Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

সেলিম মণ্ডল

গুচ্ছ কবিতা -- সেলিম মণ্ডল

গুচ্ছ কবিতা  

 

ব্রাশ

বিখ্যাত হতে চাওয়া কোনও জুতোই
পথকে আড়াল করতে শেখেনি

দূরত্ব পালিশ করে
চকচকে কোনও রাস্তায়, আমরা আদতে ফেলে দিই
অব্যবহৃত ব্রাশ

 

কোজাগরী

ঘুমের ভিতর যে কল করল আর স্বপ্নের ভিতর যে কেটে দিল; তারা দু-জন রাত বেচে একটা নৌকা কিনেছিল। তাদের ইচ্ছে ছিল কোনও এক কোজাগরী পূর্নিমায় জলে পড়া চাঁদকে তুলে নিয়ে একে অপরের শরীরজুড়ে এঁকে দেবে আলপনা। কিন্তু একজনের ঘুম ভাঙল না, আরেকজনের স্বপ্ন ভাঙল না। দু-জন রোদ না-পাওয়া নাড়ুর মতো বয়ামে রয়ে গেল।

‘কে জেগে আছ?’
জিজ্ঞাসা করে চাঁদ।
চাঁদের ফুটো শরীর। তাতে গাঁথা অজস্র লক্ষ্মীপেঁচার চোখ।
চোখে ভোর। ভোরে নতুন ফসলের ছিন্নবিচ্ছিন্ন শরীর…

 

জ্বর

জ্বরের ভিতর লাল সাইকেল নিয়ে কোথায় যাচ্ছ? প্রতিবার প্যাডেল থেকে ঝরে পড়ছে ঘাম। মুছে যাচ্ছে পায়ের আলতা। পুড়তে পুড়তে কতদূর যাবে? সাদা ট্যাবলেটের মতো ফ্যাকাশে মুখে সন্ধ্যা নেমে এলে কে পৌঁছে দেবে বাড়ি? অনেকদিন হল আলো জ্বলার আগেই রাত ফুরিয়ে যায়!

ঘুমের মধ্যে জ্বর আরও স্বাস্থ্যবান। জড়িয়ে ধরা যায় আরও মজবুত করে।

জ্বর আসবে বলে তুমি ভেঙে ফেলছ চুড়ি।

আমাদের যেতে হবে থার্মোমিটার ভেঙে। স্বপ্নের ভিতর জলপটি নিয়ে অপেক্ষা করেছ সারারাত। এখন ঘুমের সময়। বেশি ঘাম দিলে পিছলে যেতে পারে সমস্ত মুদ্রাআয়ু। প্রস্তুত হও, তাড়াতাড়ি।

 

ব্লেড

একটা জং পরা ব্লেড ভিজছে। কিছুক্ষণ পরেই ওটা হয়ে উঠবে চকচকে। ব্লেডটির কে মালিক জানা যায়নি। দূর থেকে একটি ছেলে দৃশ্যটি দেখছে— বহুক্ষণ। ওর কাছে ছাতা নেই। ভিজতে ভয় না পেলেও সে ভিজবে না। ছেলেটি দেখতে চায়— ধুয়ে যাওয়া জং কতটা আলো হয়ে ওঠে…

ব্লেডটি আত্মহত্যা করতে চায় না। ছেলেটি কী চায়, না জেনেই বাড়িয়ে দেয় মুখ ও নখ। ব্লেডটি হয়ে ওঠে আত্মাহঙ্কারী…

 

সুতো

আমি বলছি না— আমাকে মেঘ কেটে খাওয়াও
আমি বলছি না— আমাকে চাঁদের গর্ভে শুইয়ে রাখো
আমি বলছি না— আমাকে গাছের যৌনতা দাও
আমি বলছি না— আমাকে শৌখিন মাছের মতো রাখো
আমি বলছি— আমাকে টিকটিকির চুমু দাও
আমি বলছি— আমাকে পাতার শোকে সাজাও
আমি বলছি— আমাকে রোদের হাহাকারে রাখো
আমি বলছি— আমাকে অন্ধকারের পিঠে ঘুম পাড়াও

আমি বলছি; আমি বলছি না—
আমাদের দেখা হোক, কথা হোক; আমাদের সেলাইঘরে
আরও সুতো পেঁচিয়ে নিক চারিধার

 

পেরেক

রাতের গা থেকে খুলে পড়ছে নতুন পেরেক
মশারির মধ্যে থেকে এই দৃশ্য দেখছেন বাবা
মা সেই পেরেক তুলে রাখে যত্নে
একে একে সমস্ত পেরেক খুলে গেলে ভোর হয়ে আসে
সকালে দাঁড়িয়ে থাকি আমি‍‍‍—

একহাতে আরও কিছু জং পেরেক
ও একটা মোটা হাতুড়ি নিয়ে

 

প্রক্রিয়া

নাচের ক্লাশে একজন অধ্যাপক গান গাইতে শুরু করলেন
আর একজন অধ্যাপিকা শুরু করলেন নাচতে
দু-জনের মধ্যে কী সম্পর্ক সেটা জানার জন্য একজন ডিটেকটিভ এলেন
ছাত্রছাত্রীরা বুঝতে পারছে না এই রহস্যটা কী!

 

বয়ন

ক্রমশ বুনে যাচ্ছ তাঁত
এ শরীর, এ মন কখনও কি হবে শাড়ি?

বিদায়বেলায় সূর্যাস্তের পাড় বুকে জাগে

এত খটাখট শব্দ, কীসের গড়ার!

যা ভেঙে যায় তা দিন বেচার

তা দিন নেভাবার আঁচলে শান্ত সজল…

 

সম্পর্ক

সম্পর্কের ভিতর আজান দেওয়া মানুষটা আর নেই
সম্পর্কের ভিতর অঞ্জলি দেওয়া মানুষটা আর নেই

একটা ডানা ভাঙা পাখি এসে দাঁড়িয়েছে জানালায়
একটা বোঁটা খসা পাতা এসে দাঁড়িয়েছে জানালায়

দু-জনেই বলতে চায়: ধার্মিক হও না কেন?

উত্তর দিই না

একটা একটা প্রশ্ন এলোপাথাড়ি কাদা ছোড়াছুড়ি করে

কাদায় ডুবে অর্ধেক গলা বাড়িয়ে থাকে আরেকটি সম্পর্ক

 

ফসলের গল্প

ফসলের গল্পে একজন অন্ধ কৃষক রোজ পায়চারি করে

সব ফসল ঘরে উঠলে আত্মহত্যাকামী কৃষকের সংখ্যা কমে যাবে
সব ঘরে ফসল উঠলে রাষ্ট্রের সাদা দাঁতে কমে যাবে ধার

ফসল লাল হবে, সবুজ হবে না মাঠ

শুধু চোখের ওপর ফেট্টি বেঁধে বলা হবে:
স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার, জন্মগত অধিকার

মার খেলে মার খাও, ভরে উঠবে না গোলা

একটা মাঠ একা
আরও একা কৃষক অথবা ভাগচাষি

সূর্যাস্তপাড়ের দেনা ফাটা পায়ের ওপর পড়ে

জোছনা নিয়ে পালিয়ে যায় রাষ্ট্রসেনা!