Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

করোনা ২.০

করোনা ২.০ -- সত্যব্রত ঘোষ

সত্যব্রত ঘোষ

 

প্রতিটি ভাইরাসের মতো করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও ‘R’ নামে একটি ফ্যাক্টর রয়েছে। মূলত এটি ভাইরাসটির প্রজননের হার নির্দিষ্ট করে। বেঁচে থেকে ভাইরাসটিকে নিজের গুণিতকে বাড়তে যে অনুকূল পরিস্থিতিগুলি প্রয়োজন, তার একটি অন্যতম হল এক আশ্রয় থেকে আর এক আশ্রয়ে সংবহন। সোজা কথায়, আক্রান্ত এক মানুষের শরীর থেকে আর একটি মানবশরীরে অবলীলায় আশ্রয় পেলে ভাইরাসটি দ্রুত প্রজননের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখবে।

করোনা ভাইরাস যে অতিমারির চেহারা নিয়ে আজও ভারতে তথা সমগ্র বিশ্বে আতঙ্ক জাগিয়ে রাখল, তার নেপথ্যে মূল কারণ হিসেবে রয়েছে এক মানবদেহ থেকে অন্যটিতে তার অনায়াস সঞ্চরণ। বস্তুত, বায়ু বা জল— বিভিন্ন মাধ্যমকে ব্যবহার করে নিত্যনৈমিত্তিক অগুনতি জীবাণু মানবশরীরে প্রবেশ করে থাকে। ক্ষুদ্রস্য ক্ষুদ্র এই প্রাণগুলি সবই যে অনিষ্টকর, তা নয়। তবে SAARS গোত্রের করোনা যে একটি ঘাতক ভাইরাস, তা নিয়ে কারও কোনও সন্দেহই নেই।

২০১৯ সালে WHO থেকে প্রথম যখন জানানো হয় যে চিনের উহান-এর পরীক্ষাগার থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে, তখন অধিকাংশই মনে করেছিলেন যে এটি একটি দুর্ঘটনা। তবে সেই দুর্ঘটনার অভিঘাত যখন সুদুর আমেরিকা এবং ইউরোপ মহাদেশগুলিতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কাড়তে শুরু করে পৃথিবী তখন এটিকে অতিমারির আখ্যা দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ১৯১২ সালে স্প্যানিশ ফ্লু-র সংক্রমণের যে ব্যাপকতা ছিল, কোভিড-১৯ ক্রমশ সেই ব্যাপকতাকে অতিক্রম করে সমগ্র মানবস্বাস্থ্যকেই চূড়ান্ত বিপদে ফেলেছে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় নিয়ে অনুসন্ধানে রত হয়ে বৈজ্ঞানিক ও গবেষকেরা প্রাথমিকভাবে জানিয়ে ছিলেন যে শহরাঞ্চলে ঘন বসতির এলাকাগুলিতে চলাচলকারী মানুষদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বাড়ানো প্রয়োজন। বৈজ্ঞানিকদের এই পরামর্শটিতে বিশ্বের তাবড় রাজনৈতিক নেতাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়। না, রোগ দূরীকরণকে অগ্রাধিকার তাঁরা কেউই দেননি। বরং বিভিন্ন দেশের ক্ষুব্ধ মানুষ যখন দেশের শাসকদের নিরন্তর অত্যাচার এবং অবিচারের বিরুদ্ধে জনআন্দোলনে শরিক হচ্ছেন, তখন বৈজ্ঞানিকদের এই প্রাথমিক পরামর্শকে অজুহাত বানিয়ে রাষ্ট্রীয় শক্তি দিয়ে আন্দোলনরত মানুষদের ছত্রাকার করার প্রক্রিয়ায় নেতারা কেউই ইতস্তত করলেন না। উদাহরণস্বরূপ, আমরা চিন সরকারের বিরুদ্ধে হংকং শহরবাসীর ক্রমবর্ধমান আন্দোলনের কথা মনে করতে পারি। আচমকা হংকং-এ লকডাউন ঘোষণা করে সেই আন্দোলনকে স্তব্ধ করা হল। এই ব্যাপারে পূর্বানুসারে দ্ব্যর্থহীন থেকে ভারতের মহামহিম প্রধান সেবক আচমকাই এক প্রস্তুতিহীন লকডাউন জারি করেন সারা দেশে। করোনা সংক্রমণকে কারণ হিসেবে দেখানো হলেও এই রাজনৈতিক পদক্ষেপটি সেই সময় ভারতের বিভিন্ন শহরে নাগরিক সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে চলতে থাকা জনআন্দোলনকে স্তব্ধ করবার জন্যেই নেওয়া হয়েছিল।

লকডাউনের প্রস্তাবটি দেওয়ার নেপথ্যে বৈজ্ঞানিকদের একটি প্রধান যুক্তি ছিল বিপর্যয় না বাড়িয়ে করোনা ভাইরাসের চরিত্রটি অনুধাবন করা এবং প্রতিরোধের উপায় খোঁজা। বৈজ্ঞানিকেরা যখন এই কাজে ব্যস্ত তখন রাষ্ট্র ঘোষিত লকডাউনকে দীর্ঘায়িত করে করোনা সংক্রমণকে কতদূর ঠেকানো গেছে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েই যায়। কারণ, করোনা সংক্রমণের আগেও ভারতের জনস্বাস্থ্যের অবস্থা যে অকূলে ছিল, করোনা সংক্রমণের শীর্ষেও তার বিশেষ কোনও উন্নতি হয়নি। একই সঙ্গে, অপরিকল্পিত লকডাউনের জেরে জীবন এতটাই দুর্বিষহ হয় যে রাষ্ট্রব্যবস্থার অমানবিক রূপ আপামর ভারতবাসীর মনে তীব্র আঘাত করে।

প্রধান সেবক এবং তাঁর পার্শ্বচরেরা সংবেদনশীল হলে দেশের মানুষের ক্লেশ নিবারণের অজুহাতে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর জিগির তুলে নিজেদের ‘বেনিয়া’ মনোবৃত্তি বজায় রাখেন। এবং অপেক্ষায় থাকেন করোনা সংক্রমণের হার কবে একটু স্তিমিত হবে। সংক্রমণের হার স্তিমিত হতে না হতেই প্রধান সেবকের আস্ফালন শুরু হয় যে করোনাকে জয় করেছে ভারত। করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ বিষয়ে বৈজ্ঞানিকদের প্রবল সতর্কবার্তা সত্ত্বেও এই বছরের শুরু থেকে প্রধান সেবক এবং তাঁর উপযুক্ত পার্শ্বচরেরা তাতে কান না দিয়ে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা জয়ে মনোযোগী হন। পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনসমাবেশ এতটাই স্বাভাবিক হারে ঘটতে থাকে যে করোনা সংক্রমণ কোনও সুদূর অতীতের বিষয়। আড়ম্বরের সঙ্গে কুম্ভমেলারও আয়োজন হয় হিন্দুত্বের গৌরবকে মুখ্যাধিকার দিয়ে। এবং তার চেয়েও মারাত্মক, দ্বিতীয় লহরে আক্রান্ত অন্য দেশগুলি থেকে আন্তর্জাতিক উড়ানে আগত যাত্রীদের মধ্যে সুপার স্প্রেডার আছে কি না, তা যাচাই না করা। করোনা সংক্রমণের প্রথম লহরে ভারতে অন্তত ‘সুপার স্প্রেডার’-দের চিহ্নিতকরণের ব্যবস্থা ছিল, এবারে তা প্রায় অনুপস্থিত।

করোনার দ্বিতীয় লহরে এখন দেশ জুড়ে ভয়াবহ অবস্থা। এবারের ধাক্কা গত বছরের চেয়েও অনেক বেশি ব্যাপক এবং দ্রুত। প্রতিদিন ৩৫০,০০০ লক্ষের বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৪ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। হাসপাতাল ও মর্গে জায়গা হচ্ছে না। এমনকি, সৎকারের জন্যে যে ন্যূনতম আয়োজনটুকুর প্রয়োজন, মৃতদের ক্ষেত্রে সেটুকুও জোটেনি। উত্তরপ্রদেশে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হিন্দুত্বের গর্বকে আক্ষরিক অর্থেই জলাঞ্জলি দিয়ে দরিদ্রতর গ্রামগুলির মানুষদের মৃত পরিজনদের সৎকারের পরিবর্তে দেহগুলিকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের অবস্থাও শোচনীয়। অথচ তা নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা বা পরিতাপ প্রকাশেও প্রধান সেবকের অনীহা। অনেকে মনে করছেন যে মানুষের পরিবর্তে একটি গরুর দেহ গঙ্গায় ভাসলে ইতিমধ্যে কোভিডপীড়িত এই দেশে আরেকটি দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যেতে পারত।

ভারতে কোভিড আক্রান্তদের সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক কম নেই। বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ মনে করছেন জনসমক্ষে যে সংখ্যাটা তুলে ধরা হচ্ছে, আক্রান্তের সংখ্যা তার থেকে ১০ গুণ বেশি। অতিমারি পরিস্থিতিতে যে ব্যাপক পরিমাণে কোভিড টেস্টের প্রয়োজন ছিল, তার ভগ্নাংশটুকুও এখন অবধি এই দেশ করে উঠতে পারেনি। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ভারতীয় সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে প্রাইম টাইম নিউজ চ্যানেলগুলি কোভিড পরিস্থিতিকে একটি অবিচ্ছিন্ন ইভেন্ট হিসেবে তুলে ধরে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির নামে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার কোভিড সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিস্থিতি জানবার পরেও একটি বড় সংখ্যার মানুষ এখনও মাস্ক ব্যবহার অথবা অন্যদের সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখবার নিয়মগুলির প্রতি অনীহা দেখাচ্ছেন, যা একার্থে রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের চূড়ান্ত এক অবিশ্বাসকেই প্রতিভাত করে। ২০১৬ সালে সেই নোটবন্দির সময় থেকে ২০২০ সালে প্রলম্বিত লকডাউন— এই দীর্ঘ অসময়ে প্রধান সেবক যেভাবে বারবার নিজের অবস্থান বদল করে এসেছেন, তা দেখে ভুক্তভোগী জনগণের বড় একটি অংশ মনে করছেন কোভিড অতিমারির প্রকোপকে নিরসন করার চেয়েও অতিমারিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক লভ্যাংশগুলিকে কুড়িয়ে নেওয়াকেই প্রধান সেবক এবং তাঁর অনুচরেরা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এই ধারণাকে সমর্থন করেই সম্প্রতি ল্যানসেট, নেচার সহ আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক মহলের প্রধান মুখপত্রগুলি যাকে প্রধানত দায়ী করছেন, সেই মোদি সরকার এখন দেশদ্রোহী বাছতে এবং ক্রমবর্ধিত কৃষক আন্দোলনকে প্রতিহত করতে মহাব্যস্ত। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে অতিসক্রিয় করে পশ্চিমবঙ্গের আইনব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন কার্যকর করবার ব্যর্থ চেষ্টাতেও প্রধান সেবকের এতটুকুও ক্লান্তি বা বিকার নেই।

সম্প্রতি পাঁচটি রাজ্যে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে পরাজয়ের পরে আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে প্রধান সেবক নিজেকে এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়মুক্ত করে দেশের আঠাশটি রাজ্যের ঘাড়ে কোভিড পরিস্থিতি সামলানোর সম্পূর্ণ দায়িত্ব চাপিয়ে দিচ্ছেন। এবং এটা এমন একটি সময়ে যখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় রোজই আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে শনাক্ত কোভিড আক্রান্তদের সংখ্যা। মহারাষ্ট্র থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গতেও নানা বিধিনিষেধ সহ প্রায় লকডাউন জারি করতে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে লকডাউনের সময়সীমাকে আরও পনেরো দিন বাড়িয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। করোনার এই দ্বিতীয় ধাক্কায় চরম উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে থাকা সত্ত্বেও বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিও যখন করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য নিজেদের মতো ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছে, ২০২০-র মতো কেন্দ্রীয় স্তর থেকে লকডাউন সংক্রান্ত কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। বিশ্বব্যাঙ্কের সঙ্গে এক আলোচনায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তা স্পষ্ট জানিয়েছেন। তাই, কেন্দ্রীয় সরকার তখন সেন্ট্রাল ভিস্তা নামক দিল্লির নতুন সংসদ ভবন সহ প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসস্থান নির্মাণে মন দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের মধ্যেই লুকিয়ে আছে প্রধান সেবকের একমুখী আগ্রাসনের ব্যর্থতা এবং নিজের ভাবমূর্তি গঠনের মানসিকতার সীমাবদ্ধতা।

অথচ মৃত্যুমিছিলের দায় রাজ্যগুলিকে নিতে বাধ্য করা হলেও স্তাবকবৃন্দ কিন্তু বলেই চলেছেন যে করোনা প্রতিরোধে প্রধান সেবক নাকি সদাব্যস্ত। সেই ব্যস্ততার নমুনা হিসেবে আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি রাজ্যগুলির হাতে অক্সিজেন থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ভ্যাকসিনের নিয়মিত জোগান বলে কিছু নেই। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, করোনা মোকাবিলার জন্যে যে নির্দিষ্ট নীতির প্রয়োজন, কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে তাও নেই।

লকডাউনের থেকে একশো পঁয়ত্রিশ কোটি মানুষের তখনই উপকার হতে পারত যদি দেখা যেত করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রধান সেবক একটি উন্নত জনকল্যাণমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তার পরিবর্তে আমরা কী দেখলাম? ১৯৭৮ থেকে কার্যকরী জাতীয় টিকাকরণ প্রকল্পকে সুসংহতভাবে ব্যবহার না করে তা নস্যাৎ করা হল। স্মল পক্স এবং পোলিও-র মতো ব্যাধি দূরীকরণের জন্য যে কেন্দ্রীয় সরকার এতদিন টিকা সংগ্রহ করবার দায়িত্ব নিয়ে এতকাল রাজ্যগুলিকে বিতরণ করে এসেছে, সেই নীতি কোভিড অতিমারির ক্ষেত্রে লঙ্ঘন করা হল। ভ্যাকসিন সংগ্রহের দায়িত্ব রাজগুলিকে দিয়ে দুটি প্রধান টিকা প্রস্তুতকারক— ভারত বায়োটেক এবং ইন্ডিয়ান সিরাম ইন্সটিটিউটকে জানিয়ে দেওয়া হল পঞ্চাশ শতাংশ টিকা কেন্দ্রীয় সরকারের জন্যে সংরক্ষিত থাকবে। অর্থাৎ, রাজ্যগুলি যাতে যথেষ্ট পরিমাণ টিকা না পায় এবং কেন্দ্রীয় সরকার যাতে অন্যান্য দেশে টিকা বিলি করে আন্তর্জাতিক তথা বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে তা সুনিশ্চিত করা হল দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে। কোভিড চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদি, ভ্যাকসিন এবং ওষুধপত্র কেনবার ক্ষেত্রে এতদিন জিএসটি প্রযোজ্য ছিল। রাজ্য সরকারগুলির পক্ষ থেকে জোরালো দাবি ওঠার ফলে সাম্প্রতিক জিএসটি মিটিং-এ আপাতত তা ৩১ আগস্ট অবধি মকুবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সর্বোপরি, পশ্চিমবঙ্গে কোভিড পরিস্থিতিতে প্রশাসনের শীর্ষে থাকা মুখ্য সচিবকেও দিল্লীতে তাৎক্ষনিক বদলির আদেশ জারি করে বিধানসভা নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে পর্যুদস্ত হওয়ার পর প্রতিহিংসাপরায়ণতার দুই জাজ্বল্যমান উদাহরণ হয়ে উঠেছেন প্রধান সেবক ও তাঁর সেনাপতি।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের যে টানাপোড়েন, তাতে একা রাজ্যের পক্ষে লকডাউন ঘোষণা করে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে এবং তা বিতরণ করে করোনা সংক্রমণের প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন। বিশেষ করে লকডাউনের কারণে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে মানুষকে, তা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে যে উদ্যোগ এবং লগ্নির প্রয়োজন অধিকাংশ রাজ্যের হাতে তা নেই। এবং প্রথাগতভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে বকেয়া অর্থরাশি পেতেও যে বিলম্ব ঘটে, তাতেও ভুক্তভোগী হতে হবে রাজ্যকেই। এবং তারপরেও যখন সেই ‘আচ্ছে দিন’ আবার কোনও একটা সময়ে ফিরে আসবে, তখন জনসমক্ষে জয়ের কৃতিত্ব নিতে উদ্যগ্র হয়ে আবার সেই প্রধান সেবকের আত্মম্ভরী মুখই ভেসে উঠবে টেলিভিশনের পর্দায়।