Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

এদেশে গ্রিন পার্টি গড়ার স্বপ্ন দেখতেন স্মরজিৎদা

ডাঃ স্মরজিৎ জানা | সমাজকর্মী, পরিবেশকর্মী

প্রদীপ দত্ত

 




পরমাণুশক্তি বিরোধী সমাজকর্মী ও পরিবেশবিদ

 

 

 

 

মে মাসের আট তারিখে (৮.৫.২০২১) কোভিড মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন ডাক্তার স্মরজিৎ জানা (স্মরজিৎদা)। কোভিড নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি দেশের ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের সদস্য ছিলেন। তারপরও চলে গেলেন কোভিডেই। বলতেন, ‘জানিস তো আমি মাঝেমধ্যেই ভাবি অ্যাট দি এন্ড অব দি ডে কী দাঁড়াল? কী করলাম জীবনে?’ যৌনকর্মীদের নিয়ে যা করেছেন তা ইতিহাস হয়ে থাকলেও শুধু তাতে তাঁর অন্তর তৃপ্ত ছিল না, সমাজ বদলের আরও নানা কাজে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার বাসনা ছিল। আশির দশকে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল আমাদের ব্যবহারিক জীবনে নানা ভুল ধারণার বিরুদ্ধে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনপ্রিয় লেখক হিসেবে। ‘উৎস মানুষ’ পত্রিকায়, ‘ড্রাগ অ্যাকশন ফোরাম’-এর পত্রিকা ‘ড্রাগ ডক্টর ডিজিস’-এর লেখায়, ওই ফোরামের প্রকাশিত অসাধারণ দুই বুকলেটের লেখক হিসেবে, এমনকি পরমাণু শক্তির বিরুদ্ধে লেখক হিসেবে।

গত লোকসভা ভোটের আগে পুনের ভীমা কোরেগাও মামলায় যেসব সমাজকর্মী ও বুদ্ধিজীবীরা জেলে বন্দি ছিলেন তাঁদের মুক্ত করার জন্য সক্রিয় হয়েছিলেন। তার আগে ছত্তিশগড়ে নকশাল দমনের নামে পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সোনি সোরির মুক্তির জন্য সভা-মিছিল করেছেন। আবার কয়লা খনি ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণের অবসানের চেষ্টায় অন্যদের সঙ্গে বার বার রায়গড়ে গিয়ে বিজ্ঞানসম্মত সমীক্ষা করেছেন। ওইরকম মানের ও জাতের সমীক্ষা পৃথিবীতে খুব কমই হয়েছে। সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশের পর ছত্তিশগড় সরকারের টনক নড়েছে। হাইকোর্টের রায়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কয়লা খনির মালিক জিন্দালকে চড়া জরিমানা দিতে হয়েছে। এসব কথা বলা এই জন্য যে, পেশাগত জীবনের শুরুতে তিনি ছিলেন বিজ্ঞান চেতনার প্রসারে ব্রতী এবং পরমাণু শক্তি বিরোধী পপুলার লেখক, আবার জীবনের শেষ কয়েক বছর তার কাজের এলাকা বাড়ছিল। তিনি ছিলেন মূলত সমাজ বদলের কর্মী, সেটাই তাঁর আসল পরিচয়। তবে যৌনকর্মীদের নিয়ে এবং তাঁদের জন্য প্রায় তিন দশক ধরে তিনি যা করেছেন তা তাঁর অন্যসব পরিচয় ছাপিয়ে গেছে, তিনি তাঁদের পিতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

স্মরজিৎদার কথায়, ‘এখন নানা দেশের সরকার যৌনকর্মীদের ব্যাপারে দুটো পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রথমটা হল তাঁদের সংগঠিত করে হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া। কারণ তাদের কমিউনিটি অর্গানাইজেশন গড়তে হবে ও ওনারশিপ তৈরি করতে হবে, কালেক্টিভ বার্গেইনিং পাওয়ার বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ উন্নত করতে হবে।’ পৃথিবীকে এই পথে চলতে শিখিয়েছিলেন তিনিই।

ছিলেন মহামারি বিশেষজ্ঞ (এপিডেমিওলজিস্ট)। আশির দশকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে নব্বইয়ের দশকে এইডস মহামারি সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। ভারত ছিল এইডস ও এসটিডি (সেক্সচুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজেস) আক্রান্তের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। রোগটা ছড়াচ্ছিল মূলত যৌনকর্মীদের যৌনরস ও রক্ত থেকে, তাঁদের থেকে অন্যেরা আক্রান্ত হচ্ছিলেন, আবার অন্যের থেকে তাঁরাও আক্রান্ত হচ্ছিলেন। এই রোগকে বাগে আনতে ১৯৯২ সালে ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর তরফে ‘এসটিডি/এইচআইভি ইন্টারভেনশন প্রজেক্ট’-এর ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব এসে পড়ল তাঁর উপর। এশিয়ার বৃহত্তম যৌনপল্লী সোনাগাছিতে শুরু হল ‘সোনাগাছি প্রজেক্ট’।

পৃথিবীর যে বিজ্ঞানী মহল এইডস ও এসটিডি (সেক্সচুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজেস) নিয়ে কাজ করছিলেন তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন যে প্রচারের মাধ্যমে যৌনকর্মীদের সচেতনতা বাড়িয়ে আর প্রযুক্তির মাধ্যমে অর্থাৎ কন্ডোম ব্যবহার করে এইসব রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে যৌনকর্মীদের নিয়ে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র ‘রক্তের অসুখ’। আকাশবাণীর এশিয়ান কান্ট্রি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে ‘সোনাগাছি প্রজেক্ট’-এর কাজ সম্প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু এশিয়ার বৃহত্তম যৌনপল্লী সোনাগাছিতে কাজ করতে এসে তিনি বুঝলেন, মেয়েদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ তাঁদের হাতে নেই। কারণ কাস্টমাররা কন্ডোম ব্যাবহার করতে চান না। অধিকাংশ কাস্টমারই যদি কন্ডোম ব্যবহার করেন আর মাত্র কয়েকজন না করেন তাহলেও চলবে না, সবাইকেই তা করতে হবে। যৌনকর্মীদের কালেক্টিভ বার্গেইনিং পাওয়ার না বাড়াতে পারলে এইডস বা সিফিলিস, গনোরিয়ার মত এসটিডি কমানো যাবে না। বুঝলেন যৌথভাবে তাঁদের বিপুল ক্ষমতায়ন ঘটিয়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন ঘটাতে পারলেই তা সম্ভব হবে। তার মানে শুধু স্বাস্থ্যের দিকটা দেখলেই চলবে না। তাঁদের অর্থনৈতিক শোষণের অবসান ঘটাতে হবে।

এই পর্যন্ত তাঁর ভাবনা ছিল বিশেষজ্ঞের, যা সেই সময় ছিল বিপ্লবী চিন্তা। এ কথা বলে তিনি সরে যেতে পারতেন। বলতে পারতেন যৌনকর্মীদের ক্ষমতায়ন একজন ডাক্তারের কাজ নয়। তা না করে যৌনকর্মীদের মধ্যে এইসব রোগ নির্মূল করার কাজে নেমে পড়লেন। সারা জীবন ধরে রয়ে গেলেন তাদের ভালোমন্দে। তার নেতৃত্বে শুরু হল যৌনকর্মীদের মর্যাদার লড়াই।

দারিদ্র ছাড়াও যৌনকর্মীরা খুবই নিপীড়িত হয়ে থাকেন। কন্ডোম ব্যাবহার করবেন কি না বাস্তবে সেই সিদ্ধান্ত নেবার মালিক তাঁরা নন, মালিক কাস্টমার। পল্লীতে যুগ যুগ ধরে চলা হিংস্রতা, বাড়িওলি, সুদখোর, দালালদের জোড়জুলুম, মাস্তানদের তোলা আদায়ে যৌনকর্মীদের জীবন ছিল দুর্বিষহ। সেই চক্র ভাঙতে না পারলে কন্ডোম ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে না। সংক্রমণ বাগে আনতে গেলেও যৌনকর্মীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে কন্ডোম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। অর্থাৎ যাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বা যাঁরা আক্রান্ত তাঁদের সমগোত্রীয়দের উপর ভিত্তি করে রোগ সারানোর চেষ্টা। যৌনকর্মীদের তরফে বাইরে থেকে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সেখানে কমিউনিটির যোগদান চেয়েছিলেন। ব্যাপারটা খুবই কঠিন। তাঁদের নিয়ে, তাঁদের সঙ্গে, তাঁদের উদ্বুদ্ধ করে কাজ করাটা যে কোনও মানুষের কাছেই ছিল অভাবনীয়। দরকার তাদের সংগঠন এবং লড়াই। এই ভাবনা থেকেই যা ছিল রোগ সাড়ানোর কর্মসূচি তা ধীরে ধীরে হয়ে দাঁড়াল যৌনকর্মীদের অধিকার আন্দোলন।

১৯৯৫ সালে জন্ম হল সংগঠন ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি’-র (ডিএমএসসি)। স্লোগান উঠল ‘নো কন্ডোম নো সেক্স’। দুর্বারের মানে হল অপ্রতিরোধ্য, নির্ভীক— সেই নামকরণ সার্থক হল। যৌনকর্মী গোষ্ঠী হয়ে উঠল প্রকল্পের অংশীদার। তাঁর নির্দেশিত পথে পরবর্তীকালে শুধু এইডসই নয় এসটিডিও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। এই নিয়ন্ত্রণের কৃতিত্ব তাঁরই প্রাপ্য। কারণ তিনিই তা রোধে পাবলিক হেলথের বুনিয়াদি নিয়ম তৈরি করেছিলেন। কয়েক বছরের মধ্যে ‘সোনাগাছি প্রোজেক্ট’-এর সুনাম পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল, পৃথিবীর জনপ্রিয় মডেল হয়ে উঠল। এই যৌনকর্মীদের আত্মমর্যাদার লড়াইকে তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে গিয়েছিলেন। সারা পৃথিবীতে তিনি বন্দিত হলেন। আজ পশ্চিমবঙ্গের পঁয়ষট্টি হাজার মহিলা, পুরুষ ও ট্রান্সজেন্ডারের সংগঠন, যারা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ছাড়াও মহিলা ও শিশু পাচার রোধের কাজ করে দুর্বার।

যাদের এক কথায় বলা হত ‘বেশ্যা’ স্মরজিৎদাই তাদের ‘যৌনকর্মী’ বলতে শিখিয়েছেন। তাঁদের যৌনকর্মকে তিনি পেশা হিসেবেই দেখেছেন। তিনিই প্রথম অর্থের বিনিময়ে যৌনকর্ম যারা করেন শ্রমিক হিসেবে তাঁদের অধিকারের কথা বলেছিলেন। স্লোগান তুলেছিলেন ‘গতর খাটিয়ে খাই/ শ্রমিকের অধিকার চাই’। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি গড়ে তোলার পর একই বছরে গড়ে উঠেছিল ‘ঊষা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’। পরে তৈরি হয়েছে যৌনকর্মীর ছেলেমেয়েদের জন্য ‘রাহুল বিদ্যানিকেতন’ ও ‘দুর্বার স্পোর্টস অ্যাকাডেমি’, সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কোমলগান্ধার’, সোনাগাছির যৌনকর্মীর ছেলেমেয়েদের সংগঠন ‘আমরা পদাতিক’। প্রায় প্রতিটি সংস্থার জন্মই ছিল যুগান্তকারী ঘটনা। যে সময়ে এইসব কাজ তিনি করছেন বাঙালির ভদ্রসমাজ, এমনকি অনেক  সমাজকর্মীও যৌনকর্মীদের সঙ্গে থেকে কাজ করাকে সুনজরে দেখতেন না। একে যৌনকর্মীদের নিয়ে, তায় বিদেশি অর্থসাহায্য নিয়ে কাজ। তবে তিনি এসব বিষয় একেবারেই গায়ে মাখেননি।

যৌনকর্মীদের রোজগার যেন সুরক্ষিত থাকে এবং তাঁরা যেন প্রয়োজনের সময় ঋণ নিতে পারেন সেই উদ্যোগ শুরু হয়। যৌনকর্মীদের জন্য কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক থাকতে পারে কি না তা নিয়ে বিধানসভায় বিতর্ক ওঠে। এ কাজে তাঁর অদম্য মানসিকতার জন্য শেষ পর্যন্ত এই সংক্রান্ত পুরনো আইনের প্রয়োজনীয় রদবদল করতে হয়। অবশেষে ১৯৯৫ সালের জুন মাসে তেরোজন সদস্য ও তিরিশ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে যৌনকর্মীদের দ্বারা পরিচালিত ‘ঊষা মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ চালু হয়, পৃথিবীতে যৌনকর্মীদের প্রথম কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক। প্রথম প্রথম প্রতিদিন সকালে যৌনকর্মীর ঘরে গিয়ে আগের রাতের রোজগারের টাকা সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হত।

এখানে জমানো টাকা সুদ সহ সুরক্ষিত থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হল এক সময় যারা ২০০ থেকে ৩০০ পার্সেন্ট সুদে যৌনপল্লীর সুদের কারবারিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেনার দায়ে জেরবার হতেন এখন তাঁরা ব্যাঙ্কের মত অতি অল্প সুদে ঊষা কোঅপারেটিভ থেকে ধার নিয়ে পরিবারের নানা প্রয়োজন মেটাতে শুরু করলেন। ঊষা কোঅপারেটিভ তাঁদের জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনল। বাড়ি করতে, ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে এবং অন্যান্য প্রয়োজনে তাঁরা কম সুদে ঋণ নিতে শুরু করলেন। নিজেদের সংগঠিত হওয়ার সুবিধা টের পেলেন। দু বছরের মধ্যে ঊষার সদস্য সংখ্যা বেড়ে হল তিরিশ হাজার।

তিনি ছিলেন যুক্তিবাদী, চিন্তক ও আপোসহীন। কাজ শুরুর কয়েক বছর পর তাঁর অফিস ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এ কথা উঠল যে, বড় বড় বিদেশি অর্থ সাহায্যের প্রকল্প তাঁরা পাচ্ছেন না, ডক্টর জানারাই পাচ্ছেন। সেই ঈর্ষা থেকে স্মরজিৎদা হয়ে গেলেন ‘মিরজাফর’। ১৯৯৯ সালে সেখান থেকে বেরিয়ে কোঅপারেটিভ ফর অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড রিলিফ এভরিহোয়ার বা ‘কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল’-এ যোগ দিলেন। সেই বছরই পেয়েছিলেন ন্যাশনাল পাবলিক সার্ভিস এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড। কেয়ারের চাকরিতে ঢুকে বাংলাদেশ, ব্যাঙ্কক ঘুরে শেষে আস্তানা গাড়েন দিল্লিতে। এই সময় আমেরিকার কয়েকজন রিপাবলিকান সেনেটর প্রেসিডেন্ট বুশের (জুনিয়র) কাছে দরবার করলেন, ডক্টর জানারা যৌনকর্মীদের যে অধিকারের দাবি তুলছে তা হতে পারে না। চাপ এল, কেয়ার-এর ডিরেক্টর পড়লেন ফাঁপরে। তাই ২০০৬ সালে সেই চাকরি ছাড়লেন। এরপর ২০০৭-০৯ দু বছর ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের (ন্যাকো) উপদেষ্টা হয়ে দেশে এইডস নিয়ন্ত্রণের অতি মূল্যবান কাজ করেন। পরে ছিলেন ন্যাকোর স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য। ১৯৯৯ সাল থেকে যতদিন বাইরে ছিলেন দুর্বারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নিবিড়। পরবর্তীকালে আমৃত্যু দুর্বারের অবৈতনিক মুখ্য উপদেষ্টা ছিলেন। তাঁর কাজের জন্য পেয়েছেন নানা পুরস্কার। তারপরও বলা যায় পুরষ্কারের ক্ষেত্রে তিনি অবহেলিতই ছিলেন। কারণ প্রায় কোনও পুরষ্কারই উঁচু মানের ছিল না।

বারুইপুরে বেশ কয়েক বিঘা জায়গা নিয়ে গড়ে উঠল ‘রাহুল বিদ্যানিকেতন’। সেখানে যৌনকর্মীর ছেলেমেয়েদের থাকার হস্টেল তৈরি হয়েছে। আমলাশোলের কিছু আদিবাসী মেয়েকেও সেখানে রাখা হয়। লেখাপড়া ছাড়া ফুটবলের ট্রেনিং, চাষবাস, মাছ চাষ— সবই হয়। সেখানে তৈরি হচ্ছে বয়স্ক যৌনকর্মীদের থাকার জায়গা। সেখানে তৈরি হয়েছে ‘দুর্বার স্পোর্টস অ্যাকাডেমি’। রেসিডেন্সিয়াল অ্যাকাডেমি হিসেবে তা চালু হয় ২০১৫ সালে। তেরো বছরের নীচে ও পনেরো বছরের নীচের ছেলেদের ভালো ফুটবল টিম রয়েছে। তাদের ট্রেনিং-এর সাফল্যে সাড়া পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্ত থেকে ছেলেরা আসে। প্রথম দিকে একজন ট্রেনিং দিতেন, এখন দু-তিনজন ভালো কোচ রয়েছেন। ২০১৬-র জুলাই মাসে ষোল বছরের কম বয়স যাদের সেইরকম ষোলোটা ছেলে উড়ে গিয়েছিল ডেনমার্কে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট ‘ডানা কাপ’-এ যোগ দিতে। তাদের দশজন ছিল যৌনকর্মীর সন্তান, যারা শুধু মসা-কে চেনে, বাবা কে তা  জানে না। কেউ কেউ ছিল অনাথ, বাকিরা গরিব ঘরের ছেলে। ওই টিমের ফুটবলার এবং চারজন সাপোর্ট স্টাফের জন্য নানা সংগঠন ও ব্যক্তির কাছ থেকে সাহায্য হিসেবে কুড়ি লাখ টাকা সংগ্রহ করতে হয়েছে। তাঁর মত ছিল, ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোজার না থাকলে ভালো খেলোয়ার তৈরি হবে না।

যৌনকর্মীর ছেলেদের ফুটবল খেলাটা তাঁর কাছে ছিল তাদের উত্তরণের সোপান। ফুটবলের মাধ্যমে তাদের যেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সুযোগ করে দিচ্ছেন। ভাবতেন, পড়াশোনা তারা কিছু দূর পর্যন্ত করতে পারবে ঠিকই, বেশিরভাগই চাকরি করে দাঁড়াতে পারবে না। তাছাড়া সবাই পড়তে ভালোবাসে না, খেলতে ভালোবাসে। এই ভালোবাসাকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, যেখানে তাদের বড় পরিচয় তৈরি হবে। এরই মধ্যে দুজন ফুটবলার আঠেরো বছরের নীচে ন্যাশনাল টিমে নির্বাচিত হয়ে পোল্যান্ড ঘুরে এসেছে। বলতেন ‘আশা করা যায় কয়েক বছরের মধ্যে খেলার মাঠে আমাদের ফুটবল টিমের নামও শোনা যাবে। এখানে একটা বারো-তেরো বছরের মেয়ে আছে, দারুণ খেলে।’

আরেকটা ঘটনার কথাও বলতেন, ‘পুরুলিয়ায় যখন তিনদিন ধরে দুর্বারের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় ফুটবল মাঠে মেয়েদের টিমও নামে। এক বিবাহিত মেয়ে ফুটবলারকে প্রশ্ন করলাম, তুমি যে খেলতে আসো বাড়ি থেকে আপত্তি করে না? আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বলল, মাঠে আসার আগে শাশুড়ি আশীর্বাদ করে বলেছে, যাও খেলে জিতে এসো।’ আমলাশোলের মানুষ না খেয়ে থাকেন, সংবাদপত্রে তা যখন খবর হল, সরকারি সাহায্যের আগে পৌঁছে গিয়েছিল দুর্বারের সাহায্য। শুধু এককালীন সাহায্যই নয়, তাঁদের পাশে থেকে অধিকার আদায় করার আন্দোলনেও পথ দেখিয়েছে স্মরজিৎদার নেতৃত্বে দুর্বার। একই কথা প্রযোজ্য পুরুলিয়ার নাচনী শিল্পীদের ক্ষেত্রে। 

সুপ্রিম কোর্টে বুদ্ধদেব কর্মকার বনাম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মামলায় তিনি সুপ্রিম কোর্ট মনোনীত প্যানেলের সদস্য ছিলেন। ২০১৬ সালে প্যানেল সুপারিশ করে, ভোটার এবং রেশন কার্ড ইস্যুর মাধ্যমে তাদের আইনি স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন এবং ১৯৫৬ সালের ইমমরাল ট্র্যাফিক (প্রিভেনশন) অ্যাক্টে বদল এনে তাদের দুষ্কৃতিকারী ভাবা বন্ধ করা দরকার। ভোটার ও রেশনকার্ডের বিনিময়ে তারা সামাজিক কল্যাণের সুবিধা পাবে।

চারিদিকে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে হইচই হচ্ছে। জলবায়ু বদল ঠেকাতে গেলে সৌরবিদ্যুতের প্রচলন বাড়াতে হবে। এই ভাবনা থেকে ডিএমএসসি-র নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের অফিসে এবং রাহুল বিদ্যানিকেতনে পাঁচ কিলোওয়াটের সোলার প্যানেল বসালেন। বলতেন, ‘এ তো আমাদের দায়বদ্ধতা, জলবায়ু বদল হচ্ছে জানি অথচ হাত গুটিয়ে বসে থাকব তা তো হয় না!’ নিজের বাড়িতেও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসাবেন বলে ভেবেছিলেন।

বলতেন, ‘লেখার জন্য আজকাল তেমন সময় পাই না। করোনার প্রথম পর্যায়ে সবাই অনেকটা সময় বাড়িতে ছিল, আমি কিন্তু পুরোটাই অফিস করলাম। আমাদের কাজকর্ম তো বেশ বড়, অফিস না গেলে হয় না। লকডাউনের প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কায় এ রাজ্যের যৌনকর্মীরা বিপন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তাই অন্য কাজ ছাড়া এরই মধ্যে নানা সংগঠন ও ব্যক্তির কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে রাজ্যের নানা প্রান্তে আমাদের পঁয়ষট্টি হাজার যৌনকর্মীর কাছে রিলিফ পৌঁছে দিতে হল। সে এক বিরাট কর্মযজ্ঞ, প্রতিটি মেয়ের জন্য রিলিফের আলাদা প্যাকেট তৈরি হয়েছে। শেষের দিকে সরকার কিছু কিছু রিলিফ দেওয়া শুরু করল। (গত বছর দেশ জুড়ে লকডাউনের ফলে যৌনকর্মীদের দুর্দশা নিয়ে ডিএমএসসি-র এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়-এ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে বলা হয় তারা যেন যৌনকর্মীদের বিনামূল্যে রেশন দেয়।) আমি তো লিখতেই চাই, লেখার কথা মাথায়ও আছে, কিন্তু বছরখানেক ধরে একেবারে সময় পাচ্ছি না।’

মাস ছয়েক আগে বললাম, ‘তোমার বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালো লাগে ‘চেনা দেশ অচেনা মানুষ’। বইটা বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছনোর জন্য ভালো পাবলিশারকে দেওয়া দরকার। অত ভালো বই অথচ লোকে জানেই না! তুমি নানা বিষয়ে অনেক লিখেছ, ‘দুর্বার ভাবনা’র বড় বড় এডিটোরিয়ালগুলো তো খুবই ভালো, আশির দশকে ‘উৎস মানুষ’-এর লেখা, ‘ড্রাগ অ্যাকশন ফোরাম’-এর হাজার হাজার কপি বিক্রি হওয়া ‘মানুষের জন্য ওষুধ না ওষুধের জন্য মানুষ’ ইত্যাদি বুকলেটগুলো, ইদানীংকালে ‘চিকিৎসার জন্য মানুষ না মানুষের জন্য চিকিৎসা’ এবং ফ্রন্টিয়ারে তোমার লেখা অসাধারণ। এর মধ্যে করোনা নিয়ে লিখেছ, স্বদেশি-বিদেশি কাগজে, চ্যানেলে ইন্টারভিউ দিয়েছ। তবে অনেকদিন ধরে সত্যিই তুমি কম লিখছ।’

একসময় বলেছিলাম, ‘যৌনকর্মীদের নিয়ে তোমার কাজের জীবনে নিশ্চয়ই অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়েছ? সেই অভিজ্ঞতার কথা কিছু শোনাও।’

বললেন, ‘নানারকমের অনেক ঘটনা আছে। তবে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ঘটনাটা বলি শোন। দুর্বার মেয়েদের প্রজেক্ট আর আমি ছেলে— এই অজুহাতে আমাকে সেখান থেকে সরানোর প্ল্যান করেছিল আমাদের এক ডোনার সংগঠনের সর্বময় কর্ত্রী। তারা কিছু ফান্ড দিত, তবে আমাদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল। তার ধারণা ছিল, দুর্বারের যদি ইভ্যালুয়েশন করা হয় তাহলে আমার বদলে একজন মেয়েকে সে বসাতে পারবে। ওইটাই ছিল তার লক্ষ্য। ইভ্যালুয়েশনের জন্য সে চারজনকে ঠিক করে। একজন ছিল নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়, সে ব্রিটিশ কাউন্সিলের স্কলারশিপ নিয়ে কয়েক বছর ইংল্যান্ডে কোর্স করেছে। আরেকজন হল চেরি মার্টেন, সে হু-র (ডব্লিউএইচও) হাই লেভেলের লোক। আর ছিল কেভিন ওরাইলি, কেভিন বিহেভিয়ার ইস্যু নিয়ে কাজ করত। চেরি মার্টেন শেষে আসতে পারেনি। আমি বললাম, না না তোমাকে আসতে হবে। সে যাই হোক, আরেকজন ছিল দিল্লি এইমস-এর ডিন। একজন ছাড়া কেউ বাংলা জানে না। তাঁরা আমাদের মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছে। মেয়েরা আমি কী করে হাঁটি, কেমনভাবে কথা বলি হ্যানাত্যানা সব ক্যারিকেচার করে দেখিয়েছে। প্রোজেক্ট ভিজিট করে, মেয়েদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ওরা ফাইনালি লিখল— দিস ইস ওয়ান অফ দি বেস্ট প্রোজেক্ট, ইফ নট দি বেস্ট প্রোজেক্ট ইন দি ওয়ার্ল্ড। বোঝো ঠেলা! পরে তো আমার সঙ্গে তাঁদের খুব বন্ধু্ত্ব হয়েছিল। জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কী করে এসব লিখলে? বলে, দেখো আমরা বিষয়টা অন্যভাবে দেখি। বহু জায়গায় গেছি কিন্তু প্রোজেক্টের হেডকে এইরকম ক্যারিকেচার করা, আবার ভালোবাসা, মাথায় তুলে রাখা— এটা কোথাও দেখিনি। এগুলো ছোট ছোট ব্যাপার কিন্তু ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট ইস্যুজ। সেই বাঙালি মহিলা নন্দিনী পরে তো আমাদের প্রোজেক্টে ঢুকে গেল। বলে যে, এরকম একটা ভাইব্রান্ট কমিউনিটি! দূর ওদের কথা কী শুনব! অনেক ইন্টারপার্সোনাল, ছোট ছোট ইস্যুগুলো লোকে দেখে। তার সঙ্গে হয়তো কাজের বিরাট কোনও সম্পর্ক নেই।’

‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেখাতে গিয়ে আমায় একজন বলেছিল, তোমার প্রতি একটা সন্দেহ ছিল। এত ভালো পাওয়ার পয়েন্ট যারা প্রেজেন্ট করে তারা ভালো লোক হয় না, বানিয়ে ভালো বলে। সে কেয়ার-এ ছিল, এখন গেটস ফাউন্ডেশনের কাজ করে। আমাদের প্রোজেক্ট ভিজিট করে, দেখে-ঠেকে বলে, জানো তো আমার ওইটা মনে হয়েছিল। আজকাল এরকম একটা ক্যাটেগরি আছে, তারা ওইরকমই হয়। দারুণ কথাবার্তা বলছে, ছবি দেখাচ্ছে, হ্যানো ত্যানো।’

স্মরজিৎদা মনে করতেন মানুষের জীবনে ফ্রিডম ইজ ওয়ান অফ দি বেসিক নেসেসিটিস। সেই প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আজকাল যৌনকর্মীদের জন্য যে হোম তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর কী খবর?’

বললেন, ‘আমাদের গরিব দেশে সবাই ভাবে, ভালো খাওয়া পরা পেলেই হল। কিছু এনজিও আছে যারা মনে করে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসন, দুবেলা খাওয়াদাওয়া আর থাকার বন্দোবস্ত করা গেলেই সমাজ থেকে এই ব্যাধি দূর করা যাবে। তারা বিশাল বিশাল থাকার জায়গা বানিয়েছে। চারপাশে উঁচু পাঁচিল তুলে দিয়েছে, বারো-চোদ্দ ফুট পর্যন্ত উঁচু করেছে। তারপরও সেখান থেকে মেয়েরা পালিয়ে আসে। কিছুদিন আগে পাচিল টপকে পালিয়ে আসতে গিয়ে দু-তিনজনের পা ভেঙেছে। সেই মেয়েদের খুঁজতে দুর্বারে পুলিশ এসেছিল। বললাম, কী করে বলব মেয়েরা কোথায় আছে!’

‘স্বাধীনতা যে মানুষের কত বড় চাহিদা তা ওই এনজিওরা জানে না। ব্যাপারটা পরিষ্কার হল আরও কিছুদিন পরে। এক এমএলএ রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে সামাজিক উন্নয়ন করে বেড়ায়, হোম চালায়, স্কুল চালায়, নানা কিছু করে। এমএলএ ছিল বলে লাইনআপ আছে। মেদিনীপুর টাউনের ওপর বিশাল জায়গা নিয়ে ট্রেনিং সেন্টার, স্কুল, মেয়েদের রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার করেছে। আমাকে একদিন ফোন করে সে বলল, ডক্টর জানা আপনি দারুণ কাজ করছেন। বললাম, কী ব্যাপার! বলে, আপনি মেয়েদের বলুন এখানে এসে একবার ভিজিট করে যাক। ভালো লাগলে থাকবে, না হলে থাকবে না। ভাবলাম ভালোই তো বলছে। মেদিনীপুর থেকে আধ ঘন্টার রাস্তা খড়গপুর। সেখানে আমাদের দুটো ব্রথেল আছে। কিছু যৌনকর্মী রয়েছে যাদের বয়স হয়েছে, শরীর ভেঙেছে, কাস্টমার হয় না। সেখানে গিয়ে আমি তাদের সঙ্গে কথা বললাম। অনেক বলেকয়ে সাতজনকে সেখানে পাঠানো হল। বললাম, চলে যাও, দেখে-বুঝে এসো, এখনই থাকতে হবে না, পছন্দ হলে থাকবে, না হলে চলে আসবে, কেউ আটকাতে পারবে না, আমি কথা দিচ্ছি। তারা ফিরে এসে কয়েকদিন পর জানাল সেখানকার সব ব্যবস্থাই খুব ভালো। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যার খাবার ভালো, যত্ন নেয়। সকালে লুচি আলুরদম দিয়েছে, দুপুরে নিরামিষ কিন্তু ভালো খাবার, বিকেলে চা বিস্কুট খেয়ে চলে এসেছে। তবু তারা সেখানে থাকতে চায় না। বললাম, কিন্তু অসুবিধাটা কোথায়! দুদিন পরে তো তোমরা খেতেও পাবে না। বয়স হয়েছে রোজগারপাতি তো নেই, রোজগার হয়? বলে, না, চেয়েচিন্তে চলে। কোনও মেয়ের যদি ছোট বাচ্চা থাকে তার দেখভাল করে মাসে পাঁচ-ছশো টাকা হয়। তাতে চলে? না, এই-ই হয়। তাহলে যাচ্ছ না কেন? বলে, ওখানে নিয়ম আছে, কখন বেরোতে হবে, কখন খাবার দেবে এইসব। সকাল আটটায় ব্রেকফাস্ট, দুপুর একটায় লাঞ্চ। এই বয়সে এত নিয়ম আমাদের পোষায় না। বললাম, কিন্তু হস্টেলে বা ওইরকম কোথাও থাকলে তো নিয়ম মানতে হবে, এটা আর কী এমন! বলে, তারপর যেমন জানেনই তো স্যার, সন্ধ্যাবেলা একটু টানার ইচ্ছে হল, তা তো ওখানে চলবে না। এই বয়সে যদি আমার এইটুকু ইচ্ছা পূরণ না হয় তাহলে কী করে হবে? ফের বললাম, দুদিন পরে তো তোমরা না খেয়ে মরবে? আর কদিন তোমাদের অন্য মেয়েরা পয়সা দেবে? বলে, খাই না খাই আমরা নিজের জায়গায় আছি, সেটা অনেক সুখের। ওখানে গেলে স্বস্তি পাব, সুখ পাব না। মুক্ত জীবনে তাদের কাস্টমার হয় না, খাবার জোটানোই মুশকিল। খাওয়া জুটুক না জুটুক তবু তারা সেখানে বন্দির মত থাকতে চায় না।’

একদিন বললাম, ‘তোমার কাজের প্রথম উনিশ-কুড়ি বছর ছিল বামফ্রন্ট শাসন। নানা প্রতিকূলতার জন্য মন্ত্রীসান্ত্রীদের সঙ্গে নিশ্চয়ই দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে? সেই অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?’

‘ভালো কথা বললি। দুর্বারের অনেক বছর হয়ে গেল, কাজকর্ম এখন স্বাভাবিকভাবেই চলে। এখনকার মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ কম হয়। কোনও অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আসে, তাদের সঙ্গে ফর্মাল কথাবার্তা হয়। মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের তেমন প্রয়োজন হয় না। বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গকে ডুবিয়েছে, অথচ এদের নেতা-মন্ত্রী যতজনের সঙ্গে যৌনকর্মীদের নিয়ে কথা হয়েছে প্রত্যেককেই আমার ভালোমানুষ বলে মনে হয়েছে। ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত না?’

‘একবার ট্রপিক্যাল থেকে সোনাগাছির মেয়েদের এইচআইভি টেস্ট করার চেষ্টা শুরু হল। মেয়েরা তো সুই ফোটানোর ভয়ে এদিক ওদিক পালাচ্ছে, পুলিশ তাদের ধরে ধরে আনছে। মেয়েদের মধ্যে বিপুল বিক্ষোভ, হইহই লেগে গেল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশান্ত শূরের কাছে গেলাম। তাঁকে চিনতাম না। ভালো করে বিষয়টা বুঝিয়ে বললাম। মেয়েরা কি জন্তুজানোয়ার নাকি যে জোর করে সুই ফুটিয়ে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে, তবে এইচআইভি-র সুরাহা হবে! তিনি বুঝলেন। পিএ-র মাধ্যমে স্বাস্থ্যসচিব ও স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের মাতব্বরকে পুলিশ দিয়ে ধরপাকরের কর্মসূচি বন্ধ করতে বললেন। আরেকবার কোনও এক বিষয়ে আলোচনার জন্য তাঁর বাড়িতে গেছি। থাকতেন সাদামাটা পুরনো সরকারি আবাসনে। জোরালো বৃষ্টি শুরু হল। যেখানে বসে কথা বলছি তার দুই দেয়াল বেয়ে বৃষ্টির জল নামছে। বৃষ্টির ঠেলায় বসে থাকা  যাচ্ছে না। সেখানে বসে কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে দেখে শোবার ঘরে নিয়ে গেলেন! রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওইরকম আটপৌরে জীবন ভাবা যায়?’

‘আরেক মন্ত্রী পার্থ দে একবার আমাদের দুর্গাপুরের ক্লিনিক উদ্বোধন করতে যেতে রাজী হলেন। বললেন, সেকেন্ড ক্লাসে আমাদের সঙ্গেই যাবেন। কোনও মতে তাঁকে নিরস্ত্র করলাম। সভাস্থলে ছোট মঞ্চে বসেছেন। সেখানকার এমপি ফিস ফিস করে তাঁকে বোঝাচ্ছেন, যেখানে মেয়েদের ক্লিনিক হতে চলেছে জমিটা ডিএসপি-র, তাই তিনি যদি অনুষ্ঠানের ফিতে কাটেন তাহলে বেআইনি ব্যাপার স্বীকৃতি পায়। মন্ত্রী তো চুপচাপ তার কথা শুনছেন। আমি ভাবছি, মিটিং-এর সুর না কেটে যায়! ফিতে কাটার আগে মন্ত্রী বললেন, তিনি কিছু বলবেন। সাধারণত ফিতে কাটার পরই প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখেন। ওমা! মাইক টেনে তিনি বলতে শুরু করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, এই ব্রথেল কতদিনের? সবাই বলল, ষাট-সত্তর বছর। মন্ত্রী বললেন, ষাট-সত্তর বছর ধরে ডিএসপি-র জমিতে ব্রথেল রয়েছে, ডিএসপি কি জানত না? তা যখন অন্যায় হয়নি, মেয়েদের ভালোর জন্য ক্লিনিক চালু হলে মোটেই অন্যায় হবে না। আমি ডিএসপি-কে অনুরোধ করব, এই ক্লিনিকের খরচ যেন তারা বহন করে।’ একটু থেমে বললেন, ‘মানুষটা এত ভালো যে এখনও আমাদের যোগাযোগ আছে।’

‘অনেকদিন আগে (১৯৯৭ সাল) একবার আমরা ঠিক করলাম সল্টলেক স্টেডিয়ামে কয়েকদিন ধরে বড় সম্মেলন করব। বাইরের দেশ থেকেও লোকজন আসবে। সুভাষ চক্রবর্তীর কাছে গিয়ে স্টেডিয়ামের পার্মিশন পেয়ে গেলাম। কিন্তু পুলিশের পার্মিশন কিছুতেই পাচ্ছি না। পুলিশ দপ্তর মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর হাতে। ফের সুভাষ চক্রবর্তীর কাছে গেলাম। বাইরের ঘরে বসে আছি। আমার মত আরও অনেকে বসে আছে। তাঁর স্ত্রী রমলাদি সবাইকে চা-সিঙারা খাওয়াচ্ছেন। আমার ডাক এল। সমস্যার কথা শুনে বললেন, আগের দিন রাতে দুশো মেয়েকে স্টেডিয়ামে ঢুকিয়ে দাও। স্টেডিয়ামের ভিতরে আমাকে না জিজ্ঞেস করে কিছু করতে পারবে না, ওটা আমার এক্তিয়ারে। তবে বাইরে পুলিশ ধরলে কিছু করতে পারব না। সেইমত সন্ধ্যার পর থেকে শ খানেক মেয়ে স্টেডিয়ামে ঢুকে গেল। রাত দশটা নাগাদ পুলিশ পার্মিশন পেলাম। সম্মেলন চলাকালীন একদিন এসে বললেন, কালকের ডিনারের খরচ আমি দেব। আমাদের সামনেই বিরিয়ানি যে রাঁধবে তাকে ডাকা হল। কিসের বিরিয়ানি হবে? সে বলল, মাটন ছাড়া ভালো বিরিয়ানি হয় না। পরের দিন বৃহস্পতিবার, মাটন পাওয়া যাবে না। অর্ডার হল আজ রাতেই মাটন কিনে রাখ। পরের দিন সম্মেলনের দেড় হাজার লোক বিরিয়ানি খেল।’

‘সেই কনফারেন্সে সিপিআই-এর ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত এসেছিলেন। তখন তিনি কেন্দ্রে হোম মিনিস্টার। অনেকেই এসেছিলেন কিন্তু তিনি আসাতে অবাকই হয়েছিলাম। দিন তিন-চার আগে তাকে আমরা ইমেল মারফত নিমন্ত্রণ করেছিলাম। কী বলেছিলেন এখন মনে নেই, তবে যৌনকর্মীদের নিয়ে অনেক ভালো কথা বলেছিলেন, মেয়েরা খুব খুশি হয়েছিল।’

‘ওদিকে বিনয় চৌধুরী অসাধারণ লোক ছিলেন। তাঁর জীবনযাপন ছিল দেখবার মত। আমাদের কথা শুনতেন, সাধ্যমত সাহায্য করতেন। মেদিনীপুরে আমার স্কুলের একশো বছর পূর্তি উপলক্ষে গেছি। তিনি প্রধান অতিথি। সামনের সারি থেকে আমাকে ডেকে নিলেন ডায়াসে। জানা, ওপরে চলো, তোমার সঙ্গে কথা আছে।’

‘কী একটা ব্যাপারে সূর্যকান্ত মিশ্রের কাছে গেলাম। পঞ্চায়েতমন্ত্রী ছিলেন, খুব পাওয়ারফুল। সহজেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেলাম। বললেন আপনাদের সংগঠনে মেয়ের সংখ্যা কত? আমরা বললাম, ষাট হাজার। বললেন, শুনুন সারা রাজ্যে ষাট হাজার মেয়ের জন্য কোনও পলিটিশিয়ান সময় দেবে না। যাহোক আমি আপনাদের কথা শুনব। শুনলেন, সেই অনুযায়ী কাজ হল। পরে আবার কী কাজে গেছি, খুব ব্যস্ত, তিন মাসের আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই। ফের গেছি, পাঁচ-ছ মাসের আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই। ওইটাই একটু খারাপ অভিজ্ঞতা।’

তিনি এদেশে গ্রিন পার্টি গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তা গড়ার কাজে সক্রিয় হতে চেয়েছিলেন। ‘দিল্লি, বম্বেতে কিছু গ্রুপ আছে যারা ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে, যৌনকর্মীদের নিয়ে, মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স নিয়ে কাজ করে। সেক্স ওয়ার্কারদের তরফ থেকে আমার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। চেন্নাই বেসড কিছু ছেলেমেয়ে নানারকম কাজ করে পরিবেশ নিয়ে, স্টারলাইট কোম্পানির দূষণের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছে। তারা কিন্তু উদয়কুমারকে চেনে না। অবাকই হয়েছিলাম, কুডানকুলাম পরমাণু চুল্লির বিরুদ্ধে উদয়কুমাররা অত দিন ধরে অত বড় আন্দোলন করল তাঁদের সম্পর্কেই জানে না!’

‘দিল্লি, বম্বেতেও মেয়েদের নিয়ে আন্দোলনকারী, মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার, ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে আন্দোলনকারীরা রয়েছে। নতুন নতুন ইয়ং, এনার্জেটিক ছেলেমেয়েরা উঠে আসছে। সেক্স ওয়ার্কার্স মুভমেন্টের তরফে তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। ওরা আসে, যোগাযোগ করে। জেএনইউ-তে, দিল্লি আইআইটিতে, অশোকা ফাউন্ডেশন, যেখানে একটা বিরাট ইউনিভার্সিটি হয়েছে, সেখানে এইরকম অনেক ছেলেমেয়েদের দেখেছি। আমি তো সেসব জায়গায় মিটিং করেছি, আমাকে বলতে ডাকে। ওদেরকে ব্রড ভিশন নিয়ে একটা প্ল্যাটফর্মে যে আনতে পারিনি এটা আমার ফেলিওর। তখন আমার এই ভিশনটা ছিল না। এখন বারবার মনে হয় ওইটা করা খুব দরকার।’

‘তা করতে গেলে একটা ব্রড আইডিওলজি তৈরি করতে হবে। গ্রিন পার্টির একটা এক্সিস্টিং আইডিওলজি আছে। সেই আইডিওলজি কিন্তু শুধু এনভায়রনমেন্ট নিয়ে নয়, পার্টিসিপেটরি ডেমোক্র্যাসির কথা রয়েছে, সবাই ডেমোক্র্যাটকালি একটা ডিসিশন নেবে। ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন্স-এর কথা রয়েছে, সবাই তার কথা বলতে পারবে। রয়েছে অ্যাকাউন্টিবিলিটির কথা, যেখানে তাঁরা সরকারে রয়েছে তাদের একটা দায়িত্ববোধ রয়েছে। গ্রিন পার্টির ম্যানিফেস্টো যদি তুই দেখিস সেখানে কিন্তু এই ইস্যুগুলো আছে। লোকেরা সেটা দেখে না, ভাবে গ্রিন পার্টি শুধু পরিবেশ নিয়ে কথা বলে। তাদের ম্যানিফেস্টো যদি কেউ দেখে তাহলে বুঝবে, সে হয়তো বোঝে এনভায়রনমেন্টাল মুভমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবু কেউ হয়তো এনভায়রনমেন্টকে প্রাইমারি গুরুত্ব দেয় না, তাহলেও কিন্তু গ্রিন পার্টির ম্যানিফেস্টো তাকে সাপোর্ট দেবে। সেজন্য এটা একটা মোর এনকম্পাসিং, অনেক লোককে এখানে আনতে পারে। উদয়কুমার কেন পারেনি সেটা আলাদা ইস্যু। কিন্তু ভাবি টু বিগিন উইথ আমরা এই ব্যাপারটাকে ফ্লারিশ করতে পারি কি না। পশ্চিমবঙ্গের সুবিধা হল যে কয়েকজন রেস্পেক্টেড পার্সোনালিটি— সমরদা, নিরঞ্জনদারা রয়েছেন। বাদলদা, সুজয়দা যখন ছিলেন তখন পারিনি, এবার করতে হবে। এদের মাধ্যমে যদি শুরু করা যায় তাহলে নিউ জেনারেশনকে অ্যাট্রাক্ট করতে সুবিধা হবে।’

‘কমিউনিস্ট পার্টি আর রিজিড লোকজন দিয়ে এটা হবে না। তাদের দিয়ে চারটে ছেলেমেয়েকে তুই পেতে পারিস, কিন্তু তাতে মুভমেন্ট হবে না। আমার মনে হয়, যদি একটা প্রসেস আমরা স্টার্ট করি তুই হয়তো দুজনকে জানিস, আমি হয়তো আরও দুজনকে— এইটার চেন রিঅ্যাকশন হবে। যেটা বলছি তার ক্লিয়ার আর্টিকুলেশন দরকার, সেটা আমি লিখে ফেলব। যে ভাবনা থেকে গ্রিন পার্টি তৈরি করার জন্য বলছি সেখানে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সমরদার মত মানুষজন। টু মেক বেস্ট ইউজ অফ সমরদার পজিশন, ব্রেন অ্যান্ড ইন্টেলেকচুয়লিটি, সেটা যদি আমরা না করতে পারি, আই ফিল দ্যাট উড বি আওয়ার ডিস্ক্রেডিট, আমাদের ফেলিওর। ফ্রন্টিয়ারের আমার লেখাটা পড়ে সমরদা ফোন করে বলে, মেয়েটা মারা গেল! লেখাটা পঞ্চাশজনকে ফরোয়ার্ড করেছে। এই মানুষ তুই পাবি না। এইট্টি নাইন ইয়ার্স, ওই বয়সে আমরা কোথায় থাকব বল তো! আমরা তো হাওয়া হয়ে যাব। আমি সেভেন্টিতেই পৌঁছইনি। আমি কাউকে কাউকে বলার চেষ্টা করেছি, এটা আমার বিলিফ। তুই এটা নিয়ে একটু ভাবিস।’

বললাম, ‘উদয়কুমাররা কিন্তু কয়েক বছর আগেই গ্রিন পার্টি করেছে, ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের আগে।‘

‘তাহলে তো ভালোই হল, ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তুই দেখ কী বলছে ওরা।’

বলতেন, ‘কমিটমেন্ট বলে একটা কথা আছে। সেটা থাকতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে। এই আমি দুটো ভালো লেখা লিখলাম কিংবা কিছুদিন ভালো কাজ করলাম তারপর আর পারছি না, চলে গেলাম, এরকম করে হয় না।’

আমার সঙ্গে তার প্রথম দেখা ঠিক চার দশক আগে, ১৯৮১ সালে। স্মরজিৎদা ভালো লেখে— এই কথা শুনে একদিন পিজি হাসপাতাল থেকে তাঁকে নিয়ে এসেছিলাম উৎস মানুষের আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাইন্ডার নিবারণ সাহার ঘরে, আমাদের বসার ঠেকে। সেই থেকে দু হাতে লিখতে শুরু করেছিলেন মানুষের চেতনা প্রসারের উদ্দেশে। মনে আছে তাঁর প্রথম চাকরি ১৯৮২ সালে, রাজ্যের প্রাইমারি হেলথ সেন্টারে। বললেন, তুইও চ, তুই না গেলে হবে না। শিয়ালদা থেকে ট্রেনে চেপে গিয়েছিলাম। দুবেলা ডাল-ভাত আর অমলেট খেয়ে, হাসপাতাল আর গ্রামে ঘুরে বেড়িয়ে চার-পাঁচ দিন পর বিরক্ত হয়ে বললাম, আমি এবার চলে যাব। বললেন, তুই যাবি? আমিও চলে যাব, এখানে ওষুধপত্র, ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেই, স্টাফও খুব কম, কী চিকিৎসা করব! কলকাতায় ফিরে কিছুদিন পর ইএসআই-এ চাকরি নিলেন। পরে এমডি করলেন, তারপর যেখান থেকে এমডি করেছেন সেই ইন্সটিটিউটেই চাকরি নিলেন বিশেষজ্ঞ হিসাবে। সেই সুবাদেই ‘সোনাগাছি প্রজেক্ট’-এর ডিরেক্টর। ভাবি, ভাগ্যিস প্রাইমারি হেলথ সেন্টারের চাকরিটা ছেড়েছিলেন! তাই তো পেয়েছিলেন কাজ করার এত বড় ক্ষেত্র!