Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

শ্রেয়া চক্রবর্তী

পাঁচটি কবিতা | শ্রেয়া চক্রবর্তী

পাঁচটি কবিতা

 

সুইসাইড নোট

বুকের ওপর কবিতার খাতা উল্টে রাখা
আধবোজা চোখ নিস্পন্দ ইজিচেয়ারের হালকা দোলায়
অভিযোগহীন বারান্দায় যখন রোদ্দুর এসে পড়বে
একদিন এভাবেই চলে যেতে চাই নীরবে…

হয়তো সেদিনও তুমি ডাকবে এমন করেই
যেমন করে ঘুম থেকে ডেকে তোলো রোজ
সাড়া না পেয়ে বুকে মাথা রাখবে নীরবে
তোমার মুঠো থেকে আমার হাতের পাতা
ঝরে পড়বে নিঃশব্দ তারার মত
যেন অভিমান ছিল খুব

টেবিলের ওপর বিড়াল উল্টে দিয়ে যাবে জলের গ্লাস
আমি জানতেও পারব না এঁটোকাঁটা ছড়িয়ে গেল সর্বত্র
তুমি চুপচাপ আমার ডায়েরি পড়ে ফেলছ তবু
কোনও প্রতিবাদ জানাব না আর
কারণ ঘুম আমার মাথার ওপর তাঁবু ফেলেছে
অনতিক্রম্য রেডিয়াসে

কাজের মাসি বেল বাজিয়ে ফিরে যাবে নাকি?
দরজা খুলে দিও তাকে
বিছানাটা টানটান রেখো
টেবিলের ওপর রেখো প্রিয় কবিতার বই, জুঁইফুল
তারপর কোথায় যাবে তুমি? কোনদিকে?
ধরে নেবে দ্রুত কোনও নাগচম্পার হাত?
তবে ভালো থেকো, ভালোই থেকো…
যা কিছু জেনেছি এই ঐহিক জ্বরে
মৃত্যু, বলো নির্মোহ, তার অধিক কী আর জানাতে পারে…

 

ভাষা

তোমাকে ভালোবাসার কোনও ভাষা নেই
নেই ঘৃণাবাসার
নেই আদরের ছুঁতে চাওয়ার আকুলতায়
পেরিয়ে গেল যে ট্রেন
তাকে ঘড়ি ধরে মনে রাখার
নেই হননের নেই এক্ষুণি মরে যেতে চাওয়ার
মত ইন্দ্রপতনের
মানুষের ভাষা যার শেখা হল না আজও
সে জানে চোখ কখন ঝুঁকে পড়ে চোখের ওপর ঘনগোছা চুল
আঙুল কখন উতলা হতে হতেও নুয়ে পড়ে বুকে
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম কোন্ সে বিকেল
শরীর এমন হায় কত কথা বলে…

 

সলিলকি 

কেমন আছ তুমি। আর তোমার তেইশের প্রেমিকাটি।
আমার শরীর ভালো নেই। মনও নয়।
বাজারে যাইনি আজ। পাউরুটি খেয়ে ঘুমিয়েছি।
ঘুম ভেঙে দেখি দুপুর হয়ে এল।
মাথার কাছে টুনটুনি পাখি।
বারান্দায় খুব হাওয়া। রুমাল শুকিয়ে যায়। চোখও।
বালিশটা আড়াআড়ি দিলে প্রিয় বন্ধুর ফোন আসে।
আমার কোনও প্রেমিক নেই।
ঝুটমুট কথা বলা হয় না আর।
খুব বেশি সত্য জানা ভালো নয়। ওতে রোজ রাতে জ্বর আসে।
বাজারে যাইনি আজ। তবে যেতে হবে।
বাঁচতে চাই বলে সুইচ টিপতে গিয়ে ফিরে আসি।
সারারাত সারাদিন পাখা ঘোরে।
আলো জ্বলে জ্বরের ভেতর।

 

আবাহন

আসন রয়েছে পাতা ঝরা পালকের
আদিগন্ত বনভূমি দোলায় চামর
নক্ষত্রের চাঁদোয়ার তলে
ভালোবাসার পরমাণ্ণ আছে রাখা

তুমি ভিক্ষুকের মত নয়
রাজার মত এসে বসো সগৌরব
দেখো পদতলে স্রোতস্বিনী কেমন বহমান

শোনো বসন্ত উতল করা ময়ূরের কেকা…

 

এরোটিকা

মেঘের ওপর যেমন বিস্তারিত চিল
তেমনই ডানা মেলে আঙুলে আঙুল
সারা দেওয়ার শক্তিটুকু ক্ষীণ
এমন গভীরে ডুব সকলই অসার
সমস্ত বিদ্যুৎ এসে মিলে গেছে নখের শিরায়
সুইচ টিপলেই সারা ঘরে ছড়িয়ে যাবে আগুন
এমনই অবশ হয়ে যদি থাকা যেত
আজীবন ম্যাজিক ম্যাজিক
অনাঘ্রাত ফুল অথবা মাটির গর্ভে লুকিয়ে থাকে
খনিজ যেমন অনাবিষ্কৃত
তেমনই আছি অপেক্ষায় তোমার…