Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

কলকাতা, নয়… — ৬ষ্ঠ পর্ব

অশোককুমার মুখোপাধ্যায়

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

ছেঁড়া-ছেঁড়া ছবি

পুজোর ছুটিতে কানপুরে যাওয়া হত। দাদুর বাড়ি। সকালে স্কট লেন আমহার্স্ট স্ট্রিটের মোড় থেকে একটা ঘোড়ার গাড়ি ডেকে নেওয়া। ফিটন বা ব্রুআম নয়, কেরাঞ্চি গাড়ি— জানালা ফোটানো একটি বড় বাক্সকে টেনে নিয়ে চলেছে চোখে ঠুলি আঁটা দুটি বাধ্য ঘোড়া। ইচ্ছে করলে কেতা করে বক্স ক্যারেজও বলা যেতে পারে একে, তবে স্টেট ক্যারেজ নয়, ফিটন তো নয়ই। হাওড়া ইস্টিশনে পৌঁছে বাক্স বিছানা নামিয়েই ছুটতে হবে প্ল্যাটফর্মে, তুফান মেল (আসলে তুফান এক্সপ্রেস) গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে ফোঁস-ফোঁস করছে— এত দেরি কেন? উঠে পড়, উঠে পড়। হলুদ কাঠের বেঞ্চির ওপর সতরঞ্চি বিছিয়ে বসতে-না-বসতেই ট্রেন ছাড়বার ভোঁ। কয়েক মিনিটের মধ্যেই নিঃশব্দে চলতে শুরু করেছে ট্রেন, বাবা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে, ট্রেনের ভেতর থেকে আমরাও— আমি আর ভাই। মা হাত নাড়ত না কখনও, আমাদের নাড়াতে বলত।

জানালার পাশে বসলেই শোনা যাবে ট্রেন চলছে যাচ্ছি-যাব, যাচ্ছি-যাব বলতে-বলতে, চুল ভরে যাবে কয়লার গুঁড়োতে, তবু বসতেই হবে। বাইরের ধানক্ষেত, নদী-নালা-খালবিল, কাছেদূরের কুঁড়েঘর, মাটির বাড়ি যদি না দেখা হয়, তাহলে ট্রেনযাত্রায় কী আর পাওয়া গেল! ওই যে জানালা থেকে একটু দূরের রাস্তাটা গড়াতে-গড়াতে বড়-বড় গাছের আড়ালে একবার চলে গিয়েই আবার উঁকি দিচ্ছে, আবার লুকোচ্ছে, এই চোর-পুলিশ খেলা কি আর কোথাও খেলতে পাবে নাকি? চোখের মধ্যে কয়লা গুঁড়ো ঢুকে গেলে, কীভাবে চোখের পাতা উল্টে তা বের করতে হয়, শিখিয়ে দিয়েছিল মা। ডাক্তার রাধারমণ গাঙ্গুলির মেয়ে তো, এইসব কারিকুরি ভালো জানত। বর্ধমান পেরোলেই খিদে পেতে শুরু করবে। আসানসোল পৌঁছোবার আগেই লুচি আলুর ছেঁচকি শেষ। ট্রেনে চাপলেই খিদে বেড়ে যায় যে! এইবার কুঁজো থেকে জল গড়িয়ে ঢোক-ঢোক খাও। সাবধানে, বিষম না লাগে যেন। ট্রেনে মাটির কুঁজো নিয়েই ওঠা হত, কাঠের ফ্রেমে বন্দি জলভরা মাটির কুঁজো। স্টেশনে নেমে কম্বল জড়ানো ওয়াটার বটলে জল ভরার রেওয়াজ শুরু হবে এর কিছু পরে। ওয়াটার বটলের মধ্যেই তো ‘পানীয় জল’, ‘পিনে-কা-পানি’ লেখা কল থেকে জল ভরে নিতাম আমরা, তেমন সাঙ্ঘাতিক কিছু পেট খারাপ হয়নি কখনও। তারপরে কী করে জলের গুণমান এত খারাপ হয়ে গেল যে, বোতল-বন্দি কোম্পানির মার্কা-মারা জলের চাহিদা এমত বাড়ে? কুঁজোর মতো প্রাইমাস স্টোভ নিয়েও উঠতেন কোনও গোছানো যাত্রীদল— মাঝে-মাঝে চা খেতে হবে যে! মধ্যবিত্ত রান্নার আগুনের তখন চারটি উপায়— মাটির উনুন, ইকমিক কুকার, প্রাইমাস স্টোভ আর জনতা স্টোভ। প্রথম দুটি ট্রেনে তোলা বাড়াবাড়ি তাই পরের দুটির ব্যবহার। কিন্তু এ যখনকার কথা সেই ১৯৬০-৬১-তে জনতা স্টোভের ব্যবহার শুরু হয়নি, প্রাইমাস স্টোভেই ট্রেন যাত্রার চায়ের জোগান সামলান বাড়ির গিন্নি।

যখনই দেখা যেত ডানদিকের জানালায় টিলা, টিলাগুলির মাথায় শেষ বিকেলের কমলা আলো বিলি কাটছে, ছোট-ছোট গাছগুলি বুকের মধ্যে জমিয়ে রাখতে চাইছে  ম্রিয়মাণ উত্তাপ, স্টেশনের নামফলক না পড়েও তুমি বলে দিতে পারো, এর নাম ঝাঁঝা। চারদিক নিস্তব্ধ, টিয়াপাখির ঝাঁক ঘরে ফিরছে, আলো কমছে, ওই স্টেশনে দাঁড়িয়েই সন্ধ্যা নামত। মনে হয়, সন্ধ্যাকে সম্মান জানাতেই স্টেশনে দাঁড়ানো, কারণ যাত্রী ওঠা-নামার কোনও চিহ্ন তো চোখে পড়ে না। ঝাঁঝার মতো আরও দুয়েকটি স্টেশন স্বপ্নের মত— একটি মোগলসরাই। ওইখানেই সেই নিশিডাকের মতো ব্যারিটোন আওয়াজ শোনা যায়— চায়ে গরম, গরম চায়। মাটির ভাঁড়ের সেই চায়ের স্বাদে আমাদের বালকবেলা। ভাঁড়ের গন্ধ আর চায়ের স্বাদ সব মিলে কী  স্ফূর্তি! উলটোদিকের বেঞ্চিতে যিনি বসে, ট্রেনেই আলাপ, সেই কাকু ‘ইন্ডিয়ান ব্র্যাড শ’-তে দেওয়া সময় আর নিজের ঘড়ি মিলিয়ে কাকিমাকে বললেন, আধঘন্টা লেট চলছে। দূরের জানালার ধারে বসা কোনও জেঠু নিজের মনেই বলে উঠলেন, তুফান তো! মেকআপ করে নেবে। আর এক স্টেশন এলাহাবাদ। সকালে আসতেন তিনি। পেয়ারাকে যে হিন্দিতে আমরুদ বলে আর চিনেবাদামকে মোমফালি, তা তো ওই স্টেশনের হকারদের থেকেই শেখা। এলাহাবাদ এলে ব্র্যাড শ কাকু বলবেন, আরিঃ মেক আপ করে নিয়েছে। তাহলে নড়েচড়ে বসতে হবে, কানপুর আর বেশি দূরে নয়। কিছুটা গড়িমসি করে নিয়েই বাক্স-বিছানা-বেডিং বাঁধতে হবে। দু-দিকের খোপে বালিশ আর টুকিটাকি চালান করে দিয়ে সুন্দর করে বেডিং গুছিয়ে, শক্ত করে বেল্ট আটকানো একটা শিল্প। যারা দেখেনি, তারা যে কী হারাইয়াছে! আরে মির্জাপুর পেরিয়ে গেল যে, চলো চলো জুতো পরে নাও। বেঞ্চির তলায় রাখা ফ্লেক্স কোম্পানির জুতো পরে শক্ত করে ফিতে বেঁধে নিতে হবে, সাবধান জুতো না খুলে যায়। এক সাইজ বড় জুতো যে! কেন? এ মা তাও জানা নেই! অনেকদিন চালাতে হবে না?

কানপুর স্টেশনে, সেই ১৯৬০ সালে, যখন হেয়ার স্কুল, ক্লাস ওয়ান, দাদু দাঁড়িয়ে। সাদা ফুলহাতা শার্ট, ধুতি, মোজা-জুতো। গায়ে মেটে রঙের গরম চাদর। তার গায়ে ছোট্ট লেবেল, সেলাই করা। ইংরেজি অক্ষরের জ্ঞান থাকলেই পড়া যাবে, লাল ইমলি। দাদু সেই উল কারখানার চিফ মেডিক্যাল অফিসার। দাদুর সঙ্গে এক মাসতুতো দাদাও।

‘কোথায় এসেছ…’

দাদুর কথা শেষ না হতেই আমরা বলব, ‘কানপুর…’

‘গুড, ভেরি গুড’, বলেই অজিতদা কোলে তুলে নেবে। তুলে নিয়েই আবার নামিয়ে দেবে, ‘হাত ধরে আয়…’

স্টেশনের বাইরে এসে দাদু আর আমরা তিনজন উঠব টাঙ্গায়, ‘ম্যাকরবার্টস গঞ্জ…।’ অজিতদা যাবে সাইকেলে।

কানপুরে দাদুর বাড়িতে সকাল-বিকেল কাঁসার বাটিতে দুধ, রাত্তিরে মাগুর মাছের ঝোলে ভেসে গেছে বালকবেলার পুজোর ছুটি। রাঁধুনির নাম সীতারাম। হাতে মোটা করে ছাই মাখিয়ে এক-একটা মাগুর মাছ ধরেই মাটিতে আছাড়, জ্যান্ত মাগুর শান্ত। এরপর তাকে হিসেবমতো কাটা হবে। এক মহারাজও ছিলেন, যিনি পুজো করতেন আবার গোয়ালের তিনটি অবলা জীবকেও সামলাতেন। যদি বলি শীতের রাত্তিরে কানপুর বাড়ির মতো মাগুর মাছের ঝোল আর কোথাও পাওয়া যাবে না, একটি বর্ণও মিথ্যা লেগে নেই তাতে। যদি বলি এখনও ঠোঁটে দুধের সর লেগে, মনে হয়— কতটাই বা বাড়িয়ে বলা হল! একষট্টি সালে দাদু মারা যেতে আমাদের বাৎসরিক কানপুর যাত্রায় যতিচিহ্ন পড়ে গেল।

ক্লাস সিক্সে ওঠবার কিছু আগে থেকেই বাবার সঙ্গে বাজার-রেশন আনা করেছি।  ভারি বস্তু বাবার হাতে, আমি চিনি-র বাহক! কখনও ময়দা। সেভেনে ওঠবার পরে একাই রেশন আনা শিখে গেলাম। বড় পিসেমশাই, যিনি ইনকাম ট্যাক্স কমিশনার, বাবাকে বললেন, ‘এত বাচ্চাকে বাজারে পাঠিও না, খারাপ কথা শিখবে…।’ বাবা চুপ। মাথা নাড়ল শুধু। পরে আমায় বলল, শোন, খারাপ কথাও শোনা দরকার, না হলে বুঝবি কী করে কোনটা ভালো। তারপর ঠিক করতে হবে তোকেই কোন ভাষায় কথা বলবি, গালাগালে না ভদ্রভাষায়।

ডে-সেকশনে যাওয়ার পর, ক্লাস সিক্স নয়, সেভেন থেকে রেশন আনাটা আমারই কাজ। রেশন আনবার পরেও স্কুলে ঠিক সময়ে যাওয়া যেত। রেশনের লাইনে দাঁড়ালে বিশ্বরূপ দর্শন করা যায়। কলকাতা, রাজ্য, দেশ এবং বিশ্বের চাল-ডাল সংক্রান্ত নানান চমকপ্রদ খবরের চলমান অডিও-ভিস্যুয়াল প্রদর্শনী! কোনদিন রেশন আনতে এলে ভালো চাল পাবার সম্ভাবনা, কখন লাইনে দাঁড়ালে কতক্ষণে রেশন পাওয়া যাবে তার আন্দাজ অথবা যে গম ভাঙিয়ে আমরা আটার রুটি খাচ্ছি সেই পিএল ৪৮০-র গম নাকি ঘোড়ার খাদ্য এইসব কথা ওই লাইনেই শোনা। তাছাড়া কত যে সাঁট-ইশারা শেখা রেশন লাইনে! এক প্রবীণ পরামর্শদাতা বলেছিলেন, চালের বস্তার শেষদিকে কাঁকড় থাকে, অতএব যখন দেখছ চাল তলানির দিকে, পরেরজনকে আগে পাঠিয়ে দাও, নতুন বস্তা খুললে নিজের দান খেলো। বৈঠকখানার সেই রেশন লাইনে দেখা যাবে সিঁড়ির তলায় চার ফুট বাই চার ফুট জায়গায় একটা মানুষ কী অনায়াসে পরনের কাপড় কাচার পর সেই সাবান দিয়ে চান করে, গা মুছে, সবার চোখের সামনে নিজেকে কিছুটা গোপন রাখতে লাইনের দিকে পিঠ করে নতুন ধুতি পরে নেয়। যেদিন পিএল ৪৮০ গমবাহী জাহাজ কলকাতা বন্দরে ভিড়ল তার সাতদিনের মাথায় বসিরহাটে খাদ্য-মিছিলে গুলিতে নিহত নুরুল ইসলাম— এই খবরও এল রেশন লাইনে। সে কী উত্তেজনা! ওইখানেই কংগ্রেস-কমুনিস্ট লড়াইটা হতে যাচ্ছিল। বুঝতে পেরে, ক্যাশমেমো যে লিখত সেই নিরীহ-গম্ভীর দিলুদা হুট করে দোকানের জানলা-দরজা বন্ধ করে দিল। ওরে কী করলি, কেন করলি রে, দরজা খোল রে বাবা, না হলে আবার একদিন আসতে হবে…। রেশন পাওয়ার দায়, বড় দায়, তারপর আবার খুলল, সবাই স্বাভাবিক, গম্ভীর মুখে চাল-চিনি পরখ করতে-করতে থলিতে ভরা এবং তা দু-হাতে ঝুলিয়ে বাড়ি ফেরা। ঘরে ঢুকে যদি দেখো লোডশেডিং, তাহলে হাতপাখা নাড়িয়ে হাওয়া খেয়ে নাও, ঘাম শুকোতে বাধ্য। সে হাতপাখা সত্যিকারের বাতাস দেয়, প্লাস্টিক হাতপাখার মতো ভেজাল ব্যাপার তো নয়! যদি দেখা যায় স্টেটসম্যান পত্রিকা তক্তাপোশে শুয়ে আছে, টুক করে কয়েকটা পাতা উল্টেপাল্টে দেখে নিতে হবে, খবরের সঙ্গে একটু-আধটু ইংরেজি শিখে নেওয়া দরকার। খবরের প্রথম অনুচ্ছেদেই তার নাড়ির গতি বোঝা যায়। ওইটা পড়ে নিয়েই তার মোদ্দা কথাটা আবার নিজে-নিজে লিখতে হবে খাতায়। খাতাটা বাবার দেওয়া, আদেশটাও বাবার, অতএব করতেই হবে। অবিশ্যি এই সবই নিশ্চয় কোনও গরম কি শীতের ছুটির ঘটনা।

এক সকালে বাইরে ঘরের তক্তাপোশে বই খুলে বসেছি, বাবা স্টেটসম্যানে ডুবে, জানালার পাশে কালো অস্টিন গাড়ি থামল। সেদিন নিশ্চয় রোববার এবং রেশন-বাজার করার মতো বুদ্ধি গজায়নি তখনও, তবে ক্লাস সিক্স। সামনের সিট থেকে নামলেন যিনি, আস্তিন কনুই অবধি গোটানো, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। কড়া নাড়ার আওয়াজ। আমি ছুটে গিয়ে দরজা খুললাম। ওই গাড়ির ভদ্রলোকই! ওঁকে চিনি না, কিন্তু উনি যেন আমাকে চেনেন এমন মুখ করে হাসলেন। ঠোঁটটা অল্প ফাঁক, দাঁতের কয়েকটা দেখা যাচ্ছে। বলিষ্ঠ হাত, বোঝাই যাচ্ছে অনেকটা শক্তি আস্তিনে গুটিয়ে রেখেছেন। শরীর তাগড়া হলে কি হবে, চশমার কাঁচ বেজায় মোটা, ফলে চোখের সাইজ খুবই ছোট, যেন কোন দূরদেশ থেকে তাকিয়ে— ‘সেজদা আছেন…’

বাবাকে তো ওই নামেই ঘরে-বাইরের কাকুরা ডাকে। হ্যাঁ বলেই বাবার দিকে ফিরলাম। বাবা তখনও স্টেটসম্যানে নিবিষ্ট। ‘বাবা দেখ একজন ভদ্রলোক…’

বাবা ওঁকে দেখতে পেয়েই উঠে দাঁড়িয়ে, ‘আরে, আরে আসুন…।’

আবার পড়ার বইয়ে মাথা দেবার চেষ্টা করলাম। ভদ্রলোক আস্তেই কথা বলছেন, কিন্তু কী আশ্চর্য, ওঁর বলা প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি শব্দ কান দিয়ে ঢুকে মাথায় বসে যাচ্ছে। একবার ‘অকস্মাৎ’ উচ্চারণ করলেন। দন্ত্য ‘স’ আর ‘ম’ মিলে যে যুক্তাক্ষর তার মধ্যে যে কতক্ষণ জিভ থাকবে ‘স’-তে আর কতটা ‘ম’-তে তারও একটা হিসেব বোঝা গেল। উনি উচ্চারণ করবার পর ওই প্রথম মাথায় ঢুকল, আরে, ওই শব্দে তো একটা ‘ম’ আছে। অর্ধেক মাত্রায় হলেও, আছে। যতদিন বুঝিনি, ‘স’-এর মাথায় একটা চন্দ্রবিন্দু লাগিয়ে কাজ চলে গেছে, আশপাশের প্রায় সবাই এমনই উচ্চারণ করত। এমনই অমনোযোগী উচ্চারণে রাজাবাজার হয়ে যায় রাইয়াবাজার। শুনলাম উনি ‘র’-এর পরে নিখুঁত ‘জ’ উচ্চারণ করলেন। জিভে কোনও জড়তা নেই। নিশ্চয় দাঁত মাজবার সময় জিভ-ছোলা ব্যবহার করেন।

কথা শেষ হওয়ার পর ভদ্রলোক কবিতা বললেন। কবিতার দুটো-তিনটে জায়গা মনে আছে— মহাবীর্যবতী তুমি বীরভোগ্যা,/ বিপরীত তুমি ললিতে কঠোরে,/ মিশ্রিত তোমার প্রকৃতি পুরুষে নারীতে;…. তোমার ইতিহাসের আদিপর্বে দানবের প্রতাপ ছিল দুর্জয়–/সে পরুষ, সে বর্বর, সে মূঢ়।…

তখনই বোঝা যাচ্ছিল, ললিত আর কঠোরের দুটো আলাদা গলা, একইরকমভাবে দ্রুতলয়ে বলার মধ্যেও পুরুষ আর নারী এবং পরুষ আর বর্বর-এর দুটো আলাদা অনুভবও পৌঁছে যাচ্ছিল। কী করে যে যাচ্ছিল কে জানে!

উনি চলে যাওয়ার জন্য উঠলেন। দরজা বন্ধ করে এসে বাবা বলল, দেখেছিস কী স্পষ্ট উচ্চারণ! প্রত্যেকটি শব্দ মন দিয়ে অনুভব করে তারপরে বলছেন!… যার এমন উচ্চারণ তাদের ভালো বাংলায় কী বলে জানিস? মাথা নাড়লাম, জানি না। শিখে রাখ, তাদের বলে অক্ষরব্যক্তি।

–কী নাম ওঁর? জিজ্ঞেস করলাম।
–শম্ভু মিত্র।

 

(ক্রমশ)