Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

প্রস্তাবনা: দানবের পেটে দু দশক— আরএসএস, বিজেপি ও হিংস্র হিন্দুত্বকে যেভাবে দেখেছি

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়  

 

লেখক ড. পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা এবং সাংবাদিক তথা মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। তার আগে দেশে থাকাকালীন তাঁর জীবনের অর্থাৎ যৌবনের দু দশক কেটেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের একনিষ্ঠ কর্মী ও কর্মকর্তা হিসেবে। লেখকের পিতা শ্রী জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন স্বয়ংসেবক, অটলবিহারি বাজপেয়ির সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল। শ্যামাপ্রসাদ ভারতীয় জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করার পর জিতেন্দ্রনাথ জনসঙ্ঘ পশ্চিমবঙ্গ অফিসের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। এহেন পিতার প্রভাব পড়েছিল ছোট পার্থর ওপর। ছোটবেলাতেই তাঁকে এক সঙ্ঘ শাখায় নিয়ে আসেন জিতেন্দ্রনাথ। পিতার মতোই আরএসএস অনুগামী ও পরে সদস্য হিসেবে লেখকের জীবন এগিয়ে চলে। দীর্ঘ দু দশক সঙ্ঘের বিভিন্ন পদে থাকার পরে ও নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দেওয়ার পর ধীরে ধীরে লেখকের মোহভঙ্গ হয়। আরএসএসের তথাকথিত অরাজনৈতিক মুখোশ ও দেশসেবার আড়ালে যে এক আধিপত্যকামী প্রাচীনপন্থী কদর্য মুখ রয়েছে তাকে চিনে নেন লেখক। বইটির ব্লার্ব শেষ হচ্ছে লেখকের এই স্বীকারোক্তিতে— "মাতৃভূমির ঋণ পরিশোধ করে চলেছি সারাজীবন ধরে। যা যা ভুল করেছিলাম, তার প্রায়শ্চিত্ত করে চলেছি সত্যের অনুসন্ধানের মাধ্যমে।"

এই সময়ে দাঁড়িয়ে অবশ্যপাঠ্য 'দানবের পেটে দু দশক' বইটির নির্বাচিত অংশ (প্রস্তাবনা অধ্যায়) তুলে দেওয়া হল চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম-এর হুইলার্স স্টলের পাঠকদের জন্য।

ওদের নিয়ে আমার সমস্যাটা ঠিক কী?

অনেক বছর আগের কথা। তখন আমি খুব ছোট। আমার বাবা আমাকে আমাদের উত্তর কলকাতার পাড়ার গোয়াবাগান সঙ্ঘ শাখায় নিয়ে যান। তার পর থেকে আমার জীবনের অনেকগুলি মূল্যবান বছর আমি সঙ্ঘ বা আরএসএস-এর কাজে ব্যয় করেছি। ওখানে বছরের পর বছর নানা খেলা খেলেছি, গান গেয়েছি, রাস্তায় নেমেছি, আলোচনায় অংশ নিয়েছি, বক্তৃতা দিয়েছি, আরো অনেক কিছু করেছি। ওখানে আমার অসংখ্য বন্ধু হয়েছে। বাঙালি বন্ধু, অবাঙালি বন্ধু। কিন্তু শেষকালে ঐ সংগঠন থেকে বেরিয়ে আসার পর তা নিয়ে আমার একটুও অনুতাপ হয়নি, বরং শেষ পর্যন্ত যে ওদের থাবা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছি, সেজন্য আমি খুশি। তবে আমার অনেক পুরনো ভালো বন্ধুকে চিরদিনের মত হারিয়েছি, আর তার জন্য আমার গভীর দুঃখ আছে। ওদের হারানো মানে জীবনের একটা বিরাট অংশকেই হারানো।

কিন্তু আজ আমাকে বলতেই হবে যে আমি সন্ত্রস্ত। যখন আমি সঙ্ঘের কথা ভাবি, সেটা একটা দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। সঙ্ঘকে আমি দেখি প্রাচীন এক খোলসের মধ্যে ক্রমশ বেড়ে চলা অশুভ এক দানব হিসেবে, যে নিজেকে পাল্টে নিয়ে দিন দিন বড় হচ্ছে, সবকিছু গিলে খাচ্ছে। কিন্তু খোলস ছেড়ে বেরোচ্ছে না। এমনভাবে সবার চোখের আড়ালে ধীরে ধীরে কিন্তু নিয়মিতভাবে সে বেড়ে চলেছে, সবকিছু গিলে খাচ্ছে, যে সেটা যে কত বড় একটা বিপদ তা কেউ বুঝছে না। এর একটা কারণ হলো কেউ তাকে সম্পূর্ণভাবে দেখতে পায় না। কেউ দেখে, রঙিন উদ্যানের এক কোণে বড়োসড়ো একটা গুটির মধ্যে সবসময়ে সে নিজের মনে কিছু চিবিয়ে চলেছে। কেউ দেখে একটা অদ্ভুতদর্শন বিকট জিনিস, যা নিয়ে তারা মজা করে। আবার কেউ তাকে দেখে একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় হিসেবে, যা নিয়ে তারা অ্যাকাডেমিক মহলে নানা আলোচনা করে। কিন্তু ইতিমধ্যে এই জীবটি দিন দিন বড় হতে থাকে, নিজেকে পাল্টাতে থাকে। তার সামনে থাকা সবকিছুকে গিলে খায়। চারপাশের জীবনের তারুণ্য থেকে, যৌবন থেকে, নিজের রসদ সংগ্রহ করে দিন দিন আরো বড়, আরো শক্তিমান, ও আরো কুৎসিত হয়ে ওঠে সে।

তারপর একদিন লোকে দেখে যে একদা-সুন্দর এই বাগানে আর কোন সবুজ নেই। সবকিছু মরা, ধূসর, দুঃখী আর বিগতযৌবন। সেই নানা ধরনের প্রাণে ভরা উদ্যান থেকে সব শক্তি গিলে নিয়ে সেই জীবটি এখন বিশাল এক দানব। এখন সে যা করতে চায় তা থেকে তাকে  রুখবার সাহস নেই কারো। সে এখন এক জিনির দৈত্য, যে বোতল থেকে ছাড়া পেয়েছে। আর তাকে বোতলের মধ্যে পোরা যাবেনা।

আমাকে হতাশ শোনাচ্ছে? তার জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু যখন আমি আমার সময়ের বা তার আগের আরএসএস-এর সঙ্গে এখনকার আরএসএস-এর তুলনা করি তখন এই সংগঠন ও তার বেড়ে ওঠা নিয়ে আমার এরকমটাই মনে হয়।

অনেক বন্ধুরা আমাকে বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান পনের-কুড়ি বছর সঙ্ঘে কাটানোর পর কেন আমি বেরিয়ে এসেছিলাম তার কারণগুলো যেন লিখি। এক কথায় বললে বলতে হয় যে ওদের মিথ্যেগুলো আমি বুঝে ফেলেছিলাম, আর তাতে আমি নিজেই খুব আঘাত পেয়েছিলাম। আমি যে ওদের সম্পর্কে কতটা আশাহত সেটা বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লেগেছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত আমি সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম, এবং নিজেকে ওদের থেকে মুক্ত করেছিলাম। মিথ্যে আর আত্মপ্রতারণা সঙ্গে আমি আর থাকতে পারছিলাম না।

তথাকথিত “সঙ্ঘ পরিবারের” অন্য অনেক বিষয়ের মধ্যে কয়েকটি নিয়ে আমার সমস্যা হচ্ছিল। সেগুলোকে আমার অনৈতিক মনে হচ্ছিল। যেমন, (১) তাদের অরাজনৈতিক হওয়ার ভান; (২) যে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তীব্র বায়াস— একমুখিতা— তারা প্রচার করে ও মেনে চলে; (৩) ”অন্য রকম সংগঠন” হওয়ার দাবি, যে ভণ্ডামির এখন মুখোশ খুলে গেছে; (৪) খেলাধুলার মধ্য দিয়ে সামরিকীকরণের প্রচেষ্টা; (৫) কমবয়সীদের তারা যেভাবে খেলাধুলা ও সংস্কৃতির ছুতোয় ধরে ও নিয়ন্ত্রণ করে; (৬) নারী ও পুরুষকে আলাদা রাখা; (৭) তাদের ফ্যাসিস্ট, আধিপত্যবাদী, সাম্প্রদায়িক ও অন্যকে বাদ দিয়ে চলার সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক মতবাদ।

আমার মতে, এগুলো হল সঙ্ঘ পরিবারের “সাতটি পাপ”। কোনোক্রমেই এগুলি গ্রহণযোগ্য নয়। এখনই যদি অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে, তীব্র বিরোধিতার মাধ্যমে সবাই মিলে একে প্রতিহত করা না যায়, তবে এইসব পাপ ভবিষ্যতে ভারতের ভয়ানক ক্ষতি করবে, এবং আমাদের দেশের ধ্বংস ডেকে আনবে।

এই বইয়ে আমি দেখাবো যে সঙ্ঘের তথাকথিত “অরাজনৈতিক” মুখটি কীরকম মিথ্যেয় ভরা। দেখাবো যে কেমন করে তারা তাদের সদস্যদের সবাইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। সাম্প্রতিককালে তাদের এই মুখোশ খসে পড়ছে, আসল মুখ বেরিয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ১৯৮০-র দশকে ভারতীয় জনতা পার্টি তৈরির পর থেকে ও দুনিয়া জুড়ে সমাজতন্ত্রের পিছিয়ে যাওয়ার পর আরএসএস-এর ভিতরে যে হিন্দুত্ববাদী জোয়ার আসে তা তার সমস্ত ফ্রন্টের মধ্য দিয়ে তাদের সব যুবক এবং বয়স্ক কর্মীদের রাজনীতিকরণ করেছে। মূল সংগঠন আরএসএস, বিজেপি-র ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলি— যেমন যুব মোর্চা ও মহিলা মোর্চা;  বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শাখা বজরং দল, দুর্গা বাহিনী এবং ভারত বন্ধু সমাজ;  এবিভিপি অর্থাৎ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ; বিএমএস বা ভারতীয় মজদুর সংঘ; রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি (মেয়েদের আরএসএস); এবং সঙ্ঘের তৈরি অন্য নানা সংগঠন স্থানীয়, রাজ্য স্তরে ও কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করার জন্য তাদের সদস্যদের অক্লান্তভাবে মন্ত্র দিয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরএসএস-পন্থী গোষ্ঠীগুলি, যেমন হিন্দু স্টুডেন্ট কাউন্সিল (এইচএসসি), ভিএইচপি-আমেরিকা, ওভারসিজ ফ্রেন্ডস অফ বিজেপি, হিন্দু বিবেক কেন্দ্র ও  গ্লোবাল হিন্দু ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্কও এই প্রচারে অংশ নিয়েছে। অবশ্য হিন্দু স্টুডেন্ট কাউন্সিল বা ভিএইচপি-আমেরিকা ভেবে-চিন্তেই ওপর ওপর আরএসএস-এর সঙ্গে একটা দূরত্ব বজায় রাখে। কারণ, আমেরিকাতে সাংবিধানিক নানা বাধানিষেধ রয়েছে, যা তাদের মেনে চলতে হয়।

১৯৯৭ সালে আমেরিকা থেকে দেশে গিয়ে আমি যখন ভারতের বিভিন্ন আরএসএস কেন্দ্রে ঘুরছিলাম তখন সঙ্ঘের মধ্যে এখন রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতার জন্য কী পরিমাণ লোভ দেখা দিয়েছে তা দেখে অবাক হয়েছিলাম। আরএসএস এখন বিজেপির যেসব রাজনৈতিক কৌশলগুলিতে মদত দেয় তাতে সে লোভের পরিচয় মেলে— দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেসের মতই নিজেকে “অন্য রকম দল” বলে দাবি করা বিজেপিও ভয়ানক সব অপরাধী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সঙ্গে একসাথে চলেছে। উদ্দেশ্য একটাই। কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করা। (যা তারা এই বাংলা বই প্রকাশিত হওয়ার সময়ে বিশালভাবে দখল করে আছে।)

আরএসএস, বিজেপি ও ভিএইচপি-র শ্রেণীচরিত্র যে কংগ্রেসের থেকে আলাদা কিছু নয়, সেটা তাদের কাজকর্ম থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাদের নেতারা প্রায় সবাই উচ্চবর্ণের রক্ষণশীল পুরুষ— ধনী জমিদার, ব্যবসায়ী, আমলা, পুরোহিত— চিরাচরিতভাবে যারা ভারতে রাজা তৈরি করে এসেছে। কংগ্রেসের অভিজ্ঞতা থেকে এরা জানে যে ক্ষমতা, শুধুমাত্র ক্ষমতাই, তাদের এতদিন ধরে বোনা জাল টিকিয়ে রাখতে পারবে। ক্ষমতা না থাকলে তা ভেঙে পড়বে। সেজন্যেই বিজেপি এখন এত মরিয়া হয়ে উঠেছে। সেজন্যেই বিজেপির অনৈতিক রাজনীতিকে আরএসএস এত মদত যুগিয়ে চলেছে।

সেবার ১৯৯৭ সালে আমি যখন ভারতে ঘুরছিলাম তখন কলকাতার এক বিজেপি-পন্থী সাংবাদিক আরএসএস-এর বাংলা সাপ্তাহিক ‘স্বস্তিকা’ পত্রিকার এক সভায় আমন্ত্রিত বক্তা ছিলেন। ওখানে তিনি বলেন, বিজেপি নেতৃত্ব যে এখন নেহরু-পন্থী জাতীয়তাবাদকে আঁকড়ে ধরছে এবং কাশী মথুরার মন্দিরের বিষয়গুলিকে সরিয়ে রাখছে সেটা ভণ্ডামি, আর এর একমাত্র উদ্দেশ্য হল কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল।[1]

(এই বাংলা বই প্রকাশিত হবার সময়ে বিজেপি ও আরএসএস আবার অযোধ্যা রামমন্দির নিয়ে অতি ব্যস্ত, কারণ তাদের অর্থনৈতিক জালিয়াতি মানুষের চোখে ধরা পড়ে গেছে। তাদের আবার এখন ধর্মের রাস্তা দরকার। মুসলমানবিদ্বেষ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বিদ্বেষ এবং রামমন্দির— এইগুলোই এখন সঙ্ঘ পরিবারের নতুন খেলার কৌশল।)

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরএসএস তার সামরিক ধরনের কাজের মধ্যে দিয়ে অজ্ঞ ও প্রশ্নহীন অনুগত সদস্যদের এক বাহিনী গড়ে তুলেছে যারা সঙ্ঘের আসল চরিত্র জানেও না, জানতে চায়ও না। এই প্রশ্নহীনতা আরএসএস-এর নানা স্তরের সদস্য ও সমর্থকদের মধ্যে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী চিন্তাভাবনা জাগিয়ে তোলা ও তাদের ধরে রাখার ক্ষেত্রে সুবিধেজনক হয়েছে। এই হিন্দুত্ববাদী চিন্তাভাবনাগুলি কী রকম, এবং সেগুলি কীভাবে এই গোষ্ঠীর মধ্যে বা বাইরে কোন প্রকৃত বিরোধিতার সম্মুখীন হয়নি বললেই চলে, সেটা আমি এই বইয়ে ব্যাখ্যা করব। এই অত্যন্ত সংগঠিত ধর্মীয় দক্ষিণপন্থার আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের প্রগতিশীলরা বড়জোর দু-একটা অসংগঠিত প্রচেষ্টা করেছেন। আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে এখন এক আশ্চর্য মিল— ঠিক আমেরিকার মতোই ভারতেও দক্ষিণপন্থীরা যতদূর সম্ভব দক্ষিণে যেতে পারে, চরমপন্থী হতে পারে, কিন্তু মূল ধারার মধ্যপন্থীরা (যেমন কংগ্রেস পার্টি) তাদের মধ্যপন্থা প্রমাণ করতে এবং সমাজতান্ত্রিক গণআন্দোলন থেকে দূরত্ব রক্ষা করতে ব্যস্ত। কংগ্রেসের মধ্যে কোনো শক্তিশালী জাতীয় নেতৃত্ব আজ আর তেমন নেই।

আরএসএস-এর ভেতরে যেটুকু বিরোধিতা হয়েছে সেটা আবার এসেছে তাদের মধ্যে অতি দক্ষিণপন্থী অংশ থেকে। অযোধ্যায় রাম মন্দিরের বিষয়টিকে সাময়িকভাবে সরিয়ে রাখার কৌশলের বিরোধিতা করেছেন সাধ্বী ঋতাম্বরার মত নেতারা। নির্বাচনের আগে তাদের এই বিরোধিতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, কিন্তু ভিএইচপি ও আরএসএস মন্দিরের ইস্যুটিকে আবার সামনে নিয়ে আসছে। (বরং, তাত্ত্বিক নেতা ও আরএসএস প্রচারক গোবিন্দাচার্যর মতো দু একজন ব্যতিক্রমী নেতা বিজেপির দরিদ্র বিরোধী, জনবিরোধী কাজের সোচ্চার সমালোচনা করেছেন। কিন্তু এখন বিজেপি লাগামছাড়া। সৎ তাত্ত্বিক নেতাদের তারা আর গ্রাহ্য করেনা। তাদের মিডিয়াগুলোতে মোদী, শাহ জাতীয় নেতা ছাড়া কারুর মুখ দেখানো হয়না।)

অদূর ভবিষ্যতে ভারতের সামাজিক কাঠামো অপরিবর্তনীয়ভাবে বদলে যাবে। এই বদল ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এক সময়ের নানা রঙের বাগানটি হয়ে উঠবে ধূসর, বিবর্ণ, পুষ্পপত্রহীন এক জঙ্গল— বাচ্চারা যেখানে  খেলা করতে যায় না, যুবক-যুবতীরা প্রকৃতির শোভা উপভোগ করতে যায় না, প্রেম করতে যায়না। ঐ জঙ্গলে যে কুৎসিত জীবটি বাস করে তাকে দেখলে সবাই ভয় পাবে। সে এখন ওখানকার দানব রাজা। ঔজ্জ্বল্যের প্রতি, সামাজিক প্রগতির প্রতি, ভালোবাসা, স্বাধীনতা ও জীবনের প্রতি সে দানব নিষ্ঠুর।

পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আমি আরএসএস এবং তার সন্তান যেমন বিজেপি, এবিভিপি ও ভিএইচপি আসলে কী, এবং এই আরএসএস পরিবারকে, সঙ্ঘ পরিবারকে, রুখতে গেলে আমাদের কী করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করব।

দানবের পেটে দু দশক– আরএসএস, বিজেপি ও হিংস্র হিন্দুত্বকে যেভাবে দেখেছি
লেখক- পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশক – পিপলস বুক সোসাইটি
প্রথম প্রকাশ – জানুয়ারি ২০২১
মূল্য – ২৫০ টাকা।

______

[1] পবিত্র কুমার ঘোষ, বর্তমান, ১৯ জুন, ১৯৯৭। ঐ সভাতেই আর এস এস-এর তাত্ত্বিক এইচ ভি শেষাদ্রি জোর দিয়ে বলেন যে ঊনবংশ শতকের “বাংলার রেনেসাঁস” ছিল একটি হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন। হাস্যকর প্রস্তাব, কারণ আসলে তা ছিল হিন্দুধর্মের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে এক প্রবল আন্দোলন।

*বানান অপরিবর্তিত