শঙ্কর রায়
সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক
ভাবছ তুমি ট্যাঁকের জোরে কিনবে হাকিম উচ্চ ন্যায়ালয়।
অতই সোজা? ভয়ের কাছে নতি স্বীকার? কক্ষনো শিখিনি।
তৈরি হচ্ছি আমরা সবাই, গেরুয়া হঠাও, জয় হবে হবে জয়।
কিসান জনতা হাঁক দিয়েছে, দিচ্ছে শিক্ষা, সতর্ক অনীকিনী।
বিবেকী তাড়নায় কবিতা লেখার প্রয়াস। তা কবিতা হল কি হল না, সেটা গৌণ ব্যাপার। শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৬৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে উত্তাল খাদ্য আন্দোলনের সময় লিখেছিলেন,
‘কবির পদ্য লেখার সময় নয়
কবি এখন গেছেন লোকসমাজে
দেশ জুড়ে এক দারুণ বিপর্যয়
কবি গেছেন কাজে।’
দিল্লির সীমানায় শুধু নয়, সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশে প্রতিবাদে উচ্চকিত কিসান জনতা ও তাঁদের পাশে দাঁড়ানো বিবেকবান মানুষজনকে হেনস্তা করছে পুলিশ। হাজার হাজার প্রতিবাদীদের স্তব্ধ করতে না-পেরে অত্যাচারীরা মরিয়া। সংযুক্ত কিসান মোর্চা নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের কুশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, অবিলম্বে বিক্ষোভরত কৃষকদের হেনস্তা বন্ধ করা না-হলে সরকারের সঙ্গে একটি কথাও নয়। সরকারকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত, “খুব শীঘ্রই এই কৃষক আন্দোলন শেষ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। আন্দোলনকারীরা যেন আগামী অক্টোবর, নভেম্বর মাস পর্যন্ত বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। আমাদের স্লোগান একটিই। ‘কানুন ওয়াপসি নহি তো ঘর ওয়াপসি নহি’।”
এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত শহিদ হয়েছেন ১৬০ জনের বেশি কৃষক, যাঁদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই পাঞ্জাব-হরিয়ানাবাসী শিখ। কয়েকশত জেলবন্দি। তাঁরা ভয় কাকে বলে, শেখেননি। তাঁদের মূক ওষ্ঠে লেখা রবীন্দ্রনাথের পঙক্তিমালা—
এসেছে সে এক দিন
লক্ষ পরাণে শঙ্কা না জানে না রাখে কাহারো ঋণ
জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য
চিত্ত ভাবনাহীন।
টরন্টোবাসী শিখ কবি ও লেখিকা রুপি কাউর গত ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ওয়াশিংটন পোস্ট দৈনিকে একটি প্রবন্ধে (যার শিরোনাম, ‘হিস্ট্রি শোজ পাঞ্জাব হ্যাজ অলওয়েজ টেকন অন টাইর্যান্টস। মোদি ইজ নো ডিফারেন্ট’— ইতিহাসে দেখা গিয়েছে পাঞ্জাব সব সময় মুখোমুখি হয়েছে অত্যাচারীদের। মোদি ব্যতিক্রম নন) লিখেছেন:
The ultimatum is clear. Peace and justice for all minorities, or division and polarization? Democracy, or majoritarianism? Farmers, or Modi? Pick your side. I’ve chosen mine.
দিল্লির বুকে নির্ভয় কিসান সমাজের পদভারে শুধু কেঁপে ওঠেনি নরেন্দ্র মোদি সরকার, তার অনুরণন এক আন্তর্জাতিক মাত্রা পেয়েছে। একেবারে অন্য আখরে লেখা হচ্ছে নয়া ইতিহাস।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। দিশাহারা, অপদার্থ ও বাকতাল্লাবাজ এবং বিরামহীন মিথ্যাচারী বিজেপি সরকার, যা অতীতে কেউ দ্যাখেনি। দিল্লি সীমানায় কৃষকদের আন্দোলনস্থলে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ, রাস্তায় ব্যারিকেড, রাস্তার মাঝখানে ছোট ত্রিশূলের মতো কাঁটাতারের বেড়া, পেরেক, গজাল, এমনকী আস্ত রাস্তাই খুঁড়ে দেওয়া তার নিদর্শন।
আবার কংগ্রেস সাংসদ ডঃ শশী তারুর, সুপরিচিত টিভি সাংবাদিক রাজদীপ সরদেশাই, ন্যাশনাল হেরাল্ড দৈনিকের সিনিয়র কনসাল্টিং এডিটর মৃণাল পান্ডে, কোয়ামি আওয়াজ-এর সম্পাদক জাফর আগা, ক্যারাভান পত্রিকার সম্পাদক পরেশ নাথ প্রভৃতিদের বিরুদ্ধে নানা অছিলায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। এসব আসলে সকলের মুখবন্ধ করার অপপ্রয়াস। শুধু কৃষকদের বিরুদ্ধে নয়, সাংবাদিক, মোদি-জমানার মুখোশ-খোলা সাংসদদের বিরুদ্ধেও মোদি-অমিত শাহ্ যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু পুলিশরাষ্ট্রের দৌরাত্ম্যের কাছে তারুর, সরদেশাই, পান্ডে, আগা-রা মাথা নত করেননি। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
দিল্লি পুলিশ ৩০ জানুয়ারি কৃষকদের বিক্ষোভস্থল থেকে ফ্রিলান্স সাংবাদিক মনদিপ পুনিয়া ও সহ-সাংবাদিক ধর্মেন্দ্র সিংকে পেটাতে পেটাতে গ্রেফতার করে। দুদিন পর তিনি স্থানীয় আদালতে জামিন পেয়েছেন। ভয় দেখিয়ে যে সবাইকে দমানো যায় না, মোদি-শাহ সরকার তা শিখেও শিখছে না।
বিতর্কিত হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করার জন্য প্রায় ২৫০ জনের অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিয়ে আন্দোলন স্তব্ধ করতে চেয়েছিল এই ফাসিস্ত সরকার। সেই তালিকায় ছিলেন কিসান একতা মোর্চার নেতা ও সমাজকর্মী হংসরাজ মীনা, প্রাক্তন লোকসভা এমপি তথা সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, অভিনেতা সুশান্ত সিং এবং প্রসার ভারতীর সিইও শশী শেখর ইত্যাদি। তাঁরা স্বভাবতই সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের (পড়ুন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ) হুকুমে সরকারের ট্যুইটার হ্যান্ডল তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রকের আধিকারিকেরা ওই ২৫০টি অ্যাকাউন্ট ট্যুইটার কর্তৃপক্ষকে বন্ধ করতে বাধ্য করে। কিন্তু পরেরদিনই সেগুলি চালু করে দেয় মার্কিন সোশ্যাল মিডিয়া। এখন তো আর মোদিজির প্রভু ডোনাল্ড ট্রাম্প আর হোয়াইট হাউসের কর্তা নন। ২৫০টি ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট ‘নিষ্ক্রিয়’ করে দেওয়ার ঘটনায় কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা ট্যুইটারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, “মোদি সরকার বাক্স্বাধীনতা খর্ব করতে চাইছে, মনে হচ্ছে ফেসবুকের পর ট্যুইটারকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে সরকার। যাঁরা খোলা মনে বক্তব্য রাখেন, কৃষকদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেন, তাঁদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। এই ঘটনা ফ্যাসিবাদী বিজেপি সরকারের স্বৈরতন্ত্রের মুখোশ খুলে দিয়েছে।” প্রখ্যাত আইনজীবী তথা সমাজকর্মী প্রশান্ত ভূষণও ট্যুইটারে লিখেছেন, “হতাশাজনক! আইনি পদক্ষেপের জন্য কৃষক আন্দোলন নিয়ে ট্যুইট করা বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করে দিয়েছে ট্যুইটার ইন্ডিয়া। কাদের আইনি পদক্ষেপ? সরকার? নিশ্চয় কোনও আদালতের নয়। ট্যুইটার যদি সরকারের দাবির কাছে মাথা নত করে, তা হলে তাকে বাক্স্বাধীনতার জন্য স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম কী করে বলব?”
তিনটি কৃষকবিরোধী ও জাতীয় অর্থব্যবস্থাবিনাশী কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের আটকাতে মরিয়া ফ্যাসিবাদী পুলিস-প্রশাসন। কিন্তু কার্যত ব্যর্থ সরকার। যত নিপীড়নের মাত্রা বাড়াচ্ছে, তত প্রতিবাদে এককাট্টা কিসান জনতা। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘দিল্লির সীমানাগুলিতে জমায়েত বাড়াতে এবার একের পর এক কিসান মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করা হবে। যতদিন পর্যন্ত তিনটি কৃষি আইন বাতিল না-হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত সারা দেশেই কিসান মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন হবে।” তাঁরা জানিয়েছেন, ‘‘যেখানেই মিছিলকে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হতে হবে, তৎক্ষণাৎ সেখানেই ধরনা অবস্থানে বসে যাবেন কৃষকরা। পুলিশ পারলে বলপ্রয়োগ করুক।’’
দিল্লি-হরিয়ানার সিংঘু সীমানা-সংলগ্ন ৪৪ নং জাতীয় সড়কের একটি অংশ সম্পূর্ণ কেটে দিয়েছে পুলিশ। সেখানে নতুন করে সিমেন্টের ব্যারিকেড বসিয়ে দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। যাতে প্রতিবাদীরা দিল্লিতে ঢুকতে না-পারেন। আন্দোলনকারী কৃষকরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘‘অবিলম্বে সমস্ত জেলবন্দি চাষিদের মুক্তি দিক কেন্দ্রীয় সরকার। অন্যথায় কৃষক আন্দোলনে যুক্ত হবে নতুন অ্যাজেন্ডা। আরও তীব্র হবে আন্দোলন। পুলিসকে তা সামলাতে বেগ পেতে হবে।’’
একইসঙ্গে কৃষকদের সোচ্চার প্রতিশ্রুতি, ‘‘আমরা ব্যারিকেড ভাঙছি না। ২৬ জানুয়ারি ভাঙিনি। ভবিষ্যতেও ভাঙব না। কিন্তু কৃষকরা যদি ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চান, তা হলে শুধু পেরেক কেন, সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও সরকার তাঁদের আটকে রাখতে পারবে না।’’
এই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীন ও সৎ সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে এসেছে। সাংবাদিকদের সামনে এক ঐতিহাসিক অগ্নিপরীক্ষা। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, বস্তুত সাংবাদিকের স্বাধীনতা বলে কিছু নেই বলে মনে করতেন প্রসিদ্ধ সাংবাদিক ও মুখে মুখে ছড়া-লেখার অনন্য কবিয়াল অমিতাভ চৌধুরী (একদা আনন্দবাজার পত্রিকার বার্তা সম্পাদক)। অমিতদা আমাকে বলেছিলেন, “মালিক যা বলবেন, তা পালন করতেই হবে, সাংবাদিকের স্বাধীনতার অস্তিত্ব নেই।” আমি আমার সাংবাদিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এ কথা কত সত্য।
সাংবাদিকদের একটা বড় অংশকে সাংবাদিকের স্বাধীনতার আদর্শকে অতি উচ্চাশার কাছে বন্ধক দিতে দেখেছি। খুব অনিচ্ছাসত্ত্বেও একটি উদাহরণ দিয়ে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা পেশ করতে চাই। সেটা ১৯৯১ সালের জুলাই মাস। আমি তখন অধুনালুপ্ত অবজার্ভার অফ বিজনেস অ্যান্ড পলিটিক্স-এর কলকাতাস্থিত বিশেষ সংবাদদাতা। তখন রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ছিলেন এমপি নারায়ণন। তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। আমি একটা খবর করলাম, যাতে আমার নাম ছিল না। আমি লিখেছিলাম যে, তাঁর মেয়াদ বর্ধিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু অতীতে তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই অনৈতিকতার অভিযোগ এনেছিল। তিনি যখন সেন্ট্রাল কোলফিল্ডস লিমিটেডের চিফ জেনারেল ম্যানেজার, তিনি একটি বিশেষ কয়লা কোম্পানিকে সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে বিপুল পরিমাণে প্রিমিয়াম গ্রেড কয়লা দিয়েছিলেন (অ্যালটমেন্ট)। সিবিআই তাঁকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেও শেষ পর্যন্ত দেয়নি। আরও একটা তথ্য দিয়েছিলাম। তাঁর সুপারিশে বাংলাদেশে মেটালার্জিক্যাল গ্রেড কয়লা রফতানি করা হয়েছিল, অথচ সেই মানের কয়লা ব্যবহারোপযোগী কারখানা নেই (বলা বাহুল্য, সেই কয়লা অন্য দেশে বেশি দামে আবার রফতানি হয়েছিল)। সেই খবর প্রকাশের পরেরদিন আমাদের বার্তা সম্পাদক কেএম রবীন্দ্রন আমাকে একটা কড়া মেমো পাঠালেন যে, আমাদের প্রধান সম্পাদক বিএন উনিয়ালের আদেশানুসারে আমি যেন ওই বিষয়ে আর কোনও খবর না-করি। রবীন্দ্রন আরও লিখলেন, আমার খবরটা খাওয়ানো খবর (inspired news), আর আমি নাকি প্রায়শই খাওয়ানো খবর পাঠাই।
তার প্রতিবাদে আমি উনিয়ালকে লিখলাম যে, রবীন্দ্রনকে আমি কোনও উত্তর দেব না, কারণ তা আমার আত্মসম্মানে বাধছে (below my dignity of labour)। জানালাম যে, কোল ইন্ডিয়ার উচ্চ আধিকারিকরা বলছেন, একমাত্র অবজার্ভার-এর এমন খবর প্রকাশের সাহস আছে। আমাকে এমন খবর পাঠানোয় নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, সেই আশঙ্কা প্রকাশ করলাম। পরের দিন শেষের পাতায় দিল্লির বিশেষ সংবাদদাতা সুষমা স্বরাজের বাইলাইনে নারায়ণনের ছবিসহ চাটুকারিতাপূর্ণ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হল। কিন্তু নারায়ণন সাহেবের চাকরির মেয়াদ বাড়ল না। আমাকে আবার খবর পাঠাতে বলা হল।
এরকম আরও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে, যা লিখলে মনে হতে পারে যে সাংবাদিকদের অনেকে হয়তো নিজেরাই সাংবাদিকের স্বাধীনতা নিয়ে ভাবিত নন। তা না হলে বামফ্রন্ট আমলে তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ১৯৯২-৯৩ সালে (বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে) মহাকরণের ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রেস কর্নার হিটলারি কায়দায় ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদে কলকাতা প্রেস ক্লাব রাস্তায় প্রতিবাদে নামত (যা দিল্লির প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া করত)। বুদ্ধদেববাবু যে সাংবাদিকদের প্রায় আজ্ঞাবাহীদের মতো মনে করতেন, তার এরকম একাধিক নজির আছে।
অমিতদা ঠিকই বলেছিলেন। কতটা ঠিক, তা আজকের মিডিয়ার দিকে তাকালে হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছি।