Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

কলকাতা, নয়… — ১২তম পর্ব

অশোককুমার মুখোপাধ্যায়

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

সেইসব শিক্ষকেরা

সে সময়, সেই ষাট সত্তরের দশকে, মাস্টারমশাইরা, দিদিমণিরা একটু বেশিই দেখতেন। খোঁজখবর রাখতেন বেশি, শাস্তির ধাক্কাও বেশি; স্নেহের পরিমাণও তেমনই এক গঙ্গা। সেখানে কোনও ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা নেই! যেমন, সে সময়ে গানের জগতের জ্যোতিষ্ক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের ছেলে দেবকান্তি, বেহালাবাদক সলিল মিত্রের ছেলে অশোক কিংবা সাঁতারু প্রফুল্ল মল্লিকের কনিষ্ঠ ছেলে পঙ্কজ অন্যান্য ছাত্রদের মতোই সমপরিমাণে স্নেহ-শাসন ভোগ করেছে। তবে এর সঙ্গে ওদের কপালে জুটত সহপাঠীদের র‌্যাগিং, যাকে গোদা বাংলায় ফচকেমি বলা যায়।

‘এই দেবকান্তি, ওই ঝনন বাজে গানটা কর তো…,’ যখনই আবদার, দেবকান্তিকে গাইতে হবে। অশোককেও বাঁশি শোনাতে হয়। শুধু পঙ্কজই ছাড় পেয়ে যেত এইজন্যই যে, ডাঙায় সাঁতার কাটা যায় না। কিন্তু ওর বাবার গল্প বলতে হত। দীনেন কোনও ব্যবসায়ী বাড়ির ছেলে, সেও দিব্যি গল্প শোনাত। ওর গল্প আবার ‘অ্যাকশন প্যকড্’— দু-তিনটে ইংরেজি ফিল্মের গল্প মিলিয়ে একটি ধারাবাহিক ভাষ্য। যার মধ্যে একটি ফিল্ম দ্য লঙ্গেস্ট ডে। কী অদ্ভুত ওর ক্ষমতা— ভূগোল দিদিমণির একঘেয়ে সুরের মধ্যে দীনেন ফিসফিস করে গল্প বলে চলেছে ডান আর বামের বন্ধুদের। ডে সেকশনের অনিমেষ, অনিমেষ পাল, হাই পাওয়ারের চশমা, সেলাই করা লম্বা সাদা খাতায় কমিকস আঁকত। লেখা-আঁকা দুই-ই ওর। সে সব নানান থ্রিলার। একজনের পড়া হয়ে গেলে অন্যজনের হাতে চলে যায়। কোনও মাস্টারমশাইয়ের ক্লাস একঘেয়ে লাগলে, তা কাটানোর জন্যই অনিমেষের এই উদ্ভাবন। সেই ছেলে যে কোথায় হারিয়ে গেল!

ক্লাস ওয়ানে পড়বার সময় ক্লাস টিচার ছিলেন ভারতীদি। আমাদের তিরিশজনকেই নামে চিনতেন। প্রত্যেকের বাবা অথবা মা-র সঙ্গে আলাপ ছিল তাঁর। বেচাল দেখলেই ছেলের রিপোর্ট পৌঁছে যাবে বাড়িতে। এমনিতে হাসিমুখ ভরাট অন্নপূর্ণার মতো চেহারা, কিন্তু গণ্ডগোল করলেই চণ্ডিকাদেবী। এইজন্যই, যা কিছু হিসেব-নিকেশ অধিকাংশেরই নিষ্পত্তি হয়ে যেত ক্লাসেই, উচ্চ আদালতে পৌঁছত না। একবার বরুণের মিথ্যা কথা শুনে ওর চুলের গোছা ধরে (মানে চার আঙুলে যতটা চুল ধরা যায়) টান মারলেন দিদি। হাতে চুল উঠে এল। বরুণের মাথায় দেড় ইঞ্চি ব্যাসের একটি সুন্দর বৃত্ত তৈরি হয়ে গেছে। দিদি অপ্রতিভ— ‘কী রে তোর চুলে গণ্ডগোল… খুসকি ভর্তি… চামড়ার কোনও অসুখ নাকি… ডাক্তার দেখা…’ এইসব বলে থামলেন। আমরা যে যার মাথায় একবার হাত বুলিয়ে নিলাম। এইটা কোনও ঘটনা নয়, ঘটনা হল ওর বাড়ি থেকে স্কুলে কোনও অভিযোগ এল না। দিদি যখন শাস্তি দিয়েছেন, নিশ্চয়ই ঠিক, অতএব বাড়িতেই বরুণের অভিযোগ ডিসমিস। তারপর দেখা গেল, অনুমান সত্যি, বরুণের মাথার চামড়া স্বধর্মে নেই, ওষুধ লাগাতে হল। তার আগে ওকে নেড়া হতে হয়। অবশ্য নাপিতকে খুব কিছু খাটতে হয়নি। কারণ আটানব্বই শতাংশ চুলের গোছা ওর ক্লাসের বন্ধুরাই উপড়ে নিয়েছিল।

ডে সেকশনের কথা। সুধীর ভট্টাচার্য, অসীম মুখোপাধ্যায় আর অতীন মুখোপাধ্যায়। সুধীরবাবুর ছদ্মনাম সুপ্রকাশ রায়। ওই নামেই তিনি মূল্যবান সব বই লিখেছেন। সুধীরবাবু বাংলা পড়াতেন, কখনও ইতিহাসও। ওঁর কাছে ইতিহাস পড়লেই নতুন কথা শোনা যেত। সিপাহি বিদ্রোহ যে আসলে ভারতের স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ, ওঁর মুখেই প্রথম শুনি। তখন আমরা ক্লাস সিক্স। সাঁওতাল বিদ্রোহের গল্পও তো কম শোনা হয়নি ওঁর মুখে। আনন্দমঠ প্রসঙ্গে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের কথাও। পাঠ্যসূচির বাইরে বেপরোয়া পড়াশুনোর প্রশ্রয় বলতে গেলে তাঁর কাছেই প্রথম পেয়েছিলাম আমরা। যুক্তির নির্ভরে ইতিহাস দেখার ভঙ্গিও শিখিয়েছিলেন তিনি। এমনকী তথ্য যাচাই করে ইতিহাস রচনার সূত্রও।

আশ্চর্য মানুষ ছিলেন সুধীরবাবু। প্রচণ্ড রাগী, শ্যমবর্ণ, মাড় দেওয়া ধুতি-পাঞ্জাবি পরা, পোড় খাওয়া চেহারা। চশমার ওধার থেকে কারও দিকে তীব্র দৃষ্টি হেনে যখন বলতেন, এদিকে আয়, তারপরেও যে তার হৃদপিণ্ডে কোনও অন্তর্ঘাত হত না, তার একটাই কারণ, তখন, সেই সেভেন-এইটের আমাদের প্রত্যেকের খেলাধুলো করা চেহারা, কেউ রোগা হলেও ভেতরে-ভেতরে মজবুত। এখনকার পোটাটো চিপস খাওয়া স্বাস্থ্য হলে নির্ঘাত আইসিইউ কেস হয়ে যাবে। গদ্যে নিছক ভাবালুতা পছন্দ করতেন না সুধীরবাবু। বলতেন, আদিখ্যেতা। অথচ, এই মানুষটাই আমার টনসিল অপারেশনের পর বাড়ি এসে খোঁজ নিয়ে গিয়েছিলেন— ‘ঠিক আছিস তো? এখন ক দিন বাড়ি থাক, আমি স্কুলের কোনও ছেলেকে বলব রোজকার পড়া পৌঁছে দেবে…।’ পরবর্তীতে, তাঁর ‘ভারতের বৈপ্লবিক সংগ্রামের ইতিহাস’ বইয়ের আখ্যাপত্রের উপরে গোটা-গোটা অক্ষরে লিখে দিয়েছিলেন, ‘বইখানি বোধহয় তোমার ভালো লাগবে, বিংশ শতকের বৈপ্লবিক সংগ্রামের ঝড়ের হাওয়া তোমার মনেও লাগুক।’ ঝড়ের হাওয়া লেগেছিল। তখন সত্তর দশক। চিন থেকে আমদানি হয়েছিল ভারতবর্ষের একটি ম্যাপ। হলুদ জমির উপর বাইশটি লাল বিন্দু— বাইশটি মুক্তাঞ্চল। সুধীরবাবু খেপে গিয়ে বলেছিলেন, এরকম মিথ্যা প্রচারে সাময়িক উত্তেজনা হতে পারে কিন্তু আখেরে লাভ কিছু হয় না। অথচ এই বকুনির পাশাপাশি এটাও অনেকেরই জানা ছিল ‘দেশব্রতী’র নিরাপদ আশ্রয় সুধীরবাবুর দেরাজ। বিকেলে অনেক সময়েই তাঁকে দেখা যেত বঙ্কিম চ্যটার্জি স্ট্রিটের র‌্যাডিকাল বুক ক্লাবে, যেখানে পাওয়া যেত কালপুরুষ পত্রিকা। অথবা পরের দিকে পটুয়াটোলার নিউ বুক সেন্টারে। যেখান অল্প সময়ের জন্য প্রমোদ সেনগুপ্তের সম্পাদনায় বেরিয়েছিল ‘নতুন পথ’ পত্রিকা। ওইখান থেকেই সুধীরবাবুর লেখা (কাফি খাঁ ছদ্মনামে) ‘তেলেঙ্গানা বিপ্লব’ আর ‘গান্ধীবাদের স্বরূপ ও তার ব্যর্থতা’ বইদুটি কিনি।

তাঁর দেশ বরিশাল। কিশোরবেলায় বরিশালের শঙ্কর মঠকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ-বিরোধী কাজকর্মের সূচনা। শঙ্কর মঠ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য ছিলেন সুধীরবাবু। তাঁর কারাবাসের শুরু আঠারো বছর বয়সে। ১৯৩৫-৩৮ কেটেছে বহরমপুর ডিটেনশন ক্যাম্পের তিন নম্বর ব্যারাকে। এক নম্বর ঘরে। ওই ঘরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন কল্পতরু সেনগুপ্ত। ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকাকালীন মার্কসবাদ চর্চার শুরু। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ পান। ১৯৪২ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের গোপন ফাইলেও দেখা যাবে সুধীরবাবুর নাম, সোমনাথ লাহিড়ির পাশেই। কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ কমিউনিস্টদের মধ্যে উনি অন্যতম। হয়েছিলেন পার্টির কলকাতা জেলা কমিটির সেক্রেটারি। পরবর্তীকালে অদ্ভুত অভিযোগে সেই পদ হারাতেও হয় তাঁকে। কমিউনিস্ট পার্টির ঘরোয়া আবর্তে এমন কত খাঁটি মানুষ যে হারিয়ে গেছেন! যারা ষাট দশকের ইতিহাসের খবর রাখে, তাদের অনেকেই এইটাও জানে যে, নকশালবাড়ি অভ্যুত্থান পরবর্তী যে ‘চিন্তা’ গ্রুপের জন্ম তার মধ্যেও স্বমহিমায় সুধীরবাবু!

স্কুল ছাড়ার পরে কয়েকবার দেখা হয় সুধীরবাবুর সঙ্গে। বোঝা যেত কষ্টে আছেন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে ‘তাম্রপত্র’ পাওয়া মানুষটা। স্ত্রী-বিয়োগ তো আগেই হয়েছিল। সুবিধেমতো থাকার জায়গা পাচ্ছিলেন না বহুদিন। বলেছিলেন, অনেক কষ্টে সংগৃহীত বইগুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দুনিয়ার ওপর রাগ— কোনও লাইব্রেরিকে দেব না, সব বই পুড়িয়ে দেব। শেষ অবধি পোড়াননি। আছে। কিন্তু এক ছেলে, এক মেয়েকে পথে বসিয়ে সুধীরবাবু চলে গেছেন, তিরিশ বছর হয়ে গেল।

বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদের চলন শিখিয়েছিলেন অসীমবাবু। সে তার ঠ্যাং ভেঙে পড়ে আছে…। কী হবে এর অনুবাদ? খুব শক্ত কিছু নয়। লেখা হল। তাহলে সে তার পা ভেঙে পড়ে আছে, কী লিখবে? সেখানেও তো ওই লেগ শব্দটা ব্যবহার করতে হয়। তা হলে পা আর ঠ্যাঙের তফাৎ কী? তাই তো, আগে তো ভাবিনি! সেই প্রথম শিন-বোন শব্দ ব্যবহার করলাম ঠ্যাং বোঝাতে। এইভাবেই নতুন কিছু করবার, ভাববার মজা দিতে চাইতেন অসীমবাবু। ওর উৎসাহেই দেওয়াল পত্রিকা করলাম আমরা— মনের ফসল। সবার লেখা জোগাড় তো করা হল, লিখবে কে? কেন অসীমবাবু? ওইরকম ছন্দোময় হাতের লেখা আর কার আছে? যাইহোক ওই পত্রিকাতেই তো আমাদের নিরুপম, নিরুপম চক্রবর্তী, কবি এবং খড়গপুর আইআইটি-র বিশ্ববিখ্যাত অধ্যাপক লিখেছিল— ‘ধ্বান্ত কুরুক্ষেত্রে রণক্লান্ত ওরা পতাকা তুলল, আমি সুষুপ্ত, তাই জানতে পারলাম না…’। ওরই হরিহর-আত্মা অরিন্দমও কবিতায় কারও ত্বকবর্ণ বোঝাতে ‘পাকা কাজুবাদাম’ উপমাটি ব্যবহার করে। যা খুশি লেখার স্বাধীনতা দিয়েছিল মনের ফসল— সৌজন্য অসীম মুখোপাধ্যায়। এক অদ্ভুত নাটকীয় ব্যাপার ছিল অসীমবাবুর। গরমের ছুটি পড়ে যাবে, হোমওয়ার্কের ‘এসে’-র খাতাটা অসীমবাবু ফেরৎ দেননি। একদিন বললাম, দুদিনও বলা হয়ে গেল। যখনি বলি মাস্টারমশাই অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। খাতা হারিয়েছেন নিশ্চয়ই। এখন অতগুলো লেখা কীভাবে জোগাড় করি? কার থেকে করব? ছুটি পড়ে গেল, খাতা পেলাম না। তাহলে মানিকতলায় দীপঙ্করের বাড়ি গিয়ে দেখতে হবে। কিন্তু পেলেও সে লেখা তো আমার রচনা নয়। খুবই ঝঞ্ঝাটের ব্যাপার। চিন্তা হলে ঘুমও পাল্লা দিয়ে বাড়ে। আমার শরীরে বোধহয় এমন কোনও ডিফেন্স মেকানিজম ফিট করা আছে। ভরপেট ভাত খাওয়ার পর গরমের দুপুরে না-চাইলেও ঘুম এসে যায়। জানালা বন্ধ, খড়খড়ি খোলা, টেবিল ফ্যান চলছে, ঘাড়-পিঠ বেয়ে ঘাম গড়াচ্ছে, তবু ঘুম অনিবার্য। আমিও খালি গা, হাফ প্যান্ট, ঘুমে অচেতন। তখন আশপাশের বেড়াল মাছের কাঁটার মধ্যাহ্নভোজ সেরে ঝিমোচ্ছে, পাড়ার কাকবাহিনিও খাওয়া শেষে উলটোদিকের হাসপাতালের আলসেতে বসে পরের কার্যক্রম ঠিক করছে, হঠাৎ কড়া নাড়ার আওয়াজ। প্রথমটায় ঘুম পাতলা হয়েছিল। দ্বিতীয়বার আওয়াজ হতেই খিল খুললাম। এবং খুলেই দেখি অসীমবাবু। সুতরাং হতভম্ব। যতক্ষণে গলা থেকে শব্দ বেরোল— স্যার ভেতরে আসুন…, আমার হাতে সেই ‘এসে’ খাতা ধরিয়ে, উনি প্রায় দৌড়ে উঠে পড়েছেন বড়রাস্তায়, মানে আমহার্স্ট স্ট্রিটে।

সুধীরবাবু ধুতি-পাঞ্জাবি। অসীমবাবুও তাই। কিন্তু অতীনবাবু, ড্রিলস্যার— সাদা শার্ট, প্যান্ট। স্কুলের ঘণ্টা পড়ে যাওয়ার পর এনসিসি-র প্যারেড করাবার সময় আমাদের নিয়ে ওঁর যত্নের শেষ ছিল না। বিকেলের জলখাবারে কী খাবে ছেলেরা? প্যারেড শেষে ছেলেরা পেত ছোট-ছোট কলাপাতার ওপরে রাখা বেশ বড় আকারের মাংসের সিঙাড়া। যার একটিতেই বুভুক্ষু আমাদের পূর্ণ তৃপ্তি। সেই সিঙাড়াকে কত যে খুঁজেছি, অলিতে গলিতে, কিন্তু সে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। কৈশোরের সঙ্গে সেও বোধহয় হারিয়ে গেছে কলকাতা থেকে। অতীনবাবুর সঙ্গে শিবাজির, শিবাজি রায়ের বেশ একটা স্নেহ-মমতা-মান-অভিমানের সম্পর্ক ছিল। যাওয়া হয়েছে দুর্গাপুরের কাছে পানাগড় ক্যাম্পে। পরিত্যক্ত রানওয়ের আশপাশেই আমাদের তাঁবু। অতগুলো ছেলে একসঙ্গে থাকলে যা হয়, ভোররাতে উঠে মাঠে বসে প্রাতঃকৃত্য থেকে শুরু করে রাত্তিরে ঘুমনো অবধি কিছু-না-কিছু দুষ্টুমি চালু থাকে সবারই। এই ব্যাপারে শিবাজির খ্যাতি ছিল খুব। আমাদের ট্রুপ নাম্বার ওয়ানের প্রান্তিক তাঁবু থেকে যা ছড়িয়ে পড়েছিল বহুদূর অবধি। দেখা গেল হিন্দু স্কুল, জগবন্ধু (হবে জগদ্বন্ধু) স্কুলের ছেলেরাও শিবাজিকে সম্রাটের শিরোপা দিয়ে বসে আছে। ক্যাম্প থেকে ফেরবার দিন কোনও মাত্রাছাড়া কাজ করায় শিবাজির শাস্তি হয়ে গেল। অতীনবাবু বললেন, তুমি ট্রাকে নয় হেঁটে স্টেশন যাবে। আমরা ওকে হাত নাড়তে-নাড়তে গাড়িতে উঠে পড়লাম।

শিবাজিকে হেঁটেই আসতে হল সারাটা পথ— প্রায় দশ কিলোমিটার। হোক না শীতকাল তবু ওই রোদ্দুরের মধ্যে একা? না-না, ড্রিলস্যারও হেঁটেছেন ওর সঙ্গে, পাশাপাশি। সারাটা রাস্তায় একটি কথাই বলেছিলেন অতীনবাবু, ‘তুমি যে তোমার বাবার প্রবলেম চাইল্ড, এইটা বোঝো?’

 

(সমাপ্ত)