প্রবুদ্ধ ঘোষ
প্রাবন্ধিক, সাহিত্য-গবেষক, দাবা-প্রশিক্ষক
কলকাতার শ্যামবাজারে বীরেন্দ্র মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল (২০ মার্চ) জনতার সাহিত্য উৎসব (পিপলস্ লিটারারি ফেস্ট), এই নিয়ে চতুর্থ বার। ২০১৮ সাল থেকে প্রত্যেক বছর এই সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করছে বস্তার সলিডারিটি নেটওয়ার্ক। কলকাতায় ‘লিট ফেস্ট’ নতুন কিছু নয়, বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি প্রতি বছর শীতেই তিন-চারটে লিট ফেস্ট আয়োজন করে, ‘মূলধারা’র সফল সাহিত্যিকেরা আসেন, আলোচনা করেন। ‘জনতার সাহিত্য উৎসব’ স্বতন্ত্র কারণ, কোনও বাণিজ্যিক সংস্থা মুনাফার আশায় জনতার সাহিত্য উৎসব আয়োজন করে না, শাসক-মতাদর্শের অনুগামী কোনও সংস্থা প্রতিস্পর্ধার ভাষ্যকে স্বীকৃতি দেয় না। এবং এই সাহিত্য উৎসবে আলোচক নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয় রাজনৈতিক সাহিত্যিকদের; সেই সব সাহিত্যিক বা বিদগ্ধ পাঠক আলোচনায় অংশ নেন, যাঁরা নিপীড়িত মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে সাহিত্যকে মেলান। রাষ্ট্রীয় মতাদর্শের বিরুদ্ধ-মতাদর্শকে ধারণ ক’রে যাঁরা লেখেন, রাষ্ট্রীয় মতাদর্শের বিরুদ্ধে নিজেদের অটুট অবস্থান থেকে প্রতিস্পর্ধা ছুঁড়ে দেন যাঁরা, এবং যাঁরা সেই সাহিত্যের নিষ্ঠ পাঠক— এই সাহিত্য উৎসব তাঁদের জন্যেই। চতুর্থ জনতার সাহিত্য উৎসবের মূল থিম ছিল ‘কারাগার কৃষক ফ্যাসিবাদ’!
#
জেলকুঠুরির ছোট্ট জানলা দিয়ে দেখি
সমস্ত গাছ আমার দিকে, হাসছে।
সমস্ত ছাদ ভরে আমারই পরিবার
সব বিষণ্ণ জানলায় আমারই জন্যে দোয়া।
অন্ধকুঠুরির ছোট্ট জানলা দিয়ে
আমি তোমাদের বড় জেলখানা দেখতে পাই–সমিহ-অল্-কসিম (অনুবাদ: আমি)
উদ্বোধনী সঙ্গীতে প্রথামাফিক রবীন্দ্র-নজরুলগীতি নয়, পরিবেশিত হল “আমরা তো ভুলি নাই শহীদ একথা ভুলব না, তোমার কইলজার খুনে রাঙ্গাইল কে আন্ধার জেলখানা”— হেমাঙ্গগীতি। এমন একটা গান ও গণআন্দোলন কর্মী রাজা বিশ্বাসের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানের সূচনা হলে, তার অভিমুখও দিশা পায়। প্রথম প্যানেলটি ছিল কারা-সাহিত্য বিষয়ে। বক্তা ছিলেন রূপেশ কুমার সিং, কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলাঞ্জন দত্ত; এবং সংযোজক ছিলেন প্রবুদ্ধ ঘোষ। আলোচনা শুরু হল কারা-সাহিত্যের সংজ্ঞা ও বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে। রূপেশ বললেন তাঁর জেলযাপনের অভিজ্ঞতা ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব নিয়ে। ২০১৯ সালে রূপেশকে ঝাড়খণ্ডের পুলিশ ও নকশাল-দমন শাখার কর্তারা গ্রেপ্তার করে তাঁর নির্ভীক সাংবাদিকতা ও প্রকাশনার জন্যে, ইউএপিএ দিয়ে ছ মাস জেলে আটকে রাখে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে। কিন্তু, চার্জশিট জমা দিতে না পারায় ছ মাস পরে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সংযোজকের প্রশ্নের উত্তরে রূপেশ বলছিলেন ঝাড়খণ্ডের জেলে আটক নিম্নবর্গের রাজনৈতিক বন্দিদের কথা, তাঁদের জেলযাপনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। রূপেশ পরে কারাবাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে বইও লিখেছেন। জেলে কেউ লেখার জন্যে কাগজ-পেন চাইলে কর্তৃপক্ষ ভাবত জেল পালানোর ছক কষা হবে। জেলে কেউ লেখাপড়া করতে চায়, এ তাদের ধারণার বাইরে। কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৭১ সালে জেলে গেছিলেন নকশালপন্থী কমিউনিস্ট হওয়ার অপরাধে। অকথ্য অত্যাচার হয় তাঁর ওপরে, কিন্তু, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ও বহু সহবন্দির কাছ থেকে ভালবাসাও পেয়েছেন কমিউনিস্ট আদর্শের জন্যে। তাঁর কাছে সংযোজকের প্রশ্ন ছিল, জিজ্ঞাসাবাদ ও জেলপর্বে ‘গলা পুলিশ-কড়া পুলিশ (good cop bad cop)’-দের কীভাবে প্রতিরোধ করেছিলেন তাঁরা এবং কারা-সাহিত্যে এর উল্লেখ কীভাবে হয়েছে? কৃষ্ণাদির অভিজ্ঞতায় সত্তর দশকের অত্যাচারী পুলিশ আধিকারিকদের কথা আসে, রাষ্ট্রের নির্যাতনপদ্ধতি মধ্যযুগীয় বর্বরতার কথা মনে পড়ায়। নীলাঞ্জন দত্তের কাছে সংযোজকের প্রশ্ন ছিল একজন রাজনৈতিক বন্দি জেল থেকে বেরোনোর পরে জেলের বাইরের পৃথিবীতে তাঁর প্রতিগ্রহণ কীভাবে হয়? কারা-সাহিত্যে রাজনৈতিক কর্মীদের অটুট মনোবল, আদর্শের উল্লেখ থাকে; কিন্তু একজন রাজনৈতিক বন্দির মধ্যে মতাদর্শ এবং মুক্তির দ্বন্দ্ব, অনমনীয় মনোবল ও বিপন্ন অস্তিত্বের দ্বন্দ্ব কীভাবে ক্রিয়াশীল থাকে? কারা-সাহিত্যে এই দ্বন্দ্বের নজির তুলে ধরতে কল্যাণী ভট্টাচার্যের এক অশ্রুত, দুষ্প্রাপ্য বইয়ের কথা তুলে ধরলেন নীলাঞ্জনবাবু। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে লেখা ওই বইতে কারাগারে বন্দিদের ওপরে অত্যাচারের পাশাপাশি বন্দিদের মুক্তির স্বপ্ন ও রাজনৈতিক অভিব্যক্তির বিবরণ রয়েছে। এই সময়েও তা অবশ্যপাঠ্য। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এই কথাই উঠে এল যে, শুধু জেলখানার কুঠুরি নয়, সারা দেশই এক জেলখানা হয়ে উঠেছে ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনে। দলিত-আদিবাসী-সংখ্যালঘুরা বিপন্ন, তাঁদের যেকোনও প্রতিবাদকেই কারাগারে বদ্ধ করার ব্যবস্থা করছে সরকার। আর, দেশজোড়া কারাগারে রাজনৈতিক বন্দীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায়- ন্যায্য প্রতিবাদ ও অধিকারের আন্দোলনকে পিষে দিতে। কারা-সাহিত্যের লেখক ও পাঠকদের প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে তাই।
#
দ্বিতীয় প্যানেলের বিষয় ছিল কৃষক আন্দোলন ও সাহিত্য। বক্তা ছিলেন সুপ্রিয় চৌধুরী, লুৎফর রহমান এবং লেনিন কুমার; সংযোজক ছিলেন মানস ঘোষ। এই পর্যায়ে খুব জরুরি একটি বিতর্ক উত্থাপিত হয় লুৎফর ও সুপ্রিয়র বক্তব্যকে কেন্দ্র করে— রাজনৈতিক সাহিত্য আর সাহিত্যের রাজনীতি এই দুটোই বোঝা খুব প্রয়োজন। আর, ‘জনতার সাহিত্য উৎসব’-এর ধন্যবাদ প্রাপ্য এইরকম আলোফুরোনো সময়ে এই বিতর্কের মঞ্চকে স্বীকৃতি দিচ্ছে বলে।
এক সাহিত্যিক-বক্তার বক্তব্যের নির্যাসে কলকাতা-বিমুখ, প্রতিষ্ঠান-বিমুখ ব্যক্তিগত অবস্থান ও অস্তিত্বের নিয়ত বিপন্নতার কথা ব্যক্ত হয়। আমদেরও এই উপলব্ধি প্রয়োজন যে, শুধুমাত্র ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ লিখলে কিংবা ‘বিপ্লবই একমাত্র সমাধান’ লিখে দিলে তা রাজনৈতিক সাহিত্য হয়ে যায় না। বাংলার কোনও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাহিত্যিক নিজের অস্তিত্বের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুললে, সেটাও রাজনৈতিক সাহিত্যের বিষয় হতেই পারে। “ভোটার কার্ডে এক নাম, আধার কার্ডে অন্য বানান আবার রেশন কার্ডে অন্য নাম— তাহলে আমাদের অস্তিত্ব কী?”— এই প্রশ্ন যে সাহিত্য ধারণ করে, তা অবশ্যই রাজনৈতিক সাহিত্য। রাষ্ট্র বনাম বিপ্লবের দ্বন্দ্বে রাষ্ট্র যখন মানুষের যাপন— অস্তিত্বকে উদ্দেশ্য করতে ব্যর্থ হয়, তখন ‘বিপ্লবের’ দায়িত্ব সেই বিপন্ন অস্তিত্বের হৃদয়ের কাছে পৌঁছানো। লবটুলিয়ার ভানুমতী যদি প্রশ্ন করে ‘ভারতবর্ষ কোনদিকে?’ সেই প্রশ্নের ব্যর্থতা রাষ্ট্রের। আর, সেই প্রশ্ন উত্থাপন করা রাজনৈতিকভাবে জায়েজ! “আমাদের অঞ্চলে, আমাদের এত বছরের নিপীড়িত হওয়ার ইতিহাসে কোনও রামমোহন নেই, নবজাগরণ নেই, রবীন্দ্রনাথ নেই, আমাদের কিচ্ছু নেই”— এই দৃঢ়বাক্য যিনি বলছেন এবং সেই দৃঢ়বাক্যকে ব্যাখ্যা করে দিচ্ছেন, তিনি বিষণ্ণ আলোয় দাঁড়িয়ে সাহিত্যের নান্দনিকতা ও রাজনীতিকে আবিষ্কার করতে চান।
আর, সেই একই মঞ্চে আরেকজন সাহিত্যিক নিজের মধ্যবিত্ত রাজনৈতিক চেতনা এবং সংশয় নিয়ে কথা বলেন। একদা কৃষিবিপ্লবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কৃষকদের সঙ্গে একাত্ম হতে গ্রামে গেলেও তাঁরা সেখানে টিঁকে থাকতে পারেননি উচ্চবর্গীয় অবস্থানযাপনের জন্যে। কিন্তু, তাঁর পালিয়ে আসা মানেই যে কৃষিবিপ্লবের মতাদর্শ ভুল ছিল কিংবা বাকি সহযোদ্ধাদের সাহস ও রাজনৈতিক চেতনায় কিছু ঘাটতি ছিল, তা নয়- সেই কথাই তিনি বিভিন্ন উদাহরণের মধ্যে দিয়ে উল্লেখ করেন। কিন্তু, তিনি ওই পূর্বোক্ত সাহিত্যিক-বক্তার অস্তিত্বের বিপন্নতাকে ছুঁতে পারেন না, হয়তো সেই সময়ে নিজের ব্যর্থতা ও বর্তমান প্রতিষ্ঠানমুখী অবস্থানের দ্বন্দ্বের জন্যেই। সাহিত্যের রাজনীতিকে এড়িয়ে গিয়ে রাজনৈতিক সাহিত্যের অভিমুখকে আঁকড়ে ধরতে চান। তাই, বিতর্ক তৈরি হয়। এই সাহিত্যিক-বক্তা কিছুতেই স্বীকার করতে চান না যে, পূর্বোক্ত সাহিত্যিক প্রাতিষ্ঠানিকতা ও শ্রেণিবোধকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছেন।
এই বিতর্ক বহু পুরনো। আমরা এইসব বিতর্কের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছি। তাই অস্বস্তিতে পড়ি, বিচলিত হই। কিন্তু, এই বিতর্ক জরুরি। কোনও টাটা-বাটার লিট ফেস্ট এই বিতর্কের সুযোগ দেয় না, কোনও ব্রয়লার সাহিত্য এই বিতর্ককে প্রশ্রয় দেয় না। জনতার সাহিত্য উৎসব এই বিতর্ক উস্কে দেয়। আলোড়ন ওঠে মঞ্চে, মঞ্চের বাইরে। সংসদীয় নির্বাচনের ভাঁড়ামোর বাইরে জনতার রাজনীতির কথা, জনগণের রাজনৈতিক চেতনার কথা এবং সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তার কথা কেন্দ্রে নিয়ে আসে জনতার সাহিত্য উৎসব।
এর পরে নির্দেশক-আলোকচিত্রশিল্পী রনি সেন তাঁর আলোকচিত্রে ও চলচ্চিত্রে প্রতিরোধের ভাষ্য উপস্থাপন করেন দর্শকের সামনে। চলচ্চিত্র ও চিত্রশিল্প দীর্ঘ সময় ধরে শাসকের বিরুদ্ধে জনমতামত প্রতিফলিত করেছে। রনির বিশ্বাস, “ছবি দুনিয়াকে পাল্টে দিতে পারে। ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তিত করার ক্ষেত্রে আলোকচিত্র অনুঘটকের কাজ করে।”
#
এর পরের অনুষ্ঠানে পাঞ্জাবের ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর স্যোসাইটি’ ও বাংলার ছাত্র সংগঠন ‘রেভোল্যুশনারি স্টুডেন্টস ফ্রন্টের’ সাংস্কৃতিক শাখা ‘লাল লণ্ঠন’ একসঙ্গে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। তাঁদের গানে ও কথায় ফ্যাসিবাদকে উৎখাতের ডাক দেওয়া হয় এবং কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র জোটবদ্ধতার আহ্বান রাখা হয় পুঁজিবাদের আস্ফালনকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক পরিসর রক্ষার জন্যে। “হ্যায় ভগৎ সিং তু জিন্দা হ্যায় হর এক লহু কি কত্রে মেঁ”— এই গানটি প্রতিরোধের প্রতীক। নির্বাচনী সার্কাসের বাইরে বেরিয়ে, নীতি-আদর্শের দিক দিয়ে ক্ষয়ে যাওয়া সংসদীয় দলগুলির ভোট-ভোট করে ষাঁড়-চিৎকারের বাইরেও যে মানুষ অন্য কিছু ভাবেন, ছাত্রছাত্রী-যুবরা সমাজবদলের স্বপ্ন দেখে, তা জগজিৎ কৌর (নিক্কি), অঙ্কিত, অর্পণদের অনুষ্ঠানে প্রকাশ পায়।
এর পরের প্যানেল ছিল ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী সাহিত্য’ নিয়ে। বক্তা ছিলেন নোদীপ কৌর, সাদিক হোসেন এবং অভিষেক ঝা। নোদীপ কৌরকে জানুয়ারি মাসে দিল্লি পুলিশ গ্রেপ্তার করে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে প্রচারের জন্যে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশি হেফাজতে অত্যাচার চালানো হয়, পরে দেশ-বিদেশের অনেকের টুইটারে-ফেসবুকে তাঁর গ্রেপ্তারির জন্যে ভারতরাষ্ট্রের সমালোচনা আসার পরে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় আদালত। নোদীপ বলেন তাঁর মতাদর্শের কথা, কৃষকদের প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তার কথা। বলেন, “আমি হয়তো খুব বেশিদিন বাঁচব না। হয় আমাকে খুন করা হবে নয়তো শীঘ্রই আবার জেলে পোরা হবে। কিন্তু, যতদিন বাঁচব দলিত, মুসলমান, আদিবাসী, কৃষক সহ সমাজের অত্যাচারিত অংশের ওপর রাষ্ট্রের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমার লড়াই জারি থাকবে।” অভিষেক নিজের শ্রেণি-অবস্থান ও সামাজিক-অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণার উল্লেখ করে নিজের সাহিত্যবোধের কথা বলেন। একজন প্রান্তিক মানুষ তাঁর লোকায়ত চর্চা দিয়ে, তাঁর প্রান্তিক ‘সামান্য’ যাপন দিয়ে ফ্যাসিবাদকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে এবং অভিজাত সাহিত্যবর্গকেও অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। প্রান্তিক মানুষের বাস্তবতাকেও স্বীকার করতে হবে রাজনৈতিক বিকল্প সাহিত্যকে। সাদিক বলেন ‘ফ্যাসিবাদ’ কেমন নিঃশব্দে আমাদের চেতনাকে গ্রাস করে নেয়। মানুষের পাশ থেকে মানুষের সরে যাওয়া, ঘৃণার উদ্যাপন, ‘অপর’কে প্রত্যাখ্যান করা, চলচ্চিত্রে জাতীয়সঙ্গীতে বাধ্যতামূলক উঠে দাঁড়ানো, অন্যদের জাতি-ধর্ম-বর্ণে ‘ট্যাগ’ করে বর্গায়িত করার মধ্যে দিয়ে— ফ্যাসিবাদ দৈনন্দিন জীবনে এই প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে দিয়েই আসে। এই আলোচনা প্রয়োজনীয় এইজন্যেই কারণ, ফ্যাসিবাদকে প্রত্যাখ্যান করা সমস্ত লেখকের পবিত্র কর্তব্য; আর, একইসঙ্গে সাহিত্য-শিল্প ইত্যাদির মধ্যে থেকে ফ্যাসিবাদের ন্যূনতম উপাদানগুলোর উপস্থিতি চিহ্নিত করে নেওয়া প্রয়োজন পাঠকের ও লেখকের যাতে শোষণের নিপীড়নের চেতনাকে উৎপাটন করে শোষণহীন সমাজ গড়ে তোলা যায়।
অনুষ্ঠানটি শেষ হয় উপস্থিত শ্রোতা ও বক্তাদের নিবিড় যোগস্থাপনে, প্রতিরোধের গানে-স্লোগানে। রাজ্যে যখন দলবদল আর ক্ষমতালাভের জন্যে হরেক দলের মিথ্যে প্রতিশ্রুতির গলাফাটানো ভাষণবাজি, দেশে যখন ফ্যাসিবাদের কুচকাওয়াজ ঘন হয়েছে, তখন প্রায় আট ঘণ্টার অনুষ্ঠান শেষে মানুষ ভাবনা ও উদ্যমের নতুন রসদ নিয়ে অনুষ্ঠান থেকে ঘরে ফিরলেন।