সোমেন বসু
মেসেজটাকে চেপে ধরতে হয় প্রথমে। ছবি, ভিডিও, টেক্সট যাই হোক না কেন। চেপে ধরলে, রক্ত জমার মতন, সেটা একটু নীলবর্ণ ধারণ করে। ওর অর্থ, সে নির্বাচিত হতে পেরেছে। এবারে ওপরে কয়েকটা চিহ্ন দেখা যাবে যাদের মধ্যে দুটো কোমরবেঁকা তীর থাকবে। তার মধ্যে যেটার মুখ ডানদিকে, অর্থাৎ বাইরের দিকে, স্পর্শ করতে হয় সেটাকে। তখনই সেই নির্বাচিত মেসেজটি বাইরের দুনিয়ার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যেতে পারল। সেই বাইরের দুনিয়া এবার স্ক্রিনে ভেসে উঠবে তালিকাকারে। তাদের মধ্যে থেকে বেছে নিতে হয় নির্দিষ্ট লোক বা গ্রুপটিকে। ঘেঁটি চেপে ধরে রাখা নীল হয়ে থাকা বার্তাটির নির্দিষ্ট মঞ্জিল। বেছে নিলেই নীচে ডানদিকের কোণে আসবে একটা কাগজের প্লেন। উড়িয়ে দিতে হয় তাকে। ব্যস। চলে গেল। সিম্পল…
এই সহজ কাজটুকুই করে উঠতে পেরেছিল সঞ্জয়। সকালবেলা। শৌচাগারের নিভৃতে বসে।
তখন দাঁত মাজছিল সদ্য ঘুমভাঙা রিনি। খানিকটা উঠোনের ব্যবধানে। উঠোনটা পুব-পশ্চিমে। উত্তর আর দক্ষিণ পাশে দুটো করে ঘর। দক্ষিণের ঘরগুলোর তলায় শান, ওপরে অ্যাসবেস্টাস। উত্তরেরগুলোর ওপরে টালি, তলায় একটা ঘরে মেঝে করতে পেরেছিল জীবনমাস্টার— সঞ্জয়ের পরলোকগত পিতৃদেব— শান বাঁধিয়ে, আরেকটাতে মাটিই আছে। এ ঘর দুটো ছিল পড়ার ঘর। মাস্টার তাই ভেবেছিল, চালুও করেছিল সেভাবে। মেঝে যেটায় করতে পেরেছিল, ছেলের পড়ার ঘর হয়েছিল সেটা। অন্যটায় মাটির ওপর প্রথমে প্লাস্টিক, তারপর দুটো বড় শতরঞ্চি পেতে মাস্টার ছাত্র পড়াত। সঞ্জয় আপত্তি জানিয়েছিল এরকম ব্যবস্থায়। আমি তো চেয়ারটেবিলেই পড়ব, মেঝের দরকার কী আমার! বরং তুমি মাটিতে বসে পড়াবে ওদের…। মাস্টার বলেছিল কদিনের তো মামলা। এঘরটাও মেঝে করে নেব…।
পারেনি। মরে গেল।
রিনি দাঁত মাজছিল সেই পড়ার ঘর দুটোর সামনে দাঁড়িয়ে। ওগুলো এখন রিনিদের থাকার ঘর। রিনি, ওর বাবা অমর, মা পারুল। ভাড়া। আজ বছর দেড়েক। মাসিক হাজার টাকায়। এখানে এরকমই রেট।
সঞ্জয়-রিনিদের থেকে লোকাল ট্রেনের হিসেবে কয়েক স্টেশন দূরত্বে থাকা সংযুক্তা অবশ্য ওঠেনি তখনও। ঘুম ভেঙেছে, কিন্তু বিছানা ছাড়েনি। ‘ডাকে পাখি, না-ছাড়ে বাসা…’। সংযুক্তার তখন ঊষাকাল।
মেসেজটা একটা ছবি। সুপ্রভাত লেখা। একটি মেয়ের ছবির ওপর। মেয়েটি ঘুম থেকে উঠছে। ঊর্ধ্বাঙ্গ নিরাবরণ।
সঞ্জয়ের স্কুলের কলেজের এবং পাড়ার গ্রুপে যেসব ছবি ভিডিও ঘুরে বেড়ায় সে তুলনায় এ খুবই নিরামিষ নিরীহ ছবি। সঞ্জয়ও যে এসব চালাচালি করতে খুব অভ্যস্ত, তা নয়। বেশিরভাগটাই দেখে কেবল। কিছু দেখে মুছে দেয়। কিছু রেখে দেয়। সেগুলো মাঝেমাঝে দেখে। এরকম নিভৃতে।
শুধু দেখে না নিশ্চয়ই। সে যাই হোক।
কথা হচ্ছিল চালাচালি নিয়ে। না, সে সঞ্জয় করে না খুব একটা। আজ ছবিটা দেখে পুরো ভঙ্গিটা খুব ভালো লেগে গেল। ছবির মেয়েটার ভঙ্গি।
এসেছে কলেজের গ্রুপে। সেখান থেকে ওই যে কায়দাকানুনগুলো করে পাঠিয়ে দিতে হবে স্কুল আর পাড়ার গ্রুপে। এই দুটো গ্রুপে যদিও অনেকেই কমন। আর কলেজের গ্রুপে এই দুই গ্রুপের দু-একজন মাত্র আছে।
পাড়ার বন্ধুরা স্কুলে যেতে পেরেছিল। কিন্তু কলেজে আর যেয়ে উঠতে পারেনি বেশিরভাগই।
কিন্তু যদি ওই যে সেই দুনিয়ার তালিকায় টিক মারতে গিয়ে আঙুল ছুঁয়ে ফেলে অবাঞ্ছিত কোনও গন্তব্য?
নজর রাখতে হয় বন্ধু… সতর্ক থাকতে হয়…
গ্রুপটার নাম ক্লাস টেন – হিস্ট্রি। এরকম ক্লাস টেন-মার্কা আরও কিছু গ্রুপ তৈরি হয়েছে সঞ্জয়ের মোবাইলে সম্প্রতি। হিস্ট্রি জিওগ্রাফি ম্যাথস ইংলিশ ফিজিক্যাল সায়েন্স ইত্যাদি ইত্যাদি। পাড়ায় পৌঁছতে চাইছিল সঞ্জয়। সেই ছবির মেয়েটাকে নিয়ে। পথে পার হতে হয়েছিল ক্লাস টেনের এইসব ক্লাসরুমগুলো। তখনই হয়তো বেয়াদব আঙুলটা ছুঁয়ে ফেলেছিল ওই হিস্ট্রিকে খানিক বেশি।
মালুম পায়নি। পেল দু মিনিট পর। পরপর কিছু পিড়িং পিড়িং আওয়াজে। তখনও সেই নিভৃতিতেই ছিল ও। ভাগ্যিস!
বাইরে থাকলে কেউ যদি ওর সেসময়ের মুখটা দেখতে পেত, ভয় পেয়ে যেত নির্ঘাৎ।
রিনি আড়চোখে দেখে নিচ্ছিল মাঝেমাঝে পায়খানা এবং কলপাড়। পায়খানাঘরের টিনের দরজাটা বন্ধ। বাইরে একটা বালতি রাখা। যেহেতু বাবা বেরিয়ে গেছে ভোরবেলা মাছ কিনতে এবং কিনে বেচতে, এবং মা আর ঠাম্মা ঠাম্মাদের বারান্দায় বসে বসে আলগোছে কিছু সাংসারিক কথা বলছে, ফলে পায়খানায় কাকু আছে বোঝাই যাচ্ছে।
বেরোলে ও যাবে কলপাড়ে। মুখ ধুতে।
সংযুক্তা একা থাকে। একাকী দণ্ডায়মান একটা ফ্ল্যাটবাড়ির একতলার এক বিএইচকে একটি ফ্ল্যাটে একদম একা থাকে। এখন যেহেতু সংযুক্তার চোখে চালসে ধরেছে এই বছর তিনেক, অতএব এ কৌতূহল অস্বাভাবিক নয় যে সে একা কেন? সে কুতূহল নিবৃত্তার্থে আপাতত এটুকুই বলার— সংযুক্তার একটি নিকে হয়েছিল, এবং এখন সে একা। ব্যস, এটুকুই।
না, আরও একটু। রিনি যে স্কুলে পড়ে, সংযুক্তা সেই স্কুলেই পড়ায়। সরকারি স্কুলে সময়ান্তরে এবং ক্লাসান্তরে ইংরাজি বাংলা অনেক কিছুই পড়েতে হলেও ওর মূল বিষয় ইতিহাস। এবং সম্প্রতি ও একটা হোয়াটস্যাপ গ্রুপের মেম্বার হয়েছে— ক্লাস টেন – হিস্ট্রি।
এইসব হোয়াটস্যাপ গ্রুপগুলো তৈরি করতে কম ঝামেলা! টেন আর টুয়েলভের মেয়েদের অনলাইন ক্লাস করানো হবে আপাতত ঠিক হয়েছিল। তা টেনে একশো বাহান্নজন, টুয়েলভে একশো তেরো। প্রথম খোঁজা হল সবার মোবাইল— মোবাইলে কী হবে, স্মার্টফোন— আছে কিনা। দেখা গেল টেনের একশো বাহান্নর মধ্যে সাতাশ, আর টুয়েলভের একশো তেরোর মধ্যে একুশ জনের বাড়িতে স্মার্টফোন আছে। বাড়িতে। অনিবার্যভাবেই বাবা বা মা-র। টুয়েলভের মাত্র একটি মেয়ের নিজস্ব স্মার্টফোনের কথা জানা গেল। সঞ্চিতা। বাবা-মা দুজনেই সরকারি চাকুরে। কেন যে ও সংযুক্তাদের স্কুলে পড়ে! যাই হোক, সে বাপ-মায়ের থেকেই ফোন নিয়ে নয় ক্লাস করবে মেয়েরা। লকডাউন। বাড়িতেই তো থাকছে সবাই। অসুবিধা হবে না। কিন্তু মেয়ে জুটল যে এই কটা! আবার সবাইকে ফোন। কোনও ব্যবস্থা কি করা যায় না একটা স্মার্টফোনের? কাকাজেঠুপিসিমাসি কারও? দিনের মধ্যে একবার একটা সময়ের জন্য অন্তত? সেই খোঁজে সাতাশ আর একুশ গুটি গুটি পায়ে একষট্টি আর ছেচল্লিশে আসতে পারল। কিন্তু সেগুলো একেবারে জেলখানায় কয়েদির সঙ্গে দেখা করার মতো। দিনের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সময়ে এবং একটা ন্যূনতম সময়ের জন্যই ব্যবহার করা যাবে ফোনগুলো। সেই টাইমও মিলছে না যথারীতি। লক্ষ্মী বিকেল পাঁচটায় আধঘণ্টার জন্য পাবে তো সুমনা সকাল এগারোটায় চল্লিশ মিনিটের জন্য! বোঝা গেল এভাবে ক্লাস করানো সম্ভব নয়। তার চেয়ে প্রতিটা সাবজেক্টের একটা করে হোয়াটস্যাপ গ্রুপ খোলা হোক। ছাত্রীদের— না, এরা কেউই ছাত্রী নয়— ছাত্রীরা যে নাম্বারগুলো দিয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে এক একটা গ্রুপে থাকবে সেই সাবজেক্টের টিচার আর বড়দি, মেজবড়দি। এই হল ব্যবস্থা। এক দিনে, বা একদিন অন্তর এক একজন টিচার এক একটা চ্যাপ্টার বুঝিয়ে এবং যতটা সম্ভব সম্ভাব্য প্রশ্নোত্তর বলে রেকর্ড করে সেই ভয়েস মেসেজ গ্রুপে আপলোড করে রাখবে। অঙ্ক ইত্যাদির ক্ষেত্রে লিখে তার ছবি তুলে দেবে। ছাত্রীরা যে যখন মোবাইলের অধিকারী হবে সেটা শুনে শুনে বা দেখে দেখে খাতায় নোট নিয়ে নেবে। কিছু প্রশ্ন থাকলে তখনই করা সম্ভব হলে ওখানেই করবে, আর নয়তো লিখে রাখবে খাতায়, পরদিন আবার যখন ফোনটা হাতে পাবে, করবে। ছাত্রীদের, কিছু শিক্ষকদেরও, আরও কিছু কাজ করতে হবে। টেনের একানব্বই আর টুয়েলভের সাতষট্টিটা যে দুর্ভাগা মেয়ে— শিক্ষাব্যবস্থার এই অনির্বচনীয় প্রভা বহু চেষ্টা করেও যাদের নাগাল পেতে পারল না— সৌভাগ্যবতী মেয়েদের এবং আশেপাশে থাকা কিছু শিক্ষকদেরও দায়িত্ব পড়ল তাদের কাছে ওই স্টাডি মেটিরিয়াল পৌঁছে দেওয়ার। মফস্বলের বাংলা মিডিয়াম সরকারি ইশকুল! খুব বেশি দূর থেকে তো আর মেয়েরা আসবে না। বাড়ি চেনাটা সমস্যা হবে না খুব। চলুক এভাবেই। সবারই অন্তত সান্ত্বনা থাক।
সংযুক্তা এসবে খুবই উদ্যোগী। ওকে হতেও হয়, এবং ও হয়-ও। স্কুলের যে কোনও কাজেই। এমনকি ওই যে মেজবড়দি বললাম— সেই ডাকটাও ওর চালু করা।
আহা আপনি তো অ্যাসিস্টেন্ট হেডমিস্ট্রেস! শুধু মেজদি বললে অ্যাসিস্টেন্টটাই হয় কেবল, হেডমিস্ট্রেসটা হারিয়ে যায় কোথায়। না, আমি আপনাকে মেজবড়দিই বলব। আমার আগের স্কুলেও তাই বলতাম—
রিনির বাবা অমর পাল কাঠমিস্ত্রি। নাম আছে এ চত্বরে। লকডাউনের প্রথম দেড়-দু মাস বসেই ছিল। এখন অমর পাল মাছবিক্রেতা। মাছ বেচছে কদিন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে সাইকেল নিয়ে।
অমর ছিল জীবনমাস্টারের ছাত্র। সেই সূত্রেই গুরুমা-জ্ঞানে সঞ্জয়ের মাকে কাকিমা বলে ডাকে। রিনিকেও অগত্যা তাকে ঠাম্মা আর সঞ্জয়কে কাকু বলতে হয়। নইলে বয়সের তফাত এতটাও নয়।
রিনির যে সঞ্জয়কে কাকু বলতে ইচ্ছে করে না সেটা উঠোনের পুব পশ্চিমে ছড়িয়ে থাকা একটা বেল, একটা আম, একটা নিম, একটা পেয়ারা আর কলপাড়ের পেঁপে গাছদুটো জানে। ওরা এটাও জানে মাঝেমাঝে অন্ধকার রাতে নিজের শোয়ার ঘর থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে বাড়িওয়ালা ছেলেটা ভাড়াটে বর-বৌয়ের শোয়ার ঘরের জানলায় গিয়ে কান লাগায়। সবই খবর রাখে ওরা, কখনও ওদের দীর্ঘশ্বাসের লেনাদেনা হয়, বা কখনও হয় চোখ-ঠারাঠারি।
যাই হোক, এখন আর যেটা বলার, রিনি ক্লাস টেনে পড়ে।
সংযুক্তা উঠে পড়তে পেরেছে এতক্ষণে। বিছানাটা এলোমেলো খানিক, মাথার বালিশটার মাঝখানটা ডেবে গিয়ে গর্ত হয়েছে একটা ছোট, সারা রাত সংযুক্তার মাঝারি সাইজের মাথাটাকে আশ্রয় দেওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ। একটা কোলবালিশ আছে, তেরছা হয়ে। বিছানার উলটো দেওয়াল জুড়ে বুক কেস, বইঠাসা। বিছানার সামনের দেওয়ালে একটা কম্পিউটার টেবিল, ওপরে কম্পিউটার আর সামনে একটা চেয়ার। বিছানার ওপরে বালিশ কোলবালিশ ছাড়া একটা আইপ্যাড, একটা স্মার্টফোন। স্মার্টফোনটা এই মুহূর্তে জোনাকির মতো জ্বলছে নিভছে, তড়িদাহতের মতো কাঁপছে। কেউ চাইছে সংযুক্তাকে এই সক্কালবেলায়। সংযুক্তা ঘরে নেই, থাকলেও প্রথমত গোচর করত কিনা, আর দ্বিতীয়ত গোচর করলেও এই সক্কালবেলার দাবিদারের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল হত কিনা, তা নিয়ে যারপরনাই সন্দেহ থাকছে।
খানিক খেয়াল করলে দেখা যাবে যন্ত্রটার কাঁপুনি সেভাবে বিরাম পাচ্ছে না। পেলেও দু-এক সেকেন্ডের জন্য। দাবিদার একাধিক, সম্ভবত।
স্বাভাবিক। আমরা জানতে পেরেছি, স্কুলের কোনও কাজে সংযুক্তা বেশ উদ্যোগী। আমরা জানতে পেরেছি, সংযুক্তা ইতিহাস পড়ায়। আমরা এও জানতে পেরেছি ইতিহাসের হোয়াটস্যাপ গ্রুপে একটা বিপর্যয় ঘটে গেছে এই সাতসকালেই।
কিন্তু আমরা এটা এখনও জানতে পারিনি যে সংযুক্তার এই সময়টা মন খারাপের সময়। ঘুম ভাঙার পর সকালের এই সময়টায় ওর কান্না পায়।
তবে এটা ওর অনেকদিনের সঙ্গী যাই হোক। এই গলায় আটকে থাকা একটা ডেলা-কান্না, কপাল-গাল-নাকের চামড়াগুলোতে একটা সুড়সুড়ি জাতীয় অনুভূতি— যেমন অনুভুতি হলে মানুষ গোটা মুখে একটু জোরে হাত ঘষে নিতে পারে… এইসবগুলো আর কী! এরা কখন যাবে, কীভাবে যাবে সে-সবও সংযুক্তার জানা। দীর্ঘদিন একসঙ্গে চললে কিছু তো বোঝাপড়া তৈরি হয়েই যায়। সমস্যা হয়েছে এই বেয়াড়া লকডাউনে। সেই বোঝাপড়া ভেঙে যেতে পারছে, অনুভূতিগুলো অবসর বাড়িয়ে নিতে পারছে, তীব্রতাও ফলত। এখনই সংযুক্তাকে জিজ্ঞেস করলে ও একটু মনে করে বলে দিতে পারবে গত এক মাসে অন্তত তিনটে দিন গলার ওই পরিচিত পোষ-মানা ডেলা-কান্নাটা নিজের ডেলাত্ব তথা পোষ্যত্বকে নাকচ করে ওর চোখ ছাপিয়ে বাইরের পৃথিবী দর্শন করে যেতে পেরেছে নির্বিকার।
মুখচোখ ধুয়ে একটু কড়া করে এক কাপ কালো কফি বানিয়ে ডাইনিং রুমেই বসে সংযুক্তা একটা সিগারেট ধরাতে পারল। বেডরুমে বিছানার ওপর মোবাইলটা কেঁপেই চলেছে তখনও।
সঞ্জয়ও বসে আছে। ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডানদিকে বাঁক নিয়ে ইটবাধানো রাস্তা ধরে খানিক এগোলে পাড়ার শেষে যে কালভার্টটা পড়ে, সেটার ওপর। আসার পথে হেটমুণ্ড হয়ে পার হয়ে আসতে পেরেছে তেপান্তরের মাঠের মতো দীর্ঘ ওদের উঠোন, রাজপ্রাসাদের মতো বিশাল রিনিদের দুটো ঘর, আর তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে বিশালদেহী রিনিকে। না তাকিয়ে।
এইখানে খাল, এইখানে মাঠ, ওইখানে ডোবা, এইপাশে ইটবাঁধানো রাস্তা, ওইপাশে পাড়া, এই ইটবাঁধানো রাস্তার ওপর দিয়ে দাঁতন করতে করতে চলে যাওয়া নিমাইকাকা, ওই নিমাইকাকার সঙ্গেই চলে যাওয়া নিমাইকাকার আড়চোখ, ওই পিচরাস্তার ওপরে যে তিনটে দোকানঘর এখান থেকে দেখা যাচ্ছে তার প্রায় এক মাসের বেশি ধরে নেমে থাকা শাটারগুলো, এই খালের ওপর কালভার্ট, আর সেই কালভার্টের ওপর এই একা বসে থাকা সঞ্জয়।
নিজেকে স্থাপন করার চেষ্টা করল একটু। একটা উপড়ে আসা অনুভূতি হচ্ছে।
নিমাইকাকা অমন আড়চোখে তাকিয়ে গেল কেন ওর দিকে?
বাবার ওপর একটা অভিমান ভুসকে উঠল আলটপকা। কান্না পেল সঞ্জয়ের। কেন মরে গেল লোকটা এত তাড়াতাড়ি?
কান্না একটা পাচ্ছেই। সেই কান্না ভর দিয়ে পার হওয়ার মতো সাঁকো খুঁজছে। তাই মৃত জীবনমাস্টারকে এই লকডাউন-জর্জরিত ঘোলাটে সকালে স্মরণ করতে পারছে তার একমাত্র পুত্র। নইলে একটা তেইশ-চব্বিশ বছরের ছেলে কোথাও কিছু নেই হঠাৎ কাঁদছে— এ দৃশ্যটা সামাজিকভাবে খুব স্বাভাবিক হয় না।
দিন শুরু হয়ে যেতে পেরেছিল তখন যথানিয়মে। মানে এই থেমে থাকা দিনগুলো যেভাবে শুরু হতে পারছে এখন, সেভাবেই। অমর মাছ বিক্রি করে ফিরেছে। রিনির থেকে থেকে কেঁদে ওঠা দেখে পারুলের কাছ থেকে শুনেও নিয়েছে সবটা। সঞ্জয়ের মা বসে আছে সেই থেকে বারান্দাতেই। বেল আম নিম পেয়ারা আর পেঁপেজোড়াও থমথম করছে বাড়ির পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। হাওয়াতেও নড়তে চাইছে না।
সংযুক্তার ফোনে— ও ধরার আগে অব্দি— সাতাশটা মিসড কল। বড়দি, মেজবড়দি, ওর হিস্ট্রির কো-টিচার সুপর্ণা, আরও কিছু চেনা-অচেনা নাম্বার, সব মিলিয়ে সাতাশটা।
আরেতুমিফোনধরোনাকেন? ফোনকরেকরেহদ্দহয়েগেলামতোমায়সকালথেকে! শরীরটরিরঠিকাছেতোবাবা? এদিকেদেখেছকীহয়েছে?… উত্তেজিত হয়ে গেলে বড়দি শব্দগুলো আলাদা করতে পারেন না। স্পিকারে না দিয়েও কান থেকে একটু দূরে নিয়ে শুনে নিতে পারছিল সংযুক্তা।
কিরে তুই তো এতক্ষণ ঘুমাস না রে! কী হয়েছিল? ফোন ধরছিলি না কেন? এদিকে তো যা হয়েছে…! বড়দির তো মাথাখারাপের জোগাড়! আমিও বুঝে পাচ্ছি না কী করব!…
তুই আছিস ভালো সত্যি!! নিজে পাগল হয়ে যাচ্ছি… বড়দি মেজবড়দিরা পাগল করে দিচ্ছে… মেয়েরা ফোন করছে… তার মধ্যে তুই ফোন না ধরে বসে আছিস চুপ করে!… হ্যাঁ রে, শরীর ঠিক আছে তো?…
মেজবড়দি আর সুপর্ণা।
শুনতে পেরেছে সব। আলগোছে। কিছু মর্মে পশিয়াছে, কিছু ব্যর্থ হইয়াছে। তবে আমাদের মন— নাকি মাথা?— ছাকনি ভালো। এইসব সময়ে, যখন পূর্ণ মনে নিবিষ্ট হতে পারা যাচ্ছে না, অথচ থাকতে হচ্ছে বাহ্যত, মন মূলত কাজের জিনিসগুলোই ছেঁকে নিতে পারে। অনেকটা হাঁসের পাঁক থেকে পোকা খাওয়ার মতো।
কেঁদে উঠতে পারেনি অবশ্য শেষমেশ সঞ্জয়। আঙুলের নিভে যাওয়া বিড়ির টুকরোটা ফেলে শুকনো মুখটাই একবার দু হাতে জোরেসোরে মুছে নিতে পেরেছিল কেবল।
কিন্তু কোথায় যাবে? বাড়ি?
অমরদাদের কারও মুখোমুখি হওয়া যাবে না এখন। কিছুতেই না।
কিন্তু কখনওই কি যাবে?
আর মুখোমুখি যদি ওরাই হতে চায়? অমরদা কি ফিরেছে এতক্ষণে? বৌদি? বা রিনি?
সঞ্জয়, তুমি করলে এটা? তোমাকে কখনও… বা, কাকু এবার আমি পড়ব কী করে?…
পা দুটো ভারী লাগছে।
রিনির মুখটা মনে পড়লেই কীরকম কুঁকড়ে যাচ্ছে ও।
মেয়েটার পড়াশোনারও তো ব্যাপার আছে।
আর সঞ্জয়ের মানসম্মানের…
শুধু তো অমরদারা বা মা জানবে তাই না, রিনির ক্লাসের মেয়েরা অনেকেই ওকে চেনে। কমবেশি একই তো এলাকা। আর প্রাইভেট মাস্টার হিসেবে সঞ্জয়ের এলাকায় পরিচিতিও আছে একটা। সবচেয়ে লজ্জার ব্যাপার, ওদের কেউ কেউ সঞ্জয়ের কাছে পড়েও।
বলা হয়নি— সঞ্জয় বিএসসি পাশ করেছে এবং যথারীতি কোনও চাকরিবাকরি পায়নি। তবে মাস্টারের ছেলে যখন মাস্টারি তো ধাতেই আছে। তা, পড়ায় খারাপ না ছেলেটা। পসারও নেহাত মন্দ না।
জীবনমাস্টারের পেনশন, মায়ের সেলাই, সঞ্জয়ের টিউশনি, অমরদাদের হাজার টাকা… দুই মা-ব্যাটার চলে যায় মন্দ না।
যদিও এই লকডাউনে সবটাই ঘেঁটে যেতে পেরেছে।
অমরদা গত মাসে ভাড়া দিতে পারেনি। সেলাই, টিউশনি বন্ধ মোটের ওপর। একটু মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত পাড়ায় শুনেছে গৃহশিক্ষকরা মাইনে পেয়ে যাচ্ছে। পড়াতেও হচ্ছে অবশ্য অনলাইনে। সঞ্জয়দের এলাকায় সেসব সম্ভব নয়।
এই গোটা তল্লাটটা, এখানে সামনের দিকে লোকজন হয়তো নানা কাজকর্ম করে থাকে, এই যেমন সঞ্জয়ের বাপ ছিল মাস্টার, সঞ্জয় প্রাইভেট টিউটর, অমর কাঠমিস্ত্রি, নিমাই একটা লেদ কারখানায় কাজ করত খড়দার ওদিকে, এ সবই সামনের দিকে, ওপরে। কিন্তু যতই গভীরে ঢোকা যাবে, গন্ধে মাথা ঝিমঝিম করবে। গেঁজে যাওয়া গুড়ের গন্ধ, সেই গুড় জ্বাল দেওয়ার গন্ধ, আর শেষমেশ চুল্লুর গন্ধ। ভেতরে এই চুল্লুটাই তৈরি হয় বাড়ি বাড়ি। সব মানুষ, বাচ্চাবুড়োমেয়ে সব, কোনও না কোনওভাবে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত।
সেই চুল্লু প্লাস্টিকের ছোট ছোট পাউচে ঢুকে— তখন এর আদরের নাম হয় পেপসি— বস্তায় বা ব্যাগে ভরে ট্রেনে চড়ে পাড়ি দিতে পারে এদিকসেদিক।
লকডাউন। ট্রেন বন্ধ।
এপাশ ওপাশ থেকে কখনও আসে কেউ কেউ বাইক বা সাইকেল নিয়ে… কিন্তু সে আর কটা!
অতএব পেটেই টান পড়েছে। ছেলেমেয়ের মাস্টারের টাকা তো অনেক দূরের ব্যাপার।
পড়ানোর কথাতে মনে পড়ল, রিনিকেও ও পড়া দেখায় মাঝেমাঝেই!
কিন্তু এখন ও কোথায় যাবে? ট্রেন চললে চুপচাপ উঠে বসে পড়া যেত। সেও তো নাই এই লকডাউনের বাজারে…
উফফ! নোংরায় বসা ডেঁয়ো মাছির মতো এই শব্দটা ভনভন করছে যেন কানের পাশে একমাসের বেশি হয়ে গেল! লকডাউন… লকডাউন…
সংযুক্তার কাছে রিনি আসতে পেরেছিল তার একটু পরে। একটু বেলা গড়িয়ে। জোয়ারের ঢেউয়ের মতো হাউমাউ করে আছড়ে পড়েছিল ফোনটায়। আর তাতেই সংযুক্তার বিষণ্ণতাটা যেতে পারল শেষমেশ আজকের মতো! নইলে দম বন্ধ হয়ে আসছিল! মনে হচ্ছিল থেকেই যাবে বুঝি। এই লকডাউনটার মতো…
কান্নার দমকে দমকে, ঢোক গিলতে গিলতে, ফোঁপাতে ফোঁপাতে কথাগুলো বলতে পারছিল রিনি। বলছিল মিস-দের সামনে, বড়দি-মেজবড়দির সামনে মুখ দেখাবে কী করে! বলছিল দিদিরা বন্ধুরা যদি ভাবে এটা রিনিই করেছে! বলছিল সামনাসামনি না বললেও মেয়েরা কি ফিসফাস করবে না এটা নিয়ে? সে ফিসফাস কি গুজগুজ কি তারও বেশি কিছুর আকার নিতে পারবে না কালে কালে? এই তো ছোট এলাকা! বলছিল কাকু— বাড়িওলা কাকু— সে যে এরকম একটা কাজ করতে পারে ও ভাবতেই পারছে না! কত ভালো… ভদ্র… রিনি তো প্রায়ই কাকুর কাছে পড়া দেখে নেয়… এমনকি রিনির ওকে কাকু বলতে ইচ্ছাও করে না— না সেটা বলতে পারেনি সংযুক্তাকে— কখনও তো কোনও খারাপ কিছু দেখেনি ওর ষোড়শী চোখ! বলছিল আর ওর পড়াশোনাটাই হবে না বোধহয়! এখন আর কী করে পাবে ও সব নোট-ফোট!…
থামায়নি সংযুক্তা। ও অনুভব করতে পারছিল রিনির উদ্গত উচ্ছ্বাস ওর নিজের ভেতরের বাষ্পগুলোকেও টেনে বের করে নিচ্ছি ধীরে ধীরে। এ যেন মুখে একটা ঘুষি এসে পড়ার মতো, যার অভিঘাতে হারিয়ে যেতে পারে হাতের কোনও ছোট জ্বলুনি।
রিনিকে শান্ত হতে বলেছে ও। বলেছে ওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। বলেছে ও দেখছে কী করা যায়। বলেছে ও তো কিছু করেনি, অতএব ওর লজ্জা-ফজ্জা পাওয়ার কোনও কারণ নেই।
সঞ্জয় বাড়ি ফিরতে পারেনি তখনও।
সংযুক্তা ইতিমধ্যে চিনে ফেলতে পেরেছে সঞ্জয়কে। সুপর্ণার ফোনটার পরেই গ্রুপটা খুলেছিল। খুব ঔৎসুক্য নিয়ে নয়, আলগোছেই। আর খুলে একটু ওপরে স্ক্রল করে এই দমবন্ধ করে দিতে চাওয়া বিষাদের মধ্যেও চমকে উঠতে পেরেছিল ও।
মাঝখানে নীলের মধ্যে লেখা আছে সঞ্জয়@বিশরপাড়া লেফট!
তার ওপরে সঞ্জয়@বিশরপাড়া-র মেসেজ। দশটা একত্রিশে। নামটা কালো হয়ে গেছে। গ্রুপ থেকে কেউ বেরিয়ে গেলে বা বের করে দিলে হয় অমন। ami rinir kaku. Jeta hoyeche bhul kore hoyeche. Ami khoma chaichi.
ভুল?
একটু শান্ত লাজুক ধরনের বাচ্চা ছেলে। এসেছিল একদিন। তুফানের সঙ্গে। তুফানের বন্ধু এই সঞ্জয়।
বাচ্চাই তো! কত বয়স হবে? চব্বিশ-পঁচিশ…
একটা কাজ হয়েছে সংযুক্তাদের। এই লকডাউনে। চিন্তা আর উদ্যোগ ওর এক বন্ধুর। হ্যাঁ রে, এই লকডাউনে তো অনেকেই খুব দুর্ভোগে পড়েছে। আমাদের ফ্ল্যাটের সুইপার আজ এসেছিল টাকা চাইতে। ওর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, ওদের এলাকার অনেকেরই নাকি রেশন কার্ড নেই, থাকলেও গণ্ডগোল। তা আমরা কিছু করতে পারি না এদের জন্য?
মিডল ক্লাস প্লেজার। বলেছিল কেউ কেউ। স্কুলের, কলেজের গ্রুপে।
হতে পারে হয়তো। ভাবেনি সংযুক্তা। শুধু এটুকু বুঝে নিয়েছে এই কাজটায় না ভিড়লে লকডাউন আর প্রাতঃকালীন বিষণ্ণতা এত দিনে ওকে গিলে খেয়ে নিত স্রেফ।
তুফানরাও ভিড়েছে। তুফান আর ওর আরও দু-চারটে বন্ধু। ওদের মধ্যেই একজন সঞ্জয়। বয়স কম ছেলেগুলোর। একটা তরতাজা ভাব আছে। ওদের সঙ্গ ভালো লাগে সংযুক্তার। এদের বাড়ি বিরাটি বিশরপাড়া নিউ ব্যারাকপুরের ওদিকটায়।
অতঃপর এক দীর্ঘ প্রাতঃকালীন বিষণ্ণতার ঘোর কাটিয়ে সদ্যোত্থিতা সংযুক্তা তুফানকে একটা ফোন করে নিতে পেরেছিল।
অনেকদিন দেখা হয় না রে। কাজকর্ম নিয়ে কিছু কথা আছে। আজ আসিস না একবার। সঞ্জয়কে নিয়ে আসিস…
একবার মুখোমুখি হতে চায় ছেলেটার। কথাও বলতে চায়।
আচ্ছা তুফানও কি করে এসব? হোয়াটস্যাপে এইসব মেসেজ চালাচালি? এইসবের অর্থ পানু। শব্দটা জানে সংযুক্তা। পুরনো শব্দ।
ভাবনায় এপাশ ওপাশ হতে হতে আর দু পিস পাঁউরুটি সেঁকতে সেঁকতে এটাও ভেবে নিতে পারল সংযুক্তা টুক করে।
কিছুটা চিকেন করে রাখা আছে ফ্রিজে। গরম করে নিয়ে দু পিস পাঁউরুটি দিয়ে খেয়ে নিতে হবে।
রিনিও তখন খেতে বসতে পেরেছিল। বাবা আর ও। মা ওদের খেতে দিয়ে গেল সঞ্জয়ের মায়ের কাছে। জীবনমাস্টারের বউ তখন থেকে সেই বারান্দাতেই বসে আছে। সে এভাবে বসে থাকবে আর ওরা সবাই খেয়ে নেবে, সেটা ভালো দেখায় না। বাড়িওলা-ভাড়াটে হলেও সম্পর্কটা পুরোই পেশাদার নয়।
সঞ্জয় এখনও ফিরতে পারেনি।
খানিক পরে আর একটা মফস্বলি লকড ডাউন সন্ধে নামতে পারল। বৈচিত্রহীন। হয়তো ইতস্তত দু চারটে শাঁখের শব্দ। একটু দূর থেকে ভেসে আসা মাগরিবের আজানধ্বনি। এই। বৈচিত্র আনে তো প্রাণ। আপাতত প্রাণ গৃহবন্দি।
তুফান একাই এসেছে। সঞ্জয়ের ফোন বন্ধ পেয়ে ওর বাড়ি গেছিল এখানে আসার সময়ে। বাড়ি নেই নাকি সেই সকাল থেকে। ওর মা কান্নাকাটি করছে।
ঘরটা থেকে একটু বাইরের ব্যালকনিতে এল সংযুক্তা। সিগারেট ধরাল একটা।
রিনিদের ঘরে টিভি চলছে। দূরদর্শন। লকডাউনের এক মাস পর কেটে দেওয়া হয়েছে কেবল লাইন। রিনি একাই ঘরে। বাবা বাইরে কোথাও। মা ঠাম্মার কাছে।
টিভিতে হয়তো এখন ওরই বয়সি কোনও মেয়ের কথা বলছে। কেরলের বা অসমের বা হয়তো এই বাংলারই…
একফোটা হাওয়া নেই বাইরে। গাছগুলো একটু ফিসফিস করতে চেয়েও পারছে না। সারা চরাচরে একটা গুমোট, রসগোল্লার রসের মতো চ্যাটচ্যাটে লকডাউন চেপে বসে রয়েছে।