তিনটি কবিতা
নিশ্বাস
নিশ্বাস নেওয়ার মত সার্থক কিছু কী আর আছে পৃথিবীতে?
প্রত্যেক মুহূর্তে এই বাঁচার প্রমাণ।
অথচ কী নিদারুন অনিশ্চিত প্রাণ
ফেলে যাই, কাছে থাকি, পাহারা শরীরে
লেখার অধিক লেখা কাগজে কলমে।
নিতান্ত ঘরের কোণ, চাল-ডাল-তেল
বাঁচার অধিক বাঁচা সে-ই হয়ে ওঠে…
জগৎ ধারণ করে মুহূর্তে মুহূর্তে
হে পৃথিবী, সাধারণ, গাছ দিয়ে যাও…
বীজ পোতো অকৃতজ্ঞ অযুত মানুষের
মাটির শরীর ঝুরো হয়ে ভেঙে পড়ে
মিশে যায়, অনিচ্ছায়, পাহাড়ে, শিকড়ে
তবু প্রতিদিন দ্বিধাহীন আকাঙ্খায়
অন্ধ দেখে ভবিষ্যত নিজের দরজায়
ভুলের প্রতীক হয়ে আসে বারে বারে
জানে না নিমগ্ন কন্ঠ তবু কেন কাঁপে
জানে না নিশ্বাস শুধু সার্থক শরীরে
বাকী সব পুড়ে যাবে প্রচন্ড উত্তাপে!
অনুবাদ
কথা তো কিছু শব্দের সমষ্টি ।
কিছু সতর্ক শব্দ।
যা বোঝাতে চায় লোকে। সেই সব শব্দ।
যা বলতে চায়, তা নয়।
এই যেমন ‘ক’ বোঝাতে চায় জীবনের প্রতি তাঁর কোনও দায় নেই। টান নেই।
তাই বলে ‘আমার আর কি। যে ক’দিন পারি কোনওমতে চালিয়ে নিলেই হয়’।
‘খ’ বোঝাতে চায়, আমায় নিয়ে তাঁর বড়ই ভাবনা।
‘ইস, তুমি কত রোগা হয়ে গেছ। বড্ড অশান্তি, না?
একটু মানিয়ে গুছিয়ে নিও। সুখে সংসার কর’।
অথচ যখন বলতে চাওয়া কথা অনুবাদ করে পড়ে ফেলতে পারি,
তখন দেখি ‘ক’ এর জীবনের প্রতি বড়ই মায়া।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও অনেক শুরু চায়।
এবং
‘খ’ মোটেও চায় না আমি সুখে সংসার করি।
বরং চায় সংসারে ক্লান্ত হয়ে দিনে একবার হলেও যেন ভাবি
সেদিনের সেই সিদ্ধান্ত কতটা ভুল ছিল।
আমি শুনি। আমরা শুনি। যে যা বোঝাতে চায়।
আবার বলতে চাওয়া কথা অনুবাদও করি।
তারপর নিজেরা আবার সতর্ক শব্দ খুঁজি
যা দিয়ে বোঝানো যাবে। অথচ বলা হয়ত যাবে না।
শামুকতল
ট্রেনের লোয়ার বার্থ । প্রকৃতি চলচ্চিত্রময়।
বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠে কিংবা ধানের ক্ষেতে
আল ধরে ছোট ছেলেমেয়েদের দল।
জানালায় একে একে সেতু পার হওয়া
ভাঁড়ের চায়ের মত তরল আবেগ
সমস্ত নিবিড় করে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঘরে বেঁধে ফেলা।
আঁধার নামলে পরে সন্ধের শেষে
শামুকতলের মত অনামি স্টেশনে নেমে যাওয়ার কথা
কোনও একদিন সকলেরই মনে হয়।