চারটি কবিতা
প্রতীক্ষায়
পুনরাবৃত্তি, একটা দেজা ভু যেন, ফেরার পথে আবার
লালগাড়িটার সঙ্গে দেখা। টেসলা বোধহয়, নিজের ক্ষমতা জানে,
সৃজন, উদ্ভাবনী শক্তি শরীর জুড়ে অথচ নিশ্চুপ
পার্কিং লটে, প্রতীক্ষায় একটা স্যুইচ-অন করা মানুষের জন্যে।
আমার চলার গতি শান্ত, চমক কম, আড়ষ্ট থাকি
নির্বুদ্ধি অথবা মোহিনী মায়ায়। শুরু হয়েছিল আকস্মিক
না ধীরে ধীরে বাড়ছিল সরলপথে,
এ নিয়ে আমি অনেক মাথা ঘামিয়েছি, নিজের মনকে
সম্মোহন করে, স্মৃতি তাকেই বলে, একটু জলঘোলা বা
কলঙ্ক হলেও। প্রতীক্ষার একটা পরিচর্যা আছে, হাঁড়িতে ফোটা
ভাতের গন্ধ, অথবা নির্মেদ একটি কবিতা।
প্রতিটা দিনই এখন আকাশ খোঁজা, সার্শি বা
বাইনোকুলারে, এদিকে প্রচণ্ড গরমে ফেটে গেছে মাঠ,
রুক্ষ ঠোঁট, হয়ত এমন দিনেও তাকে বলা যায়।
বেগুনি ধূসর
একগুচ্ছ জলরঙের টিউব সাজিয়ে
আর আমার মত হ্যাংলাকে কাছে ডেকে
খামখেয়ালি, নিয়ামক লোকটা শুধু
দুটো ব্যবহার করতে দিল।
সাদা আর কালো।
আমি মিনমিনে গলায় বলি
ও দুটোর কোনওটাই রং নয়, মৌলিক তো
নয়ই, একটা সব রং, অন্যটা রঙের অভাব।
অগত্যা আমি নিরুপায়,
বিভিন্ন মাত্রায় ধূসর রং আঁকি আর
নাম দিই তাদের লাল ধূসর, নীল ধূসর।
ইদানিং সবথেকে প্রিয় বেগুনি ধূসর,
কেউ বলল বেদনার কেউ বলল প্রেমের রং
আমি একমনে রং করে যাই, চোখের পাতা,
মণিতে তার,
অনেকটা সেই জাঙ্গল বুকের সাপের মত
সম্মোহনে তাকাও আর ‘বিশ্বাস করো, বিশ্বাস করো’
অথবা নিশির ডাকে ছুটে চল দুরন্ত প্রেমিক।
কিছু ধ্যাবড়া নীল ছোপ
সহজে বিদায় ছিল বহু আগে, সে কিন্তু ক্রমশই,
যেটা সহজ, তাৎক্ষণিক মনে হয়েছিল,
পিছু তাকায়, পুরোপুরি ধুয়ে যায় না এইসব দাগ
বৃষ্টি এসে ধুলো, ডিজেলের কালো ধোঁয়া মুছে দেয়,
চায়ের কি রক্তের দাগ সহজে যায় না।
ব্লিচ লাগে। আমি এতে আশ্চর্য হই। হব না?
আমার কৌতূহল কম, সাধ্যও, তাই খারিজ
এখন টুলবক্সে নেই, অথচ প্রত্যাশা আসে
ফেনা কি বুদবুদ
সচকিত হতে হয়— সাবানজলে পা হড়কালে
বিদ্রুপ, একটা মস্করা, লোক জানাজানি
জাগাতে পারে পুনরায়, দ্বিতীয়বার। চুপিচুপি তাই
কানেকানে বলি—
আমার কিছু ধ্যাবড়া ছোপ আছে নীলবসন্ত,
নীলহেমন্তের, ধুয়ে দিবি জল?
সরলরেখাগুলি
আমি সরলমন, সরলরেখাগুলি দেখি, অঢেল যে তারা তা নয়
আসলে সব লাইনই ফ্র্যাক্টাল, খুঁটিয়ে দেখলে বা নজরে মাপলে
প্যাটার্নের ভেতর প্যাটার্ন, অথচ তুমি তার থেকেও দূরে,
নিরবিচ্ছিন্ন ফোকাস তোমার
রেখার মিশ্রণে— যেন কফি হাউসে আড্ডা দিতে গিয়ে
পরিচয় তৈরি করেছে
একটা সন্নিহিত বা বিপ্রতীপ কোণ।
আমি তোমায় লক্ষ করি সারা বিকেল
দু টেবিল দূর থেকে, যখন হেসে উঠছ
আমি অপ্রস্তুত বা হতাশায়, আবার যখন তুমি রেডি
ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে যেতে, নির্ভুল সায় আমার,
শালু উড়িয়ে নেচে উঠি প্রায়। তুমি কিন্তু বসে পড়ো আবার,
তার সঙ্গেই হাসো ফের। আমার খুব ইচ্ছে হয় দৌড়ে গিয়ে,
ঘর ভরা লোকজন টপকে গিয়ে
তোমার টেবিলে তছনছ করে দিই, অধিকার,
সাম্রাজ্য, কাপ গেলাস চিনিদানি কফিপট,
তোমার ভদ্রলোককে বলি, আপনি আসুন এবার
আর তারপর তোমার চোখের দিকে তাকাই।
স্পষ্ট, সরলরেখায়।
কী দেখব সেখানে অতন্দ্রিলা— ভয়, ঘেন্না, না কৌতুক?