সৌমিত্র দস্তিদার
লেখক প্রাবন্ধিক, গদ্যকার, তথ্যচিত্রনির্মাতা
মানুন অথবা নাই মানুন, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের কোনও আখ্যান লেখা সম্ভব না। আমরা, পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ লোকজন অবশ্য ওপারের জনপদের যে চেনা পাঠ বছরের পর বছর ধরে শুনে আসছি, যেমন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালির ওপরে সর্বাত্মক আক্রমণ নামিয়ে আনা, শেখ সাহেবের গ্রেপ্তার ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনা। পরিশেষে ভারতের সেনাবাহিনীর সহায়তায় ও লক্ষ বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে নতুন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম। অর্থাৎ ১৯৪৭-এ উপমহাদেশে ভাগবাঁটোয়ারার মধ্যে দিয়ে যে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল তা মাত্র আড়াই দশকের মধ্যে তাসের ঘরের মতো ভেঙে গিয়ে এক নতুন রাষ্ট্রের আবির্ভাব হল! ৫২-র ভাষা সংগ্রামই বলুন বা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে উঠে আসা বা মুসলিম লিগের বদলে পূর্ববাংলার রাজনীতিতে আওয়ামী লিগের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, কোনও কিছুই যে আকস্মিক বা আকাশ থেকে পড়া নয়— এটা রাজনীতির অতি সাধারণ ছাত্রও জানে বোঝে। অথচ আমাদের তথাকথিত বিদ্বজ্জনেরা এক খণ্ডিত ইতিহাসচর্চার মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশকে চেনাচ্ছেন, তা আংশিক পরিচিতি মাত্র।
এই ইতিহাসে মওলানা ভাসানী নেই। আওয়ামী লিগের ইতিহাসে শেখ হাসিনাকে বাদ দিলে সবচেয়ে বেশি দিনের সভাপতি মওলানা আব্দুল রশিদ তর্কবাগীশের উল্লেখ নেই। এমনকি ৭১ সালের আগে ও পরে দক্ষ কাণ্ডারী হয়ে যিনি মুক্তিযুদ্ধের রাশ নিজের হাতে ধরে রেখেছিলেন সেই তাজউদ্দিন আহমেদের নামও এই ন্যারেটিভ থেকে সময় সময় বাদ পড়ে যায়।
১৮৮০ সালের ১২ই ডিসেম্বর অবিভক্ত বাংলার সিরাজগঞ্জে জন্মেছিলেন হামিদ খান। বাবা মারা যান অল্প বয়সে। মা ও অন্য তিনভাইও তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার পরে অনাথ হামিদ কাকার বাসায় আশ্রয় নেন। সেখানে কিছুদিন থাকার পরে বিখ্যাত এক পির নাসিরুদ্দিন বোগদাদির ফাইফরমাশ খাটতে পিরের মুরিদ হয়ে চলে যান অসমের জলেশ্বরে। বুদ্ধিমান পিরের নেকনজরে পড়েন হামিদ। তিনি হামিদকে লেখাপড়া শেখাবেন বলে দেওবন্দে পাঠিয়ে দেন। দেওবন্দ তখন লেখাপড়ার পাশাপাশি স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনা চর্চার প্রতিষ্ঠান। গতানুগতিক লেখাপড়ার চেয়েও দেওবন্দ হামিদ খানের মাথায় যে দেশপ্রেমের ভূত ঢুকিয়ে দিল তা ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর সময় অবধি হামিদ খানের রক্তে-মজ্জায় বজায় ছিল। চিত্তরঞ্জন দাশের ভাবশিষ্য হামিদ খান সরাসরি রাজনীতিতে এলেন ১৯১৭ সালে। ১৯২৪ সালে অসমের ভাসান চরের কৃষকদের সংগঠিত করলেন। জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ডাক দিলেন ঐতিহাসিক এক কৃষক সম্মেলনের। তখন থেকেই তিনি হয়ে উঠতে লাগলেন এক রূপকথার চরিত্র, যিনি কৃষক সমাজের নয়নমণি, সামন্তপ্রভুর ত্রাস। তাঁকে মওলানা শিরোপা ভালোবেসে দেওয়া নিম্নবর্গের হিন্দু সম্প্রদায়ের। ভাসান চরের মওলানা থেকেই মওলানা ভাসানী।
এ এক অন্যরকম মওলানা, যাঁর সংস্পর্শে কুখ্যাত ডাকাতও হয়ে যান কৃষক আন্দোলনের সামনের সারির যোদ্ধা। যিনি নদীতে জোয়ার এলে ডিঙি নৌকা নিয়ে মাঝনদীতে বৈঠা নিয়ে ভেসে যেতে যেতে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করেন। এই মওলানা সারাজীবন বলে এসেছেন, মানুষের ধর্ম মাত্র দুটো— জালিম আর মজলুম। নিজে আজীবন থেকেছেন মজলুমের পাশে। অসমের ভয়ঙ্কর লাইনপ্রথার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন দেশভাগের আগে অবধি। দেশভাগ হওয়ার পর ভারত রাষ্ট্র জোর করে সীমান্ত পার করিয়ে দিয়েছে মওলানা ভাসানীকে।
দেশভাগের পর স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে বেছে নিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষকে, যেখানে তিনি একদা কৃষক আন্দোলনের নেতা ছিলেন। শুধু কি সন্তোষ! রাজশাহী, পাবনা, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ সর্বত্রই নির্যাতিত কৃষক-শ্রমিকের অকৃত্রিম বন্ধু একজনই— মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। অসম থেকে পাকাপাকিভাবে পূববাংলায় চলে আসার পরে পরেই মওলানা লক্ষ করলেন পাকিস্তান শাসকদের ভাবগতিক সুবিধার নয়। ক্ষমতায় আসার পরেই যথারীতি তারা প্রজাশোষণ শুরু করে দিয়েছেন। দেশভাগের সময় জিন্না ও মুসলিম লিগের অন্যতম দাবি ছিল ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। কিন্তু বছর না ঘুরতেই পাক শাসকেরা ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানকেই বেছে নিলেন। মুসলিম লিগ অন্তত পূববাংলায় হয়ে পড়েছে ঢাকার নবাববাড়ি আহসান মঞ্জিলের কর্তৃত্বাধীন, যেখানে আম আদমির কোনও ভূমিকা নেই।
যে হিন্দু জমিদারদের আধিপত্যবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে বঙ্গের কৃষক স্বপ্ন দেখেছিলেন নিজভূমে, অচিরেই তাদের মোহভঙ্গ হল। মওলানা ভাসানী স্বাধীন পাকিস্তানের আইনসভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন টাঙ্গাইল থেকে। ১৯৪৮ সালের ১৯শে মার্চ আইনসভার প্রথম অধিবেশনেই বাজেট প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রদেশের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণে প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন মওলানা। চেঁচিয়ে উঠলেন, আমরা কি কেন্দ্রীয় সরকারের গোলাম!! মনে রাখবেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূববাংলার জননেতা হিসেবে সেই প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন মওলানা ভাসানীই। পরে ঐতিহাসিক কাগমারি সম্মেলনের মঞ্চে ভাসানী হুশিয়ারি দিলেন পাক শাসকদের এই বলে যে এভাবে নয়া-ঔপনিবেশিক কায়দায় দিনের পর দিন পূববাংলাকে শোষণ করলে আমরা কেন্দ্রকে সালাম আলাইকুম জানাতে বাধ্য হব। সালটা ১৯৫৭। তখন এ ধরনের হুমকি পাক শাসকদের দেওয়া যে কত কঠিন ছিল তা একটুআধটু যারা উপমহাদেশের রাজনীতির চর্চা করেন তারাই জানেন। ওই কাগমারি সাংস্কৃতিক সম্মেলনেই আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়। তারাশঙ্কর পরে লিখেছেন যে মওলানা কথায় কথায় বলেছিলেন, “দেখবেন এই পাকিস্তান আর দশ বছরের বেশি টিকবে না।” তারাশঙ্কর ফিরে এসে তা অন্নদাশঙ্কর রায়কে বলতেই তিনি ফিসফিসিয়ে তারাশঙ্করকে বলেছিলেন, “যা বলেছেন তা আর অন্য কাউকে বলার দরকার নেই। তাহলে মওলানা ভাসানীর প্রাণ চলে যেতে পারে।” দশ বছর নয়, চোদ্দ বছরের মধ্যে ভাসানীর স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল। পাকিস্তানের শাসক এদেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।
১৯৪৯-এ জন্ম নিয়েছিল পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লিগ। দলের সর্বসম্মত সভাপতি হলেন মওলানা ভাসানী। শেখ মুজিবুর রহমান হলেন দলের অন্যতম সহসম্পাদক। আর দুজন সহ সম্পাদক হলেন এ কে রফিকুল হোসেন ও খোন্দকার মোস্তাক আহমেদ। প্রসঙ্গত পরবর্তীতে মুজিব হত্যার পিছনে এই মোস্তাক আহমেদের হাত ছিল বলেই সন্দেহ করা হয়। দ্রুত সারা পূর্ব বাংলার জনমনে প্রভাব বাড়তে লাগল আওয়ামী মুসলিম লিগের। কয়েক মাস বাদেই পাক সরকার বিপজ্জনক বলে মওলানা ভাসানীকে জেলে পুরল। তার আগে একাধিক সভায় মওলানা ভাসানীর ওপর হামলা চালিয়েছে মুসলিম লিগের সমর্থক গুন্ডারা। জেলে গিয়ে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে নতুন করে গভীর সম্পর্ক তৈরি হল কমিউনিস্টদের। জেল জীবনের শুরুতেই ১৯৫০ সালে রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় বেশ কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতা ও কর্মীকে। কোনওভাবে খবরটা ভাসানীর কানে যেতেই তিনি ক্ষোভে ঘৃণায় ফেটে পড়লেন। ওই সময় সময় তাঁর কানে গেল দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছে। যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে মওলানা কমিউনিস্ট নেতা হাজী দানেশকে বলে উঠলেন যে, এই নাকি ইসলাম! বলা হচ্ছে হিন্দু মারলে নাকি বেহেস্ত হবে! বাইরে থাকলে দাঙ্গা আটকাতে রাস্তায় নামতাম। মওলানা ভাসানীর মুক্তির দাবিতে অবশ্য ততদিনে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা দেশ।
জনতার দাবি মেনে কিছুদিন পর ভাসানীকে ছাড়তে সরকার বাধ্য হল। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মওলানার স্পষ্ট ঘোষণা যে এই সরকার পুঁজিবাদের দালাল। পাকিস্তানের সঙ্গে মওলানা ভাসানীর একাধিক দ্বন্দ্ব ছিল। মওলানা চাইতেন রাজ্যের হাতে অধিক ক্ষমতা। পাকিস্তানের ঘোষিত প্রতিশ্রুতি স্বায়ত্তশাসনের রূপায়ণ। বাংলা ভাষার স্বীকৃতি। মিলিটারি বাজেট কমিয়ে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, কৃষক মজুরদের সার্বিক উন্নতি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তান শাসকদের অত্যাধিক আমেরিকা-নির্ভর বিদেশ নীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন মওলানা। বস্তুত পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লিগ থেকে সরে যে ন্যাপ গড়লেন তার পিছনেও ছিল আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তাঁর প্রবল ঘৃণা। ৫২র ভাষা আন্দোলনেও নেতৃত্বে ছিলেন মওলানা ভাসানী। তিনি ক্রমেই দেশের শ্রমিক কৃষকদের তো বটেই ছাত্র তরুণদের কাছেও চলমান এক বিদ্রোহের আইকন। মুক্তিযুদ্ধের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান হলেও তার দার্শনিক ভিত্তি নিঃসন্দেহে গড়ে তুলেছিলেন মওলানা ভাসানী৷ মওলানা ভাসানীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই গ্রামীণ সর্বহারার বিপুল অংশকে প্রভাবিত করেছিল। ধনী-গরিব দ্বন্দ্বে মওলানা সবসময় ছিলেন গরিবের পাশে। ঢাকায় প্রকাশ্যে জমায়েতে মওলানা আওয়াজ তুলেছিলেন— তুমি খাবে আর আমি খাব না/ তা হবে না। তা হবে না। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগেই ৬৯ সালে আয়ুব খানের মিলিটারি জুন্টার লাঠিগুলির সামনে দাঁড়িয়েও অকুতোভয় মওলানা ভাসানী স্লোগান তুলেছিলেন— কৃষক শ্রমিক অস্ত্র ধরো/ পূববাংলা স্বাধীন করো। মওলানা ছিলেন সার্বিক গণআন্দোলনের নেতা। তিনি বিশ্বাস করতেন, রাস্তাই একমাত্র রাস্তা। মওলানা ভাসানীর চেয়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ। তিনি বলতেন একটা দেশ স্বাধীন করা যায়। কিন্তু তাকে টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন। স্বাধীনতা আর মুক্তি দুটো আলাদা শব্দ ছিল মওলানা ভাসানীর অভিধানে।
মওলানা ভাসানী অসাম্প্রদায়িক ছিলেন বলেই আওয়ামী মুসলিম লিগ থেকে মুসলিম শব্দ ছেঁটে দিয়ে করলেন আওয়ামী লিগ। মওলানা জানতেন মুসলিম শব্দ থাকলে হিন্দু ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর কাছে পার্টি ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে কখনওই চিহ্নিত হতে পারবে না। দলের এই অসাম্প্রদায়িক চরিত্র নির্মাণ পর্বে ভাসানী পাশে পেয়েছিলেন শেখ মুজিবকে। বাজারে একটা চালু রটনা আছে যে মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মওলানা ভাসানীর বনিবনা ছিল না। আমি যেটুকু যা জেনেছি তাতে কিন্তু কখনওই বিষয়টি সত্যি বলে মনে হয়নি। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হলেও দুজনের সম্পর্ক ছিল পিতা-পুত্রের। মওলানা যখন আওয়ামী লিগ থেকে সরে যাচ্ছেন তখনও মুজিব তাঁকে অনুনয় করে গেছেন দল না ছাড়তে। ভাসানী বলতেন, “মুজিবর তো আমার পোলার মতো। আমার ছয়ডা সেক্রেটারির মধ্যে মুজিবরই আছিল এক নম্বর। মুজিবরের মতো ভালো সংগঠক আবার হয় নাকি?” অন্যদিকে শোনা যায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত মুজিব বঙ্গবন্ধু হওয়ার পর প্রায় সবকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভাসানী হুজুরের সঙ্গে পরামর্শ করে, তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে। তবে শেখ সাহেবের একদলীয় বাকশাল গড়ার সিদ্ধান্ত কখনওই মেনে নেননি মওলানা ভাসানী। ৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লিগের অভুতপূর্ব সাফল্যের জন্য প্রথম অভিনন্দন মুজিব পেয়েছিলেন মওলানা ভাসানীর কাছ থেকে। ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান নৃশংসভাবে সপরিবারে খুন হলেন। তার দু-একমাস আগে গভীর রাতে গোপনে শেষবারের মতো শেখ সাহেব সন্তোষে এসেছিলেন ভাসানীর সঙ্গে জরুরি কিছু পরামর্শ করতে। সে রাতে কী এমন জরুরি কাজ ছিল যাতে শেখ মুজিব স্বয়ং ছুটে এসেছিলেন ভাসানী হুজুরের কাছে তা আজও রহস্য হয়েই থেকে গেছে।
শেখ মুজিবুর রহমান আজ নেই। মওলানা ভাসানীও কবেই চলে গেছেন। থেকে গেছে দুজনের সাধের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। দেখতে দেখতে সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া ভূখণ্ডের বয়স হয়ে গেল পঞ্চাশ বছর। একটা দেশ যার মাতৃভাষা বাংলা।যার জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। একই আকাশ একই বাতাস এক হৃদয়ের একই তো শ্বাস। হাজার সমস্যার মধ্যেও দেশটা যে এগোচ্ছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
মওলানা নিঃসন্দেহে ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক নেতা। চিরটাকাল কাটিয়েছেন সহজ সরল এক অনাড়ম্বর জীবন। ভাসান চর ও সন্তোষ— ভাসানীর দুটি বাসস্থানেই আমি গিয়েছি। বাসস্থান অনেক গালভরা শব্দ। আসলে দুটিই আক্ষরিক অর্থেই কুঁড়েঘর। মৃত্যুর আগে মওলানা বলতেন, এখানে কত বাতি জ্বলবে, কত লোক আসবে। সাবধান! কে কী বিশ্বাস করে আর করে না জিজ্ঞেস করবে না। যেই আসবে তাকে রুটি দেবে। কোনও তারতম্য করবে না। শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয় সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসেই গরিব মানুষের এমন বন্ধু খুব কম জন্মেছেন।