এসো জোনাকিভরা নিৎসে
১.
নিৎসে আজ এসেছিল,
নিৎসে আমায় ভীষণ ভালোবাসে।
নিৎসের তৈরি কাগজের নৌকোয়
আমরা বসবাস করি ইদানীং।
এসো জোনাকিভরা নিৎসে
মনে হয় তোমার কানের দুলের
ভিতর হাওয়ার
হাওয়াদের হ্যাজাক জ্বলছে
আমার খিদে পেয়েছে নিৎসে
তোমার মতো যুবক যুবক রোদে
আমার খিদে বাড়ছে আরও
নিৎসে তুমি মলয়বাতাস, তুমি নিষ্পেষণ।
নিৎসে তুমি বৃদ্ধ বজ্রপাত
নিৎসে আমার আলোচোরের বাড়ি
আগুন ধরে গেছে,
নিৎসে নেভাও তুমি আমার স্বভাব,
আমার অজ্ঞানভাব নিভিয়ে দাও মা…
২.
এইসব অসুবিধা আমাকে সুমধুর ইঙ্গিতে
করেছে এক আহত সূর্যাস্ত
কলিং বেল বাজাচ্ছে যে
সে অভিনয় জানে ইহজীবনের
তোমার একাধিক ছল ও চতুরতা
টিফিনের পরের পিরিয়ডে ঢেউ হয়ে আসে
যেন মোজার্ট যেন দীর্ঘ শব বহনের পথ
তুমি এনেছ আন্তরিক অসুবিধা সমেত
প্ল্যাটফর্মে যে ট্রেন ঢুকল তা আমার নয়
তা রাষ্ট্রের পাটিগণিত আসলে—
ট্রেনের বাথরুম থেকে ভেসে আসে
লাজুক ও
নমনীয় এক তরুণীর পেচ্ছাপের তীব্র
গন্ধ, যেন নতুনের উদ্বোধন
লেগে আছে তাতে
পাখি পাখি অসুবিধা রেখে গেলে এইখানে
ট্রেন ও পেচ্ছাপের গন্ধ
টিফিনকৌটো খুলে
দিয়েছ আমাদের অনেক বৃষ্টির ছাঁট,
দিয়েছ আদালত ও ঘড়ি
সেকেন্ডের কাঁটা…
৩.
মুখোমুখি বসেছি আমরা অনেককাল
কিম্বা কথা হয়নি
আসলে কথা বলা হয়ে ওঠেনি এতকাল
এইবার তালে, তাহলে কথা হোক
ঢেউ হোক আবোলতাবোল
ভেঙে যাক পাড়,
উতলা হোক মন একে অপরের
আলো জ্বলছে,
চিতার চোখ শিকারের সন্ধানে জ্বলছে
কবিতার মতো একটা দুটো লাইন
জ্বলে উঠছে হঠাৎ
যেন সকালের সন্ধান
যেন আমাদের সন্তান
খসে যাক সব পাতা ও বল্কল
মুখোমুখি এই ঝড় মুক্তির আশ্বাস
কিন্তু আমাদের কারও মনই উতলা
হল না
হচ্ছে না
হবে না কোনওদিন
শুধু দুটো ঝড় অকারণ একটা সংঘর্ষে
অতৃপ্ত হল…
শুধু দুটো মৃতদেহ পড়ে রইল মুখোমুখি
শুধু দুটো সন্দেহ সলতে বেয়ে জ্বলতে থাকল
৪.
নৌকো ছাড়ল। লঞ্চ। স্টিমার। ধীরে ধীরে তুমি দূর
হয়ে যাচ্ছ। তুমি দূরের নারকেল সারির একজন
গর্ভবতী গাছ।
দূরে গেলে মনে হয় ঠিকঠাক ক্যারাম খেলা হয়নি,
পুজো দিইনি পুরীর মন্দিরে, পান্ডাগুলো কামুক ও
উপাসকদালাল। দালালের দয়িতাকে নারকেলের শাঁস
দাও, আর দাও মাংসের পতাকা।
তোমার আভাস লেগে আছে আমার লুপ্ত পাথরে।
পাথরের জলে সূর্যাস্ত দেখি আমি, ততদিনে গর্ভবতী
নারিকেল গাছের সন্তানের বাঁশি দূর থেকে
ভেসে আসে আমার নিকট। আস্তিক নাস্তিক-এর
বাদ্যযন্ত্রে তরল পাথরের স্রোত বয়।
নৌকো অস্ত যায় সূর্যের আলো উপড়ে।
নৌকো উদয় হয় মাংসের অতল থেকে।