Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

দুই শত্রুর গল্প

কৌশিক মজুমদার

 

বেটি ডেভিস আর জোন ক্রফোর্ড। এক অভিনেত্রী আর এক তারকা। তিরিশের দশকে তাঁদের লড়াই প্রায় মিথে পরিণত হয়েছিল। বেটি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী, মেথড আর্টিস্ট। আর জোন অসামান্যা সুন্দরী, মানুষের হৃদয়ের মণি। ফলে লড়াই অবশ্যম্ভাবী ছিল। পরস্পরের নামে নানা কুকথা, পিছনে ছুরি মারতে দ্বিধা করতেন না একেবারেই। তাঁদের দুজনের গসিপ বেচে বড়লোক হয়ে গেছেন কত সাংবাদিক। অন্যের প্রেমিককে ফুসলে নিজের শয্যাসঙ্গী করা, পরিচালককে বশ করে অন্যের সিনেমায় নিজে ঢুকে যাওয়া… কোনও কিছুই বাকি ছিল না। জোন পেয়েছিলেন একটি অস্কার মিলড্রেড পিয়ার্সের জন্য। বেটি দুটি। অল অ্যাবাউট ইভ-এ তাঁর অভিনীত মার্গো জেনিংস মিথ হয়ে গেছে। কিন্তু যাকে জীবনের শুরু ভাবলেন বেটি, জীবনের অবনমন শুরু সেই থেকে। কোনও অজ্ঞাত কারণে রোল পেলেন না মনের মত। মেজাজ হারাতে থাকলেন। ঝামেলা বাঁধল

 

জ্যাক ওয়ার্নারের সঙ্গে। এক কথায় জল অচল হল। এদিকে সাময়িক খেয়ালে বিয়ে করেছেন এক সহঅভিনেতাকে। বিয়ের পর বুঝলেন এর যাই হোক প্রতিভা বলে কিছু নেই। স্বেচ্ছায় বিচ্ছেদ ঘটালেন বেটি। কিন্তু মেয়ের দায় বা দায়িত্ব তো তাঁরই। এদিকে দত্তক নিয়েছেন মানসিকভাবে জড়বুদ্ধি একটি মেয়েকে। তাঁর খরচা আছে। বাধ্য হয়ে বেটি থিয়েটারে ছোটখাট রোল করে সংসার চালাতে লাগলেন।

সময় এগিয়ে চলে। দুজনের জীবনে সন্ধ্যা নামে। তাঁরা বৃদ্ধ হলেন। আর হলিউডে বার্ধক্যের কোনও জায়গা নেই। হাতে সিনেমা নেই, প্রচুর ধার চারদিকে… জোন আর না পেরে নিজেই সিনেমার গল্প খুঁজতে বসলেন। তাঁর অবস্থাও বেটির মতো। নিজের মেয়ে বেয়ারা। দত্তক মেয়েরা কথা শোনে, কিন্তু তাঁদের পিছনে খরচ তো আছে! তাই খুঁজতে গিয়ে পেয়েও গেলেন দুই বোনের কাহিনী নিয়ে এক ভয়াবহ আখ্যান। What Ever Happened to Baby Jane? পরিচালককে বুঝিয়ে রাজি করা গেল। কিন্তু নামভূমিকায় কে থাকবেন? জোন বললেন, একমাত্র একজন থাকলেই এ ছবি হিট হতে বাধ্য– বেটি ডেভিস। তাঁদের দুজনকে একসাথে দেখার লোভ সামলাতে পারবেন না কেউই। প্রাথমিক আপত্তির পর বেটিও রাজী হলেন। তারপর চলল দীর্ঘ এক ভালবাসা-ঘৃণার অধ্যায়। দুজনে চরম ঘৃণা করতেন পরস্পরকে, কিন্তু জোন জানতেন বেটির অভিনয় প্রতিভা তাঁকে ছাপিয়ে যায় আর বেটি মানতেন জোনের মতো বড় স্টার হলিউডে হয়নি, হবে না।

দুজনেই সিংগল মাদার, দুজনেই অস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী, দুজনেই লড়াকু, দুজনেই মেষ রাশি…. তবু সারা জীবন পরস্পরকে শ্রদ্ধা করে, ঘৃণা করে বাঁচলেন দুজন। জোন সক্রিয় চেষ্টা করলেন যাতে বেটি তৃতীয় অস্কার না পান,  পেলে বেটিই হতেন প্রথম মহিলা যার এই রেকর্ড আছে। বদলা হিসেবে বেটি নিজের প্রোডাকশনে জোনকে এমন অপমান করলেন যাতে ছবি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। এদের নিয়ে অসামান্য এক ছবি বানিয়েছেন রায়ান মারফি। বেটির ভূমিকায় সুজান সারান্ডন আর

 

জোন হলেন জেসিকা ল্যাং। আরও দুই প্রৌঢ়া অস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী। আর কি অদ্ভুত অভিনয়ই না করেছেন তাঁরা। যে দুজন দুজনের সেরা বন্ধু হতে পারতেন, তাঁরা আমৃত্যু ঝগড়া করেই কাটালেন। ১৯৭৭ সালে ক্যান্সারে  জোনের মৃত্যুর পরে সাংবাদিক বেটিকে জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর কী বলার আছে। বেটি বলেছিলেন “You should never say bad things about the dead, you should only say good… Joan Crawford is dead. Good.”