Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

কে বলেছে, মিডিয়ায় কাউন্টার ন্যারেটিভ নেই?

স্যমন্তক ঘোষ

 


সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক

 

 

 

অনুষ্টুপ আর মনদীপের সঙ্গে কথা বলাটা, এতদিনে, প্রায় অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। সিংঘু এবং গাজিপুর সীমানার প্রত্যেক মুহূর্তের খবর ওদের কাছে থাকে। গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে সিংঘু-গাজিপুর সীমানায় খবর করতে গিয়ে দেখেছি, ওদের এক-একটা ছবি, এক-একটা লেখা, এক-একটা লাইভ এই সময়ের সবচেয়ে জরুরি দলিল।

অনুষ্টুপ জীবনে এই প্রথমবার রিপোর্টিং করছে। আইটি-র লোভনীয় চাকরি মার্জিনে সরিয়ে রেখে গত দু’মাস ধরে বেলাগাম পড়ে আছে সিংঘু সীমানায়। ওর সূত্রেই সিংঘুর একাধিক মানুষের সঙ্গে পরিচয়। ওর সূত্রেই আন্দোলনের ঘর এবং বাহিরের গল্পের সঙ্গে প্রথম আলাপ।

মনদীপও তাই। কথা যে খুব দারুণ বলে, তেমন নয়। তবে স্পষ্টবক্তা। যে কোনও ঘটনার ভিতরে ঢুকে পড়তে পারে। আর মনদীপের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং কাজ হল, প্রায় প্রতি রাতেই দেশের মূলস্রোতের গণমাধ্যমগুলির কৃষক আন্দোলন-বিষয়ক খবরের পোস্টমর্টেম। ল্যাপটপ সামনে রেখে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কোন সংবাদমাধ্যম কোথায়, কীভাবে তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়েছে। কোন ছবি কীভাবে ফোটোশপ করে ছাপা হয়েছে। কোন ঘটনায় কী ধারাভাষ্য দিয়েছেন স্পটে দাঁড়ানো রিপোর্টার। সে কারণেই মনদীপ রাষ্ট্রের কাছে থ্রেট। ওকে গ্রেফতার হতে হয়। ও স্বাধীন রিপোর্টার— ওর পিছনে কোনও কর্তৃপক্ষ নেই, যে ওকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনবে। সম্ভবত সে-কারণেই, ওর জামিন পাওয়ার খবরে, খুব, খুব স্বস্তি বোধ হচ্ছে।

কিন্তু মনদীপ এ লেখার বিষয় নয়। বিষয়, একবার নজর ফিরিয়ে দেখে নেওয়া, গত একটা বছরের দেশের বিভিন্ন বড় হেডলাইন খবরকে মিডিয়া কীভাবে দেখেছে, পেশ করেছে। আপনাদের মনে থাকবে, ২০২০ শুরু হয়েছিল মাঝরাতে শাহিনবাগে সমবেত গানের মধ্য দিয়ে। সে গান লড়াইয়ের নয়, বেঁচে থাকার। ছোট-ছোট গোলে কয়লার তাপ নিতে থাকা প্রতিটি শিশুর গালে তেরঙা। হাতে ঝান্ডা। শাহিনবাগের দিদিমারা প্রতি রাতে খেয়ে যেতে বলতেন। অতিথিকে না-খাইয়ে বাড়ি যেতে দেওয়া ভারতীয় সংস্কৃতি নয়। এখনও স্পষ্ট মনে আছে মায়ের বয়সি সেই জেঠিমার কথা। গালে হাত দিয়ে সেমাই তুলে দিয়েছিলেন মুখে।

অথচ সেই শাহিনবাগ, ভারতীয় মেনস্ট্রিম মিডিয়ার মতে, ভারতীয় আন্দোলনই ছিল না। মুসলিমদের আন্দোলন ছিল। নব্য ভারত, মুসলিম এবং ভারতকে ভাগ করতে জানে। মনে আছে, যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে, দেশের তিন বিখ্যাত সম্পাদক একসঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। ঠিক সাক্ষাৎকার নয়, র‍্যাপিড ফায়ারের মতো। প্রণয় রায় সেখানে আদিত্যনাথকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি প্রথমে ভারতীয়, না কি হিন্দু। উত্তরে যোগী বলেছিলেন, হিন্দু এবং ভারত সমার্থক।

সেই ইতিহাস সমানে চলছে। দিনের পর দিন ভারতীয় মিডিয়ার একটি বড় অংশ এবং সরকারপক্ষ শাহিনবাগের আন্দোলনকে মুসলিমদের আন্দোলন বলে চালিয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, সময়-সময় তাতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে সন্ত্রাসবাদী তকমা। কারণ, ইসলাম আর সন্ত্রাসকেও তো এই যুগের ন্যারেটিভ সাংবাদিকতার মূলস্রোতে মান্যতা দিয়ে দিয়েছে! সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময় জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দিল্লি পুলিশের তাণ্ডব নিশ্চয় কেউ ভোলেননি! ভোলেননি? ঘটনা চলাকালীন মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমগুলির ধারাভাষ্য! পরদিন অধিকাংশ খবরের কাগজের হেডলাইন! শুনলে, দেখলে, পড়লে মনে হবে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবাদের কারখানা ধ্বংস করে আর একটা অ্যাবোটাবাদ জয় করেছেন দেশের বীর সেনারা।

মানুন বা না মানুন, এটাই, এটাই এই মুহূর্তে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক এবং একমাত্র ন্যারেটিভ। আসলে সংবাদমাধ্যমের নয়, এটাই ভারতীয় সমাজ-রাজনীতির চলতি ন্যারেটিভ। মিডিয়া কেবলমাত্র তা অনুসরণ করছে, আরও অসংখ্য ধৃতরাষ্ট্রের মতো।

দিল্লির বুকে শাহিনবাগের আন্দোলনকে যেভাবে দমানোর চেষ্টা হয়েছে, যেভাবে ছাত্রদের ওপর অত্যাচার চালানো হয়েছে, যেভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় ‘গোলি মারো…’ স্লোগান দিয়ে বেড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা, তাতে আগুন যে আরও বাড়বে, তা বোঝাই গিয়েছিল। ঘটেছিলও তা-ই। দিল্লি দাঙ্গা স্তব্ধ করে দিয়েছিল রাজধানীর ট্রাম্পেট। ট্রাম্পের সফরের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় আক্রমণ। সেই আক্রমণও আসলে শুরু হয়েছিল, পশ্চিম দিল্লির কিছু আন্দোলনকারী নারীকে তুলে দেওয়ার হুমকিকে কেন্দ্র করে।

পাঠক, এক দিন নয়, সে-সময় খবর করার জন্য দিনের পর দিন পশ্চিম দিল্লির গলিতে-গলিতে ঘুরে বেরিয়েছি। শ্মশানস্তব্ধ এক-একটি গলিতে মরা কুকুর, আর পোড়া বাড়ি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকতে দেখিনি। দেখেছি নির্দিষ্ট একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষকে বেছে-বেছে কীভাবে মারা হয়েছিল। কীভাবে গোটা ঘটনায় পুলিশ দাঙ্গাকারীদের কার্যত ‘সাহায্য’ করেছিল। মানি, এক হাতে তালি বাজে না। বাংলাদেশের এক বন্ধু বলেছিল, ওখানে দাঙ্গা হয় না, কারণ, যা হয়, সবটাই একতরফা। দিল্লির হিংসায় পালটা প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি, এমন বলা যায় না। কিন্তু তার আগে একতরফা মার, রেপ, আগুন, লুঠ— সবকিছুই হয়ে গিয়েছে।

সাংবাদিকতার শিক্ষানবিশি করার সময় অগ্রজ সহকর্মীদের কাছে একটি কথা বারবার শুনতাম। সাম্প্রদায়িক হানাহানির সময়ে সংবাদমাধ্যমের কিছু দায়িত্ব থাকে। হিংসা যাতে আর না-ছড়ায়, সে দিকে নজর রাখতে হয়। দিল্লি দাঙ্গার সময় দেখলাম, সময় বদলে গিয়েছে। কোন জনগোষ্ঠী কতটা হিংসাত্মক তার তাত্ত্বিক আলোচনা চলছে মূলস্রোতের গণমাধ্যমের সান্ধ্যকালীন আসরে। সঙ্গে, কার কত গলার জোর, তার প্রতিযোগিতা। চোখের সামনে দেখেছি, ওই সমস্ত চ্যানেলের রিপোর্টাররা গ্রাউন্ড জিরোর ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেননি। তাঁদের ঢুকতেও দেওয়া হয়নি। স্থানীয় মানুষ, মার খাওয়া মানুষ, সব হারানো মানুষ ওই রিপোর্টারদের বয়কট করেছিলেন। এলাকায় ঢুকতে দেননি। তাঁদের একটাই অভিযোগ ছিল, সত্য কথা তাঁরা বলবেন না। বরং বিষ ছড়াবেন। সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরি করবেন।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা বলে কি আদৌ কিছু হয়? হয় না সম্ভবত। একই ঘটনার নানা পাঠ নিতে পারেন সাংবাদিক। সমাজবিজ্ঞানের এটাই মজা। কিন্তু সমস্যা হয়, যখন বিশ্লেষণের মোহে মূল তথ্যগুলোকেই অস্বীকার করে যাওয়া হয়। দিল্লি দাঙ্গার আগের কয়েক মাসের পরিস্থিতি কী ছিল, দিনের পর দিন কীভাবে বারুদে সলতে পাকানো হয়েছে, সেই সমস্ত তথ্য ভুলে গিয়ে, যখন নির্দিষ্ট একটি বাড়ির ছাদ থেকে কী-কী ছোড়া হয়েছিল, সেটাই একমাত্র ন্যারেটিভ হয়ে যায়, তখন আর সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। চোখের সামনে দাঁড়িয়ে দেখেছি ঠিক সেই ঘটনাই।

এর কিছুদিনের মধ্যেই লাদাখে যুদ্ধ পরিস্থিতি কভার করতে গিয়ে দেখেছি, ঘটনাস্থল থেকে দুশো-আড়াইশো কিলোমিটার দূরে লে শহরে হোটেলের ছাদে চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে মূলস্রোতের সংবাদকর্মীরা লাইভ দিচ্ছেন। দাবি করছেন, তাঁরা গ্রাউন্ড জিরোয় দাঁড়িয়ে আছেন।

দিল্লি দাঙ্গা আর লাদাখের মধ্যবর্তী সময়ে আরও এক ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী থাকতে হয়েছে। হাজার-হাজার মাইল পাড়ি দেওয়া অভিবাসী শ্রমিকদের দেখেছে এই ভারত। শুনেছে তাদের হাহাকার। রাস্তায় পড়ে মরে গিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। সরকারের দেওয়া ট্রেন থেকে নেমেছে একের পর এক মৃতদেহ। দেখতে হয়েছে স্টেশনে মৃত মায়ের চাদর নিয়ে শিশুর খেলার দৃশ্য। এমন একটি দৃশ্য বিশাল গণ-আন্দোলনের জন্ম দিতে পারে। এমন হাজার-হাজার দৃশ্য জনগণের থেকে আড়াল করে রাখা হয়েছে দিনের পর দিন। যখন দেখানো হয়েছে, তখন বলা হয়েছে, কীভাবে ওই মানুষেরা লকডাউনের নিয়ম ভেঙে বেআইনি কাজ করছেন। খবর হয়েছে, কীভাবে উত্তরপ্রদেশে বাস পাঠিয়ে সঙ্কীর্ণ রাজনীতির খেলায় নেমেছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধি। খবর হয়েছে, বিহারের মহান মুখ্যমন্ত্রী কেমন আন্তরিকতার সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর রাসায়নিক স্প্রে করিয়েছেন। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের মারা যাওয়ারই কথা ছিল। এতই নাকি অসুস্থ ছিলেন তাঁরা।

কৃষক আন্দোলনে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে যত কম কথা বলা যায়, ততই ভাল। কয়েক মাস ধরে রাজধানী ঘিরে বসে আছেন কৃষকরা। মিডিয়ার কোনও হুঁশ নেই। তারা বরং ব্যস্ত ছিল কৃষকের চরিত্র নির্ধারণে। কীভাবে এই কৃষকদের খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে এক ব্র্যাকেটে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, মিডিয়ার একমাত্র অ্যাজেন্ডা থেকেছে সেটিই। বারবার প্রশ্ন উঠেছে, কেন কেবল একটি রাজ্যের কৃষকই এই আন্দোলনে সামিল? মিডিয়ার জানাই নেই, ভারতের কতগুলি রাজ্যের কৃষক ওই আন্দোলনে এসে যোগ দিয়েছেন। কতগুলি সংগঠন আন্দোলনে যুক্ত? নেই, সত্যি কারও জানা নেই। আজ পর্যন্ত একটি মূলস্রোতের মিডিয়া ঠিকমতো বলে উঠতে পারল না, আন্দোলনকারী কৃষকদের বিক্ষোভে সব মিলিয়ে কটি সংগঠন আছে।

ভারতের মূলস্রোতের অধিকাংশ মিডিয়া এখন যে কাজটি করছে, পৃথিবীর একনায়কতান্ত্রিক সরকার সাধারণত সেই কাজটি করে থাকে। তথ্য লোপাট করে যে কোনও ঘটনাকে সরকারবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী বলে দেগে দেওয়া। যে দেশ যত উন্নত, যে দেশের গণতন্ত্র যত বেশি শক্তিশালী, সে দেশের মিডিয়া বিরোধীপক্ষের কাজ করে থাকে। সরকারের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়াই তাদের মূল কাজ। ভারতে ঠিক তার উলটো ঘটনাটি ঘটছে। এখানে দিকে-দিকে গোয়েবলসের রেডিও বেজে চলছে ফাটা সানাইয়ের মতো। যে মুষ্টিমেয় অংশ তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছে, তাদের ওপরও আক্রমণ নেমে আসছে।

আর জনগণ? সোশ্যাল মিডিয়ার এই অতিতথ্যের যুগে জনগণ দিশেহারা। গণমাধ্যম যে সত্য বলে না, মানুষ তা বুঝে গিয়েছেন। কিন্তু সত্য তথ্য যে কী, তা-ও তাঁরা জানেন না। অর্ধসত্যের এক প্রকাণ্ড তথ্যভাণ্ডারকে আঁকড়ে ধরে জনগণ পিংপং বলের মতো ড্রপ খেয়ে চলেছে। অনুষ্টুপ কিংবা মনদীপরা তাঁদের কাছে পৌঁছতেও পারছেন না। একেবারেই পারছেন না, তা অবশ্য বিশ্বাস করি না। যত দিন যাচ্ছে, অনুষ্টুপ, মনদীপদের সংখ্যা বাড়ছে। সিংঘু সীমানায়, গাজিপুর সীমানায় এমন শয়ে শয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট সাংবাদিকদের দেখা যাচ্ছে। ইতিহাসের ডকুমেন্টেশনের কাজ করছেন তাঁরা।

গত এক বছরে আন্দোলনের উত্তাপ সবচেয়ে বেশি দেখতে পাচ্ছে উত্তর ভারত। বিশেষত হিন্দি বলয়। এখানে কমিউনিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যত দিন যাচ্ছে, যত বেশি কমিউনিটি আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে, তত বেশি কমিউনিটির মধ্য থেকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট সাংবাদিকরা বেরিয়ে আসছেন। শাহিনবাগের সময় যে জাঠ বন্ধু ইন্ডিপেন্ডেন্ট সাংবাদিকতাকে হেলায় উড়িয়ে দিত, সেই এখন মনদীপের কথা না-শুনে রাতে ঘুমোতে যায় না। যে শিখ বন্ধু হানি সিংকেই জীবনের লক্ষ্য মনে করত, সে এখন সিংঘু সীমানায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট সাংবাদিকদের তালিকা তৈরি করছে।

এসব দেখছি বলেই বিশ্বাস করি, মূলস্রোতের প্রোপাগান্ডার ন্যারেটিভের উলটো দিকে মিডিয়ার কাউন্টার ন্যারেটিভ ধীরে ধীরে শক্তি বাড়াচ্ছে। আজ না-হোক কাল, ওই কাউন্টার ন্যারেটিভই ইতিহাসে তথ্য হিসেবে মান্যতা পাবে। গোয়েবেল্‌স মিডিয়ার চিচিংফাঁক হতেও আর বেশি দেরি নেই।