Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

আর্যাবর্তে রামরাজ্য: নবম স্বর্গ নাকি চৌরাশিটা নরকের কুণ্ড

দেবব্রত শ্যামরায়

 



প্রাবন্ধিক, গদ্যকার, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

 

 

 

ইতিহাসের দু-দুটো অন্ধকার সময়— ৪৭-এর পর প্রায় সত্তর বছর ধরে সোশালিস্ট, লিবারেল আর সেকুলারদের অপশাসন আর তার আগে না জানি কত হাজার বছরের ইতর মুসলিমদের শাসন পেরিয়ে অবশেষে হিন্দু ভারত জেগে উঠছে। শুধু এই দুইয়ের মাঝখানে দুশো বছরের ইংরেজ শাসনটা কালো মেঘে রুপোলি রেখার মতো। ব্রিটিশরা রাজার জাত, পাতলা আবেগের বশে সাততাড়াতাড়ি ওদের না তাড়িয়ে আরেকটু মানিয়ে গুছিয়ে নিতে পারলে আমাদের হিন্দুদের অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। সে যাই হোক, যা হওয়ার তা হয়েছে। সনাতন হিন্দু ভারত আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে— একথা লিখতেই গায়ে-হাতে-পায়ে পুলক অনুভব করছি।

পথ দেখাচ্ছে আর্যাবর্ত বা গোবলয়। কীভাবে? একটু বিশদ আলোচনায় যাওয়া যাক। আসলে এত চমৎকার ব্যাপারস্যাপার সব ঘটে চলেছে সেখানে, যে কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখি, বুঝে উঠতে পারছি না। আর্যাবর্ত— এই শব্দের মানে যারা জানেন না, তাদের বলি, যে অঞ্চল সনাতন ভারতের আত্মা ধারণ করে আছে, যেখানকার বর্ণহিন্দুরা এখনও বর্ণাশ্রমের প্রাসঙ্গিকতা ও উপযোগিতা ভুলে যাননি, যেখানে আজও উচ্চবর্ণ হিন্দুর ঘরে ঘরে গোমাতা পূজিত হন, সেই উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাকেই আমরা আর্যাবর্ত বলে মনে করি। আমরা বিশ্বাস করি, এদেশে যদি রামরাজ্য স্থাপন করতেই হয়, তাহলে তার আরম্ভ মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রের জন্মভূমি থেকেই শুরু করা উচিত।

তা-ই করছি আমরা। শুরুটা করেছি যেখান থেকে শুরু করা উচিত, সেই শিক্ষা থেকেই। যেমন— শতাব্দীপ্রাচীন লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জানি, লখনৌ না হয়ে শ্রীরামজন্মভূমি বিশ্ববিদ্যালয় বা নিদেনপক্ষে অযোধ্যা বিশ্ববিদ্যালয় হলে শুনতেও ভালো লাগত, শ্রবণে পুণ্যও হত, কিন্তু একসঙ্গে সবকিছু নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে নেই) আমরা শ্রীমদ্ভাগবদগীতা শিক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চালু করতে পেরেছি। ইসকন বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস— এদের সঙ্গে যৌথ ব্যবস্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গীতা পাঠ ও আলোচনার নিয়মিত কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও তার অধীনে নানা কলেজে ক্লাসরুমে ইসকনের সন্ন্যাসী-শিক্ষক এবং ছাত্র শুদ্ধচিত্তে শ্রীমদ্ভাগবত চর্চা করছে— আহা, এ যে কি অনির্বচনীয় দৃশ্য! ভারতের কোনায় কোনায় এই একই ছবি ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা তা করেই ছাড়ব। না, এখনও লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে গীতাচর্চা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করা যায়নি। ওই যে বললাম, সবকিছু নিয়ে একসঙ্গে তাড়াহুড়ো করতে নেই। মুসলিমরা এমনিতেই পড়বে না, না পড়ুক, দরকার নেই। বরং দলিতদের কাছে পৌঁছতে হবে, সনাতন ধর্মের প্রাচীন বনেদে তাদের বেশি বেশি করে জায়গা দিতে হবে৷ বর্ণাশ্রমের উপযোগিতা যা তারা ভুলে গেছে, ভাগবত গীতার মাধ্যমে সেটা সুকৌশলে আবার মনে করিয়ে দিতে হবে তাদের, সবশেষে শূদ্র যদি ত্রিবর্ণের ভার বহন না করে, বর্ণাশ্রমের ভারসাম্য বজায় থাকবে কী করে? রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মতো আমাদের আরও অনেক নির্বিবাদী শান্ত দলিত দরকার। যিনি পুরী গিয়ে জগন্নাথ মন্দির দর্শনের পরে মন্দিরের সিঁড়ি দুধ দিয়ে শুদ্ধ করা হলেও সেটা তাঁর অপমান বলে মনে হবে না, বরং রামজন্মভূমি নির্মাণে সানন্দে পাঁচ লক্ষ টাকা দান করতে পারেন।

অবশ্য নিজের ধর্মবুদ্ধি বেচে দেওয়া কমিউনিস্ট, কাফিল খানের মতো বেয়াদপ মুসলিম ও ভারভারা রাও-স্ট্যান স্বামীর মতো কই মাছের জান শহুরে নকশালগুলো যদ্দিন আছে, রামরাজ্য কণ্টকমুক্ত নয়। লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রূপরেখা ভার্মার মতো বেয়াড়া মহিলারাও আছেন। প্রশ্ন তুলেছেন— বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রীমদ্ভাগবতের প্রচার ও পাঠ শিক্ষার গৈরিকীকরণের উদ্দেশ্যে কি না? হ্যাঁ, আপনি ঠিক বুঝেছেন ম্যাডাম, বুক বাজিয়ে বলে রাখি— যে দেশের নাম হিন্দুস্তান, যেখানকার সংখ্যাগুরু মানুষ হিন্দুধর্মাবলম্বী, সেখানে হিন্দুদের যদি স্কুল-কলেজে হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে পড়তে বলা হয়, তাহলে তার মধ্যে অন্যায়টা কোথায়? ছেলেমেয়েরা নিজেদের শেকড়, নিজেদের সংস্কৃতি জানবে না তো তারা প্রকৃত মানুষ হবে কী করে? কী বলছেন, গীতা প্রক্ষিপ্ত, পরের যুগের রচনা? বৌদ্ধধর্মের বাড়বাড়ন্ত আটকাতে হিন্দুধর্মের এমন একটা রাজনৈতিক-সামাজিক ডিসকোর্স তৈরি করা দরকার ছিল? জানি, আপনার মতো সেকু-লিবারেলরা এই প্রশ্নও তুলবেন, হিন্দুধর্ম আর ব্রাহ্মণ্যবাদ নাকি এক বস্তু নয়, এর মধ্যেও নাকি অনেক বিভাজন আছে ইত্যাদি ইত্যাদি, আমরা নাকি হিন্দুত্বের নামে একমাত্রিক ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতি চাপিয়ে দিচ্ছি। অত জটিল ব্যাপারস্যাপার বুঝি না মশাই! সোজা কথা— বেদ-ব্রাহ্মণ আর পুজোআচ্চায় বিশ্বাস থাকলে আপনি হিন্দু, নচেৎ নন। গাভীকে মা ভাবতে না পারলে আপনার মধ্যে মার্ক্সীয় বা আম্বেদকরের দূষণ ঢুকে গেছে৷ আপনি অমর্ত্য সেন বা রোহিত ভেমুলার মতো পাক্কা শয়তান, দেশদ্রোহী। আসুন, গীতা পড়ুন, গোময়-গোচোনা খেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করুণ, শুদ্ধ হোন, আমাদের অর্থাৎ সংখ্যাগুরুর সঙ্গে থাকুন। আমাদের দু-একটা উচিত কথা মেনে চলুন, নির্ভয়ে ও শান্তিতে থাকবেন, না হলে বিপদে পড়বেন। উত্তরপ্রদেশে রাজ্যে হিন্দু সরকার, কেন্দ্রে হিন্দু সরকার, হিন্দু হৃদয় সম্রাট সিংহাসনে আসীন, ২০১৯-এর পর লোকসভা ও রাজ্যসভা উভয় কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা, এখনও যদি আমাদের সংখ্যালঘুকে তোয়াজ করে চলতে হয়, আজও যদি আমরা মিনমিন করি, হাতে অস্ত্র তুলে নিতে না পারি, হিন্দুরাষ্ট্র নির্মাণের পথে নির্ভয়ে এগোতে না করতে না পারি, তাহলে আমাদের সরযূ নদীর জলে ডুবে মরা উচিত!

সনাতন ভারত নির্মাণের কাজে কেন্দ্র সরকারও পিছিয়ে নেই। ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি, এনআরসি-সিএএ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সত্যের পথে টেনে এনে রামজন্মভূমি পুনর্নির্মাণের ঐতিহাসিক রায় বা বাবরি মসজিদ ধ্বংসে অভিযুক্ত বিজেপি নেতাদের সসম্মান মুক্তি আদায়— এসব নানা যুগান্তকারী পদক্ষেপ তো ছিলই, কিন্তু প্রতিটি হিন্দুর ভাবনায় হিন্দুত্বকে প্রতিষ্ঠাই করাই যে মূল কাজ— সরকার এটা বুঝেছেন। আমরা দেখেছি, সেই লক্ষ্যেই ২০১৯-এ ক্ষমতায় দ্বিতীয়বার ফিরে আসার পরে জাতীয় কামধেনু আয়োগ গঠন করেছিল সরকার। আর আজ সেই আনন্দের সময় যখন আগামী ২৫শে ফেব্রুয়ারি সর্বভারতীয় স্তরে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রথম গো-বিজ্ঞান পরীক্ষা আয়োজন করেছেন কামধেনু আয়োগ। হিন্দু ছেলেমেয়েরা গোরুর গুণাগুণ সম্বন্ধে জানবে, গাভীকে মাতা জ্ঞানে পুজো করবে, গোহত্যা যে কত বড় পাপ তা জানবে, কে বলতে পারে গো-বিজ্ঞানে আমাদের দেশ একদিন নোবেলও পেয়ে যেতে পারে, তবেই তো হিন্দু ভারতের দিকে আরেকধাপ এগোনো যাবে। তাই না?

যাই হোক, উত্তরপ্রদেশে ফিরি। শুধু কথার কথা নয়, যোগীজির সরকার মুখে যা বলছে, কাজেও তা করে দেখাচ্ছে। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ লাভ-জিহাদ বিরোধী আইন। বলপূর্বক ধর্মান্তর হোক বা না হোক, হিন্দু মেয়েটি নিজের ইচ্ছেতে বিয়ে করুক না কেন, সে বিয়ে আমরা হতে দেব না। একজন হিন্দু মেয়ে হিন্দু সমাজের বাইরের কাউকে ভালোবাসবেই বা কেন? হিন্দু সমাজে কি ভালো ছেলে নেই? স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন— একজন হিন্দুও যদি ধর্মত্যাগ করে, তাহলে হিন্দু সমাজে একজন লোক কমে যায় তাই-ই নয়, হিন্দুদের একজন শত্রুবৃদ্ধি ঘটে। এমন একজন বিরাট মনীষীর কথা মেনে চলব নাকি কোথাকার কোন বিদেশ থেকে আমদানি করা অকেজো রক্তশূন্য সেকুলার ধ্যানধারণাকে সম্মান করব? মেয়েরা আমাদের সামাজিক সম্পত্তি। আমরা উত্তরপ্রদেশের জেলায় জেলায় গ্রামে গ্রামে জালের মতো ছডিয়ে দিয়েছি অ্যান্টি-লাভ জেহাদ স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী। প্রাণ থাকতে আর্যাবর্তের বুকে আর কোনও আন্তঃধর্ম বিয়ে হতে দেব না আমরা। হিন্দু ভাইয়েরা বেঁচে থাকতে আর কোনও হিন্দু বোনকে ঠকিয়ে, ফুঁসলিয়ে কেড়ে নিতে পারবে না কোনও বরাহনন্দন। ২০১৪-র পর থেকে এবং বিশেষ করে ২০১৭-এর যোগীজি ক্ষমতায় আসার পর আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল এবং তাদের শাখাসংগঠন ছাড়াও নানা অনামা ছোট ছোট হিন্দুত্ববাদী দল উত্তরপ্রদেশে দারুণ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। লাভ জিহাদ আটকানোর পাশাপাশি এই সব দলের উদ্দেশ্য মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, গোহত্যা বন্ধ করা, এবং কাশী ও মথুরা ধীরে ধীরে মসজিদশূন্য করে তোলা। এমনই এক দল রাষ্ট্রীয় যুবা বাহিনী। এদের মূল উদ্দেশ্য গরুকে জাতীয় পশুর মর্যাদার দেওয়ার জন্য লাগাতার আন্দোলন করে যাওয়া এবং অবসর সময়ে মুসলিমদের ভয়ে রাখা। বাহিনীর জাতীয় সভাপতি ও আমাদের সহযোদ্ধা কেডি শর্মা জানাচ্ছেন শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, ভারতের ২৪টি রাজ্যেই তারা নিজেদের দপ্তর খুলেছেন, কর্মী নিয়োগ করছেন এবং এমন দিন শীঘ্রই আসবে যেদিন তারা এই দেশে একটিও আন্তঃধর্ম বিবাহ হতে দেবেন না। এই ধরনের শপথের কথা শুনলে একজন হিন্দু হিসেবে গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে। তাই না?এছাড়াও অন্য কয়েকটি দলের নাম করাই যায়। যেমন, হিন্দু আর্মি যারা মথুরায় কৃষ্ণ মন্দিরের লাগোয়া শাহি ইদগাহ মসজিদ সরিয়ে দেওয়ার জন্য জোরদার আন্দোলন চালাচ্ছেন। ২০২০ সেপ্টেম্বরে এদের দলের বাইশজনকে আইন হাতে নেওয়ার ‘অপরাধে’ গ্রেফতারও করা হয়েছিল, পরে অবশ্য পরিস্থিতি ঠান্ডা হলেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি দক্ষিণ দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক গণ্ডগোলের সময় হিন্দু আর্মির একটা ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। সেই ভিডিওয়ে হিন্দু আর্মির নেতা মনীশ যাদব বলছিলেন, মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য দিল্লি তাদের হাতে ছেড়ে দিলে গোটা দিল্লিকে তারা ইসলামশূন্য করে দিতে পারেন। এই না হলে বাঘের বাচ্চা!

এমনই আরেকটি নিঃস্বার্থ সমাজসেবী দল ‘হিন্দু যুবা বাহিনী’। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ স্বয়ং ২০০২ সালে এই দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই দলের কর্মসূচিগুলি হল লাভ-জিহাদ প্রতিরোধ করা, বেয়াদপ মুসলিমদের উচিত শিক্ষা দেওয়া, দলিত ও মুসলিমদের হিন্দুধর্মে ‘ঘর ওয়াপসি’ ঘটানো এবং রাজ্যের প্রতিটি হিন্দুর দুঃখদুর্দশার অবসান ঘটানোর চেষ্টা করা। এক হিন্দুর দুঃখে এইভাবে আরেক হিন্দুর কান্না, এ দেশে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা না হলে কোনওদিন কি সম্ভব হত?

পার্শ্ববর্তী বিজেপি-শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশেও রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা হতে বেশি দেরি নেই। একটা-দুটো উদাহরণই যথেষ্ট। রামমন্দিরের জন্য সারা রাজ্যে ঘুরে ঘুরে অর্থসংগ্রহ করছিল আরএসএস ও তার সহোদর সংগঠনগুলি। এমন এক মহান কাজের অংশ হতে পেরে স্বভাবতই উজ্জীবিত ছিল ভারতীয় যুবা মোর্চা, উজ্জয়িনীতে মুসলিম অধ্যুষিত বেগম বাগের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় মসজিদের সামনে নরম-গরমে কিছু স্লোগান দেয়। চুপচাপ শুনে নিয়ে ভদ্রতা করে মিছিলটাকে ছেড়ে দিলে কোনও সমস্যাই হত না। সংখ্যাগুরুর দেশে সংখ্যালঘুকে দেশের স্বার্থে নিজের স্বার্থে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। কিন্তু ‘ওদের’ কাছ থেকে সেই ভব্যতা, বিচক্ষণতা আশা করা যায় না৷ ফলে যা হওয়ার তাই হল। ঢিল উড়ে আসে। পরদিন উজ্জয়িনীর কালেক্টর আশিস সিংহ মসজিদের পেছনে জনৈক রশিদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার আদেশ দেন। তদন্ত প্রমাণ আইন বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার প্রয়োজন নেই, রামরাজ্যে সুবিচার ও শাস্তি— দুটোই হাতে গরম। মধ্যপ্রদেশের গৃহমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন— পাত্থর যাহা সে আয়েঙ্গে, ওহি সে তো নিকালে জায়েঙ্গে। রামরাজ্যের নিবেদিতপ্রাণ পদাতিক সেনা এইভাবে গড়ে তুলতে হবে সারা দেশে। আশীষ-নরোত্তমের মতো একনিষ্ঠ রামভক্ত দলে, প্রশাসনে, আমলাতন্ত্রে থাকলে দেশের মুসলিমদের টাইট দেওয়া কয়েক মুহূর্তের কাজ।

গোটা মধ্যপ্রদেশ জুড়ে গত তিনচার মাসে একাধিক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বলা ভালো, ঘটানো হয়েছে। এই সংঘর্ষ ও রক্তপাত আবশ্যিক। ঠিক যেমনটি গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন৷ বিধর্মীদের রক্তে স্নান না করলে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আর্যাবর্ত পথ দেখাচ্ছে আগামী দিনের হিন্দু ভারতের। যাদের পুণ্যভূমি ভারতবর্ষ নয়, যারা আখেরাতের জন্য পশ্চিমে মক্কার দিকে মুখ করে বসে থাকেন, এই দেশ তাদের নয়, কোনওদিন ছিল না, ভবিষ্যতেও হবে না। বিধর্মীকে এদেশে থাকতে হলে মুখ বুজে মাথা নিচু করে থাকতে হবে। তাদের ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখতে হবে। ইতিহাসের ভুল শোধরানোর সময় এসেছে। বাবরি মসজিদ ভেঙে রামমন্দির গড়ে তারই শুরুয়াত। আমাদের হিট লিস্ট তৈরি আছে— প্রথমে অবাধ্য মুসলিম, অবাধ্য দলিত, তারপর লিবারেল, সেকুলার ও কমিউনিস্ট, ছোট জামাকাপড় পরা মেয়েরা, সবশেষে দেশের সংবিধান। ধীরে ধীরে ঠান্ডা মাথায় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। হিন্দু হৃদয় সম্রাট যতদিন আছেন, চিন্তা কী? দরকারে ভোটব্যবস্থা বাতিল করে একদলীয় শাসন কার্যকর করা যেতে পারে। ভোট দিতে গিয়ে মানুষ যদি বারবার ভুল করে, সেই ভুল তাদের করতে দেওয়া যায় না। তাছাড়া এত পয়সাকড়ি খরচ করে বারবার ভোট করারই বা কি দরকার? গণতন্ত্রের চেয়ে যে একনায়কতন্ত্র ভালো, তা আমাদের আদর্শ ফুয়েরার হিটলার দেখিয়ে গেছেন। আর দেশে গণতন্ত্র রাখতেই হবে এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে? অযোধ্যায় শ্রীরামের রাজত্বে গণতন্ত্র শব্দটা কেউ কখনও শুনেছিল নাকি? লোকে কি সেইসময় কম সুখে ছিল? সময় এসেছে, আমরা পেছনের দিকে হেঁটে যেতে চাই। জেনে রাখুন, রামরাজ্যের জন্য সবকিছু পরিত্যাগ করা যায়, কিন্তু কোনও কিছুর জন্যই রামরাজ্যকে পরিত্যাগ করা যায় না।