Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

বহতা অংশুমালী

ছটি কবিতা -- বহতা অংশুমালী

ছটি কবিতা

 

মনের মধ্যে খুনের কাছে

মনের মধ্যে খুনের কাছে যেতেই হবে
আবার করে যেতে হবে মনের মধ্যে
খুনের কাছে
ও প্রেম তোমার আগের প্রেমিক
তাকেও কাছে পেতেই হবে
রাতের টেবিল নেমন্তন্নে
দেখতে হবে চোখের পলক
ঝুঁকছে নাকি ঝুঁকছে না তা
মনের মধ্যে খুনের গলি
অলিগলি
কেমন চলি
উঁহু

হিসেবগুলো মাথার পোকা
হিসেবগুলি আমি কি তার
তেমন প্রভু?
প্রভু হবার
কী খেসারত
সেইটে বুঝে
বীজ রোয়া আর ফসল তোলা
শ্বাসের ভিতর
শ্বাসের কষ্ট
প্রেমের ভিতর
গসাগু আর
প্যাশন নষ্ট
প্রাণের ভিতর
শৈশব নেই
দোলের বালতি
মাবাপ গোলে
বাচ্চা শুধুই রং বোঝে তার
চিলচিৎকার, ছুটোছুটি
সেই বসন্ত
বসন্ত নেই
আজ কেবলই
হিসেব থাকবে
সঙ্গিনী আজ
জানতে পারবে
জানেও হয়তো
ধীর গতি তাই
চলাফেরায়
ক্যালেন্ডারকে
ফাল্গুন যে
তুমুল নাড়ায়
দেওয়ালে তার
নিখুঁত বৃত্ত
কিসের কৃত্য
দৈনন্দিন
কিসের এ পাপ?
ওই ঢোঁড়া সাপ
বিষের কাছে
আর না ওঠা
ফণার কাছে
যেতে হবেই
মনের ভিতর
খুনের কাছে

 

শাপমোচন

আমার কঙ্কাল থেকে কিছুতেই মাংস সরছে না
শুকোও শুকোও!
তিনি পিপাসার্ত, আমিও উদ্বেল
কারণবারির পাশে অধৈর্য্য শ্মশান জেগে আছে

 

লাল স্বেচ্ছাসেবী

সমস্ত সকালটা অপমানে নীল হয়ে রয়েছে
কাজ নেই, ভাত নেই, উঞ্ছবৃত্তির চাল
সমস্ত শহরে যুবকেরা এমাজন, সুইগি, ম্যান্ত্রা আর বিগবাস্কেটের টিশার্ট পরে
ছুটে বেড়াচ্ছে
মুখোশে মুখ ঢাকা
মুখোশের তলায় অপমান
বৃষ্টিতে পাড়ার রাস্তা মুখ ঢাকছে
কুকুরের পায়খানা আর এঁটো মিলেমিশে এক অদ্ভুত গন্ধ
গন্ধে অপমান
এত অপমান স্খালন করার জন্য আমরা জোট বাঁধছি
এত অপমান একা একা সহ্য করা যায় না
হাথরাসে একটা মেয়ে কাটা জিভের তলা দিয়ে কিসব বলতে গেল
পারল না।
পুড়ে গেল
অপমান
অসংখ্য শ্রমিক খালি ট্রেনে জল না পেয়ে শুকোতে শুকোতে যাচ্ছিল
এত অপমান! শাড়ি শার্ট সেমিজের তলায়
রাম রাম করতে করতে মরা মরা শোনা যাচ্ছে চতুর্দিকে
কারা যেন কারবালা প্রান্তরের অলীক দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে চলল
এদিকে শহরের সমস্ত ডাস্টবিনে না তোলা ময়লার সঙ্গে সঙ্গে ইদানীঙের কত যে দুঃখ পচছে
চারদিকে উইকেট পড়ছে। ঝুপঝাপ, টুপটাপ
তবু গলি ক্রিকেট খেলছে না কেউই
এত অপমান!
এত অপমান একা একা সওয়া যায়?
আমরা তাই জোট বাঁধছি
কিছু অপমানকে কাঁধ দিতে
কিছু অপমানকে ফেরত দিতে

 

সিঁড়ি তুমি কার?

সে আমার মধ্যে দিয়ে প্রসারিত হয়
লতায় পাতায়
চৈতন্য আচ্ছন্ন করে
সে আমার ঠোঁটে ঢুকে তার ঠোঁট চায়
রাক্ষস মুহূর্তে সেই সর্বনাশী ঘিরে ধরে
আলো ফুটিফুটি, তার চোখ দুটি হাতড়ায়
রাতের সফেদ ফুল পাশে রেখে কাকে পায়
ছায়া ছায়া রাস্তায় কার হাত কাড়ে
আমি যত কর্পোরেট, যত আমি শান্ত স্নিগ্ধ যোগিনীর পারা
যত আমি লিখিপড়ি ধুয়ে থুয়ে কাজ করি সারা
পাশাবতী পাশা উলটে দেয়
ডালিম কুমার, তাকে অন্ধ ক’রে আস্ত খেতে যায়
বুকের সিঁড়িতে খাড়া জিজ্ঞাসে সে সিঁড়ি তুমি কার?
সশব্দে ডালিম ফাটে রক্তবর্ণ আর
অম্লানবদনে বলে আমার হৃদয় –
তোমার তোমার!

 

স্মার্টনেস মরিচাবিহীন

তোমার সমূহ স্মার্টনেস
অপ্রেম থেকে আসে
উল্টে শোও।
বিশ্বাসের ক্ষণে
বীজের তুমুল দিকে এমন বেদনা দেব
সাদা রং করা সেই পেল্লায় বাড়িটা
সমস্ত সুশিক্ষা নিয়ে জানলায় জানলায়
মুখ বাড়িয়ে দেখবে
যন্ত্রণার একস্বন
অভিজাত পল্লী আর সমস্ত নিদ্রালু গাছপালা
অবাক বালকের মতো দুপুরের ঘুম ফেলে চোখ কচলাবে
সিলেবাস বহির্ভূত অমোঘ উৎকট শব্দ কিছু
তোমার সমস্ত স্মার্টনেস
অপ্রেম থেকে আসে
উদগ্র প্রশ্নের শেষে
সংক্ষিপ্ত উত্তর
উত্তরের শেষভাগে অর্থহীন ভদ্র ধন্যবাদ
উত্তরে উপনীত আমি এক বেপথু শরীর
আমার ইমেইল জুড়ে ফোলা চোখ, জাগা রাত
নালে ঝোলে একাকার প্রেম
বিছানা খামচানো মুঠো
আর কিছু পুরনো দিনের
তোমার অশ্লীল ডাক
প্রিয় ডাক
অবিরাম
মনের ব্যারাম ঝিঁঝিঁ ধ্বনি
টিনাইটিসের মতো কান ভরে থাকে!

 

আঠা কারিগর

সকাল থেকে তোমার কথা মনে পড়ছে
না, প্রেমের জন্য না
একটা আঠার নাম মনে পড়ছে না
ফেভিকুইক নয়
ফেভিকল নয়
মুদির দোকানে কেউ সেই আশ্চর্য চেনে না
আমাদের ছোটবেলাকার খুব বিখ্যাত আঠা
সেই যেটা দিয়ে তুমি কোনারক সূর্যমন্দিরের শখের নকলটা
লুফে ভেঙে জুড়ে দিয়েছিলে
কাকিমা বকেনি
রাবারের মতো আঠা
নেশার মতো গন্ধ
আমার দরকার
সমরের বাড়ির একটা মই ভেঙে গেছে
সমর আমাকে ব্যঙ্গ করে আঠা-এঞ্জিনিয়ার বলে
আমি নানান রকম আঠা দিয়ে খাতার সঙ্গে পাতা জুড়ে দিই
কাঠের সঙ্গে ইস্পাত
বাচ্চাদের হোমওয়ার্কের প্রোজেক্ট থেকে শুরু করে
আমাদের ক্যাঁচকোঁচ সামলাতে না পারা খাটের পায়া
নতুন জলের ফিল্টারের প্লাস্টিক
মৌমাছির আসা বন্ধ করতে দেওয়ালের গোপন গহ্বর
সব সব
গ্যালিভারের এই গুহায় আমি একটি প্রেমিকা লিলিপুট
পিঁপড়েদের সহচর, বান্ধবী
দরজার সমস্ত কোণ
বালুর সমস্ত কণিকা
চড়ুইদের মুখে আনা সব খড়কুটো আমার চেনা
আমিও একটা পিঁপড়ে
সমরের ঘরের এককোণে থাকি
আমিও একটা চড়ুই
নিজের খড়কুটোয় মাথা পেতে শুই
আমি একটা সোয়ালোও
শীতের দেশে পড়ে আছি
হ্যাপি প্রিন্সের পকেটের কাছে
কিন্তু হ্যাপি প্রিন্স আজও বড় সুখী
তার ঠোঁট আজও চুনির
তার বুক আজও সীসার
রাত্তিরে সে আমাকে চুপিচুপি বলে
সোয়ালো সোয়ালো
আমার ছোট্ট সোয়ালো
আমার আঠা এঞ্জিনিয়ার
সেইখানটা এঁটে গেছে
চুমো খেয়ে খেয়ে খুলে দেবে?

 

(জনস্বার্থে, ডেনড্রাইটের নাম এখন ফেভিবন্ড)