Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

বিকল্প— তোমার হাত ধরে

মৌলিনাথ বিশ্বাস

 



সম্পাদক, কালকথা। বাংলা লিটল ম্যাগাজিন ফোরামের পক্ষ থেকে

 

 

 

১৮১৮ সালে ক্লার্ক মার্শম্যানের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘দিগদর্শন’-কে যদি বাংলা ভাষার প্রথম সাময়িকপত্র হিসেবে মেনে নিই, তাহলে বাংলা সাময়িকপত্রের বয়স দুশো বছর অতিক্রম করেছে। তারপর গঙ্গা দিয়ে বহে গিয়েছে অনেক জল। সাময়িকপত্র ক্রমে ক্রমে একটা নতুন শব্দের জন্ম দিয়েছে— লিটল ম্যাগাজিন। এর উৎস এবং চারিত্র্য নিয়ে অনেক তত্ত্ব রয়েছে, গবেষণা হয়েছে, হয়ে চলেছে। গত কয়েক বছরে আমরাও ছোট পরিসরে (আমরা তো ছোটই) বিভিন্ন লেখায় আলোচনায় সেইসব কথা বলেছি অনেকবার। আবারও বলব। আপাতত প্রসঙ্গে আসি।

চার বছর আগে যখন মেলা যখন দু ভাগে ভাগ করে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, আমরা কিছু বাস্তব সমস্যার প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্মারকলিপি জমা দিই। তারপর অদ্ভুত কারণ দেখিয়ে মেলা ওকাকুরায় স্থানান্তরিত হয়। আমরা আবারও আবেদন/প্রতিবাদ করি। স্মারকলিপি জমা দিই। অহং যখন প্রধান, তখন প্রতিষ্ঠান আর কবেই বা যুক্তির কথায় কান দেয়!

আমাদের বলা হয়েছিল, নন্দনে ২০০র বেশি পত্রিকাকে স্থান দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা বলেছিলাম, সম্ভব। এবার ২০০র অনেক বেশি পত্রিকা নন্দন চত্বরেই স্থান পেয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য পূর্বতন সরকারের আমলে নন্দন চত্বরেই ৪০০রও অধিক পত্রিকা অংশগ্রহণ করত। তা কীভাবে সম্ভবপর ছিল!

আমাদের বন্ধুরা বলেছিলেন, একটা বিকল্প ব্যবস্থা একটা বিকল্প পরিসর তৈরি করা যায় কিনা লিটল ম্যাগাজিনের মেলা নিয়ে। আমরা কয়েকজন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। তিন বছর মেলা করেছি। আমাদের সহযাত্রী বন্ধুদের কেউ কেউ ভারতসভায় এসে মৃদুভাবে বলেছিলেন, ১১-১৫ জানুয়ারি বাদ দিলেই ভাল হত। ‘কবিয়াল’ সম্পাদক আমাদের বন্ধু মিতুল দত্ত সাক্ষী আছে এই কথার। তারপর সম্পাদক বন্ধুরাই বলেন স্থান ও দিন বদলাতে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে পরিবর্তিত ১১ থেকে ১৫জানুয়ারি ব্যতীত অন্য দিনেই মেলা সংঘটিত করি। প্রতিবাদ জারি রাখলেও আলোচনার পথ খোলা রেখেই আমরা তা করি। যারা ওকাকুরার মেলার অংশগ্রহণকারী সেই সকল পত্রিকা এবং কবিতা বা গল্প বা আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদেরও আমরা পরিত্যাগ করিনি। বিকল্প পরিসর গড়ে তোলাই যদি আমাদের কাজ হয়,তবে সে মেলায় কেন ‘ওরা-আমরা’ বিভাজন করবো? মেলা তো সকলের মিলনক্ষেত্র। সবার জন্যই দ্বার উন্মুক্ত ছিল। ফলত লিটল ম্যাগাজিন ফ্র‍্যাটারনিটির সকলকে নিয়েই, সবার সহযোগিতায় সফলভাবেই মেলা করি।

তারপর তো মহামারি!

মেলা ফিরে এল পূর্বের স্থানে। আমরা আনন্দিত। এটাই ছিল আমাদের প্রথম দাবি। স্থান পরিবর্তনের পিছনে কর্তৃপক্ষের কোনও দুরভিসন্ধি ছিল, আমরা এমন তখনও ভাবিনি, আজও ভাবি না। কিন্তু তাঁদের ভুল হয়েছিল। হতেই পারে। ভুল সংশোধন করলেন— ভাল। আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। কিং ক্যান ডু নো রং— এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে এটা যদি তাঁরা প্রথমেই বুঝতেন, বিশেষত আমরা কেউ কেউ যখন তাঁদের বুঝিয়েছিলাম, তাহলে এত কথার জন্মই হত না।

এইবারের মেলা হতে পারত প্রকৃত মিলনমেলা। কিন্তু আবার ভুল হল। এবারের মেলায় কোথাও কি আমরা-ওরা বিভাজন ঘটিয়ে তোলা হল না? আমাদের মতো আকার আয়তনে ছোটদের কথা বাদ দিলাম। কিন্তু সন্দীপ দত্ত? তিনিও প্রাপ্য সম্মান পাবেন না?! হায়!

সবিনয়ে জানাই, আকার আয়তনে ছোট হলেও, আমাদের স্বপ্ন কিন্তু ক্ষুদ্র সঙ্কীর্ণতায় আচ্ছন্ন নয়। আমাদের মেরুদণ্ড কেবল শারীরবৃত্তিয় অভিজ্ঞান নয়, তা আমাদের স্পর্ধায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার, লিটল ম্যাগাজিনের যা আবশ্যক চরিত্র হওয়া উচিত।

আমাদের প্রতিবাদ জারি রইল। অপেক্ষায় রইলাম সুদিনের।

আমরা আশাবাদী, আবার ভুল সংশোধিত হবে।

এবং প্রস্তুতিতে রইলাম, যত শীঘ্র সম্ভব আমাদের বিকল্প পরিসরের মেলা সংঘটিত করার।