Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

সোনার বাংলার আনাচ কানাচ

প্রবুদ্ধ বাগচী

 


প্রাবন্ধিক, সমাজভাবুক

 

 

 

‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’, এই গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠিক কোন সময়ে লিখেছিলেন সেই বিষয়ে রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কিছু মতভেদ আছে। প্রশান্তকুমার পাল তাঁর ‘রবিজীবনী’-তে এই বিষয়ে অনেকটা সংশয় দূর করে ওই গানের একটা সুনির্দিষ্ট রচনাকাল জানাতে পেরেছেন। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সমকালে যোগীন্দ্রনাথ সরকার দেশাত্মবোধক গান কবিতার ‘বন্দেমাতরম’ নামক এক সঙ্কলনে এই গান অন্তর্ভুক্ত করেন, বইটি পাঠকদের আনুকূল্যে অত্যন্ত দ্রুত নিঃশেষিত হয়ে যায়। আজকের বাংলাকে কে কতটুকু সত্যি সত্যি ভালোবাসেন জানা নেই কিন্তু এই গানের মধ্যে উদ্ধৃত ‘সোনার বাংলা’ শব্দবন্ধ ইদানিং বং-রাজনীতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কারণ কোনও একটি দল তাদের রাজনৈতিক আজেন্ডায় নিয়ে এসেছেন এই কথাটা। এখন ‘সোনার বাংলা’ তো আর সোনা দিয়ে তৈরি নয় যে শত সহস্র কুঁজওয়ালা গরু নিয়ে এসে তাদের দুধ থেকে সোনা নিষ্কাশন করে (এই প্রযুক্তি প্রাচীন বৈদিক বিজ্ঞানের অবদান বলে বিজ্ঞাপিত) বাংলার মাঠ-ঘাট ভরিয়ে দেওয়া হবে! ফলে সোনার বাংলার মধ্যে যে সমৃদ্ধ বাংলার চিত্র আভাসিত বা যে চিত্রকে ইশারা করা হচ্ছে সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে গেলে কিছু কর্মসূচি ঠিক করা উচিত। অথচ যারা সোনার বাংলা সোনার বাংলা করে মঞ্চে মঞ্চে চেঁচিয়ে দিগ্বিজয় করছেন তাদের মুখে আদপে কোনও কর্মসূচির কথা নেই— মানুষকে বিভ্রান্ত করার এই এক সর্বনাশা পদক্ষেপ।

আলতোভাবে তারা প্রাথমিকভাবে যেটা বলছেন তা হল বেকারদের কাজ দেওয়ার কথা। এই কথা কেউই বলেন না যে রাজ্যে বেকার নেই, সারা দেশের সঙ্গে মিলিয়ে ধরলে এটা এই রাজ্যেরও একটা সমস্যা। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান বলে, রাজ্যে বেকারত্বের হার দেশের সার্বিক হারের তুলনায় কম। তার মানে এই নয় যে রাজ্যে বেকারত্ব নেই। কিন্তু কীভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে সেটা বিশদে জানা ও জানানো দরকার নইলে সেটা আরও দশটা ফাঁপা প্রতিশ্রুতির মতো শোনায়।  কাজ তৈরি করার সঙ্গে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে আর তার সঙ্গে এটাও বিবেচনার মধ্যে আসে কাজ কে দেবে, কোথায় দেবে? সারা দেশেই সরকারি দফতরে, রেল, ব্যাঙ্ক, বিমা, তেল সংস্থা বা অন্য নানা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় কাজের সুযোগ কমেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের যারা নিয়ন্ত্রক তাদের নীতিতে এই কাজের সঙ্কোচন বৈধ। তাই গত সাত বছরে সমস্ত সরকারি অফিসে নিয়োগ বন্ধ, রেল তার কর্মচারী কমিয়ে এনেছে, ব্যাঙ্ক অনেকগুলি বন্ধ করে দেওয়ায় অনেক কর্মী বসে গেছেন, তাঁদের বিকল্প লোক নেওয়া হয়নি। আজকাল স্টেট ব্যাঙ্কের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য শাখা অফিসগুলিতেও গুটিকয় কর্মী কাজ করেন দেখা যায়। ব্যাঙ্কের বেশিরভাগ পরিষেবা বেসরকারি এজেন্সির হাতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কার্যত কেন্দ্রের সরকারের একমাত্র নীতিই হল সমস্ত সরকারি কাজের পরিসর কমিয়ে এনে সেগুলিকে বেসরকারি আওতায় নিয়ে যাওয়া যার মাধ্যমে সরকারের ভূমিকাকে যতদূর সম্ভব কমিয়ে ফেলা যায়। রাষ্ট্রায়ত্ত উৎপাদন ও পরিষেবা শিল্পের ক্ষেত্রেও এই একই নীতির ছায়া। বিএসএনএল-এর মতো লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে প্রায় পরিকল্পনা করে ভাতে মারা হয়েছে, সেলের প্রতিটি কারখানায় স্থায়ী শ্রমিকের বদলে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করে ম্যানেজমেন্ট তার দায় এড়িয়ে চলেছেন। এই রাজ্যের সরকারি দফতরেও শূন্যপদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। গত দশ বছরে স্থায়ী পদে অল্পবিস্তর নিয়োগ হলেও বিগত বাম সরকারের আমলেই যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চালু হয়েছিল তা সম্প্রসারিত হয়েছে এই সময়কালেও। যারা কেন্দ্রের সরকারি দফতরে নিয়োগ বন্ধ রেখে ক্রমশ সরকারি পদের সঙ্কোচন করে চলেছেন তারা রাজ্যে ক্ষমতায় এসে ডিগবাজি খেয়ে দরাজ হস্তে সরকারি দফতরে বা অন্যত্র নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করবেন এমন ভাববার মধ্যে কোনও বাস্তববোধের পরিচয় নেই। তার মানে সরকারি স্তরে নিয়োগ করে বেকারের হাতে কাজ দেওয়ার প্রশ্নটা প্রায় অবান্তর এবং মিথ্যে প্রতিশ্রুতি।

ইউপিএ-১ আমলে একশো দিনের কাজের আইন হওয়ায় গ্রামে কিছু কাজ তৈরি হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত সম্পদ সৃষ্টি না হওয়ার অভিযোগ একটা সময় উঠেছে ঠিকই, এবং এটা মেনে নেওয়া দরকার গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সারা বছরে একশো দিন কাজ পাওয়া দারিদ্র দূরীকরণের ক্ষেত্রে খুব একটা আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ নয়। তবু কিছু না-হওয়ার থেকে অল্প কিছু হওয়া নিশ্চয়ই সমর্থন করা যায়। একশো দিনের কাজের প্রকল্প তৈরির সময় যেসব অর্থনীতিবিদ সর্বভারতীয় স্তরে জড়িত ছিলেন তাদের হিসেব ছিল মোটামুটি দুশো দিন কাজ দিতে পারলে গ্রামীণ মানুষ কিছুটা সুবিধের মধ্যে থাকতে পারেন। সে যাই হোক, ইউপিএ-১ আমলে দেশের বর্তমান শাসক দল, তখন যারা বিরোধী আসনে বসত, এই একশো দিনের কাজের প্রকল্পকে নিয়মিত ব্যঙ্গ করে এসেছে এবং ‘মাটি খোঁড়ার কর্মসূচি’ নাম দিয়ে এটাকে হেয় করার চেষ্টা করেছে। যদিও ক্ষমতায় এসে কোনও বিকল্প কর্মসূচি না পেয়ে এটাকেই তারা বজায় রেখেছে। একশো দিনের কাজ রূপায়ণের ক্ষেত্রে এই রাজ্য প্রথম থেকেই সুনাম কুড়িয়েছে, বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলেও গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে রাজ্যের অবস্থান প্রশংসা করার মতো। তাহলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই প্রকল্প কি ভবিষ্যতেও চালু রাখা হবে অথবা তার বিস্তৃতি ঘটানো হবে? সোনার বাংলার সম্ভাব্য কারিগররা এই প্রশ্নে নীরব। ইতিমধ্যেই সারা দেশে বিরোধী দলগুলি এই প্রকল্পকে প্রসারিত করে দুশো দিনের কাজের প্রকল্প ঘোষণার দাবি তুলেছেন, সেই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও সাড়াশব্দ দেয়নি। কিন্তু দেখা গেল, সদ্য প্রকাশিত কেন্দ্রীয় বাজেটে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হল। অথচ, কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতিতে অভিবাসী শ্রমিকরা যখন নিজেদের গ্রামে ফিরে এসে নতুন করে কর্মহীনতার শিকার হলেন, সেই অবস্থায় একমাত্র এই একশো দিনের কাজের প্রকল্পেই রাজ্যের সরকার তাঁদের কাজ দিতে পেরেছেন, প্রকাশিত পরিসংখ্যানে তার ছাপ আছে। কাজের চাহিদা দেখে কেন্দ্রীয় সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে তার বরাদ্দ বাড়িয়ে দিতে হয়েছে।  কোভিড-কালে যে ভয়াবহ রকমের কাজ ছাঁটাই হয়েছে তার অভিঘাত খুব সহজে মিলিয়ে যাওয়ার নয়, সমস্ত অভিবাসী শ্রমিক যে তাঁদের আগের কাজের জায়গায় ফিরে গেছেন এমনও নয়। তাহলে অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের কাজ দেওয়ার কী ব্যবস্থা করা হবে তার কোনও দিশা নেই। তাছাড়া সারা দেশেই যদি একশো দিনের কাজে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়, তা আনুপাতিক হারে এই রাজ্যেও তা কমে যাবে। তাহলে কাজ হবে কোথায়? কে দেবে কাজ? এই জরুরি প্রশ্নগুলোকে দুর্নীতি ও তোলাবাজির মতো আবেগনির্ভর অপ্রমাণিত অভিযোগের আড়ালে চাপা দিতে চাইছেন ‘সোনার বাংলা’-ওয়ালারা।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার বাইরে তাহলে এবার পড়ে রইল শিল্পে কাজ তৈরি হওয়ার কথা। বলা বাহুল্য এই শিল্প মূলত বেসরকারি বিনিয়োগে গড়ে ওঠা শিল্প। কারণ সরকার নিজে শিল্পে বিনিয়োগের দিক থেকে অনেকদিন হাত গুটিয়ে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারি শিল্পে বিনিয়োগ করার চেয়ে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের জন্যই তাদের সম্পদ খুলে দেওয়া শ্রেয়তর বলে মনে করছেন। এমনকি বিপুল পরিমাণ অনাদায়ী ঋণের বোঝা সত্ত্বেও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে তারা অপারগ। কারণ কেন্দ্রের সরকার প্রত্যক্ষভাবে এইসব অপরাধী ঋণখেলাপিদের প্রতি সহানুভূতিশীল, এবং অনেকেই যে এই সুযোগে বিদেশে পালিয়ে গেছেন তাও আমাদের জানা। আর এটাও সকলেই জানেন অনেক দিন ধরেই ম্যানুফাকচারিং শিল্পে কাজের সুযোগ ক্রমশ কমে আসছে। বিগত সময়ের বামফ্রন্ট সরকার যে শিল্পনীতির কথা বলে সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানা স্থাপনের কথা বলেছিলেন তাতে প্রত্যক্ষ কাজের সুযোগ ছিল দুই হাজারেরও কম মানুষের। অথচ প্রায় সতেরো হাজার মানুষ কৃষিজমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছিলেন। ২০১৩ সালে সিঙ্গুর বিষয়ে রায় দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্ট টাটা শিল্পগোষ্ঠীর আইনজীবীর কাছ থেকে এই বিষয়ে লিখিত এফিডেফিট নিয়েছিলেন, সেই বক্তব্য অনুসরণ করে তাদের রায়ে তাঁরা বলেছিলেন, এত সংখ্যক মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে এত কম মানুষের চাকরি পাওয়ার সুযোগকে কর্মসংস্থানের স্বার্থ বলে বিবেচনা করা যায় না। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে যে জটিলতা এই রাজ্যে তৈরি হয়ে আছে এবং সিঙ্গুর আন্দোলনের পরে দেশের জমি অধিগ্রহণ আইন যেভাবে বদল করা হয়েছে তাতে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের জন্য এক লপ্তে অনেক জমি পাওয়া ও গণরোষ নিয়ন্ত্রণে রেখে তা অধিগ্রহণ করা প্রায় অসম্ভব। সেই কারণেই গত দশ বছরে বৃহৎ ম্যানুফাকচারিং শিল্পের কোনও উদাহরণ এই রাজ্যে নেই। যুক্তির খাতিরে যদি তেমন করা যায় তাহলেও কতটা কর্মসংস্থান হবে যা রাজ্যের বেকার যুবকদের সামনে আশা দেখাতে পারে? রাজ্যের নতুন প্রশাসনিক দায়িত্বে ‘এসে গেলেন’ বলে যারা দিনরাত বুকনি মেরে বেড়াচ্ছেন তাদের মুখে এই বিষয়ে কোনও কথা নেই কেন? আরও বলার কথা, রাজ্যের ট্র্যাডিশনাল যে উৎপাদন শিল্পগুলি ছিল— পাট, চা ও ইঞ্জিনিয়ারিং— গত কয়েক দশকে সেগুলো নিতান্তই ভগ্নদশায়। সেগুলি উজ্জীবনের কী পথ হতে পারে তা নিয়ে এযাবৎ কোনও সরকারকেই ভাবতে দেখা যায়নি, আসন্ন ‘সোনার বাংলা’য় ওই শিল্পের সংশ্লিষ্ট মানুষজনের কী অবস্থা হবে সে এক বিরাট জিজ্ঞাসা। মনে পড়ে, লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রের সরকার কথা দিয়েছিল উত্তরবাংলার বন্ধ চা-বাগান তারা খুলে দেবে, প্রতিশ্রুতি রাখা হয়নি। চা ও পাট শিল্পের অন্য একটা সমস্যা হল প্রকৃত বিনিয়োগকারীর বদলে এই ক্ষেত্রগুলিতে এক শ্রেণির ফড়ে শিল্পপতিদের রমরমা, তারা উপযুক্ত বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির আধুনিকীকরণের বদলে চটজলদি লাভ পেতে চান— এতে মূল শিল্পটির উন্নয়ন হয় না। এই সমস্যা কীভাবে সামলাবেন নতুন বাংলার কারিগররা? আজ অবধি তাদের মুখে এই বিষয়ে কিছু শুনেছেন নাকি?

তাহলে এবার হাতে পড়ে রইল পরিষেবা শিল্প, কাজের ক্ষেত্রে এই শিল্পের ভূমিকা ক্রমশ বেড়ে উঠছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু পরিষেবা বলতে শুধু আইটি সেক্টর দিয়ে প্রচুর মানুষের হাতে কাজ দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা এই শিল্পে প্রশিক্ষিত কাজের লোক দরকার। তাহলে পরিষেবার ক্ষেত্রটাকে আরও চওড়া করা দরকার। রাজ্যে সেই সুযোগ যে নেই তা নয়। হোটেল বা পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি, স্বাস্থ্য বা অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজ হতে পারে। হতে পারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পেও। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে বর্তমান রাজ্য সরকার কিছু সদর্থক কাজ করেছেন যা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তার বাইরে কী করা হবে তার কোনও হদিশ এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। আরেকটা কথা বলা দরকার। সারা দেশের যা অর্থনৈতিক অবস্থা তাতে সামগ্রিকভাবে একটা সঙ্কটের ছায়া, আগামীতে সেই সঙ্কট ঠিক কোনদিকে মোড় নেবে তা হিসেব করা খুব কঠিন নয়, কারণ অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যেসব সমাধান বিভিন্ন অভিজ্ঞ মহল থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে, দেশের কেন্দ্রীয় সরকার তার সবটাকেই অগ্রাহ্য করে এগিয়ে চলেছেন। এই সঙ্কটের প্রভাব এই রাজ্যের অর্থনীতিতেও কম বেশি পড়বে। তাই কাজ দেব বা বেকারত্ব দূর করে দেব এগুলো বলা যত সহজ কাজটা ঠিক ততটাই কঠিন।

আর দুটো প্রসঙ্গ উত্থাপন করি। সামগ্রিকভাবে দেশের কেন গোটা দুনিয়ার অর্থনীতিকেই আজ বলা হচ্ছে ‘গিগ ইকোনমি’ অর্থাৎ স্থায়ী কাজের জায়গা কমছে, চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী কাজগুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে। এইসব কাজের ক্ষেত্রে প্রথাগত চাকুরির নিরাপত্তা নেই, নেই অবসরের বয়স বা অবসরকালীন সুযোগসুবিধে, নেই দৈনিক শ্রমের সময়সীমা, নেই সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার। লোকসভায় সম্প্রতি পাশ হওয়া ‘শ্রম আইন’ পুরোটাই মালিক বা ম্যানেজমেন্টের স্বার্থে তৈরি করা হয়েছে যা এপ্রিল মাস থেকে চালু হয়ে যাবে। এর ফলে শ্রমের বাজার আরও গভীর সঙ্কটে পড়বে, আরও আরও কমে যাবে স্থায়ী চাকরি ও তার অন্যান্য সুযোগ সুবিধে। এই অবস্থায় অন্যান্য দেশগুলি ইদানিং সামাজিক সেক্টরে কিছু বিনিয়োগ করে দেশের মানুষদের কিছুটা সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আশ্চর্যভাবে আমাদের দেশে সামাজিক খাতে সরকারি বরাদ্দ ক্রমশ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এইবারের বাজেটও তার ব্যতিক্রম নয়। তাছাড়া সার্বিকভাবে দেশের কেন্দ্রীয় শাসকদল চরিত্রগতভাবে জনবিরোধী। তাই তারা রাজ্যের ক্ষমতায় এলে সবার হাতে কাজ দেবে, সামাজিক নিরাপত্তা দেবে এ নিতান্তই আষাঢ়ে গপ্পো। সোনার বাংলার বসন্তের মৃদু হাওয়ায় যারা এইসব ভাসিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের বিশ্বাস করলে অচিরেই ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা।