Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

আন্তন

তিনটি কবিতা


আমরাও একদিন পিকনিকে

আমরাও একদিন পিকনিকে যাব সাঁজোয়া গাড়িতে
হাত নেড়ে জানাব বিদায়, অত কাঁদার দরকার নেই
হ্যাঁ কবে ফিরব তা আঁক কষে বলতে পারব না সঠিক
সুধাকর আবার বুটিকাটা রুমাল বের করে বলবে 
উইল মিস্ য়ু পিপল অনেস্টলি

হায় রে এলাচের বাগান, পরিচর্যা করার লোকের অভাব হবে, 
কলের মিস্ত্রীর কলার কে ধরবে তা ভেবে কুল পাই না
দু’পাশের ভিড় থেকে আওয়াজ উঠবে আপদগুলোরে, ভালোবাসি খুব
ড্রাইভার খুশিতে ডুকরে কেঁদে জানায় পাড়াগাঁটা কিরকম
ফ্র্যানকো-জার্মান বর্ডারের মতন লাগছে

দু’শো মিটার যেতেই দেখি আরে সেই শিক্ষিকারাও হাজির
যাদের মনে-মনে দশে গ্রেডিং করতাম কে কত সুন্দর
ওদের কয়েকজনকে তুলে নেওয়া বোধহয় পাপ, আবার সেই সুধাকর
বিড়িবিড় করে বলে বাঁচি তো আগে, বেঁচে থাকি আগে

জুটের ব্যাগভর্তি সব সরঞ্জাম মোটামুটি নেওয়া হয়ে গেছে
কী যে ভালো লাগছে, শীতের রাত্রে রুটি মাংস খেয়ে কমিক্স পড়ার মতন
চারিপাশে কত নতুন ডিজাইনের রঙচঙে ফেস্টুন, কয়েকটা আবার আওয়াজ করে
আধুনিক ব্যাপার-স্যাপার, আমরা কি এতটাই যোগ্য, হ্যাঁ রে গা ছুঁয়ে বল ভাই কেউ

তাহলে ওই কথাই রইল, চিঠিপাটি লেখার সত্যিই কোনও প্রশ্ন নেই 
পিকনিকের ব্যস্ততায় হুঁশই থাকবে না, ভোলা মন, ভোলা মনরে আমার
পেছন ফিরে তাকাব বারকয়েক, যদি সেই মেয়েটি, মেয়েটির দেখা পাই
যে কান্না চেপে বলেছিল আপনার উমনোঝুমনো লেখা মাঝে-সাঝে বেশ ভাবায়।।

একদিন সব বই বেচে

একদিন সব বই বেচে ঘর খালি করে ভাড়া দেবো কোনও তেরছা
টুপিওয়ালা অচেনা মানুষকে, সে কখন ঘরে ঢোকে, কখনই
বা বাইরে চলে যায়, তার কোনও হিসেব থাকবে না
দু’মাস অন্তর পার্সেল আসবে তার নামে, এস্টোনিয়ার স্ট্যাম্প সাঁটা
মাঝরাতে বাথরুমে যাওয়ার সময়ে শুনবো সে আর্হেরিচের* পিয়ানোতে বুঁদ
ফটো তুলে রাখো, কী মতলব কে জানে – এমন মন্তব্য শনিবারের মাছের বাজারে নোট করে নেব; স্বল্পভাষী সেই লোক ঘরের দেওয়ালে টাঙিয়ে
রাখবে যুদ্ধবিধ্বস্ত গ্রামের ছবি, ফ্রেমবন্দি দোমড়ানো পুল ভস্মীভূত শস্যাগার লাশের স্তূপ ভাঙা উইন্ডমিল, কোনও এক শীতের ভোরবেলায়
ছাদে উঠে দেখব সে উড়িয়ে দিচ্ছে সহস্র রঙিন দস্তাবেজ, কিছু বোঝার আগেই একটা ছোট রেকর্ডারের মাধ্যমে বলবে রুটমার্চ শুরু হল বলে, আমার সাথে পালাতে হলে চলো ।

 

*আর্হেরিচ – আর্জেন্তিনার প্রবাদপ্রতিম ক্লাসিকাল পিয়ানিস্ট

ক্যুইজ

তোদের নিয়ে আর পারি না, কিন্তু তোদের নিয়েই তো পারতে হবে, রোদটা পড়েছে, চল চল ছাদে চল, আচ্ছা তাহলে শুরু করি, ক্যুইজ কিন্তু, ঠিক আছে? না না আগে থেকে কেউ ছোঁবে না তালমিছিরির শিশি, তা তখন কার্তিক মাস, আমরা তো রামপুরহাটে, খুব লায়েক হয়েছি, ফিল্টার ছাড়া সিগেরেট, বুঝলি কিনা, তো যাই হোক, একজন জ্ঞাতি এসে বললেন আমার সামনে খেতে হলে খা, কিন্তু ধরার কায়দা আছে, কার কথা বলছি ? ফুল দাদু, ফুল দাদু। হ্যাঁ, ঠিক। তারপরে অন্যবারে খুব বৃষ্টি, সব ভাসিয়ে-টাসিয়ে একেবারে নৌকা নামে-নামে, কিন্তু মাসটা জ্যোষ্ঠ, অনেকে বলছিল এখন তো এমন হওয়ার কথা ছিল না, আরে সব কি তোদের মর্জিমাফিক হবে, তারই মধ্যে খবর এলো পূবপাড়ার ট্যারা সুধীন, আরে আমাদের সিধু, হ্যাঁ, সে কুচবিহার চলে গেছে নক্সাল হয়ে (এটা হিন্ট), রৈ-রৈ ব্যাপার সব, কোন বছর? আটষট্টি, আটষট্টি। কারেক্ট। হুম, প্রাইজের মিছরিটা নে, হাত পাত, না তুই নয়, তুই কি উত্তর দিয়েছিস? ঠিক আছে নে। হ্যাঁ যা বলছিলাম, একবার ঠিক হল খুব হুল্লোড় করে পুরুলিয়া যাব আমরা সবাই, তো, ছিয়াত্তর ছিয়াত্তর, প্রশ্ন করেছি কি এখনও? আগে থেকেই লাফাস না, দাঁড়া, তো সেবারে আবার ইলিশের দাম হঠাৎ করে কম, কেন কম জানি না, ট্রেনের টিকিট কাটা হল, গেলাম টোটাল সতেরো জন, যাত্রাপথে যথারীতি ট্রেন লেট, মাঝের একটা স্টেশনে পকেটমার হল তোদের মেজ কাকুর, যে উলটো সিঁথি কাটতো, কত টাকা? রুপিজ তিপান্ন টু বি এক্স্যাক্ট। এই এটা কেমন করে জানলি? ও বুঝেছি, ঠিক আছে। এখন এইটা শোন, কঠিন আছে, মন দে, তখন কিছু শব্দ নিয়ে খুব ভাবছি-টাবছি, এদিক ওদিক করে বসিয়ে দিতাম এটা-সেটা, এই যেমন ডাকবিহ্বলতা, ফাল্গুন চাউনি, চকিতপবন, সংশ্লিষ্ট স্পর্শ প্রভৃতি, পিকনিকে হঠাৎ দেখা, তোদের কাকিমা আর কে, তা গা ঘেঁষে বসার শখ নই অত, তোরা জানিস আমার রোয়াব, ফুলছাপ শাড়িটা ভালো, তাতে হয়েছেটা কী, আমাকে দেখেছে বার দু’য়েক, আমিও প্রবীরকে বললাম যাও শালপাতায় মাংস দিয়ে উদ্ধার করো, যত্তসব, না না একই বাসে ফেরার প্রশ্নই নেই, তা ছাড়া এর পর ঠেকের দিকে রওনা হব, কী নিয়ে বলছি বল দেখি? (হেসে) প্রেম, প্রেম।