয়েছে, রাজ্যগুলি চাইলে নিজেদের পাঠ্যসূচি তৈরি করতে পারে, তবে তা করতে হবে কেন্দ্রীয়ভাবে তৈরি হওয়া পাঠ্যসূচির আদলে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ যে শিক্ষানীতির প্রধান অভিমুখ, সেখানে রাজ্যগুলি আগামী দিনে আদৌ তাদের ভাবনার প্রয়োগ শিক্ষাক্ষেত্রে কতটা করতে পারবে তা যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ থাকে। কোভিড অতিমারির সময় রাজ্যগুলিকে যেভাবে শর্তসাপেক্ষে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে, আগামী দিনে শিক্ষায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দের প্রশ্নে একইরকমভাবে রাজ্যগুলির উপর শর্ত আরোপ করা হবে, কেন্দ্রীয়ভাবে তৈরি পাঠ্যসূচি মেনে বিদ্যালয় শিক্ষা পরিচালনার জন্য। ছাত্রছাত্রীদের বিপদকে উপেক্ষা করে অসহায়ভাবে রাজ্যগুলিকেও তা মেনে নিতে হবে, যদি না এখন থেকে এই জনবিরোধী শিক্ষানীতির প্রতিবাদে সর্বস্তরে সহমত তৈরি করে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা যায়।

আরএসএস শিক্ষানীতি প্রণয়নের দায়িত্বে থাকলে তা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তার আরও একটি নমুনা এ প্রসঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে। সাম্প্রতিক কালের করোনা আবহে বিদ্যালয় পাঠ্যসূচির ভার লাঘব করার কথা ঘোষণা করে মোদি সরকার। সেই অনুযায়ী সিবিএসই, আইসিএসই, আইএসসি ও অন্যান্য কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত সংস্থার দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়। এখন দেখে নেওয়া যাক এই সুযোগে সঙ্ঘ পরিবার কোন কোন অংশ বিদ্যালয় পাঠ্যসূচি থেকে সুকৌশলে বাদ দেওয়ার বন্দোবস্ত পাকা করল।

নবম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্যসূচি থেকে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ শীর্ষক অধ্যায়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। দশম শ্রেণির বইয়ের ‘গণতান্ত্রিক রাজনীতি’ শীর্ষক অধ্যায় থেকে ‘গণতন্ত্র ও বৈচিত্র’, ‘জনপ্রিয় আন্দোলন ও সংগ্রাম’, ‘গণতন্ত্রের কাছে চ্যালেঞ্জ’, ‘লিঙ্গ ধর্ম ও জাত’ বিষয়ের আলোচনাগুলি বাদ দেওয়া হয়েছে। দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি থেকে ‘নাগরিকত্ব, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার’ অধ্যায়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচি থেকে ‘ভারতীয় অর্থনীতির ক্রমবিকাশের ইতিহাস’ ও ‘পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা’ শীর্ষক অধ্যায় দুটি ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এরকম আরও বহু ঘটনা ঘটছে। আসলে আরএসএসের দর্শন হল হিন্দুত্ব, হিন্দু জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় আধিপত্যের দর্শন। তাই স্কুল পাঠ্যসূচি থেকে গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ শীর্ষক আলোচনা সুপরিকল্পিতভাবেই বাদ দেওয়া হয়েছে। ওরা পরিকল্পিত অর্থনীতির বিরোধী, সেই কারণে প্ল্যানিং কমিশন তুলে দিয়েছে, আর তাই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দিয়েছে।

বিদ্যালয় শিক্ষায় আগেকার ১০+২ ধাঁচা বদলে এবার ৫+৩+৩+৪  করবার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার অধিকার আইন যখন চালু হয়, ৩-৬ বছর ও ১৪-১৮ বছর পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার দায়িত্ব সরকার নিতে অস্বীকার করে। এই শিক্ষানীতিতে ৩-১৮ বছর পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়শিক্ষাকে সরকারি দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও কীভাবে তা কার্যকর করা হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনও পথ চিহ্নিত করা হয়নি। যেমন, প্রাকশৈশব শিক্ষা অর্থাৎ প্রথম পাঁচের প্রথম দুই বছর শিশুদের শিক্ষার দায়িত্ব উচ্চমাধ্যমিক পাশ আইসিডিএস অর্থাৎ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের কাঁধে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এও বলা হয়েছে যে, এর জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির সংস্কার করা হবে এবং কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

একবারও বলা হল না, এদেশে এখন যে ১৩ লক্ষ ৭৭ হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আছে, সেগুলির প্রকৃত অবস্থা কী? এই কেন্দ্রগুলিতে কর্মরত মানুষগুলি কী অবস্থায় আছেন? তাদের দুর্দশা কি কেন্দ্রীয় সরকার জানে না? খোঁজ নিলেই জানা যাবে, এদের  অধিকাংশই হয় ৪৫০০ টাকা বা ৩০০০ টাকায় কাজ করেন। অল্প কিছু রাজ্যে অতি সম্প্রতি এদের সামান্য কিছু টাকা বাড়ানো হয়েছে। শিশুশিক্ষার ভিত গড়বার লক্ষ্যে যদি সত্যিই এঁদের ব্যবহার করতে হয়, তবে সর্বাগ্রে এইসব কর্মী ও সহায়কদের জীবনের মানোন্নয়নের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারকে নিতে হবে যাতে তাঁরা এই কাজে নিজেদের অনুপ্রাণিত করতে পারেন।

আলোচ্য শিক্ষানীতিতে প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি বহুল আলোচিত। এ নিয়ে আবারও বিতর্ক হতে পারে তবে এই পর্যায়ে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের গুরুত্ব যে অপরিসীম তা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু আধুনিক ভাষাশিক্ষার বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষার বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। উল্টে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ প্রকল্প চালু করে ভারতবর্ষের বিভিন্ন ভাষাশিক্ষার নামে সর্বস্তরে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে সংস্কৃত ভাষাচর্চার বিষয়টিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংস্কৃত চর্চায় আপত্তির প্রশ্ন নেই, তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগের প্রয়োজনে ইংরাজি ভাষাশিক্ষায় যতটা গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন ছিল তা হয়নি।

বিদ্যালয় স্তরেই প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসবে, এর জন্য যে অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন তা জোগাড় হবে কোত্থেকে? সরকার যদি এই দায়িত্ব না নেয়, তবে এই প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার কোনও অবকাশ থাকে না। বেসরকারি শিক্ষাব্যবসায়ীদের হাতে এই দায়িত্ব সঁপে দিলে, তাদের মুনাফা  বাড়বে ঠিকই, সংখ্যাগরিষ্ঠ গরীব পরিবারের ছেলেমেয়েরা এর থেকে উপকৃত হবে না। বৃত্তিমূলক শিক্ষা বিদ্যালয় স্তরে যুক্ত হওয়ার থেকে কলেজ স্তরে যুক্ত করা অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত।

ধাঁচা বদলের কারণে মাধ্যমিক পরীক্ষার গুরুত্ব খাটো করা হয়েছে অথচ একথা কি অস্বীকার করা যাবে যে এ রাজ্যে বা দেশেও মাধ্যমিক পাশের সার্টিফিকেট নিয়েই অনেকে অল্প হলেও কিছু অর্থ উপার্জনের পথ খুঁজে পেতেন। চূড়ান্ত পর্ব পিছিয়ে গেল আরও দু বছর যার প্রভাব পড়বে ছাত্রছাত্রীদের জীবনে।

স্বীকৃত বোর্ড বা পর্ষদের পরীক্ষাপদ্ধতি তুলে দিয়ে জাতীয় স্তরে একটি মাত্র মূল্যায়ন সংস্থার হাতে যাবতীয় পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব তুলে দেওয়ার যে প্রস্তাব এই শিক্ষানীতিতে রয়েছে তা আদৌ বিজ্ঞানসম্মত নয়। এতে করে ছাত্রছাত্রীদের মনের উপর অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি হবে, পরীক্ষা সম্পর্কে অযথা আতঙ্ক তৈরি হবে, যার সুযোগ নেবে বেসরকারি টিউটোরিয়াল হোম বা কোচিং সেন্টারের মালিকের দল।

এমনিতেই নয়া উদার অর্থনীতির হাত ধরে গত তিন দশকে এদেশে অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রেও দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ অনেকটা বেড়েছে। গত তিন দশকে দেশজুড়ে বেসরকারি স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যাপ্ত সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে। নয়া শিক্ষানীতি চালু হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। মানবহিতৈষী (ফিলানথ্রপিক) প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনাধীন বিদ্যালয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে আদতে, আরএসএস পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির সরকারি স্তরে মান্যতা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিক্ষাব্যবসার ধরন বদলেছে, তাই সরকারি শিক্ষানীতিতে চালু নিয়ন্ত্রণবিধির প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে বদলে যাওয়া পরিস্থিতির উপযোগী বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

শিক্ষার সর্বস্তরে ডিজিটাল এডুকেশন চালু করার নামে এদেশে ইতিমধ্যেই ব্যবসা শুরু করা ই-লার্নিং কোম্পানিগুলির আগামী দিনের ব্যবসার পথ প্রশস্ত করেছে। বাস্তবকে অস্বীকার করে অনলাইন শিক্ষা চালু করার নামে শিক্ষায় নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। যারা এখনও আর্থিক অক্ষমতার কারণে কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত, সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা কীভাবে অনলাইন শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করবে তা এই শিক্ষানীতিতে বলা নেই।

কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থবাহী বর্তমান শাসকদলের প্রধান লক্ষ্যই হল সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনাস্থা বাড়িয়ে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের শিক্ষাক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করা। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করতে না পারলে আগামী দিনে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিবারের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার আঙিনা থেকে বেরিয়ে যাবে, কারণ বেসরকারি বিদ্যালয়ের বিরাট অঙ্কের মাসমাইনের টাকা জোগানো এইসব পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়।