বৃষ্টি নিয়ে পাঁচটি কবিতা
বৃষ্টি পড়ে
এই বৃষ্টি আমায় নিয়ে ঝরছে
চলছি ফোঁটা ফোঁটা
দিনগুলো সব পাতলা পাতলা, রংগুলো ফিচলে,
ইটের পাঁজর সাঁতলা-মাতলা, আলো-ও ঠিকরে,
টুপ টাপ টুপ টুটুপ টুপ, গদ্য-ছন্দ স্রোত,
কে জানে কোথায় নেমেছে ঝুপ, সদ্য-নিত্য বোধ—
পাগলের মতো বৃষ্টি
সন্ধে থেকে পাগলের মতো বৃষ্টি।
এই মাঝরাতে বৃষ্টি নিজেকেই
বিক্রম দেখিয়ে ঝরছে—
গাছের ভিজে ক্লান্ত,
রাস্তা অসুস্থ বহু আগেই,
বাড়িরা স্যাঁতসেঁতে
আমরা আড়ালে, বিযুক্ত
দেয়াল আর ঘুম জড়িয়েছি
সকাল হলে মাটিতে পা ফেলব।
ততক্ষণ
বৃষ্টি ঝরে
বৃষ্টি ঝরে
বৃষ্টি ঝরে।
বৃষ্টি কেন
গরম দেশে বর্ষা যাচ্ঞা। জল পড়ে— শীত করে— ময়লা বুকে
ভরসা হয়— কারণ নত্বা।। ধাতু ভেজে, নদী ভরে, ব্রিজ ঢাকে।
যত্র তত্র কাকে কাকে চুপসে থাকে।। পাটের গোড়া উরুচুড়ো
ছাড়ায়। ভেজে পোকামাকড়।। উজ্জীবনীপত্র ভেজে। ভেজে।।
একাকাশের একাবহে এক জলের অনেক রকম মানে। তবে,
ঘরে-বারে সর্বপারে এধার-ওধার বৃষ্টি হলে বৃষ্টি পড়ে।। কারণ ছাড়া।।
বৃষ্টি এল
মেঘ সোনারা এগিয়ে চলে মশার মতো শব্দ করে
কাঁঠাল পাতায় তাই ছলে নিঝুম বাজে সবুজ ভরে
ভয়াল ভীষণ শক্তি কার আসছে দেখ প্রবল তেড়ে
দিগন্তেরই এপার-ওপার হাওয়ার ঘুম নেয় যে কেড়ে
দুষ্টু শিমুল ছিটকে আসে সঙ্গ নেয় ধুলোর পাহাড়
পলকা তুলো হাওয়ায় ভাসে শূন্যে গায় মেঘ-মল্লার
গা ছুঁয়েছে টুপ টুপ টুপ ডাল ভাঙল মরমরিয়ে
মনে আগেই নেমেছে ঝুপ বাইরে এল ঝরঝরিয়ে
ভিজছে মানুষ, ভিজছে জন ভিজছে সময়, ভিজছে ক্ষণ
ভিজছি আমি, ভিজছে মন ভিজছে মাটি, ভিজছে শোন
রাস্তা-ঘাট বাড়ির কোণ গাছ-গাছালির নিবিড় বন
পাতার বাহার, কুচকুচে দ্রোণ আনমনা চোখ, দূর মগন
মন গিয়েছে চলে দূরে ছেলেবেলার রাজ্যে
নদীর উপর নৌকাখানি করুণ সুরে কাঁদছে
ঠাম্মা ভাজে বেগুনভাজা গন্ধ তার ম ম করে
বর্ষা গন্ধ ঘরের মধ্যে জলের ছাট আসছে ঘরে
কাগজেরই তৈরি নৌকো দুলকি চালে যায় ভেসে
ছোটুর ঠোঁটে হাসির ঝিলিক নৌকো যায় অপার দেশে
বৃষ্টি মধু ঝরে যায় সময় দোলা সরে যায়
আসা যাওয়া সহজ করে ধ্যান গুন গুন ভাবের ঘরে
বৃষ্টি মধুর আরও হয় প্রশ্ন আরও গাঢ় হয়
সলতে পাকায় পিয়াসী প্রদীপ আগুন জ্বালায় জ্ঞানের অতীত
বৃষ্টি আমার বৃষ্টি পড়ুক বৃষ্টি এস প্রাণটা ভরে
যাক ভেসে যাক গয়ং গচ্ছ জলের তোড়ে জলের তোড়ে