Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

জনগণমন: বিতর্কের জালে রবীন্দ্রনাথ — প্রথমাংশ

জনগণমন: বিতর্কের জালে রবীন্দ্রনাথ — প্রথমাংশ | শিবাশীষ বসু

শিবাশীষ বসু

 

২৭ ডিসেম্বর, ২০১১। দিনটি ছিল আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন’ গানটি গাওয়ার একশো বছরের পূর্তি। কিন্তু কেবল তাই নয়, এই বিশেষ দিনে আবার আরেকবারের জন্য অহেতুক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল রবীন্দ্রনাথের এই গান। এবার বিতর্ক সৃষ্টি করলেন একাধারে লেখক, অধ্যাত্মবিদ, দার্শনিক এবং বৈদিক বিজ্ঞানের চর্চাকারী হিসেবে বিখ্যাত ব্রহ্মর্ষি ডঃ পদ্মাকর বিষ্ণু বর্তক। তিনি দাবী করলেন, এই গান রাজপ্রশস্তিই কারণ, তখন ভারতের অধিনায়ক ছিলেন ব্রিটিশ সম্রাট। ‘হিন্দু জন-জাগ্রুতি সমিতি’র ওয়েবসাইটে লিখিত একটি প্রবন্ধে তিনি অভিযোগ করলেন, “The song was composed precisely at the time of the visit of British King George V in December 1911 to Hindusthan. In this song, the ‘Adhinayak’ (‘The Lord of the masses of India’) has been hailed. In 1911, when Hindustan was in slavery, there was no lord of the masses. ‘Adhinayak’ means the most superior hero. In those days, the British emperor was considered as the ‘Adhinayak’. ‘Bharat Bhagya Vidhata’ means he who decides the destiny of Bharat. The destiny of the Bharat which was languishing in slavery was then decided by the British emperor alone. Thus the King George V can only be considered eligible to be hailed as ‘Bharat Bhagya Vidhata’ and no other Indian leader.”[1]

ডঃ বর্তকের আরও অভিযোগ, ‘তব চরণে নত মাথা’ বলতে রবীন্দ্রনাথ পঞ্চম জর্জের চরণে মাথা নামিয়েছিলেন, এবং ‘গাহে তব জয়গাথা’ বলতে রবীন্দ্রনাথ পঞ্চম জর্জের জয়গান গেয়েছিলেন। তিনি বললেন, “With the words ‘Tava Charane Nata Matha… Rajeshwar Bharat Bhagya Vidhata’, Tagore was bowing his head in reverence in front of an emperor. It is but natural to conclude that he was bowing his head in front of the King George V. ‘Gahe tava jaya gatha’. Who was victorious in 1911 A.D. in Hindustan? None. Hence it can safely be inferred that Tagore was praising the victory of King George.”[2]

২০১১ সালেই শেষ নয়। এর পরেও একটি বিশেষ গোষ্ঠী ন্যক্কারজনকভাবে এই একই ধরনের অভিযোগের ঘ্যানঘ্যানানি শুনিয়েছে। ২০১৫ সালে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছিলেন সুব্রমনিয়াম স্বামী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা এক চিঠিতে সুব্রমনিয়াম বলেন, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তৎকালীন ব্রিটিশ রাজার প্রশংসা করা হয়েছে এবং ব্রিটিশ রাজার প্রশংসামূলক শব্দগুলো পরিবর্তন করতে হবে। এ সব শব্দ পরিবর্তন করে সংস্কৃত শব্দ গ্রহণ করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি। জি নিউজ সূত্রে জানা যায়, স্বামী লিখেছেন, “As you may know, which should be our national anthem, Jana Gana Mana or Vande Mataram, was debated thoroughly in the Constituent Assembly and the opinion had become quite polarised. Therefore in the last day on the 26th November 1949, the President of the constituent Assembly, DR Rajendra Prasad took sense of the house instead of vote, that Jana Gana tune may be accepted that a future Parliament can change the wording of the anthem. This consensus had to be brought because a large number of members had expressed in the debate that the fact that the song was as originally worded, sung in the Kolkata session of the Congress in 1912 to welcome the British King. Dr Prasad recognising the sentiments therefore put off for another day the replacement of the world to a future Parliament.”[3] বস্তুত রবীন্দ্রনাথের লেখা গানটি যা স্বাধীন ভারতের জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের জাতীয় সঙ্গীত, সুব্রমনিয়াম স্বামী তার পরিবর্তন আনবার দাবী জানাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরেই।

২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, ভারতের খ্যাতনামা হিন্দি কবি গোপাল দাস নীরজ বললেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীত বা রাষ্ট্রগান ‘জনগণমন’ দেশটিতে ব্রিটিশ শাসনের সুখ-স্মৃতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এর বদলে ‘বন্দেমাতরম’ বা ‘ঝাণ্ডা উচা রহে হামরা’কে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা উচিত বলে জানান বিরানব্ববই বছর বয়সি এই কবি। পদ্মভূষণ পদকপ্রাপ্ত কবি নীরজ বলেন, ব্রিটিশ রাজ পঞ্চম জর্জের অভিষেক উপলক্ষে ১৯১১ সালে এই সঙ্গীত রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। নীরজ বলেন, এ সঙ্গীতে বলা হয়েছে ‘জনগণমন অধিনায়ক’ অথচ ‘অধিনায়ক’ বলতে একনায়ককে বোঝানো হয়। এই একনায়ককেই ‘জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা’ বলা হয়েছে এই সঙ্গীতে। হিন্দুস্থান টাইমসে প্রকাশিত হয় নীরজের বক্তব্য— “Claiming that Jana Gana Mana is reminiscent of British rule in India, Hindi poet Gopal Das ‘Neeraj’ has said that ‘Vande Matram’ or ‘Jhanda Ooncha Rahe Humara’ should replace the song penned by Rabindranath Tagore as the national anthem. … He also said the national anthem was written by Tagore in 1911 at the coronation of George V, the King of United Kingdom. Asked if he was suggesting a change in the patriotic composition, he said, “Now that it is the national anthem what can be done. Why did we leave ‘Vande Matram’… so many people were martyred for Vande Matram… Hindus as well as Muslims. In ‘Jan Gan Mana Adhinanayak’, ‘adhinayak’ stands for dictator. ‘Jayahe Bharat Bhagya Vidhaata’, he is the creator of the destiny of Bharat.”[4]

‘জনগণমন’ গানটি নিয়ে বিতর্ক কিন্তু আজ নতুন নয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে যেমন ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের একশো বছর পূর্তি হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের এই গানটি নিয়ে বিতর্ক ও তিক্ততার বিষয়ে খোঁজ করলে দেখা যাবে, তার উৎসটিও একশো বছর আগেই থেকে গিয়েছে।

এখন প্রশ্ন ওঠে, সত্যিই কি রবীন্দ্রবিরোধীদের অভিযোগের কোনও ভিত্তি আছে? অর্থাৎ ‘জনগণমন’ গানটি কি সত্যিই রাজ-প্রশস্তি হিসেবে রচিত এবং গাওয়া হয়েছিল? এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে আমাদেরও ফিরে যেতে হবে ১৯১১ সালের শেষ বুধবারের দিনটিতে অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বরে।

 

দুই.

রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের মৃত্যু হল ১৯১০ সালের ৬ মে। তাঁর দশ বছরের রাজ্যশাসনে ঘটনার ঘনঘটায় ব্যস্ত ছিল বঙ্গদেশ। ভারতের বড়লাট হয়ে এসে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব করেছেন। পরবর্তী বড়লাট লর্ড মিন্টো ক্রমেই হিন্দু-মুসলমান বিরোধকে উসকে তুলেছেন। বঙ্গদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া বয়কট আন্দোলন ক্রমেই চরমপন্থী বিপ্লবী আন্দোলনের পথে অগ্রসর হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সপ্তম এডওয়ার্ডের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র পঞ্চম জর্জের রাজ্যাভিষেক হল ১৯১১ সালের ২২ জুন তারিখে। পঞ্চম জর্জের সিংহাসনে আরোহণের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভারত সংক্রান্ত রাজনীতিতেও দুটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটল। মর্লির জায়গায় ভারতসচিব হলেন লর্ড ক্রু এবং মিন্টোর পরিবর্তে ভারতের বড়লাট হলেন লর্ড হার্ডিঞ্জ। ১৯১১ সালের ২১ নভেম্বর কলকাতায় এসে কার্যভার গ্রহণ করে লর্ড হার্ডিঞ্জ প্রথমেই বাংলার ছোটলাট এডওয়ার্ড বেকারকে অধিকাংশ রাজদ্রোহমূলক মামলা তুলে নিতে বললেন। অভিষেকের মাসখানেক পরেই রাজদম্পতি ভারত সফরে আসবেন এই নিয়ে লেখালেখি চলছিল, অবশেষে মন্ত্রিসভার পরামর্শে রাজা পঞ্চম জর্জ ওই বছরের শেষের দিকে প্রস্তাবিত দরবারে সভাপতিত্ব করার জন্য রানিসহ ভারতে এলেন। রাজনৈতিক কারণে এই দরবার ভারতের রাজধানী কলকাতায় অনুষ্ঠিত না হয়ে দিল্লিতে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হল। মুঘলশাহী দরবারের অনুকরণে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে দিল্লির মহাদরবার অনুষ্ঠিত হল ১২ ডিসেম্বর ১৯১১ তারিখে। দরবারে রাজা পঞ্চম জর্জকে যেন মুঘল বাদশাহের ভূমিকায় অবতীর্ণ দেখাবার চেষ্টা করা হল। ১২ ডিসেম্বর রাজা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘোষণা করলেন: (১) পূর্বতন বাংলা ও পূর্ববঙ্গ-আসাম প্রদেশ থেকে বিহার ও আসামকে বিচ্ছিন্ন করে অখণ্ড বাংলা প্রদেশ গঠিত হবে। (২) বাংলাকে আইনপরিষদ সহ প্রেসিডেন্সি স্তরে উন্নীত করে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের স্থলে গভর্নরের শাসনাধীনে আনা হবে। (৩) কলকাতার পরিবর্তে দিল্লি হবে ঔপনিবেশিক ভারতের রাজধানী। বঙ্গভঙ্গ সম্পর্কে দীর্ঘ ছয় বছরের ক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার আনন্দে আত্মহারা বাঙালি ভুলে গেল ভারতের রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার ব্যথা।

১৯১১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ২৬-২৮ ডিসেম্বর কলকাতার গ্রীয়ার পার্কে আয়োজিত হল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ছাব্বিশ-তম বার্ষিক অধিবেশন। এই সম্মেলনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে এই অধিবেশনের সভাপতি মনোনীত হন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে শ্রমিকদলের নেতা র‌্যামজে ম্যাকডোনাল্ড। কিন্তু  আকস্মিকভাবে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হলে তিনি এই পদ গ্রহণে অসম্মতি জানান। তখন পণ্ডিত বিষণ নারায়ণ ডার-কে সভাপতি মনোনীত করা হয়। ‘ভারতবর্ষের জাতীয় সঙ্গীত’ প্রবন্ধে প্রবোধচন্দ্র সেন লিখেছেন, “তার মাত্র একপক্ষ কাল পূর্বে (১২ই ডিসেম্বর) দিল্লীর দরবারে সম্রাট পঞ্চম জর্জ বঙ্গবিভাগের অবসান ঘোষণা করেন। এই ঘোষণায় উল্লসিত হয়ে মডারেট নেতারা স্থির করলেন, কংগ্রেসমণ্ডপ থেকেই সম্রাটের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে রাজদম্পতিকে স্বাগত সম্ভাষণ জানানো হবে। কংগ্রেস অধিবেশন সমাপ্তির দুদিন পরেই ৩০শে ডিসেম্বর তাঁদের কলকাতায় আগমনের তারিখ।”[5] সেই অনুযায়ী অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনের অ্যাজেন্ডা ছিল রাজা পঞ্চম জর্জকে একটু আনুগত্যমূলক স্বাগত জানানোর প্রস্তাবনা। আসলে রাজধানীর পরিবর্তন নিয়ে বাঙালি মননে বিশেষ দুর্ভাবনা ছিল না। বরং তাঁদের সাধের স্বদেশি-বয়কট আন্দোলন যা শুরু হয়েছিল ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ জানাতে, সেই আন্দোলনের বিপুল জয় তাঁরা দেখতে পেলেন এই ঘোষণায়। হয়তো সে জন্যেও, তাঁদের সম্রাট-বন্দনার ইচ্ছেটা জোরদার হয়েছিল।

যাইহোক, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬ তারিখ দুপুরে সরলা দেবীর নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে ‘বন্দেমাতরম’ গানটি দিয়ে অধিবেশনের সূচনা হল। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর বেলা বারোটায় অধিবেশনের সূচনা হল সরলাদেবী চৌধুরী, অমলা দাশ, দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমল হোম, চিত্রলেখা সিদ্ধান্ত প্রমুখের সমবেত কণ্ঠে গাওয়া ‘জনগণমন-অধিনায়ক’ গানটি দিয়ে। একটি প্রবন্ধে আমিনুল ইসলাম লিখেছেন, “[পরবর্তীকালে] অভ্যর্থনা সমিতির অন্যতম সম্পাদক ডাঃ নীলরতন সরকারের সহকারী জ্ঞানাঞ্জন নিয়োগী হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় ১৯৪৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ডাক্তার নীলরতনের নির্দেশে তিনিই রবীন্দ্রনাথের কাছে থেকে গানটি (‘জনগণমন’) এনে তাকে দেন। কংগ্রেসে গীত হবার পূর্বে ডাক্তার নীলরতনের হ্যারিসন রোডের বাসভবনেই গানটির রিহার্স্যাল হয়। গায়কদের অন্যতম অমল হোম জানিয়েছেন, দীনেন্দ্রনাথ তাঁদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।”[6] পরদিন ‘দ্য বেঙ্গলি’ পত্রিকায় গানটির ইংরেজি অনুবাদসহ এই সংবাদের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আসছি সে প্রসঙ্গে।

‘জনগণমন’ গানটি ছাড়াও রাজার সম্মানে সেদিন হিন্দিতে রামভুজ চৌধুরীর একটি গানও গাওয়া হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দত্ত তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন, “The song was first sung in a session of the Congress in 1911. This session had decided to felicitate George V since he had announced the abrogation of the partition of Bengal, thereby conceding the success of the Swadeshi agitation, the first modern anti-colonial movement that had started in 1905. … Actually, two songs that had been sung that day. The Jana Gana Mana had been followed by a Hindi song composed specially for George V by Rambhuj Chaudhary. There was no real connection between the composition of the Jana Gana Mana and George V, except that the song was sung— not written— at an event which also felicitated the king.”[7]

সমস্যাটির সৃষ্টি হল এইখানেই। স্পষ্টতই, সেই দিনই রবীন্দ্রনাথের মতো এক বিশিষ্ট ব্যক্তির গান অনুষ্ঠানে গাওয়া হওয়ায় সংবাদমাধ্যমের ভুলে একটি ভ্রান্ত খবর প্রচারিত হল যে, রবীন্দ্রনাথের গানটিও নাকি সম্রাট পঞ্চম জর্জের প্রতি সম্মানার্থে রচিত হয়েছে। পরদিনের ইংরেজি সংবাদপত্রগুলিতে এই সংবাদ প্রচারিতও হয়, বাঙালি কবি বাবু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশেষত সম্রাটকে স্বাগত জানিয়ে একটি গান রচনা করেছেন। একবার দেখা যাক, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পত্রিকাগুলিতে কী ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল পরদিন, ২৮ ডিসেম্বর ১৯১১ তারিখে। ‘দ্য ইংলিশম্যান’ পত্রিকার সংবাদে লেখা হয়, “The proceedings opened with song of welcome to the King Emperor, specially composed for the occasion by Babu Rabindranath Tagore. … This was followed by another song in Hindi welcoming Their Imperial Majesties. The choir in both song was led by Mrs. Rambhuj Dutt Chaudhuri.”[8] স্পষ্টতই, ইংলিশম্যান পত্রিকার বিবরণ অনুসারে রবীন্দ্রনাথের বাংলা গানটিও রাজ-বন্দনার উদ্দেশ্যেই রচিত বলে ধরে নেওয়া যায়। এবার দেখা যাক, একই দিনের ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকা কী বলছে। “The proceedings commenced shortly before 12 o’clock with a Bengali song … The choir of girls led by Sarala Devi (Mrs. Rambhuj Dutt Chaudhuri) then (after the loyalty resolution) sang a hymn of welcome to the king specially composed for the occasion by Babu Rabindranath Tagore, the Bengali poet.”[9] এক্ষেত্রে আবার বাংলা উদ্বোধনী সঙ্গীতটি কার রচনা, তার উল্লেখ নেই। ‘রয়টার’ পরিবেশিত সংবাদটি বিলেতের ‘ইন্ডিয়া’ নামক সাপ্তাহিক পত্রিকাতে ২৯ ডিসেম্বর ছাপা হল, “When the Indian National Congress resumed its session on Wednesday, December 27, a Bengali song specially composed in honour of the royal visit was sung and a resolution welcoming the King Emperor and Queen Empress was adopted unanimously.”[10] একই ভুল পরিবেশিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ল ভারতের অন্য প্রদেশের সংবাদপত্রগুলিতেও। সুযোগ পেয়ে রবীন্দ্রবিরোধীগণ প্রচার করতে থাকেন যে ‘জনগণমন’ গানটি আসলে সম্রাটের বন্দনাগান। এভাবেই সুকৌশলে রবীন্দ্রনাথকে একজন ব্রিটিশভক্ত রাজকবি বলে চিহ্নিত করা হল।

 

তিন.

এবার আসল ঘটনায় আসা যাক। ‘গানের পিছনে রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থের লেখক সমীর সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, “গানটির পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি, কবে কোথায় রচিত তাও জানা যায় না।”[11] শুধু তিনিই নন, গানটির ব্যাপারে একই বক্তব্য রবিজীবনীকার প্রশান্তকুমার পালেরও। তাহলে গানটির সৃষ্টি হল কবে, কোথায়? ঘটনাপরম্পরায় যা জানা যায় তা হল, ডিসেম্বর ১৯১১ অধিবেশনের আগেই কংগ্রেসের মডারেট নেতারা স্থির করেছিলেন, কংগ্রেসমণ্ডপ থেকেই সম্রাটের প্রতি আনুগত্য জানিয়ে রাজদম্পতিকে স্বাগত সম্ভাষণ জানানো হবে। এখন এই স্বাগত-সম্ভাষণের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত একটি প্রশস্তিসঙ্গীতের। কে লিখে দেবেন ভারতসম্রাটের বন্দনার উপযোগী সঙ্গীত, রবীন্দ্রনাথ ছাড়া? অতএব, এই সঙ্গীত রচনার অনুরোধ নিয়ে কোনও এক পরম রাজভক্ত বন্ধু রবীন্দ্রনাথের দ্বারস্থ হন। কিন্তু ঠিক কে রবীন্দ্রনাথের কাছে এই অনুরোধ নিয়ে আসেন, তা স্পষ্ট জানা যায় না। জানা যায়, ‘ন্যাশনাল কমিটি’ এই অনুরোধ নিয়ে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথের কাছে। ন্যাশনাল কমিটি মানে কলকাতায় সম্রাটের আগমন উপলক্ষে তৈরি সরকারি কমিটি, না কি জাতীয় কংগ্রেসের নিজস্ব কমিটি, তাও বোঝা যায় না। আবার রবীন্দ্রনাথ নিজে ১৯৩৭ সালে পুলিনবিহারী সেনকে লেখা একটি চিঠিতে এ বিষয়ে কিছু কথা লেখেন, যাতে তিনি জানান, সরকারি মহলে বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী, এমন এক বন্ধুই তাঁকে অনুরোধটি জানান। কিন্তু কে সেই বন্ধু?

প্রবোধচন্দ্র সেন ‘ভারতপথিক রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থে উক্ত বন্ধুটির পরিচয় জানিয়েছেন— শ্রীযুক্ত আশুতোষ চৌধুরী, যিনি পেশায় ব্যারিস্টার, সরকারি উঁচু মহলে যাঁর ঘোরাফেরা। প্রবোধচন্দ্র লিখছেন, “… ১৯১১ সালের ১২ই ডিসেম্বর তারিখে দিল্লি দরবারে সম্রাট পঞ্চম জর্জ বাংলা বিভাগের অবসান ঘোষণা করেন। তার অল্প পরেই অন্যতম কংগ্রেসনায়ক আশুতোষ চৌধুরী মহাশয় (রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্রী প্রতিভা দেবীর স্বামী) কংগ্রেসের আসন্ন কলকাতা অধিবেশনে গাওয়ার জন্য সম্রাটের একটি প্রশস্তিসঙ্গীত রচনা করে দেবার জন্য অনুরোধ করলেন রবীন্দ্রনাথকে।”[12] ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল গেজেট-এও লেখা হয়, “…in December (1911) Rabindranath composes, at the request of Asutosh Chaudhuri, for the twenty-sixth session of the Indian National Congress in Calcutta, his famous national song, Jana-gana-mana-adhinayaka …”[13] কিন্তু যতদূর জানা যায়, আশুতোষ চৌধুরী স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন এবং কলকাতা হাইকোর্টের অন্যতম বিচারপতির কর্মভার গ্রহণ করেন ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯১২-তে এবং ‘স্যার’ উপাধিতে ভূষিত হন ১৯২১ সালে। সুতরাং প্রশান্তকুমার পালের মতে, ভারতসম্রাটের জয়গান রচনার প্ররোচনাদাতা রাজভক্ত বন্ধু হিসেবে আশুতোষ চৌধুরীকে চিহ্নিত করা যুক্তিযুক্ত নয়। ওঁর মতে “বরং উক্ত ‘রাজসরকারে প্রতিষ্ঠাবান … বন্ধু’ হিসেবে পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুরবাড়ির ‘স্যার’ (১৯০৬) ‘মহারাজা’ (১৯০৮) প্রদ্যোতকুমার ঠাকুরকে গ্রহণ করা সঙ্গত।”[14]

অনুরোধ যাঁরই হোক, রবীন্দ্রনাথের নিজের কথায়, এই অনুরোধে তাঁর মনে একাধারে বিস্ময় ও উত্তাপের সঞ্চার হয়। এবং, সেই বিস্মিত উত্তপ্ত অবস্থায় তিনি একটি গান লিখে দেন। সেই গানটিই ‘জনগণমন-অধিনায়ক’। এই সময় রবীন্দ্রনাথের মনোভাবটি তাঁর মন্তব্য উদ্ধৃত করেই চমৎকারভাবে জানিয়েছেন রবীন্দ্রস্নেহধন্য প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ— “মনে পড়ছে ৭ই পৌষ উৎসবের কাছাকাছি কোনো এক দিন। ‘জনগণমন-অধিনায়ক’ গানটি তখন নতুন লেখা হয়েছে। সন্ধেবেলা কবির কাছে বসে আছি। কবি বললেন ‘শুনলে গানটা? কি রকম কাণ্ড দ্যাখো দেখি। সম্রাট পঞ্চম জর্জ্জের অভ্যর্থনার জন্য গান লেখবার ফরমায়েস এল। মোটেই উৎসাহ ছিল না। কিন্তু বারে বারে অনুরোধ আসতে বললুম, আচ্ছা দেখি। কয়েক দিন গেল, কিছুই হয় না। তারপরে একদিন বসলুম— কিন্তু যেই লিখতে আরম্ভ করেছি, কোথায় ভেসে গেল পঞ্চম জর্জ্জ – সে কথা আর মনেও রইল না— গান চললো আরো অনেক বড়ো সম্রাটের অভিমুখে।’ এই বলে কবি অল্প অল্প হাসতে লাগলেন।”[15]

অর্থাৎ দেখা গেল রবীন্দ্রনাথ গান লিখলেন বটে কিন্তু প্রবোধচন্দ্রের ভাষায় সে গান, “ভারতের তদানীন্তন অধিপতির স্তবগান না করে রচনা করলেন ভারতবর্ষের চিরন্তন ভাগ্যবিধাতার জয়গান।”[16] রবীন্দ্রনাথের রাজভক্ত বন্ধুটি বুঝলেন, এ গান দিয়ে আর যাই হোক রাজপ্রশস্তি হবে না। তাই খোঁজ পড়ল অন্য গানের। আগেই জানিয়েছি, গাওয়া হয়েছিল রামভুজ চৌধুরীর একটি হিন্দি গান। সেই গানটির প্রথম লাইনটি ছিল— ‘যুগ জীব মেবা পাদশা, চহুঁ দিশ রাজ সবায়া।’

কংগ্রেসের অধিবেশনের সরকারি রিপোর্টে লেখা হয়েছিল, যে ২৭ ডিসেম্বর “The proceedings commenced with a patriotic song composed by Babu Rabindranath Tagore.” তারপরে র‌্যামজে ম্যাকডোনাল্ড প্রমুখ কংগ্রেস শুভানুধ্যায়ীদের চিঠিপত্র পড়বার পর সভাপতির দ্বারা সেই রাজানুগত্যের প্রস্তাব উত্থাপন হয়। কংগ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী তারপর, “After that a song of welcome to Their Imperial Majesties composed for the occassion was sung by the choir.”[17]

কংগ্রেসের সরকারি রিপোর্ট থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে প্রথম গানটি ছিল দেশভক্তির এবং দ্বিতীয়টি সম্রাট দম্পতির স্বাগত সঙ্গীত। অর্থাৎ দুটি পৃথক গানের কথা সুনির্দিষ্টভাবেই উল্লেখ ছিল কংগ্রেসের সেই রিপোর্টে।

এবার আমরা দেখব, তৎকালীন অন্যান্য সংবাদপত্রগুলিতে এই বিষয়ে কী লেখা হয়েছিল। কংগ্রেসের ছাব্বিশতম সম্মেলন নিয়ে কংগ্রেস নেতা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘দ্য বেঙ্গলি’ কাগজে ২৮ ডিসেম্বর লেখা হয়েছিল, “The proceeding commenced with a patriotic song composed by Babu Rabindranath Tagore, the leading poet of Bengal (Jana gano mano adhinayak) of which we give an English translation: King of the heart of nations, Lord of our country’s fate— Scinde, Guzerat, Maharashthra and the Punjab, Dravida, Utkala and Bengal, the Vindays and the Himalayas and the heaving waters of the Jamuna and the Ganges— they waken at thy name, they crave thy blessing, (together) they raise the hyme of thy praise. Dispenser of all good to nations, king of our country’s fate— we salute thee, they all hail to thy name.”[18] ওইদিনের ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকাতেও তেমনই উল্লেখ ছিল। পত্রিকাটিতে লেখা হয়, “The proceedings began with the singing of a Bengali song of benediction … This (the loyalty resolution) was followed by another song in honour of their Imperial Majesties visit to India.”[19]

স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেসের অধিবেশনের সরকারি রিপোর্টের সঙ্গে বেঙ্গলি ও অমৃতবাজার পত্রিকার বিবরণ হুবহু মিলে যাচ্ছে, মিলছে না প্রথমোক্ত তিনটি পত্রিকার বিবরণ। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের নামে অপবাদ দেওয়ার কাজটি স্টেটসম্যান, ইংলিশম্যান আর ইন্ডিয়ান, এই তিনটি পত্রিকা মিলে করেছিল। রবিজীবনীকার প্রশান্তকুমার পালের মতে, “কংগ্রেসের উক্ত দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে সমবেত কণ্ঠে ‘জনগণমন’ উদ্বোধনী-সঙ্গীতের পর রাজদম্পতিকে স্বাগত জানিয়ে ও বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা করার জন্য পঞ্চম জর্জের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে দুটি প্রস্তাব আলোচিত ও গৃহীত হয় এবং তার পরে ‘A Hindi song paying a heart-felt homage to Their Majesties was sung by the Beengali boys and girls in chorus.’ (The Bengalee, 28 Dec) এই তথ্যই বিকৃতভাবে The Englishman ও The Statesman পত্রিকায় ও রয়টারের টেলিগ্রাম অবলম্বনে বিলেতের India পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ‘জনগণমন’ রাজপ্রশস্তি উপলক্ষে রচিত হয়েছিল, এই বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের জন্য এই তিনটি পত্রিকাই দায়ী।”[20]

চিত্রলেখা সিদ্ধান্ত, যিনি ওই কোরাসে গলা মিলিয়েছিলেন, তিনি পরবর্তীকালে লিখেছেন, “আমিও একজন ‘লিভিং উইটনেস’ ১৯১১ সালের কংগ্রেসের। গানের দলে আমি ছিলাম। একটি রাজবন্দনাও গেয়েছিলাম। কিন্তু সে গানটি রচনা করেছিলেন সরলাদেবীর স্বামী রামভুজ দত্ত চৌধুরী।”[21]

বিতর্কটি চমৎকারভাবে সাম-আপ করেছিলেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ— “যে সব তথ্য এ পর্য্যন্ত লিপিবদ্ধ হয়েছে, তার সঙ্গে আমার যা মনে আছে তা পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে। পঞ্চম জর্জ্জের আগমন উপলক্ষ্যে গান রচনা করবার জন্য কবিকে অনুরোধ করা হয়, আর কবি চেষ্টাও করেন কিন্তু তাঁর মন ভিতর থেকে অন্যদিকে নিয়ে যায়। এরকম ব্যাপার অনেক ঘটেছে— কবি বাইরে থেকে ইচ্ছা করেছেন আর ভিতর থেকে তাঁকে অন্যদিকে নিয়ে গিয়েছে। সেইজন্যেই কবি জীবন-দেবতার কথা বারেবারে বলেছেন।”[22]

রবীন্দ্রনাথ এসব ভ্রান্ত বিবরণের প্রতিবাদ করেছিলেন এমন কোনও নিদর্শন পাওয়া যায়নি। সম্ভবত সেইসময় তিনি ‘স্টেটসম্যান’ ও ‘ইংলিশম্যান’ প্রভৃতির মূঢ়তার প্রতিবাদ করাকে আত্ম-অবমাননা বলেই গণ্য করেছিলেন। তবে, ইঙ্গ-ভারতীয় কাগজগুলির বিবরণ তাঁর লক্ষগোচর হয়নি এমনটা বোধহয় নয়।

 

[আগামী সংখ্যায় সমাপ্য]

[1] বর্তক, ব্রহ্মর্ষি ডঃ পি ভি। জন গণ মন…: প্রেইজ ফর ভারতমাতা অর গ্লোরিফিকেশন অফ ব্রিটিশ কিং। হিন্দুজাগ্রুতি ডট অর্গ। ২৭ ডিসেম্বর ২০১১।

[2] প্রাগুক্ত

[3] স্বামী আর্জেস পিএম মোদি টু মেক চেঞ্জেজ ইন ন্যাশানাল অ্যান্থেম অ্যাজ ডান বাই সুভাষ চন্দ্র বোস। জি নিউজ। ২২ ডিসেম্বর ২০১৫।

[4] নীরজ, গোপাল দাস। জন গণ মন রেমিনিসেন্ট অফ ব্রিটিশ রুল। হিন্দুস্তান টাইমস। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।

[5] সেন, প্রবোধচন্দ্র। ভারতপথিক রবীন্দ্রনাথ। পৃষ্ঠা ২৩৫। এ মুখার্জী অ্যান্ড কোং প্রাইভেট লিমিটেড। ১৯৬২।

[6] ইসলাম, আমিনুল। ‘জনগণমন’ জাতীয়তাবাদ ও বঙ্গসমাজ: পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ। নবজাগরণ ডট কম। ৮ ডিসেম্বর, ২০২০।

[7] দত্ত, প্রদীপ কুমার। ইন্ডিয়া’জ ন্যাশানাল অ্যান্থেম: আর উই স্টিল সিঙ্গিং ফর দি এম্পায়ার। এসএসিডব্লু ডট নেট। ৮ সেপ্টেম্বর ২০০৪।

[8] সেন, প্রবোধচন্দ্র। ভারতপথিক রবীন্দ্রনাথ। পৃষ্ঠা ২৩৮। এ মুখার্জী অ্যান্ড কোং প্রাইভেট লিমিটেড। ১৯৬২।

[9] দ্রষ্টব্য, টীকা ৬।

[10] টীকা ৮, পৃষ্ঠা ২৩৯।

[11] সেনগুপ্ত, সমীর। গানের পিছনে রবীন্দ্রনাথ। পৃষ্ঠা ১১৬। প্যাপিরাস, ২০১৭।

[12] টীকা ৮, পৃষ্ঠা ২৩১।

[13] পাল, প্রশান্তকুমার। রবিজীবনী। ষষ্ঠ খণ্ড। পৃষ্ঠা ২৫৬। আনন্দ পাবলিশার্স। ২০১৮।

[14] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ২৫৬।

[15] দাশগুপ্ত, উমা। নেহেরু ও রবীন্দ্রনাথের জনগণমন-অধিনায়ক। দেশ পত্রিকা। জুন ২০০০।

[16] টীকা ৮, পৃষ্ঠা ২৩৫।

[17] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ২৩৬।

[18] টীকা ১৩, পৃষ্ঠা ২৫৫-২৫৬।

[19] দ্রষ্টব্য, টীকা ৬।

[20] টীকা ১৩, পৃষ্ঠা ২৫৬।

[21] দ্রষ্টব্য, টীকা ৬।

[22] দ্রষ্টব্য, টীকা ১৫।