জয়ন্ত ভট্টাচার্য
চিকিৎসক, প্রাবন্ধিক, জনস্বাস্থ্য কর্মী
গত ২০.০৪.২০২১ তারিখ রাতে টিভিতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেঊ মোকাবিলার লক্ষ্যে ভাষণ দিয়েছেন। জোর দিয়েছেন ব্যক্তিগত আচরণবিধি এবং ঘরের মধ্যে থাকার ওপরে। কিন্তু যারা কোভিড রোগী, বিভিন্ন হাসপাতালে আক্ষরিক অর্থে অক্সিজেনের জন্য খাবি খাচ্ছেন, শ্বাস নিতে পারছেন না তাদের অক্সিজেনের ব্যবস্থা কী হবে তা জানাননি। (উল্লেখ করা দরকার, অক্সিজেনের সরবরাহের সমস্যার জন্য ভেলোরের সরকারি হাসপাতালে ১৯.০৪-এ ৭ জন কোভিড রোগী এবং ২১.০৪-এ মহারাষ্ট্রের নাসিকে ২২ জন কোভিড রোগী মারা গিয়েছেন।) দেশের মধ্যে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার ট্রান্সমিশন চেইন আটকানোর জন্য যে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করতে হবে তার কী হবে সেকথা আমরা জানতে পারিনি। নতুন করে কোভিড হাসপাতাল তৈরি বা হাসপাতালের কোভিড বেড বাড়ানোর লক্ষ্যে নির্দিষ্টভাবে কী কী করা হবে সে প্রশ্নেরও জবাব পাওয়া যায়নি। উত্তর পাওয়া যায়নি চিকিৎসার একান্ত প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য সামগ্রীর সুরাহা কীভাবে হবে এবং তার জন্য কী পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কোনও কথাই আমরা জানি না। যেমন আমরা জানতে পারিনি কী কারণে একেবারে ফ্রন্টলাইন কোভিডযোদ্ধা ডাক্তারদের চিকিৎসার জন্য যে ইন্সিউরেন্স কেন্দ্রীয় সরকার গতবছর চালু করেছিল সে ইন্সিউরেন্স গত কয়েকদিন আগে বন্ধ করে দেওয়া হল কেন।
নেচার-এ প্রকাশিত (২১.০৪.২১) একটি সংবাদের শিরোনাম— “India’s massive COVID surge puzzles scientists”। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—
The pandemic is sweeping through India at a pace that has staggered scientists.
হালে ল্যান্সেট পত্রিকায় (ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ৬০-এর বেশি) প্রকশিত (৮.০৫.২১) সম্পাদকীয় প্রবন্ধ নিয়ে ভারত সরকারের প্রবল ক্রোধের সঞ্চার হয়েছে। ভারতের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় (১৩.০৫.২১) প্রকাশিত হয়েছে “Covid: The Lancet journal calls on Modi govt to own up mistakes”। এ প্রতিবেদনে বলা হল—
The journal asked the Centre to implement a science-based response to steer India out of its Covid-19 crisis and ‘botched vaccination campaign.
বলা হল, ২২ সদস্যের এক এক্সপার্ট গ্রুপ কেন্দ্রীয় দপ্তরের সঙ্গে দেখা করে প্রস্তাব দিয়েছে যে সামাজিকভাবে দুর্বল ও ভঙ্গুর সামাজিক অংশের মানুষের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করে এবং আগে থেকে ঘোষণা করে ৮ থেকে ১০ সপ্তাহের জন্য জাতীয় লকডাউন জারি করা দরকার।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে (৮.০৫.২১) জানায় যে আইএমএ নিতান্ত বিস্মিত এটা দেখে যে—
…the extreme lethargy and inappropriate actions from the Ministry of Health in combating the agonizing crisis born out of the devastating second wave of the COVID-19 pandemic … The equitable, accessible and affordable vaccination for all above 18 years were demanded by IMA, based on scientific facts from April 6th onwards.
আরও বলা হয় রিপোর্টিং এবং রেজিস্ট্রি তৈরির ক্ষেত্রে কোনও স্বচ্ছতা নেই। বলা হয়, স্বাস্থ্য বাজেটকে জিডিপি-র ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮-১০ শতাংশ করতে হবে। প্রসঙ্গত, এবারের স্বাস্থ্য বাজেটের ঢক্কানিনাদ সরিয়ে বিচার করলে দেখা যাচ্ছে জিডিপি-র মাত্র ০.৩৪ শতাংশ ব্যয়িত হচ্ছে স্বাস্থ্যখাতে।
এসমস্ত পর্যবেক্ষণ এবং মতামত দেশের অভ্যন্তর থেকেই উঠে আসছে। তাহলে ল্যান্সেট-এর সম্পাদকীয় ঠিক কি কি বলেছিল যেজন্য এত হুল্লোড় হল ভারত সরকারের এবং সংবাদমাধ্যমগুলোর এরকম প্রতিক্রিয়া হল?
ল্যান্সেটের সম্পাদকীয়— “India’s COVID-19 emergency”
সম্পাদকীয়টি শুরু হয়েছে এই বাক্যটি দিয়ে–
ভারতের যন্ত্রণার দৃশ্যগুলো হৃদয়ঙ্গম করা বড্ড শক্ত।
এরপরে উল্লেখ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মার্চ মাসের ৭ তারিখের বিখ্যাত উক্তি “আমরা অতিমারির খেলা শেষ করে এনেছি (end game)।” প্রসঙ্গত দুটি ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করব।
প্রথমত, দিল্লি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ৬২তম বার্ষিক সম্মেলনে হর্ষবর্ধন একথাগুলো বলেছিলেন। তাঁর হুবহু বক্তব্য ছিল–
We are in the “end game” of the Covid-19 pandemic in India and to succeed at this stage, politics should be kept out the Covid-19 vaccination drive.
এরপরে আরও মনোজ্ঞ কথা বলেছিলেন–
…we need to follow 3 steps: Keep politics out of the Covid-19 vaccination drive, trust the science behind Covid-19 vaccines, and ensure our near and dear ones get vaccinated on time.
এবং–
If poor and underdeveloped countries continue to harbour the novel coronavirus, we shall not be able to ensure safety for all. A fair and equitable distribution of the vaccine is the biggest need of the hour.
সঙ্গে এটাও জানিয়েছিলেন, অন্য অনেক দেশের যা নেই সেটা ভারতে আছে–
…we have a steady supply of Covid-19 vaccines.
নিয়তির কী পরিহাস! আজ দেশজুড়ে ভ্যাক্সিন সঙ্কটের সময় ভ্যাক্সিন নিজেই রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠল, ভারতের মানুষ ভ্যক্সিনের জন্য হাহাকার করছে, যে কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বলা বিজ্ঞানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দুটি ভ্যাক্সিনের মধ্যেকার ব্যবধান ক্রমাগত বেড়ে চলেছে (১৩.০৫.২১-এ সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১২ সপ্তাহের ব্যবধানের বিধান দেওয়া হয়েছে), এখনও অব্দি ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের ভ্যাক্সিন দেবার কাজ শুরুই করা গেল না, অথচ মার্চের প্রথম সপ্তাহে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানাচ্ছেন যে যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাক্সিন আছে। সর্বজনীন টিকাকরণের সাফল্যের জন্য ১৯শে এপ্রিল থেকে ইজরায়েলে এবং ১৪ মে থেকে আমেরিকায় বাইরে বেরোলে মাস্ক পরা আর বাধ্যতামূলক নয়।
দ্বিতীয় ঘটনা– ২৮ জানুয়ারি, ২০২১-এ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে মোদি স্বয়ং বলেছিলেন–
India took a proactive public participation approach and developed a COVID-specific health infrastructure and trained its resources to fight COVID.
ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন যে কোভিডের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই সমগ্র বিশ্বকে উজ্জীবিত করেছে। ভারত “বিশ্বগুরু”-র আসনে বসবে। আর আজ? মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৪০,০০,০০০। মৃত্যুর সংখ্যা ২ লক্ষ ৬২,০০০। প্রায় প্রতিদিন ৪০০০ মানুষ মৃত্যু মিছিলে যোগ দিচ্ছে (১৪.০৫.২১ তারিখ পর্যন্ত)।
নেচার-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন (“India’s COVID-vaccine woes – by the numbers”, ১৫.০৪.২০২১) জানাচ্ছে—
গতবছর জুন মাসে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ঘোষণা করেছিল সিরাম ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়াকে ১০০ কোটি ভ্যাক্সিন ডোজের জন্য লাইসেন্স দিয়েছে কম এবং মাঝারি আয়ের দেশগুলোর কাছে পৌঁছনোর জন্য। কিন্তু গত মার্চ মাসে যখন ভারতের তরফ থেকে রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয় তখন অব্দি মাত্র ৬ কোটি ৪০ লক্ষ ডোজ রপ্তানি হয়েছে। এবং এর মধ্যে ২ কোটি ৮০ লক্ষ ডোজ রপ্তানি হয়েছে COVAX (দরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের দেশে সবার কাছে ভ্যাক্সিন পৌঁছে দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা) মারফৎ।
২১.০৪.২১ তারিখের আনন্দবাজার পত্রিকা-র সংবাদ “টিকা: এখন দামও বেশি, দায়ও রাজ্যের”। টিকাকে অন্যান্য পলিসির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে বাজারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে বর্তমানে সিরাম ইন্সটিটিউট যে টিকা ১৫০ টাকায় এবং ভারত বায়োটেক ২০৬ টাকায় দিচ্ছে সে দাম (দুটি ডোজ মিলে) ২০০০ টাকা থেকে ৮০০-১০০০ টাকা অব্দি লাগতে পারে। যেদেশে সামাজিক সুরক্ষা বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব প্রায় নেই, কয়েক কোটি মানুষ কর্মহীন, দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করা মানুষের সংখ্যা ইংল্যান্ডের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি সেদেশে এভাবে, এই অর্থমূল্যে কজন টিকা কিনতে পারবে? মোদ্দা কথা হল, সর্বজনীন টিকাকরণ হয়তো একটি কুহকী আশা হিসেবে রয়ে যাবে।
ভারতে শুরু হয়েছে টিকার সঙ্কট। সিরাম ইন্সটিটিউটের প্রতি মাসে ১ কোটি ডোজ তৈরি করার কথা ছিল। বর্তমানে তৈরি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ লক্ষ ডোজ। আমেরিকার সিএনএন সংবাদসংস্থার খবর হচ্ছে “The world’s biggest vaccine producer is running out of Covid-19 vaccines, as second wave accelerates” (১৮.০৪.২১)। এ খবরে বলা হচ্ছে—
In the face of crisis, the government and SII have shifted focus from supplying vaccines to COVAX to prioritizing their own citizens at home. “Deliveries of doses from the Serum Institute of India will be delayed in March and April,” said COVAX, which is run by a coalition including international vaccine organization Gavi and the World Health Organization, in a news release on March 25. “Delays in securing supplies of SII-produced Covid-19 vaccine doses are due to the increased demand for Covid-19 vaccines in India.”
আরেকটি টিকা সংক্রান্ত তথ্য এখানে মাথায় রাখা দরকার। ‘ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ’ সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে, টিকা পাওয়ার কথা মোট ৮৪.১৯ কোটি নাগরিকের। ধরা যাক (এই অনুমান সমীক্ষায় নেই) কেন্দ্রের পূর্বেকার নির্ধারিত দরে ডোজ়প্রতি দাম ১৫০ টাকা। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিককে দু ডোজ় টিকা দিতে লাগবে ২৫,২৫০ কোটির সামান্য বেশি। ডোজ়প্রতি ২০০ টাকা ধরলেও মোট খরচ ৩৩,৭০০ কোটির কম। এ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে কোভিডের টিকা বাবদ বিশেষ বরাদ্দ ৩৫,০০০ কোটি। বলা হয়েছিল, দরকার পড়লে অঙ্কটা বাড়ানো হবে। এবং, টাকাটা রাজ্যগুলিকে হস্তান্তর করা হবে। আনন্দবাজার পত্রিকার উত্তর-সম্পাদকীয়তে (১৫.০৫.২১) সুকান্ত চৌধুরী লিখেছেন—
সমীক্ষার হিসাব অন্যরকম, কেন্দ্রের নতুন বিধানে। সেই অনুসারে রাজ্যগুলিকে বেশি দামে খোলা বাজার থেকে টিকা কিনতে হবে। সেই দাম ডোজ়প্রতি ৪০০ টাকা ধরে কেন্দ্র-রাজ্য মিলিয়ে মোট খরচ দাঁড়াচ্ছে ৬৭,১৯৩ কোটি অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ; তার মধ্যে কেন্দ্রের ভাগ মাত্র ২০,৮৭০ কোটি, অর্থাৎ তিন ভাগের এক ভাগও নয়। অন্যভাবে বললে, করদাতার বিপুল অর্থ অতিরিক্ত ব্যয় হবে। লাভবান হবে কতিপয় টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা— যদিও দেশের বৃহত্তম উৎপাদক কবুল করেছেন, ডোজ়প্রতি ১৫০ টাকা দামেও তাঁদের খানিক লাভ থাকছে।
একে কি দূরদৃষ্টির অভাব বলব কিংবা বিজ্ঞানীদের উপেক্ষা করার ফসল বলব? অতিরিক্ত আত্মতুষ্টি এবং তৈরি করা পলিসির ওপরে অটল বিশ্বাস? জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে যাদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা ছিল— এপিডেমিওলজিস্ট, পরিসংখ্যানবিদ, গবেষক, মেডিক্যাল এক্সপার্ট, মেডিক্যাল মডেলার, সামাজিক কর্মী প্রভৃতি— তাদের প্রায় কোনও ভূমিকা নেই। নীতি নির্ধারণ করে রাজনৈতিক নেতা, আমলা এবং রাজনীতিবিদরা। ফলে এদেশে বৈজ্ঞানিক নীতি নির্ধারণের ভবিষ্যৎ প্রায় অথৈ জলে। এখানে এক প্রয়োজনীয় ইতিহাসকে স্মরণ করা প্রয়োজন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমেরিকায় যুদ্ধাস্ত্র তৈরির মধ্য দিয়ে মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রি এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যে প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার তাঁর বিদায়ী ভাষণে দেশবাসী এবং রাজনৈতিক নেতাদের এই জায়মান “মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স” সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল এই কমপ্লেক্স রাষ্ট্রিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করবে এবং রাজনীতির গতিমুখ নির্ধারণ করবে। বর্তমান সময়ে এর পরিবর্ধিত এবং ভিন্নতর যে চেহারা দেখতে তাকে আমার মনে হয় “মেডিক্যাল-ইন্ডাস্ট্রিয়াল-স্টেট-পলিটিক্স কমপ্লেক্স”। এই কমপ্লেক্সের কাছে বিজ্ঞানকে বারংবার নতজানু হতে হয়— সে আমেরিকায় ট্রাম্পের দম্ভের বিভিন্ন প্রকাশই হোক বা আমাদের দেশে কোভিড সংক্রান্ত তথ্য স্বচ্ছতা নিয়ে পূর্ণত প্রকাশ না করা হোক। আমি এ বিষয়টিকে নিয়ে পরে আলোচনা করছি।
ঠিক কী বলা হয়েছে ল্যান্সেট-এর সম্পাদকীয়তে
ল্যান্সেট-এ বলা হয়েছিল ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি মডেল দেখিয়েছিল ভারতে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হয়েছে। অথচ বিজ্ঞানীমহলে এখন এটা স্বীকৃত ধারণা, জনসমষ্টির ৬০-৭০ শতাংশের মধ্যে ইমিউনিটি গড়ে না উঠলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব নয়। আইসিএমআর-এর জানুয়ারিতে (২০২১) করা একটি স্টাডি দেখিয়েছিল মাত্র ২২ শতাংশ জনসংখ্যার মাঝে সার্স-কোভ-২-এর প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি আছে। এ তথ্যকেও আমল দেওয়া হয়নি। টিকার অন্তত ১টি ডোজ পেয়েছে এরকম সংখ্যা (১২.০৫.২১-এর তথ্য অনুযায়ী) মানুষের সংখ্যা ১৭ কোটি ৮০ লক্ষ। দুটি ডোজই পেয়েছে এমন সংখ্যা ৩ কোটি ৯৩ লক্ষ, অর্থাৎ জনসংখ্যার ২.৯ শতাংশ। এবার আমরা অনুমান করতে পারি যে ৬০-৭০ শতাংশ জনসংখ্যার টিকাকরণ সম্পূর্ণ করতে কতদিন লাগতে পারে!
এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ল্যান্সেটের তরফে দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল— প্রথমত, স্থগিত এবং জটপাকানো টিকাকরণ প্রোগ্রামকে যুক্তিসঙ্গত করতে হবে এবং উপযুক্ত দ্রুততায় কার্যকরী করতে হবে। সম্পাদকীয়র মন্তব্য ছিল—
The government must work with local and primary health-care centres that know their communities and create an equitable distribution system for the vaccine.
আমরা চাক্ষুষ করছি equitable distribution-এর নমুনা। এখনও অবধি টিকা দেওয়ার অভিন্ন নীতি তৈরি হয়নি। প্রত্যাশিত ছিল এবারের বাজেটে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে টিকার জন্য যে ৩৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল সেখান থেকে সরকার বিনামূল্যে গণটিকাকরণ করবে। কিন্তু একদিকে টিকার সাপ্লাই নেই, অন্যদিকে সরকারি তরফে কত টিকা দেওয়া হবে আর প্রাইভেট সেক্টরে কত দামে কত টিকা পাওয়া যাবে— এ দুই ক্ষেত্রেও সরকারকে নিশিতে পাওয়া চিন্তাক্ষমতা বিবর্জিত অবস্থায় দেখাচ্ছে।
ল্যান্সেটের দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল, যে হারে সংক্রামিতের সংখ্যা বাড়ছে তার মোকাবিলা করার জন্য সরকারকে নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রতি ১৪ দিনে সবার কাছে অবারিত করতে হবে— যাতে মানুষ স্বচ্ছভাবে বুঝতে পারে কী ঘটছে এবং অতিমারির রেখচিত্রকে বাঁকিয়ে দেওয়ার জন্য কী করা প্রয়োজন।
সম্পাদকীয়তে অতিকেন্দ্রিক নীতির পরিবর্তে “federal government” শব্দটি একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে—
Modi’s actions in attempting to stifle criticism and open discussion during the crisis are inexcusable… Modi’s Government would be responsible for presiding over a self-inflicted national catastrophe.
এখানেই যত ক্রোধ এবং গোঁসার জন্ম হয়েছে।
বর্তমান সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং শাসকদল যখন ভ্যাক্সিন, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি জীবনদায়ী উপকরণ নিয়ে ল্যাজেগোবরে হচ্ছে সেসময় হঠাৎ বড্ড “ফেডারেল” হয়ে উঠেছে অতিরাষ্ট্রিক কেন্দ্রীয় সরকার। অক্সিজেন থেকে ভ্যাক্সিন, ওষুধ থেকে প্রযুক্তি সমস্ত দায়িত্ব রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দিয়েছে। যুক্তি হিসেবে রয়েছে— স্বাস্থ্য রাজ্যের তালিকাভুক্ত বিষয়, কেন্দ্রের নয়। ১৯৪৭ থেকে ৭৪ বছর পার করে এসেও স্বাস্থ্য না মৌলিক অধিকারের মর্যাদা পেয়েছে, না গৃহীত হয়েছে মানবাধিকার হিসেবে। তেমনি স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত উপকরণ যেগুলো public goods বা জনসাধারণের সবার জন্য সুগম এবং অধিকার ও আয়ত্তের মধ্যে থাকা বিষয় হবার কথা ছিল সেগুলো স্বাস্থ্যের বদলে স্বাস্থ্যপরিষেবায় রূপান্তরিত হয়ে গিয়ে রাষ্ট্রের তরফে খোলা বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে ক্রয়যোগ্য পণ্য হয়ে উঠল। এই অতিমারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার একেবারে ভাঙাচোরা অবস্থা, জনস্বাস্থ্যের অবর্ণনীয় পরিণতি এবং সামাজিক সুরক্ষার সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি নিষ্ঠুরভাবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের পরিষ্কারভাবে বুঝে নিতে হবে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণের ভরকেন্দ্রে কে থাকবে— মানুষ কিংবা মুনাফা?
ল্যান্সেটের শেষ পরামর্শ হল এসমস্ত কাজের সাফল্য নির্ভর করবে—
…on the government owning up to its mistakes, providing responsible leadership and transparency, and implementing a public health response that has science at its heart.
এখানে গোমূত্র, গোবিষ্ঠা, করোনিল, গঙ্গাজল পান, করোনামাতার পুজো কিংবা থালা বাজানোর কোনও জায়গা নেই। কেবলমাত্র কঠোর, যুক্তিনির্ভর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আমাদেরকে এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে পারবে।
ল্যান্সেটের সম্পাদকীয়র আগে প্রথমে দ্য সানডে টাইমস পত্রিকায় (২৫.০৪.২১) এবং পরের দিন দ্য অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্রে (২৬.০৪.২১) ফিলিপ শেরওয়েলের লেখা একই নিবন্ধ ছাপা হয়। সে নিবন্ধের শিরোনাম ছিল “Modi leads India into viral apocalypse”। এ নিবন্ধে কড়া ভাষায় বলা হয়—
ঔদ্ধত্য, অতি-জাতীয়তাবাদ এবং আমলাতান্ত্রিক অযোগ্যতা একসঙ্গে জুড়ে ভারতে এক বিপুল বিপর্যয়ের (epic proportions) সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যখন জনতার ভিড় উপভোগ করছেন (basking) তখন ভারতীয় জনতা দমবন্ধ অবস্থায় রয়েছে (suffocating)।
এরপরে যোগ করা হয়েছে—
India has also been felled by a cocktail of hubris, complacency and nationalist policies, all exacerbated by a slow domestic vaccine roll-out, an ill-equiped health system, lax protection, pandemic fatigue and promotion of the economy over containment.
এরকম তীক্ষ্ণ সমালোচনার পরে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় হাইকমিশন একটি কড়া জবাব দেয় ২৬.০৪.২১ তারিখে। এই জবাবের ৪ নম্বর পয়েন্টটি বেশ কৌতুকজনক। এখানে বলা হয়—
…the article has strangely rushed to blame the surge on the restricted election campaign by Hon’ble Prime Minister of India and one religious gathering.
সত্যিই তো! আমরা নিজেরাই তো দেখেছি প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের সময় হাতে গোনা দুয়েকটি মাত্র প্রচার করেছেন! আবার একটিমাত্র ২,৫০,০০০ লোকেরও বেশি কুম্ভমেলায় মানুষের সমাগমকে দোষারোপ করা হয়েছে। বড্ড আক্ষেপের কথা। অবশ্য এখন গঙ্গায় যে কয়েকশ মৃতদেহে ভেসে পশ্চিমবঙ্গের দিকে আসছে সেগুলো অনেকে সন্দেহ করছে কুম্ভমেলার উপজাত। তাছাড়া সরকারি হিসেবেই (হিসেবের সত্যতা নিয়ে সংশয় থাকলেও) কুম্ভমেলা পরবর্তী কোভিড সংক্রামিতের সংখ্যা ২০০০-এর বেশি। “Modi leads India into viral apocalypse”।
নিবন্ধটিতে বাইডেন প্রশাসনকেও বিদ্ধ করা হয়—
The administration has been widely criticised for continuing Donald Trump’s “America First” policy when it comes to vaccine.
কিন্তু আমেরিকা কড়া বা মৃদু কোনও ভাষাতেই জবাব দেয়নি। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে ভিন্নমতকে, সে যতই কটু হোক না কেন, সম্মান করা হবে এটাই রীতি। তার বিপরীতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি অসহিষ্ণুতার সন্ত্রাসের সামাজিক বাতাবরণে।
নেচার-এর সতর্কবাণী
নেচার পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল (৬.০৫.২১) “India, Brazil and the human cost of sidelining science” শিরোনামে। দক্ষিণপন্থী বলসোনারো এবং ট্রাম্পের বিজ্ঞান-বিরোধী নীতি এবং ভারতের তথ্য গোপন করা নিয়ে এ প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। ভারতের আত্মতুষ্টির কথা বলতে গিয়ে বলা হয়েছে গতবছর সেপ্টেম্বরে কোভিড কেসের সংখ্যা ৯৬,০০০ থেকে এ বছরের মার্চের গোড়ায় ১২,০০০-এর নীচে নেমে আসে। অথচ বিজ্ঞানীরা বারংবার মারাত্মক দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে জানুয়ারি থেকেই সতর্ক করে আসছিলেন। নেচার-এর পর্যবেক্ষণ—
India has other problems. One is that it’s not easy for scientists to access data for COVID-19 research. That, in turn, prevents them from providing accurate predictions and evidence-based advice to the government. Even in the absence of such data, researchers warned the government last September to be cautious about relaxing COVID-19 restrictions.
পরবর্তীতে স্পষ্ট করে বলা হল—
It’s never good when research communities have a difficult relationship with their national governments. But this can be fatal in the middle of a pandemic — when decisions need to be swift and evidence-based. By sidelining their scientists, the governments of Brazil and India have missed out on a crucial opportunity to reduce the loss of life.
একই প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে বলা হল ভারতের নীতি নির্ধারকদের ক্ষেত্রে সময় এসেছে—
…to trust those with relevant expertise, to make sure the necessary data are collected and available, and to accept the value of scientific findings, even if they do not fit the government narrative.
অস্যার্থ, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের স্বাধীনতা দাও। জুতোর মাপে পা-কে কেটে ছোট না করে, অপছন্দের হলেও, সরকারি ভাষ্যের সঙ্গে খাপ না খেলেও বৈজ্ঞানিকভাবে লব্ধ ধারণাকে গ্রহণ করো।
বিজ্ঞানীদের সতর্কবাণী
ভারতে প্রতিদিন ৭,৫০০ মেট্রিক টন অক্সিজেন তৈরি হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় চিকিৎসার বা মেডিক্যাল ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হয় প্রতিদিন ৬,০০০ মেট্রিক টন। বর্তমানের অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে চিকিৎসার জন্য চাহিদা বহু বহুগুণ বেড়ে গেছে। এক নারকীয় পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে রোগী এমনকি ফুটপাথেও খাবি খেতে খেতে মারা যাচ্ছে। Scroll.in সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী (১৮.০৪.২১)—
It took eight months to invite bids for over 150 oxygen generation plants costing just Rs 200 crore. Six months later, most still aren’t up and running.
আমাদের নীতি নির্ধারকদের কি কোনও অনুমানই ছিল না যে এরকম এক পরিস্থিতি জন্ম নিতে পারে? আমাদের রাষ্ট্রিক নীতি নির্ধারণের মাঝে জনস্বাস্থ্যের কি কোনও স্থানই নেই? যে মানুষটি মারা যাচ্ছে সে কখনও এ প্রশ্ন করতে পারবে না। কিন্তু ঢাল-তলোয়ারহীন প্রতিটি স্তরের নিবেদিতপ্রাণ স্বাস্থ্যকর্মীদের যে বাহিনি লাঠি দিয়ে কোভিডের কামানের গোলার মোকাবিলা করছে তারা এই সঙ্গত প্রশ্ন নিশ্চয়ই করবেন। এ সঙ্কট তো আসলে ভারতের জনস্বাস্থ্যের মহাবিপর্যয়। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী নির্ঘন্ট ঘোষণার পরেই ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম সরকারের কাছে করোনা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করে বারংবার চিঠি দিয়েছে। সতর্ক করেছে। কিন্তু সতর্কতার বিধি শিকেয় তুলে নির্বাচন কমিশন ৮ দফায় এ রাজ্যে ভোট করিয়েছে। কোভিড ছড়িয়ে পড়ার পথ সুগম হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার কুম্ভমেলায় ধর্মাচরণের জন্য কয়েক লক্ষ লোকের জমায়েতে অনুমতি দিয়েছে। সংক্রমণ ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে।
বর্তমানে করোনাভাইরাসের যে ভ্যারিয়েন্ট (B.1.617) এমন বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে সে ব্যাপারে Indian SAARS-CoV-2 Genetics Consortium বা INSACOG-এর বিজ্ঞানীরা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সরকারকে সতর্ক করে আসছিলেন। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিচ্ছিলেন। রাজনৈতিক নেতা ও আমলাদের নিয়ে তৈরি নীতি নির্ধারক সংস্থা এগুলোকে পাত্তা দেয়নি। নিজেদের আত্মম্ভরিতা এবং প্রবল আত্মতুষ্টিতে মগ্ন হয়ে ছিলেন। INSACOG-এর বিজ্ঞানীরা তাদের পর্যবেক্ষণের ফলাফল ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (NCDC)-কে দিয়ে সতর্ক করেছিলেন যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল মানুষ বেশি বিশ্বাস করে রাজনীতিকদের, বিজ্ঞানীদের নয়।
ডেটা বা তথ্যের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা, ভুল তথ্য, পছন্দমতো তৈরি-করে-নেওয়া তথ্য এবং বিজ্ঞানীদের হাতে পূর্ণ তথ্য তুলে না দেওয়া আজকের অতিমারিকে অনেক বেশি বিপজ্জনক করে তুলেছে। সায়ান্স-এর মতো বন্দিত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে (৪.০৫.২১) “‘There are so many hurdles,’ Indian scientists plead with government to unlock COVID-19 data”। প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে—
Why the Indian government is so reticent to share data is unclear.
২৯.০৪.২১-এ এখন অব্দি ৯০০-র বেশি বিজ্ঞানী ও স্বাধীন চিন্তা সম্পন্ন মানুষের স্বাক্ষর সমন্বিত (যার একজন স্বাক্ষরকারী এই প্রবন্ধ লেখকও) চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে “AN OPEN APPEAL TO THE HON’BLE PRIME MINISTER OF INDIA” শিরোনামে। সেখানে একেবারে নীচের দিকের (granular) ডেটা চাওয়া হয়েছে। চিঠির কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি—
We emphasize the need for systematic collection and timely release of data on:
(a) large-scale genomic surveillance for new variants,
(b) testing and clinical data for better predictions of the spread of infection,
(c) the clinical outcomes of hospitalized patients, and
(d) immune response to vaccination in our population.
এই প্রেক্ষিতে স্বাক্ষরকারীদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী—
1. Wide access to the granular testing data that ICMR has been collating since the beginning of the pandemic. The ICMR database is inaccessible to anyone outside of the government and perhaps also to many within the government. Most scientists – including several identified by DST and NITI Aayog to develop new prediction models for India – do not have access to these data.
Public health measures in India should necessarily vary from one local area to another, because there is a great geographical variability in patterns of spread of the infection due to local conditions. This necessitates detailed analysis of large-scale granular epidemiological data available with ICMR.
2. Access to clinical data (with appropriate safeguards for maintaining patient privacy), which is required for analysis and predictions, and for estimation of the requirements for oxygen, medical supplies, ventilators, ICU beds, etc.
3. Adequately fund and widen the network of organizations to collect large-scale surveillance data based on genome-sequencing of the coronavirus, and release these data rapidly in the public domain.
The Indian SARS-CoV-2 Consortium on Genomics (INSACOG), established for genomic surveillance, is only sequencing the coronavirus from about 1% of infected individuals.
4. Expand the network of organizations to collect population-level data on immune response to the infection and vaccination.
5. The “Aatmanirbhar Bharat” policy has made importing of scientific equipment and reagents an extremely tedious and time-consuming process, requiring approval at the level of the Secretaries of Ministries or Departments. This has reduced our ability to scale up testing by developing new testing platforms and has impaired our ability to sequence viral genomes for surveillance rapidly and accurately.
কিন্তু এখন অব্দি অরণ্যে রোদন ছাড়া কিছু হয়নি।
আমেরিকার নির্বাচনের প্রাক্কালে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সমস্ত সদস্যের যৌথভাবে লেখা সম্পাদকীয়তে (৮.১০.২০২০) বলা হয়েছিল যে কোভিড-১৯ বিশ্ব জুড়ে সঙ্কট তৈরি করেছে। এবং এ সঙ্কট দেশের নেতৃত্বকে বুঝে নেওয়ার একটা পরীক্ষা। আমেরিকাতে নেতৃত্ব এ পরীক্ষায় পূর্ণত বিফল হয়েছে। ২০০,০০০ মানুষের উপরে জীবনহানি হয়েছে, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, অসংখ্য বেকার তৈরি হয়েছে। সম্পাদকীয়টির সিদ্ধান্ত— সম্পাদকীয়র শিরোনাম “Dying in a Leadership Vacuum”—
নেতৃত্ব ছাড়া অন্য কেউ এভাবে হঠকারীভাবে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেললে কিংবা টাকা তছনছ করলে বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হত। এরপরেও আমাদের নেতৃত্ব তাদের কৃতকর্মের জন্য আমাদের কাছে অব্যাহতি দাবী করেছে। কিন্তু এই নির্বাচন আমাদের হাতে বিচারের ক্ষমতা দিয়েছে। যৌক্তিক মানুষেরা আমাদের প্রার্থীদের বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আপত্তি জানাবে নিশ্চয়ই। কিন্তু সত্য কখনও ‘লিবারাল’ বা ‘কনজারভেটিভ’ নয়। কিন্তু আমাদের জীবদ্দশার সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্যের সঙ্কটের প্রশ্ন যখন আসে তখন পরিস্থিতি দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা বিপজ্জনকভাবে অকর্মণ্য। আমরা এদেরকে আর উৎসাহ কিংবা সামর্থ্য জোগাতে পারি না যাতে তারা আবার নেতা হিসেবে ফিরে আসে এবং হাজার হাজার আমেরিকানের মৃত্যু ঘটে। আমরা এদের আর ফেরার অনুমতি দিতে পারি না।
সম্পাদকীয়র শুরুতেই বলা হয়েছিল—
Here in the United States, our leaders have failed that test. They have taken a crisis and turned it into a tragedy.
আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে কোনও মিল বা সংযোগ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে?
পৃথিবীর সবচেয়ে মান্য মেডিক্যাল জার্নালে (ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর ৭৮-এর বেশি) আমেরিকার নির্বাচনের প্রাক্কালে এরকম সম্পাদকীয় লেখা হচ্ছে। আমরা এখানে এ কাজটি করতে কবে পারব? সময় উত্তর দেবে।